মানুষ যা মনে রাখে, তার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে কিছু পাওয়ার যোগ থাকে।
আমার একটা দুর্বল, পলায়নপর মন আছে। সেই মন ভাবে, ‘পাওয়া’ নামে যদি সবুজ সতেজ কোন গাছ থাকত, তো ‘হারানো’ হত তার একটি ডাল। তাই মানুষ কিছু হারালে তার অভাবকে পায়। এ পাওয়ার অবসান ঘটায় এক ও অদ্বৈত মৃত্যু।
আজ যে যোগ হওয়াটা সচল, কাল তা প্রকৃতির নিয়মে অচল হয়ে গিয়ে একটি নিয়মকে রক্ষা করছে। তার নাম ভারসাম্য।
যোগের যেখানে শেষ, বিয়োগের সীমানারক্ষীরা সেখান থেকেই লেফট রাইট শুরু করেছে। এই সমস্ত রাজত্বের রাজামালার বাস পৃথিবীর উপরিতলে না নিশ্চয়ই। মনের আকাশের নিচে। সেখানে মাটি আছে। এবং মানুষ সেই মাটিতে একবার দাঁড়াতে পারলে আর কিছু চায় না। সেখানে রাজ্য পাওয়ার বা হারানোর কোনো বিরতি নেই। অর্থাৎ আমার দুর্বল মনের দেওয়া সূত্রমতে, পাওয়া’র এই আদিম চাকাটাই ঘুরছে।
এই চাকা চিরকাল তার চালক বদলে নিজেকে ঘূর্ণনশীলা রেখে দিয়েছে। তার থামার রাম নেই, তাই লক্ষণও নেই। এখানটায় 'প্রকাশ' প্রকৃতির আরেক নিয়ম।
চক্র আর ভারসাম্য এই দুটি মহানিয়মের ফুল। আমাদের চোখের সামনে ফুটে আছে। রূপ দেখাচ্ছে, সৌরভে অস্তিত্ত্বের জানান দিচ্ছে।
আজ কারো গলায় স্বীকৃতির মালা এসে আর কোনো ত্যাগের ভারসাম্য গড়লো। কাল সেই মালা থাকবে, কিন্তু চক্র মেনে কণ্ঠ যাবে বদলে। মানুষের সামনে প্রাপ্তিযোগের যত অজস্র মাধ্যম আছে, ‘স্বীকৃতি’ তাদের ভেতর সবচেয়ে আরাধনার। কারণ মনের গভীরে, মানুষ তার অস্তিত্বের কারণ খুঁজে না পেয়ে স্বীকৃতিতে তার সান্ত্বনা খুঁজে পায়। স্বীকৃতি তাই সে এতো ভালোবাসে। যেভাবে প্রশ্নকারী ভালোবাসে উত্তর। যেভাবে ভীরু ভালোবাসে তার মনের আড়াল।
কেন এতো থান থান কথা বলা হল? বলা হল কারণ, এ সমস্ত কথার পাথরে যেন মনের ভাবের ওই পাতলা কাগজটা উড়ে না যায়।
কী লেখা আছে সেই কাগজে?
আর দশজনের কাছ থেকে আমার উপস্থিতির, কাজের; সবমিলিয়ে আমার তুচ্ছ অস্ত্বিত্বের প্রতি এই স্বীকৃতিটুকু পেয়ে, প্রকৃতির নিয়মে আমি ভীষণ আনন্দিত হয়েছি।
কিছু কথা ক্লিশে হলেও ঠিক অবান্তর না। বলা চাই। লেখকের জন্যে সবচেয়ে বড় সঞ্জীবনী যে স্বীকৃতি, তা মানুষের প্রেম। জানি, আপামর মানুষের প্রেম কেউ পায় না। তবে জাতপাতের ঊর্ধ্বে প্রেমের পথে প্রকৃতির যারা সত্য সন্তান, তাদের ভালোবাসা অন্তত লেখকের প্রাপ্য। সেটুকু যেন এ অভাজনের বাড়িয়ে দেওয়া পাত্রে পড়ে। নয়তো সে প্রবল অস্ত্বিত্বসংকটে পড়ে যাবে, কোনো সন্দেহ নেই।