X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছোট ছোট স্বপ্নগুলো

মাহমুদুর রহমান
০৪ ডিসেম্বর ২০১৫, ১২:৫৬আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৭:১৮

Mahmudur Rahman_editedশেষ কবে মাথায় তেল পড়েছে জানবার উপায় নেই। পাক না ধরলেও মহসিনের মাথা ভরা চুলে অযত্নের ছাপ। সুগঠিত চোয়ালের দাড়ি কামানো হলে মাঝারি উচ্চতার লোকটিকে ভালোই দেখাতো। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার অবকাশ নেই। দুপুর থেকে শুরু হয় তার পিয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ এবং তেলের পিঠা তৈরি। পথচারীর বিকেল-সন্ধ্যার ক্ষুধা নিবারণের কাজে মাথা নিচু করে চলে ভাজাভুজি। বাংলামটরের মোড়ে নুর জাহান টাওয়ারের নিচে ভ্রাম্যমাণ দোকানে ভিড় লেগেই থাকে। যার অর্থ  গ্রহণযোগ্য ও গুণগত মান এতে রয়েছে এবং সাশ্রয়ী দামে। তিন টাকার বেগুনি আর আলুর চপে কতটুকু বেগুন আর আলু থাকে তা নিয়ে তার কোনও মন্তব্য নেই, ক্রেতারও নেই প্রশ্ন।

নাম জিজ্ঞেস করলে শুধু মহসিন বলে ক্ষান্ত হলেও, সাহায্যকারী স্ত্রীর পরিচয় দিতে গিয়ে স্পষ্ট উচ্চারণে নাসিমা বেগম- পুরো নামটাই জানিয়ে দেয়। ভোলার রেস্তোরাঁর বদ্ধজীবন ছেড়ে বড় কিছু করার স্বপ্নের হাতছানি তাকে টেনে আনে ঢাকায়। ব্যবসা এবং সাধারণ সমাজব্যবস্থার বিপরীত স্রোতে চলে তারা। নাসিমা যোগারযন্ত্রের দায়িত্বে, মহসিনের কাজ তাৎক্ষণিক ভাজাভুজি।

শান্ত, সুন্দর, গোল মুখটি উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। নাকফুল সমৃদ্ধ খাড়া নাক, ছোট্ট কানের দুল, হাত দুটো খালি। চোখে নাসিমার কোনও কিছুই এড়ায় না। কে কী চাইলেন, হিসেব-নিকেশ এমনকি টাকা রাখার কাজটিও তার। সবদিকেই খেয়াল। গরিবের টিস্যু না থাকলেই বা-কি, মসৃণ করে ছেড়া পত্র-পত্রিকার টুকরো বিলি করতে তার দেরি হয় না।

অকপটে মহসিন স্বীকার করে খুব ভালো আছে তারা। বিকেল তিনটে থেকে রাত নয়টা অব্দি কাজ করে, খরচপাতি বাদ দিয়ে ৩০০-৩৫০ টাকা ঘরে নিতে পারে দৈনিক। ওটা দিয়ে কোনওমতে চলে যায়। রাতে পায়ে হেঁটে বস্তির ঘরে ফিরে যায় দু’জনে। মাঝে-মধ্যে যখন বেশি শ্রান্ত, তখন বাসে ওঠে। রিকশায় ওঠা বিলাসিতা, তবে যেদিন আয় একটু ভালো হয়, সেদিন কদাচিৎ, একটু আতিশয্য হয়।

গ্রাহক সেবা কী? একগাল হেসে মহসিন বলে ‘এই ঠিকমতো খাবার আগাইয়া দেওয়া- আর কি’। সামাজিক মাধ্যমের কথা ও শুনেছে- মুঠোফোনে ফেসবুকে যোগাযোগ। ওর কথা শুনে ব্যস্ততার মাঝেও শান্ত হাসি নাসিমার। মুক্তচিন্তা কী? ‘ওসব বুঝে কাম নাই’।

ভবিষ্যত নিয়ে বলল নাসিমা। একটা স্থায়ী ব্যবসার স্বপ্ন সে দেখে, কিন্তু অতো লগ্নী কোত্থেকে আসবে। ব্যাংক ঋণের কথা ওঠালে লাজুক হাসি দিয়ে ঘোমটা ঠিক করে বলে। ‘আমাদের মতো গরিবরে ক্যাডা ঋণ দিব?।’

আলস তারল্যের আধিক্যে ভারাক্রান্ত ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়ার কেউ নেই। আর যারা ঋণ পাওয়ার যোগ্য, তারা জানে না কে তাদের ঋণ দেবে। বড় ব্যবসায় নিথরতার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ছয়ের ঘরে সচল এই সব ছোট ব্যবসার কারণে। যেসব ছোট ছোট স্বপ্ন দিয়ে গড়ে উঠবে বড় স্বপ্নগুলো, সে স্বপ্ন দেখার অভয় কৈ?

লেখক: সিএসআর এবং কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ