X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিস্তা: হাসিনার নয়, মোদির জন্যই চ্যালেঞ্জ

নাদীম কাদির
১৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:০৩আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:১০

নাদীম কাদির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে যে শোরগোল চলছিলো, ধীরে ধীরে তা কমে আসছে। আমি মনে করি, এই সফর পর্যালোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেটা হলো বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কিংবা তিস্তার প্রশ্ন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য একটি চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
এ ধরনের স্পর্শকাতর দ্বিপাক্ষিক সফরের বেলায় হার-জিতের হিসেব করাটা মূল উদ্দেশ্য হয় না। বরং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং তাতে নতুন মাত্রা যোগ করাকেই আসল উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমি মনে করি, হাসিনার ভারত সফরের বেলায় বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে গেছে আমাদের অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের ও শেখ হাসিনার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিস্তার পানি বণ্টনজনিত সংকটের দ্রুত সমাধান বের করার অঙ্গীকার করেছেন মোদি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমাদের যৌথ স্থলসীমার পাশাপাশি আমাদের যৌথ নদীও রয়েছে। এগুলো আমাদের জনগণ ও তাদের জীবিকাকে টিকিয়ে রাখে। এর মধ্যে দুইদেশের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু তিস্তা। এটি যেমন ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্যও। খোদ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বেলাতে এর বিশেষ গুরুত্ব আছে’। শেখ হাসিনার উদ্দেশে মোদি বলেছিলেন, ‘আপনার সরকার আর আমার সরকারই কেবল তিস্তা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে পারে।’
তার মানে হলো, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি অবশ্যই ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগেই করতে হবে।
শেখ হাসিনা অবশ্য এ ব্যাপারে তার দৃঢ় অবস্থান দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আমাদের যৌথ পানিসম্পদকে সমন্বিত শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। সকল যৌথ নদীর পানি বণ্টনে নির্ধারিত সমাধানসূত্রের পাশাপাশি একটি ব্যাপক ও অববাহিকাভিত্তিক সমাধান বের করতে হবে।’
যত দ্রুত সম্ভব পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে মোদি সরকারের দৃঢ় সংকল্পের কথা স্বীকার করেন শেখ হাসিনা। পানি চুক্তির প্রসঙ্গে বলেন, ‘যদি তা হয় তবে ইন্দো-বাংলাদেশ সম্পর্কের পর্বটির আরেকটি রূপান্তর ঘটবে।’
হাসিনার বিবৃতি ভারত ও মোদির জন্য এটি একটি বড় ইঙ্গিত। হাসিনা বার্তা দিতে চেয়েছেন, হয় তুমি আস্থাভাজন বন্ধু বাংলাদেশের সঙ্গে আরও দৃঢ় ও লাভজনক সম্পর্ক গড়ে তোলো নয়তো এর পরিণামের মুখোমুখি হও।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাধার মুখে স্থবির থাকা তিস্তা চুক্তি এখন বড় ধরনের রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার উষ্ণ সম্পর্কের সমালোচনায় মুখর রয়েছেন বিরোধীরা। তবে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

ভারতকে বুঝতে হবে যে কেবল তিস্তার কারণেই বাংলাদেশি জনগণের বিপুল সমর্থন তারা হারাতে যাচ্ছে। এমনকি ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার জন্যে বিষয়টি খুব তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। কেননা, বিএনপি-জামাত ও পাকিস্তানপন্থী দলগুলো মিথ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে যে ‘ভারতের কাছে দেশ বিক্রি হয়ে গেছে’। যদিও বিরোধী দল ও পাকিস্তানপন্থী সংগঠনগুলো এখনও বলতে পারেনি যে কী বিক্রি হয়েছে। তবে এখনও যে দেশে নিরক্ষতার হার অনেক বেশি এবং সীমান্তের ইস্যুগুলো অনেকের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি করে থাকে। তাই এর প্রভাবের কথাটি মাথায় রাখা প্রয়োজন।

মোদিকেও ব্যাখ্যা দিতে হবে যে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সার্বভৌম ছায়া রাজ্য কিনা, যে রাজ্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বড় ধরনের নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে চুক্তি বর্জনের অধিকার রাখে।

কৃষকদের জন্য মমতার পানি দরকার। বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য আরও বেশি পানি দরকার। যেখান দিয়ে তিস্তা বয়ে গেছে, সেইসব এলাকায় মরুকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করাটা বাংলাদেশের জন্য আরও জরুরি।

তবে বাংলাদেশ ও ভারতকে আস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে। নিজেদের জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই চালানো, বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানের প্রভাব দূর করা এবং অর্থনৈতিক অর্জনের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

এটি এখন শেখ হাসিনার চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি মোদির জন্য চ্যালেঞ্জ। কেননা,  বলটি মোদির কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি পরিষ্কার যে বন্ধুসুলভ তিস্তা চুক্তি ছাড়া ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উষ্ণ করাটা একেবারেই অসম্ভব। কারণ এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের অনুভূতি জড়িত।

শেখ  হাসিনার ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা। ভারত সফরের পর ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক যেমনটা হয়েছে তার চেয়ে আরও ভালো সম্পর্ক তিস্তা চুক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। তিস্তা ছাড়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটা হয়তো হিমঘরে চলে যাবে। কেননা,  দেশকে পানির স্বল্পতাজনিত ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়ে এবং রাজনৈতিক পরাজয়ের বিনিময়ে শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সেই সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবেন না।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ এই কালপর্ব মোদির জন্য সত্যিকারের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার মোক্ষম সময়। কেবল বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেই তিনি তা হতে পারেন।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ