X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথমে ডাউনলোড তারপর আপলোড

ফারহানা মান্নান
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০৪আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:১১

ফারহানা মান্নান আমার বোনের ছেলেকে সব সময় দেখি মোবাইল হাতে বসে থাকে।  জিজ্ঞেস করলে বলে গেমস খেলি।  এবং এই সাড়ে চার বছরের বাচ্চাটি নিজে নিজেই ইন্টারনেট থেকে গেমস ডাউনলোড করে খেলে।  আমি বেশ অবাক হয়েই দেখি।  আমি স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের কথাও ভাবি।  স্কুলের কাজে বা বিনোদনের জন্য কত কিছু যে ইন্টারনেট থেকে নামায়! অনলাইনে আমি নিজে যখন কাজ করি তখনও দেখা যায়, হয় ইউটিউব থেকে বা গুগল থেকে বা অন্য কোনও সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে তথ্য ডাউনলোড করি।  দিন শেষে দেখা যায় অসংখ্য তথ্য ডাউনলোড করা হয়েছে।  আমরা আসলে তথ্য যুগে বসবাস করি।  এ যুগে তথ্য সংগ্রহের জন্য ইন্টারনেট হলো অন্যতম ভরসা।  কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহার ছাড়া উপায় কী? কিন্তু তাই বলে কি আমরা কেবল ডাউনলোডই করব? আপলোড করবো না!
আসলে আমরা যখন তথ্য ব্যবহার করি তখন ডাউনলোড করি আর যখন তথ্য দেই তখন আপলোড করি।  আমাদের ভেতর কতজন মানুষ নিজস্ব চিন্তা, সৃজনশীলতা, গবেষণা, কাজ ইন্টারনেটে আপলোড করে? সংখ্যাটা নিঃসন্দেহে যারা ডাউনলোড করে তাদের তুলনায় কম।  আমাদের দেশের শিশু কিশোরদের মধ্যে এই সংখ্যা আরও কম।  আমরা আসলে তাদের এভাবে শেখাইও না আর তৈরিও করি না।

শিক্ষাব্যবস্থা আসলে এমন হওয়া উচিৎ যেখানে ছেলেমেয়েরা ঘেটে শিখবে।  তাদের সরাসরি কোনও সমস্যার সমাধান বলে দেওয়াই যাবে না।  তাদের কয়েকটি সমাধানের টেকনিক শিখিয়ে দিতে হবে।  সমস্যা দিতে হবে এবং গবেষণার কাজে সাহায্য করতে হবে।  ব্যস আর কিছুই লাগবে না।  এখন একটা সমস্যা কী সমাধান দিয়ে বের করতে হবে সেটা শিক্ষার্থী নিজেই খুঁজে বের করে নিক।  এই সমাধান খুঁজে বের করতে ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্য নিতে পারে।  আবার চমকপ্রদভাবে সমস্যার সমাধান করে ইন্টারনেটে সবার সঙ্গে শেয়ারও করতে পারে।

আসলে শৈশব থেকেই শিশুদের তাদের নিজেদের কাজ শেয়ার করার একটা তাগিদ ও অভ্যাস তৈরি করাতে হবে।  তাহলে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের কাজ দেখানোর সাথে সাথে তুলনা করারও সুযোগ পাবে।  আসল বিষয়টা হলো বিশ্বমানের সঙ্গে পরিচিতি ঘটানো।  বিশ্বমানের সাথে নিজের কাজের জন্য একটা অবস্থান তৈরি করা।  আর আমরা সকলেই জানি একুশ শতকের শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বৈশ্বিক সচেতনতা।  কাজেই অনলাইনে ডাউনলোডের পাশাপাশি আপলোড করার অভ্যাস ছেলেমেয়েদের একুশ শতকীয় আদলেই বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
আমি এখন প্রধানমন্ত্রীয় কার্যালয়ে এটুআই এর সঙ্গে এডুকেশন টিমের সাথে কাজ করছি।  সম্প্রতি এটুআইতে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সের কিশোরদের জন্য একটা সাইট নির্মাণের কাজ চলছে।  এখানে কিশোররা তাদের কাজ, চিন্তা, উদ্ভাবন সব কিছুই শেয়ার করতে পারবে।  এ সাইটের নামকরণ করা হয়েছে ‘কানেক্ট’।  দারুণ ব্যাপার হচ্ছে এখানে যেমন ডাউনলোডের ব্যবস্থা থাকবে তেমনি থাকবে আপলোড করার সুবিধা।  একুশ শতকের ৪টা প্রধান দক্ষতা ৪সি কে টার্গেট করেই এটি নির্মাণের কাজ চলছে এবং একই সঙ্গে বইমেলায় পরীক্ষামূলকভাবে সাইটটি সাধারণ মানুষের ব্রাউজ করার জন্যও বাংলা একাডেমীয় মূল প্রাঙ্গণে এটুআই এর স্টলে দুটি কিয়স্ক রাখা হয়েছে।  আবার কিশোরদের জন্য আমাদের জর্নাল নামে একটি ওয়েবসাইট আছে।  যেখানে শিশু কিশোররা বিজ্ঞান কংগ্রেসে পঠিত এবং লিখিত তাদের জর্নাল আপলোড করার সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশে আসলে এমন দারুণ সব সুযোগ তৈরি হচ্ছে খুব আস্তে আস্তে।  সমস্যা হলো স্কুলের লেখাপড়ার পাশাপাশি নানা সুকুমার চিন্তায় নিজেদের মগ্ন রেখে আপলোড করার ভাবনা এবং সত্যি সত্যি তা করা খুব সহজ ব্যাপার নয়।  এর জন্য স্কুলের সাহায্য লাগে, অভিভাবকের প্ররণা প্রয়োজন হয়, স্ব-শিক্ষার অনুভূতিও থাকতে হয় আর সব চাইতে যা দরকার হয় তা হলো আপলোড করার একটা সুযোগ ও প্ল্যাটফর্ম।  যাই হোক খুব দেরিতে হলেও সরকারি ও বেসরকারিভাবে এসব প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে এটা সুখবর।  এখন কেবল ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বাকি।  আশা করা যায় সেটাও এক সময় সত্যি হবে এবং এমন দিন হয়তো দূরে নয় যেদিন ডাউনলোডের পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা আপলোডও করতে শিখবে।    

লেখক: শিক্ষাবিষয়ক গবেষক

[email protected]

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ