X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘কান’ পেতে রই

জনি হক
২৮ জুন ২০১৭, ১২:৫৪আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:৫২

জনি হক বিশ্ব চলচ্চিত্রের উঠানে কান পাতলে ‘কান’ই শোনা যায় সবচেয়ে বেশি।  এ কান হলো দক্ষিণ ফ্রান্সের এক রূপবতী শহর।  ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের শহরটির নামেই এখানে প্রতি বছর বসে সেলুলয়েডের বৈশ্বিক আসর ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’।  কান নিয়ে সারাবছর হয় কানাকানি! বৈচিত্র ও বহুমাত্রিকতার জন্য প্রসিদ্ধ কান উৎসবকে বলা হয় বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম বৃহৎ মিলনমেলা।  কান মানেই শিল্প ও জৌলুসের অপূর্ব সম্মিলন।  শিল্পী, কুশলী ও নির্মাতাদের মধ্যে এ আয়োজন নিয়ে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা যায় সাধারণ মানুষ আর সাংবাদিকদের মাঝেও।  গত ১৭-২৮ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৭০তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে দেখলাম এই চিত্র।
কান যে সত্যিই একটি বিশ্ব মহোৎসব, সেটা প্রথমেই বোঝা যায় সাংবাদিকদের বহুজাতিকতার দিকে তাকালে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংবাদকর্মী ও আলোকচিত্রীরা কান নিয়ে লেখালেখি ও ছবি তোলার জন্য ভিড় করেন সাগরপাড়ের শহরটিতে।  বাংলাদেশ থেকেও সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ বাড়ছে এ আয়োজনে।  ২০১৫ সালে প্রথমবার কান উৎসব কাভার করতে গিয়ে কেবল দু’জনকে পেয়েছিলাম।  এবার সংখ্যাটা ছিল হাফডজন।  কানের ৭০তম আসরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক ছিলেন সাড়ে চার হাজার।  প্রতি বছরই এ সংখ্যা বেড়ে চলেছে।  আয়োজকদের অ্যাক্রেডিটেশন (ব্যাজ) পেয়েছেন এবার মোট ৪৫ হাজার মানুষ।  সাংবাদিক ছাড়া বাকিদের বেশিরভাগই কানের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মের।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ছবির প্রতিযোগিতা ও লালগালিচার জৌলুসের মোড়কে কান মূলত ছবি কেনাবেচার সবচেয়ে বড় বাজার।  মার্শে দ্যু ফিল্ম নামের এই মার্কেটে এবার অংশ নিয়েছেন ১২ হাজার ব্যক্তি।  উৎসবের মূলকেন্দ্র পালে দো ফেস্টিভাল ভবনের অভ্যন্তরে এবং সাগরপাড়ের এদিক-ওদিক বসেছিল এই বাজার।  এই জায়গাটা হলো নির্মাতাদের আদান-প্রদানের আঙিনা।  এগুলোতে অংশগ্রহণ করেন ফিল্ম প্রফেশনালরা।

কানকে বলা হয়ে থাকে চলচ্চিত্রের ‘মক্কা’! তামাম দুনিয়ার ছবিপ্রেমীদের কাছে যেন এ এক তীর্থস্থান! বিশ্বজুড়ে কতো চলচ্চিত্র উৎসবই না হয়।  এর মধ্যে বড় বড় উৎসব কম না।  জার্মানিতে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব, ইতালিতে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব, লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসব, লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসব, পুসান চলচ্চিত্র উৎসব, টোকিও চলচ্চিত্র উৎসব, এমন আরও অনেক আয়োজন আছে। কিন্তু কানের মতো আর কোনোটিকে ঘিরে এত আগ্রহ দেখা যায় না।  এত জনসমাগমও হয় না।  উৎসব চলাকালে কানে জনসংখ্যা ৭৪ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় দুই লাখে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরও অনেক উৎসব হওয়া সত্ত্বেও কানে আসার জন্য মুখিয়ে থাকেন সবাই। কীসের টানে এই শহরে, এই উৎসবে মিছিল বেঁধে ছুটে আসে মানুষ? কী জাদু আছে কানে? অন্য উৎসবগুলো নিয়েই বা এত মাতামাতি হয় না কেন? টানা তিনবার কানে গিয়ে এসব প্রশ্নের বেশকিছু উত্তর চোখে পড়েছে।  কানের জনপ্রিয়তা আর বৈশ্বিক স্বীকৃতির অনেক কারণ আছে।  ঋতু এর মধ্যে অন্যতম।  শীত শেষে গ্রীষ্মের শুরুর দিকটাতে প্রতি বছর কান উৎসব হয়ে থাকে।  মে মাসের প্রথম সপ্তাহ শেষের পর থেকে মাঝামাঝি শুরু হয়ে এ আয়োজন চলে ১২ দিনব্যাপী।  তখনকার আবহাওয়াটা সব জাতির জন্যই থাকে সহনীয়।  বিশেষ করে ফরাসিদের কাছে ব্যাপক উপভোগ্য এই সময়টা।  অন্যান্য দেশের উৎসবগুলো সাধারণত শীতকালেই হয়ে থাকে বেশি।  এ কারণে সেগুলোতে উপস্থিতিও থাকে কম।

পৃথিবীর এত দেশ থেকে সাংবাদিকরা কানের মতো আর কোনও উৎসবের জন্য এত আকুল থাকেন না।  এরও আছে নানাবিধ কারণ।  প্রথমত এ উৎসবের অ্যাক্রেডিটেশন পেতে বার্লিন বা ভেনিস উৎসবের মতো কোনও ইউরো দিতে হয় না।  এছাড়া প্রেস রুম, প্রেস লকার, ওয়াইফাই, স্ন্যাকস, কফি, নিস বিমানবন্দর থেকে সৌজন্য বাহন, আলোকচিত্রীদের সেরা ছবির জন্য পুরস্কার, আরও কতোকিছু থাকে! সাংবাদিকদের ঠিকঠাক পথ দেখাতে হাসিমুখে থাকেন অভ্যর্থনাকারীরা।  বাড়তি পাওনা হিসেবে আছে কানসৈকতের রূপ।

সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো, কম্পিটিশন ও আউট অব কম্পিটিশন বিভাগের ছবিগুলোর নির্মাতা ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একেবারে হাতের নাগালে পাওয়া যায় সংবাদ সম্মেলনে।  অন্যান্য উৎসবের কম্পিটিশনে নির্বাচিত ছবির তারকাদের বেশিরভাগই সেগুলোর প্রিমিয়ারে হাজির হন না।  বার্লিন বা ভেনিসের দিকে তাকালেই সেটা জানা যায়।  কিন্তু কানে আসার জন্য পৃথিবীর প্রথম সারির তারকারা পর্যন্ত আগ্রহ দেখান বেশি।  কেউই মিস করতে চান না এই শহরে আসার সুযোগ।  কান আসলে আবেগের জায়গা।  অনেকের ক্যারিয়ার দাঁড়িয়ে গেছে এ উৎসবে এসে।  বিশ্বের অনেক তারকা ও নির্মাতার পথটা মসৃণ হয়েছে কানে আসার সুবাদেই।

শুধু সংবাদ সম্মেলনই না, এখানে-সেখানে আচমকা তারকাদের দেখা পাওয়ার ঘটনাও আছে।  এই যেমন এবার একদিন বিকালে সাগরপাড়ে হাঁটতে যাওয়ার পথে সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের দেখা পেয়ে গেলাম।  আবার লালগালিচায় তামাম দুনিয়ার নক্ষত্ররা হেঁটে যাওয়ার সময় সামনের সড়কে অপেক্ষমাণ থাকা অটোগ্রাফ ও সেলফি শিকারি আমজনতার মাঝে হঠাৎ ধরা দেন কিছুক্ষণের জন্য।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, পৃথিবীর নানান প্রান্তের বিচিত্র বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মিত ছবিগুলোর পয়লা দর্শন নেওয়া যায় কানেই।  সবার আগে সেরা সেরা ছবি দেখার এমন দুর্লভ সুযোগ আর কোথাও নেই! ২০১৫ সালে এখানে যেসব ছবি দেখেছি, সেগুলোই পরের বছর অস্কারসহ বড় বড় পুরস্কারে আলোচিত হয়েছে, পেয়েছে স্বীকৃতি।  ২০১৬ সালে কানে নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলোর বেলায়ও দেখেছি একই চিত্র।  ৭০তম আসরের ছবিগুলো নিয়েও আগামী এক বছর মাতামাতি হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত!

২৪ ঘণ্টার জমজমাট আয়োজন যাকে বলে কান উৎসব ঠিক তেমনই।  দিনব্যাপী চলতে থাকে পার্টি। সকাল সাড়ে আটটা থেকে দিনভর কম্পিটিশন, আউট অব কম্পিটিশন, আনসার্তেন রিগার্দ, সিনেফন্ডেশন, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ধ্রুপদী চলচ্চিত্র এবং প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী হয় এখানে।  বিশ্বের অন্যতম বিশাল প্রেক্ষাগৃহ গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ছবি দেখার সুযোগ মেলে কানেই।  এই থিয়েটারে ছবি দেখার সুযোগ পেতে মানুষ কী না করে! টাক্সেডো পরে দিনভর সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে ‘টিকিট প্লিজ’, ‘ইনভাইটেশন প্লিজ’ লেখা কাগজ বা প্ল্যাকার্ড নিয়ে।  কান উৎসব কাভার করতে গত দু’বারের মতো এবারও গিয়েও এমন ঘটনা দেখেছি রোজ।

৭০তম আসর হওয়ায় এবার বিশেষ ব্যাপার চোখে পড়েছে বেশি।  যেমন এবার আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতুর ভার্চুয়াল রিয়েলিটি দেখাতে ২০ মিনিটের পথ পেরিয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে।  টিভি সিরিজও যুক্ত করা হয়েছিল এবার।  স্বর্ণপাম জয়ী একমাত্র নারী নির্মাতা জেন ক্যাম্পিয়নের ‘টপ অব দ্য লেক: চায়না গার্ল’ এবং ডেভিড লিঞ্চের ‘টুইন পিকস’-এর প্রিমিয়ার হয় এ আসরে।  ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ব চলচ্চিত্রের ১১৩ তারকাকে জড়ো করা হয়েছিল বিশেষ ফটোকলের জন্য।  উৎসবের ৭০ বছরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি গ্রন্থ।  উৎসবের অফিসিয়াল স্টলে দেখেছি বইটির ব্যাপক চাহিদা।  তবে এবার কম্পিটিশনে নির্বাচিত তিনটি ছবিতে ওয়েবসাইট নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজনের অর্থলগ্নি ও লোগে ব্যবহার নিয়ে হৈচৈ হয়েছে।

ছবির প্রিমিয়ার ছাড়াও লালগালিচার দ্যুতি কান উৎসবের প্রাণ।  তবে রেড কারপেটে শুধু জৌলুসই ছড়ায় না, দেখানো হয় প্রতিবাদ কিংবা সংহতি।  এবারের আসর চলাকালে ম্যানচেস্টারে গায়িকা আরিয়ানা গ্র্যান্ডের কনসার্টে ঘটে যায় ভয়াবহ হামলা।  তাই লালগালিচায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সংহতি প্রকাশ করা হয়।  এ ঘটনার আগে থেকেই কানে এবার নিরাপত্তা ছিল কড়াকড়ি।  পালে দো ফেস্টিভাল ভবনে ঢোকার আগে স্ক্যানসহ একাধিকবার ব্যাজ পরীক্ষা ও ব্যাগ তল্লাশি করা হয়।  মজার ব্যাপার হলো, উৎসবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত তিন কুকুরকে দেওয়া হয়েছে ‘পাম ডগ’ পুরস্কার।  মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিনিধি হিসেবে তাদের পুরস্কৃত করা হয়।

উৎসবটি এমনভাবে সাজানো হয় যে, চারপাশই থাকে মুখর।  গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ছবির প্রদর্শনী হচ্ছে বলে তা শেষ হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য দিক নিস্তেজ থাকবে, তা যেন না হয় সেভাবেই সব পরিকল্পনা করা থাকে।  তাই ২৪ ঘণ্টাই উৎসবের আমেজে থাকেন সবাই।  এই কলকাঠি নাড়েন থিয়েরি ফ্রেমো।  তিনিই মূলত কানকে সর্বজনীন করে তুলেছেন।  এনে দিয়েছেন বৈশ্বিক স্বাদ। সারাবিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতোই টেনে আনার ক্ষেত্রে তার কেরামতিই বেশি।  কানে কম্পিটিশনসহ অন্যান্য বিভাগে যেসব ছবি নির্বাচিত হয়, হাজার হাজারও ছবি দেখে তা নির্বাচন করেন এই ফ্রেমোই।

দুই বছর আগে প্রথমবার কান থেকে ঢাকায় ফেরার পর অনেকে জানতে চেয়েছিলেন, কানে কী ধরনের ছবি নির্বাচিত হয়? আয়োজকরা আসলে কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন? গতবারও এসব প্রশ্ন শুনেছি। কানে এসেছে এবারও।  সত্যি বলতে, কান উৎসবে অফিসিয়াল সিলেকশন হওয়া অনেক বড় অর্জন ধরে নেন বিখ্যাত নির্মাতারাও।  কারণ অনেক বাঘা বাঘা নির্মাতার ছবিও কম্পিটিশনে জায়গা পায় না।  আবার নতুন অনেকে এসে দান মেরে যান! এবার যেমন সবাইকে চমকে দিয়ে সুইডিশ নির্মাতা রুবেন ওস্টলুন্ডের ‘দ্য স্কয়ার’ উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণপাম জিতে নিলো।  এর বিষয়বস্তু শিল্পালয় তথা গ্যালারিকে ঘিরে।  কিভাবে আমরা একে অপরকে দারুণভাবে সহযোগিতা করতে পারি সেই বিষয়ে পুরোপুরি নতুন ধারণা দেওয়া হয়েছে এতে।  এজন্যই মূলত ছবিটি অপ্রত্যাশিতভাবে পাম দ’র জিতে নিয়েছে।

‘দ্য স্কয়ার’-এর মতো বিপন্ন মধ্যবিত্ত জীবনকে ঘিরে বেশ কয়েকটি ছবি স্থান পায় কম্পিটিশনে। এছাড়া প্রাধান্য পেয়েছে শরণার্থী এবং রাশিয়ার বিষয়আশয়।  এবার সাহিত্যনির্ভর বেশ কয়েকটি ছবি নির্বাচিত হয়েছে কানে।  কম্পিটিশনে নির্বাচিত ১৯টি ছবির মধ্যে হাফ ডজনই তৈরি হয়েছে জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে।  কানে বিভিন্ন বিভাগে নির্বাচিত সব ছবিই আসলে সেরা! যেমন আনসার্তেন রিগার্দ বিভাগে এবার নির্বাচিত ‘উইন্ড রিভার’ এবং ‘দ্য ফ্লোরিডা প্রজেক্ট’ কম্পিটিশনে নির্বাচিত হলে পাম দ’র জিতেও যেতে পারতো বলে কানাকানি হতে শুনেছি।  কানে ছবি দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, পৃথিবীজুড়ে যেসব বিষয় এখন আলোচিত কিংবা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেইসব ভাবনা নিয়ে সাজানো ছবিগুলোই মূলত আয়োজকদের মন জয় করে।  তবে কারিগরি মান আর সংগীতও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ এখনও কানের কম্পিটিশন, আউট অব কম্পিটিশন কিংবা আনসার্তেন রিগার্দ বিভাগে জায়গা করে নিতে পারেনি।  তবে ২০০২ সালে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে স্থান পেয়ে জিতেছিল ফিপরেস্কি পুরস্কার।  গত ১৫ বছরে এ উৎসবে অফিসিয়াল অর্জন বলতে এটাই ছিল সবেধন নীলমণি।  গত বছর অবশ্য তৌকীর আহমেদের ‘অজ্ঞাতনামা’ এবং অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ অংশ নিয়েছিল মার্শে দ্যু ফিল্ম বিভাগে।  এবার শর্ট ফিল্ম কর্নারে দেখেছি বাংলাদেশের ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর ‘ঢাকা ২.০০’ এবং জসিম আহমেদের ‘দাগ’। সারাবিশ্বের উঠতি নির্মাতাদের মধ্যে তাদের এই অংশগ্রহণ দেখে ভালো লাগলো।  লাইন ধরে ডিজিটাল লাইব্রেরিতে বিদেশি অনেক সিনেমাপ্রেমীকে এ দুটি ছবি দেখতে দেখেছি।
তবে এবার আয়োজকদের আমন্ত্রণে কানে এসেছিলেন কামার আহমাদ সাইমন।  কানের সিনেফন্ডেশন বিভাগের লাতেলিয়ার কার্যক্রমের ১৩তম আসরে নির্বাচিত হয় তার ‘ডে আফটার টুমরো’ ছবির চিত্রনাট্য। উৎসবের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ ছবিকে বলা হয়েছে সমালোচনামূলক-বাস্তববাদী বাংলাদেশের একটি চিত্র।  বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪টি দেশের ১৫টি চিত্রনাট্য নির্বাচিত হয় লাতেলিয়ারে।  গুরুত্বপূর্ণ সিনেমার চিত্রনাট্যের জন্য নবীন থেকে সুপরিচিত আন্তর্জাতিক নির্মাতাদের ২০০৫ সাল থেকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে এই কর্মসূচিতে।

কান উৎসবের সিনেফন্ডেশনের লাতেলিয়ার কার্যক্রমে নিজে থেকে অংশ নেওয়া যায় না।  গত বছর লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবের ‘ওপেন ডোর্স হাব’-এ প্রতিযোগিতায় ছিল ‘ডে আফটার টুমরো’র চিত্রনাট্য।  সেখানে নতুন নির্মাতার খোঁজে গিয়েছিলেন লাতেলিয়ারের পরিচালক।  ওর কাজই হলো সারা দুনিয়ার ফেস্টিভ্যাল ঘুরে ঘুরে গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা আর তাদের সম্ভাবনাময় চিত্রনাট্য খুঁজে বের করা।  কামারের আমন্ত্রণ পাওয়া সেই সূত্রেই। এটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের জন্য গর্ব।

বাংলাদেশ থেকে তারেক মাসুদের পর কানের অফিসিয়াল আমন্ত্রণ একমাত্র কামার আহমাদ সাইমনই পেলেন বলা যায়।  ঘটনাক্রমে তারেকের সহকারী হিসেবে তার মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করেছেন কামার।  ‘শুনতে কি পাও!’ বানিয়ে তিনি খ্যাতি পেয়ে গেছেন।  কানসৈকতে এবারের আসরে ভিলেজ ইন্টারন্যাশনালের ২২৭ নম্বর প্যাভিলিয়নে বসে বিভিন্ন দেশের ফিল্ম প্রফেশনালদের সঙ্গে কয়েকদিন ধরে নিজের আগামী ছবি নিয়ে চিন্তাভাবনার আদান-প্রদান করেছেন তিনি।

বাংলাদেশি একজন আমন্ত্রিত হলেও কানসৈকতে ছিল না লাল-সবুজ পতাকা ওড়ার মতো কোনও প্যাভিলিয়ন।  কিন্তু গত তিনবারই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়ন দেখেছি।  এমনকি বাংলাদেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ছোট এমন কিছু দেশের প্যাভিলিয়নও চোখে পড়েছে।  তারা নিজেদের দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রচারণা চালিয়ে থাকেন এর মাধ্যমে।  প্যাভিলিয়নগুলোতে ফিল্ম প্রফেশনালসরা আসেন, তাদের সঙ্গে কথার আদানপ্রদান হয়।  এসব প্যাভিলিয়ন নিতে হয় সরকারি উদ্যোগে।  আমাদের নতুন ও তরুণ নির্মাতাদের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যেন নতুন দুয়ার খোলে, নতুন প্ল্যাটফর্ম যেন তৈরি হয়, সেজন্য আগামীতে এমন প্যাভিলিয়নের কথা ভাবতে পারে বাংলাদেশের তথ্য, সংস্কৃতি আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আমাদের দেশে এখন তরুণরা অনেক ভালো কাজ করছে।  কানমঞ্চে এলে সমকালীন চলচ্চিত্র বাজার সম্পর্কে তাদের ধারণা পরিষ্কার হবে, তখন তাদের মধ্যে নতুন ভাবনার সঞ্চার হবে। তবে প্যাভিলিয়নটা যেন নিষ্প্রাণ না হয় সেজন্য পরিকল্পনা করে এগোলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। কানে বাংলাদেশের জয়ধ্বনি একদিন নিশ্চয়ই বাজবে।  সেই আশায় কান পেতে রই। 

লেখক: সাংবাদিক

 

.

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ