X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংগীতের প্রভাব

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
০৪ মে ২০১৮, ১৫:১৪আপডেট : ০৪ মে ২০১৮, ২৩:৫১

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান সারা বিশ্বে এমন কোনও ভৌগোলিক জাতি-গোষ্ঠী নেই যাদের জীবন সেই আদিকাল থেকে সংগীতের সঙ্গে নিবন্ধিত নয়।  গীত নৃত্য বাদ্য মানুষের স্বভাবজাত নিত্যসহচর। ভাষার জন্মের আগে থেকেই, পরস্পর ভাববিনিময়ের জন্যে দেহভঙ্গি, এবং বাদ্য ছিল বাহন।  মনের আনন্দ-বেদনার প্রকাশের জন্যে কণ্ঠ থেকে এক ধরনের সুরের নিঃসরণও ঘটেছে, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুখ ও দেহের অভিব্যক্তি। 

ভাষার আবিষ্কার এবং তা লিপিবদ্ধ রাখার জন্যে বর্ণের চিহ্ন তৈরি, অনেক পরের ঘটনা।  কিন্তু মানুষ যখন লিখতে জানতো না, তখনও তারা ভাববিনিময় করেছে।  তার জন্যে, দেহ–বিশেষ করে মুখের অভিব্যক্তি, যার মধ্যে আবার চোখের ইঙ্গিতই ছিল প্রধান।  আদেশ-নির্দেশ, অনুনয়-বিনয়, ক্ষিপ্ততা-আগ্রাসন এই সবকিছুর দেহভঙ্গির সঙ্গে চোখের ভাষাও ছিল প্রণিধানযোগ্য।  সন্দেহ নেই, মানুষ যেহেতু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই কণ্ঠস্বর লাভ করে, তাই তারও, ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বহিঃপ্রকাশ ঘটতো।

এই সমস্ত বাদ্য, দেহভঙ্গিমা, ও কণ্ঠস্বরের ওঠা-নামা মিলিয়ে, কবে প্রথম সংগীত হয়ে উঠেছিলো, তার নানা ধরনের ‘মিথ’ বা কল্পকাহিনি ছাড়া কোনও প্রামাণ্য ইতিহাস আজো আবিষ্কৃত হয়নি। একটি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মানুষ তখনও, কোনও ধর্মজাতি হিসেবে বিভক্ত হয়নি।  এমনকি, ঈশ্বরের চেতনাতেও মানুষ বিশ্বাসী হয়েছে অনেক পরে।  এই চেতনার জন্ম হয়, নিতান্তই লৌকিক ভাবে।  যা অজেয়, যা দেখলে ভয়ের উদ্রেক হয়, যে ঘটনার আকস্মিকতা মানুষকে হতবিহবল করে, যে সব কাকতালীয় ঘটনায় শিকার করার সার্থকতা বেশি ঘটে, মানুষ ক্রমে ক্রমে সেইসব দৃশ্যমান বা অদৃশ্য বিষয়কে একটি বিশেষ শক্তি হিসেবে ভাবতে শুরু করে।  তাদের সন্তুষ্টির জন্যে বা কোপানলে না পড়ার জন্যে মানুষ নিতান্তই কিছু কল্পিত উপায় বের করে কারা।  এই উপায়ের বারংবার ব্যবহারের মধ্যে মানুষের চেতনা আচ্ছন্ন হতে থাকে।  তখনও এটা লৌকিক ধর্ম নয়, বরং লৌকিক আচার হয়ে ওঠে।  স্বাভাবিক ভাবেই সেই সন্তুষ্টি বিধানের সঙ্গে অনুনয় বিনয়ের স্বরে কণ্ঠস্বরের প্রয়োগ, দেহের ভঙ্গি এবং বাদ্য থাকতো।  থাকতো শিকার করা পশুর কিছু অংশ তাদের উদ্দেশ্যে রংগীতসার প্রথা।  যদিও তা, রাতের অন্ধকারে  অন্য পশু খেয়ে যেত।  সংগীতকে ‘রাগ বিভাজন’ এসবেরই আতুড়ঘর ওই লোকজ সুর।  আমার অবশ্য ‘উচ্চাঙ্গ’ ‘শাস্ত্রীয়’ এই সব নামের বিষয়ে একটু দ্বিমত আছে।  যদি কোনও সংগীতকে উচ্চাঙ্গ বলে নির্ধারণ করা হয়, তবে তার বিপরিতে ‘মধ্যাঙ্গ’ বা ‘নিম্নাঙ্গ’ সংগীত বলেও অভিহিত করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।  আবার কোনও কিছুকে ‘শাস্ত্রীয় সংগীত’ বললে, কোনোটাকে শাস্ত্রবহির্ভূত বলতে হয়।  কিন্তু যা সংগীত শাস্ত্রের বহির্ভূত, তা তো সংগীতই নয়।  অথবা তা নতুন শাস্ত্রের জন্ম হিসাবেও ধরা যায়।  রাগসংগীত বরং অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।  তবে সংগীতকে এখন বিশ্বের যেখানে যে রূপেই দেখি না কেন, তা ওই লোকসংগীতেরই ক্রম বিকাশ।

বিভিন্ন ধর্মের আবির্ভাব ও প্রকট হয়ে ওঠার পর, ওই লোকসংগীতকেই দেবদেবীর আরাধনায় ব্যবহার করা হয়েছে। ভাষার জন্ম হওয়ার পর, ওইসব সুরের ওপর নানা শ্লোক বসানো হয়েছে। সন্দেহাতীতভাবেই এগুলোর কোনোটিই একেবারে নতুন আবির্ভূত কিছু নয়।  শাস্ত্রকারেরা দেখেছেন, সংগীতের সঙ্গে, বিশেষত নৃত্যের সঙ্গে মানুষের একটা স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগ আছে।  ধর্ম সেটাকেই নানা কৌশলে ব্যবহার করেছে।  ভাষার জন্ম এবং তার লেখ্যরূপ আবিষ্কারের পর রচিত হয়েছে নানা শাস্ত্রের লিখিত গীতি।  মূলত মানুষের উপর সংগীতের প্রভাবকেই ব্যবহার করেছে সমস্ত আদি ধর্ম।
আজকের সংগীত আবশ্য কেবল ধর্মীয় গান নয়। বড় কবিদের হাতে অনেক সময় গানের কবিতাটাই আগে এসেছে, সুর এসেছে তারপর। আবার লোককবিদের ক্ষেত্রে কবিতা ও সুর একসঙ্গেই এসে ধরা দিয়েছে। তাই তারা লেখেননি, গেয়ে উঠেছেন। তার ভাবও নানাধর্মী। এ নিয়ে বিস্তারিত লেখার আকাঙ্ক্ষা রইলো।


লেখক: কবি ও কলামিস্ট।

 

/এমওএফ/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ