X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

২০১৮ নির্বাচন: সংখ্যা মিথ্যে বলে না

মইন গনি
০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:০৯আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:০২

মইন গনি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতি বিশ্লেষকরা খুব বেশি অবাক হননি। নির্বাচনের আগে তারা অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ করে সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন।
২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিট প্রকাশিত পূর্বাভাসে বলা হয় যে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ইউএসএআইডি, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইউকেএআইডি ও ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য বিজয় নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের রেটিং পয়েন্ট ছিল ১৭ শতাংশ। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধারাই অব্যাহত ছিল বলেই দেখতে পাই আমরা।  সাধারণ অনুমানে মনে করা হচ্ছিলো যে বিএনপি হয়তো ৩০ শতাংশ সমর্থন পাবে। তবে পূর্বের নির্বাচনের ফলাফলগুলো পর্যালোচনা করলেই বিএনপির জনপ্রিয়তার এই ধস স্পষ্ট হয়ে যাবে।

১৯৯১ সাল আওয়ামী লীগ ৩০.১ শতাংশ ভোট পায় এবং সংসদে ৮৮ আসন নিশ্চিত করে। অন্যদিকে বিএনপি ৩০.৮ শতাংশ ভোট পায় এবং ১৪০টি আসন পায়। ১১.৯ শতাংশ ভোট নিয়ে জাতীয় পার্টি পায় ৩৫টি আসন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আমরা দেখতে পাই যে খুবই স্বল্পসংখ্যক ভোটের ব্যবধানেও অনেক বেশি আসন জয় সম্ভব। সে সময় জামায়তে ইসলামী ভোট পেয়েছিল ১২.১ শতাংশ। আর আসন পায় মাত্র ১৮টি।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটের সংখ্যা ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭.৪৫। এই ভোটে তারা ১৪৬টি আসনে জয় পায়। বিএনপির ভোট ৩ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৩৩.৬ শতাংশ। ১১৬টি আসন পেয়ে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে তারা। জাতীয় পার্টি ১৬.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩২ আসনে জয়লাভ করে। আর জামায়াতে ইসলামী পায় ৮.৬ শতাংশ ভোট ও ৩টি আসন। আবারও স্পষ্ট হয় যে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানেই আসন সংখ্যার তারতম্য হতে পারে, নির্ধারিত হতে পারে যে কারও হাতে উঠবে দেশের দায়িত্ব।

২০১৮ নির্বাচন: সংখ্যা মিথ্যে বলে না ২০০১ সালের নির্বাচন চমক নিয়ে আসে। আওয়ামী লীগের ভোট সংখ্যা বাড়ে আরও ৫ শতাংশ। ৪১.৪ ভোট পেয়েও আসন পায় মাত্র ৬২টি। অন্যদিকে বিএনপি কম ভোট পেলেও (৪০.০২%) আসন পায় ১৯৩টি। তাদের সঙ্গে জোটবেঁধে জামায়াত পায় ১৭টি আসন। অথচ তাদের ভোট সংখ্যা ছিল মাত্র ৪.২৮ শতাংশ। ৭.২২ শতাংশ ভোটে ১৪টি আসন পায় জাতীয় পার্টি। এই নির্বাচনে আবারও সামনে চলে আসে যে বিএনপি যেখানে জয় পায় সেখানে ব্যবধান ছিল খুবই অল্প। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যেখানে জয় পেয়েছিল সেখানে ব্যবধান ছিল অনেক।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের কাছে হারার পর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ মহাজোট গঠন করে। এতে করে ভোট সংখ্যা আরও বেড়ে যায় দলটির। পরবর্তী নিবাচনে ৮ শতাংশ ভোটে বেড়ে তাদের ভোটসংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ শতাংশে। আসন পায় ২৩০টি। জোটে তাদের সবচেয়ে বড় সহযোগী জাতীয় পার্টি পায় ২৭টি আসন, কিন্তু ভোট ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। বিএনপির ভোট কমে যায় ৭ শতাংশ। ৩৩.২ শতাংশ ভোট পেয়ে তারা মাত্র ৩০টি আসনে জয়লাভ করে। ৪.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জামায়াতে ইসলামী পায় ২টি আসন।

২০০১ ও ২০০৮ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ বলে রায় দেয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সেই দুই নির্বাচনের ফলাফল দেখলেই বোঝা যায় ২০০১ সালের ১৯৩টি আসন থেকে ২০০৮ সালে মাত্র ৩০টি আসনে জয় পায় বিএনপি। বোঝা যায় যে দলটির জনপ্রিয় কতটা কমে গেছে। ২০১৮ সালের শেষ তিন মাসে করা সব জরিপেও দেখা যায় বিএনপির সমর্থন ১৫ শতাংশ কমে গেছে। যেই দলটি সবসময় অন্তত ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছে তাদের জন্য এটা অনেক বড় ধাক্কা।

৩০ ডিসেম্বর বিএনপি এমন এক জোটের নেতৃত্ব দেয় যারা জয়ের আশাও ছেড়ে দেয় এবং প্রচারণা বন্ধ করে দেয়। ফলাফলে দেখা যায় আওয়ামী লীগ ২৫৭ আসনে, জাতীয় পার্টি ২২ আসনে ও তাদের অন্যান্য সহযোগী ৯টি আসনে জয় পেয়েছে। বিএনপি পায় মাত্র ৫টি আসন ও কখনও কোনও আসন না পাওয়া দল গণফোরাম প্রথমবারের মতো ২টি আসনে জয় পায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাই গণফোরামের জন্যই সবচেয়ে ফলপ্রসূ।

২০১৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনটি খুব চমক জাগানিয়া ছিল না। ২০০৮ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট পায় মাত্র ৩২টি আসন। পরবর্তী এক দশকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অনেক দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত ও গ্রেফতার হন। এছাড়া বিএনপির ‘ডিফ্যাক্টো’ নেতা তারেক রহমান হত্যাচেষ্টা ও মানি লন্ডারিং মামলায় পলাতক রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইও তার মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য দিয়েছে। স্কাইপিতে সাক্ষাৎকার নিয়ে তিনি বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছেন। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্যেও বিএনপি বিরোধিতা করেছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর ২৫ সদস্যকে তারা নির্বাচনের জন্য মনোনয়নও দিয়েছে।

অন্যদিকে এই একই দশকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নতি দেখেছে বাংলাদেশ। ইকোনোমিক ইন্টিলিজেন্স এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৮-২০১৮ সালের এক দশকে বেকারত্বের হার ৮ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৪.৪ শতাংশে। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা জানায়, দারিদ্র্য দূর করে জনগণের সুযোগ তৈরিতে দারুণ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ।

ফলে এক দশকে আওয়ামী লীগ আরও ২৫টি আসন বেশি পেয়েছে ও বিএনপি-জামায়াত জোট পেয়েছে মাত্র ৭টি। বাংলাদেশের তরুণরা স্পষ্টতই উন্নয়নের জন্য ভোট দিয়েছে। এক দশকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সময়ে অর্থনৈতিক উন্নতির কথা বিবেচনা করলে বিএনপি জোটের ৭টি আসন পাওয়া একদম কম নয়।

লেখক: আইনজীবী

 

/এমএইচ/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ