X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেড ইন বাংলাদেশ

দাউদ হায়দার
১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৪৪আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৪৬

 

দাউদ হায়দার প্যারিসের প্যালাস দ্য ইটালি মেট্রো স্টেশনে ঢুকতেই একটি বিশাল পোস্টারে চোখ আটকে গেল। সিনেমার পোস্টার। ফরাসি ভাষায় লেখা: LE COMBAT D’UNE OUVRIERE POUR TOUTES LES OUVRIERES. নিচে বিরাট অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা, ‘মেড ইন বাংলাদেশ।’ নিচে বাংলা হরফে ‘মেড ইন বাংলাদেশ।’। পোস্টারে পাঁচ নারীর মুখ। দাঁড়িয়ে। পাঁচ নারীর চারজনের চেহারা স্পষ্ট। ঝলমলে। রঙিন ছবি। মুখের অভিব্যক্তি প্রতিবাদীর। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’- এর পরিচালক রুবাইয়াত হোসাইন।
কবুল করছি, রুবাইয়াত হোসাইনের কোনও ছবি দেখিনি ইতঃপূর্বে। নাম জানা ছিল অবশ্য। চিত্রপরিচালক হিসেবে নানা দেশে বহুখ্যাত ইতোমধ্যেই। পুরস্কৃত। সম্মানিত। তাঁর পরিচালিত ‘আন্ডার কন্সট্রাকশন” প্যারিসে তথা ফরাসি দেশে বহুল আলোচিত। পুরস্কারও পেয়েছেন।
কবুল করতে দোষ নেই, নাম দেখে ভেবেছিলুম, রুবাইয়াত হয়তো পুরুষ। মার্জনাপ্রার্থী। জেন্ডার নিয়ে পুরুষকুলের বাড়াবাড়ি স্বীকার করি। ভুল হতে পারে, হওয়া স্বাভাবিক। যেমন, কানের মধ্যে সেঁধে আছে ‘শওকত’, ‘প্রসাদ’, ‘মৃণাল’। ইত্যাদি। নারীর নামও হয়। রাজস্থানে এক নারীর নাম শুনেছিলুম, ‘হাবিব।’ ইরানে অনেক নারীর নাম প্রসাদ। উত্তর প্রদেশেও ‘মৃণাল’ নারীর নাম। রুবাইয়াতের কাছে ক্ষমা চাইছি। ‘ক্ষমা চাইতে হবে’, সমস্বরে দাবি জানান শিল্পী শাহাবুদ্দীন, আনা ইসলাম (লেখিকা), ওঁদের দুই কন্যা চিত্র ও চর্যা।

জানলুম, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মেড ইন বাংলাদেশের প্রিমিয়াম শো, উপস্থিত ছিলেন রুবাইয়াত হোসাইন।

শো’য়ে বিস্তর দর্শকের ভিড়, শো শেষে নানাজনের প্রশ্ন, কী উত্তর দিয়েছেন, শোনা হয়নি। শুনেছেন চর্যা, বললেন, ‘উত্তরে খুব সপ্রতিভ, ছবির কাহিনি এবং চরিত্রের ঘনঘটার বিশ্লেষণে। পরতে-পরতে সত্যতা।’

ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকারে চর্যার নাম, বললেন, ‘ফরাসি অনুবাদে (সংলাপে) সাহায্য করেছি।’ অর্থাৎ অনুবাদক।

‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এর প্রযোজক ফরাসি। চিত্রগ্রাহকও ফরাসি। সম্পাদনায় ফরাসি। বাকি সব, অর্থাৎ, স্থানকাল-পরিবেশ, চরিত্র, মিউজিক বাংলাদেশের।

৪ ডিসেম্বরে, প্যারিসের একটি নতুন সিনেমা হলে (এই সিনেমা হলে আগে যাইনি) দেখলুম, ছবির সব দর্শক ফরাসি, চারজন বাংলাদেশি (আমরা বাদে)।

শো’য়ে হাজির নন রুবাইয়াত, গিয়েছেন ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগে, ছবির প্রিমিয়ামে, উদ্বোধনী উপলক্ষে। দুঃখ মিস করলুম সুন্দরী, সাহসী রুবাইয়াতকে।

ছবির নামেই (মেড ইন বাংলাদেশ) মালুম হয়,কি নিয়ে ছবি। হ্যাঁ,বাংলাদেশের গার্মেন্টস (পোশাক শিল্প) নিয়ে।

ছবির শুরুতে যা দেখি, মনে হচ্ছিল, গার্মেন্টস নিয়ে ডকুমেন্টারি। শুরুটাও তাই। দরকার ছিল এই শুরুর। দ্বিতীয় দৃশ্যের পরেই পট পরিবর্তন। অসাধারণ মুন্সিয়ানা রুবাইয়াতের, ঘটনাপ্রবাহ গার্মেন্টস-এর প্রাত্যহিক কাজ, জীবন (দুর্বিষহ জীবন), মালিকের অত্যাচার, শ্রমিকদের সঙ্গে বেতাল সম্পর্ক, কারখানার দুরবস্থা, শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় মালিক ও সরকারের উপর মহলের ভয়ঙ্কর দ্বিচারিতা, কর্মীদের সংগ্রাম, শ্রমিকদলের নেত্রীর বাঁচামরা অনিশ্চয়তা, কিন্তু সংগ্রামে অবিচলিত। কোনও ধমকাধামকি, চোখরাঙানি, শাসন, অত্যাচারেও, এমন কী প্রলোভনেও মাথা অবনত নয়। শ্রমিক সংগঠন তৈরি তাঁর লক্ষ্য, জীবনের উদ্দেশ্য, নানা কাঠখড় পুড়িয়ে প্রতিষ্ঠা করেন, সরকারের শ্রমদপ্তরকে আইনের প্যাঁচে ফেলে। না ফেললে তাঁর উপায় ছিল না, তাঁর জীবন, শ্রমিকদের জীবনও মৃত্যুমুখী।

রুবাইয়াতের ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ আদৌ তথ্যচিত্র নয়। তথ্যচিত্রের আদলে ঘটনার পরম্পরা, গার্মেন্টস শিল্পের মূল চিত্রাবলি। দৃশ্যের পরতে-পরতে গার্মেন্টস নারী শ্রমিকদের জীবন। আছে প্রেমের দৃশ্য। আছে ঘনিষ্ঠতা। যা, জীবনেরই অংশ। যা, জীবনপ্রবাহে চলমান। যা, জীবনের টানাপোড়েন।

রুবাইয়াত কোন ব্যথা বেদনা থেকে এই ছবি নির্মাণ করেছেন, অজানা। এইটুকুই জানি,বাংলাদেশের গার্মেন্টসের নারী শ্রমিকদের যে চিত্র চিত্রায়ণ করেছেন, বিদেশি গার্মেন্টস কোম্পানি যদি সঠিক অনুধাবন করেন, মানবতা নিয়ে ভাবনার নানাদিক উন্মোচিত। আদৌ ভাববে কিনা সন্দেহ। ব্যবসাই প্রধান। গার্মেন্টস ব্যবসায় মুনাফা শতকরা নিরানব্বই, ছবির সংলাপে বলা আছে।

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ আমেরিকা-কানাডাসহ পৃথিবীর নানা দেশে প্রদর্শিত হবে, ভারতেও হবে, প্রদর্শন করবেন প্রযোজক। বাংলাদেশেও প্রদর্শন করবেন, যদি অনুমতি পান সরকারের।

অনুমতি পাবেন কিনা সন্দেহ, সেন্সর বোর্ড আটকাবে, বিশেষত কিছু সংলাপে এবং দৃশ্যে। শ্রম মন্ত্রণালয় আপত্তি করবে। কেন করবে, প্রশ্ন। চিত্রদৃশ্য, সংলাপ তো গার্মেন্টস মালিক, শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্তার সঙ্গে কথাবার্তা বলেই চিত্রগ্রহণ। হোক তা সিনেমার প্রয়োজনে।

মেড ইন বাংলাদেশ-এ রুবাইয়াত হোসাইন নানা চরিত্রের মুখে আঞ্চলিক ভাষার যে ‘ঘরানা-সংস্কৃতি’ ব্যক্ত করেছেন, শুনে, নির্বাসিত দেশকালে স্বদেশ আপন, ঘরোয়া। রুবাইয়াত হোসাইনকে আত্মিক ধন্যবাদ।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ