X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজপথের পাশের ও সড়কদ্বীপের বৃক্ষ

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
২৭ এপ্রিল ২০১৮, ১২:৫৭আপডেট : ১৩ জুন ২০১৮, ১৪:২৩

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান বলতে গেলে, এ বছর, প্রবল কালবৈশাখী বলতে যা বোঝায়, তার কাছাকাছি কোনও ঝড়-বৃষ্টি এখনও হয়নি। কিন্তু এর মধ্যেই রাজধানীর বহু এলাকায় গাছের ডালপালা ভাঙাসহ সমূলে উপড়ে পড়ার দৃশ্য আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে রাজধানীবাসীর মনে। আহত হয়েছেন অনেকেই। বৃষ্টিসহ প্রবল কোনও ঝড় যদি হয়,তাহলে অবস্থা যে কতটা ভয়ঙ্কর হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে উপড়ে বা ভেঙে পড়া বৃক্ষে চাপা পড়ে মৃত্যু আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যার মধ্যে খ্যাতিমান চারুকলা শিল্পী ও প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু অন্যতম।

তাহলে কি সড়কের পাশে বা সড়কদ্বীপে কোনও গাছপালা থাকবে না? আমরা বরং শহরে প্রচুর পরিমাণ সবুজায়ন দেখতে চাই। বৃক্ষ ছাড়া যার বিকল্প নেই। বৃক্ষনিধনের ঘোর বিরোধী আমরা। আশির দশক থেকে এ যাবৎ, এই ঢাকা শহরেই আমরা এমন অনেক দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষ নিধন হতে দেখেছি, যাতে মনে হয়েছে, নগরীর উন্নয়নের প্রথম শর্তই হলো বৃক্ষনিধন। অথচ বৃক্ষহীন নগরী ইট-পাথরের কঙ্কাল ছাড়া আর কিছুই নয়। বৃক্ষায়ন দুটি কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক,বায়ুদূষণ প্রতিরোধ। দুই,সৌন্দর্যবর্ধন। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যে এমন প্রজাতির গাছ লাগানো উচিত যা পত্রপল্লবে ফুলে সুন্দর কিন্তু আকৃতিতে বিশাল নয়। বিশেষত সড়কদ্বীপে এই জাতীয় গাছ লাগানো শুধু নয়,তা নিয়মিত পরিচর্যা এবং ছেঁটেকেটে সুন্দর করে রাখতে হয়। সড়কদ্বীপে মহীরুহ হয়ে ওঠার মতো গাছ না লাগানোই ভালো। আর লাগালেও তার প্রজাতি চিহ্নিত করা উচিত।

আমি বৃক্ষ বিশারদ নই। গাছপালার প্রতি মমতা থেকে, সাধারণভাবেই যা জানি, সেটাই বলতে চাই। কিছু কিছু বৃক্ষ আছে, যার মূল শিকড় সোজা বহুদূর পর্যন্ত ভূগর্ভে প্রবেশ করে এবং কাণ্ডের নিচে থেকে শুরু করে ভূগর্ভেও শাখা শিকড়ের বিস্তার ঘটায়। ফলে তা প্রবল ঝড়েও উপড়ে পড়ে না। নগরের রাস্তায় এমন বৃক্ষই বিশেষভাবে উপযোগী। অন্যদিকে, কিছু কিছু বৃক্ষ আছে, যার মূলশিকড় ভূগর্ভে বেশিদূর প্রবেশ করে না। কাণ্ডের ঠিক নিচে থেকে অসংখ্য শিকড় বেরিয়ে মাটির স্বল্প গভীর অঞ্চল দিয়ে বহুদূরব্যাপী বিস্তৃত হয়। এই বিস্তৃত অঞ্চলের মাটি আঁকড়ে  ধরে সে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে এসব বৃক্ষ নগরীর সড়কের পাশে বা সড়কদ্বীপে লাগানো উচিত নয়। কারণ, সেখানে তারা সহজে মাটির অগভীর অঞ্চল দিয়ে তাদের শিকড়ের বিস্তার ঘটাতে পারে না। রাস্তার নিম্নদেশের গাঁথুনিতে বাধাপ্রাপ্ত হয় একদিকে, অন্যদিকে রাস্তার পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর-স্থাপনা ভেদ করেও যেতে পারে না। ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মাটি আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি না পেয়ে,ঝড়ের আঘাতে উপড়ে পড়ে। যে বৃক্ষের মূল শিকড় ও অন্যান্য শাখাশিকড় বিশেষভাবে মাটির গভীরাভিমুখী, সেসব বৃক্ষ বিচক্ষণতার সঙ্গে বাছাই করে নগরীর সড়কের পাশে লাগানো উচিত। এছাড়া কিছু বৃক্ষ আছে যা গুচ্ছমূলের এবং তার শাখা-প্রশাখাও থাকে না, যেমন—খেজুর, নারিকেল, তাল, বিচিত্র প্রজাতির পাল্ম ইত্যাদিও সহজে ভঙ্গুর নয় এবং দৃষ্টিশোভন। শাখা-প্রশাখা বহুল বৃক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে শাখা অতি ভঙ্গুর কিনা সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

আবারও সবিনয়ে স্বীকার করে নিচ্ছি আমি বৃক্ষ বিশারদ নই। নগরীর মধ্যে কিছু দূরে দূরেই সবুজাঞ্চল (গ্রিনবেল্ট ) অবশ্যই অতি প্রয়োজন। তা পুষ্পশোভিত বা ফলদ হতে পারে, হতে পারে বিচিত্র সবুজের শোভাধারী, মূল্যবান কাষ্ঠসম্পদের বৃক্ষও হতে পারে। কিন্তু তা রোপণের আগে কোনটি সবুজ উদ্যানে, কোনটি সড়কের পাশে লাগানোর উপযোগী, সে বিষয়ে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

লেখক: কবি ও কলামিস্ট।

/এমওএফ/আপ-এফএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ