অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে রাজু আহমেদ মামুনের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ মিথের ঘোড়া। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান চৈতন্য বইটি প্রকাশ করেছে , প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর, দাম রাখা হয়েছে ১৩৫ টাকা।
মিথের ঘোড়া’র পাণ্ডুলিপি থেকে বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য পাঁচটি কবিতা প্রকাশ করা হলো।
চন্দ্রপ্রভা
শালগাছেদের কাছে শুনেছিলাম তোমার জন্মগল্প
একরাতে চন্দ্রমার প্রভা যখন বিলের জলে
শুভ্রপদ্মে জমে উঠেছিল...
পদ্ম কি তা পারে ধরে রাখতে! হঠাৎ জন্মালে তুমি
বাঙালি ভেনাস, চন্দ্রপ্রভা
শুধু আজ মাঝরাতে আমার জীবনশয্যায় ছড়িয়ে,
অন্ধকার খুঁজছি তোমার
চন্দ্রপ্রভা, তোমার তিমিরে রুয়ে যাবো জীবনের বীজ
নবজন্মের শরীর আমার কালের ভায়োলিনে
আগুন ঝরাতে ঝরাতে নিয়ে আসবে উজ্জ্বল দিন
এ মহিমান্বিত রাতের স্মারক সামাজিক শব্দের বাজারে
থাক পরিচয়হীন
চন্দ্রপ্রভা, নাও তবে অমৃত বিষের পেয়ালা।
সেতু
চঙ্গা মই সেতু! সেতু বুনি—সেতু;
সেতু বুনতে বুনতে মহাকাশে ভেসে চলি
অনন্তের অন্ত—আমি তুমি, ম্যাজিক মাকড়;
বুনে চলি, বুনে চলি-এ প্রাণ! এ হলো তুমি-আমি
বুনে চলি ডাবল হেলিক্স; বুনে চলি জেনেটিক বয়ান
বুনে চলি তথ্য স্বয়ং; বুনে চলি—বুনে চলা।
প্রাচীন সমুদ্রে—দূরকালে এই সেতু মেলেছিল ডানা
তারপর বুনে চলা; জলে জলে, জলে স্থলে, স্থলে হাওয়ায়
স্বয়ম্ভু এই সেতু—এই প্রাণ স্বয়ং খোদা
বেড়ে যাচ্ছে—করে যাচ্ছে—সময় রচনা!
পিতার শরীর ছেড়ে যেমন জীবন ছুঁতে
এসিড বৃষ্টির রাতে—ফেলপিয়ন টিউব ধরে—দিয়েছিনু দৌড়
জন্মপূর্ব সব সহজাতক হারিয়ে...
তাইতো জীবন এক বিজয় স্মারক—
প্রাণসেতু সুমহান ডাবল হেলিক্স প্রোটিনের ভাষা।
অর্থশূন্য—মহাশূন্যে এই সেতু অর্থ স্বয়ং, তাই
বুনে যাই, বুনে যাক, বুনে যা—সেতুবিদ্যার প্রকাশ গাথা।
মোম
ও মোম, ও গলে যাচ্ছ যে মোম
আমি এক প্রাচীন শামান।
বাইসন-গুহা-বনপ্রান্তর থেকে
দীর্ঘ কৃষিভূমি পেরিয়ে পেরিয়ে
দেবতাদের সাথে প্রাচীন নগরে
এসেছিলাম।
একদিন চলে গেছে দেবতারা, তবু
মুঠোভরা সামান্য উত্তাপ নিয়ে
তোমারে খুঁজেছি বহুকাল।
ও মোম, ও গলে যাচ্ছ যে মোম
কী হবে এবার!
মিথের ঘোড়া
দৌঁড়াচ্ছে মিথের ঘোড়া
নিউরনে নিউরনে খুরের আওয়াজ
নড়ে ওঠে মৃতের হাত পা;
আজন্ম জীবন পায়নি যারা।
কোথায় চলেছে এসে!
মগজে আছে কম্পাস—সে মিথের ঘোড়া।
কোনো এক কালে এইসব ঘোড়াগুলি জন্মেছিলো
মৃত্যুর বিপরীতের অন্ধকারে;
কালের তান্ত্রিক এসবেই বানিয়েছে মৃত্যুবাণ।
বইছে বালুঝড় এশিয়ায় আফ্রিকায়
ঝড়ের আগায় দৌঁড়াচ্ছে মৃতের দেহ
ভেতরে মিথের ঘোড়া।
পুণ্যের নামতা মুখে, যেন—কবর থেকে এসেছে গোলাম।
বাহ! ঘোড়া হয়েছে সওয়ার!
ঘোড়া হয়েছে সওয়ার!
ও তান্ত্রিক, ওগো বিশেষণযুক্ত পুঁজির ঈশ্বর
দেখ, মরে যাচ্ছে কত কত মৃত দেহ
মরে যাচ্ছে কত কত কাস্টমার!
দুয়ারে খাড়া
রক্তের মধ্যে প্রাচীন কোন পিতামহ
বৈঠা ঠ্যালে, গান ধরে—
‘আহা আনন্দ রচিব
আহা আনন্দ রচিব'
কী রচিব পিতামহ!
শতকোটি বছরে করেছি রচনা
এই প্রাণ এই দেহ।
তারপর এলো মগজের দিন
দেহ কোষে যত না রচনা ধরে
তার চেয়ে বহুগুণ জন্মে-জমে মগজ ভেতরে।
সেই থিকা আমাদের দেহ অতিরিক্ত দেহ
তাহা-শব্দে শব্দে নড়ে
বাক্যে বাক্যে ঘোরে
গীতল হয়া উড়াল দেয়
নব জন্মের পাড়ে।
এইভাবে নব নব জন্মে—
তবু তার কিছু থাকে কিছু থাকে না
চেহারা হারায় চেহারা বাড়ায়
নতুন অভিঘাতে।
একদিন আমরা তাহার ছায়া আঁকিলাম,
কায়া বাঁধিলাম।
সে কায়ায় কথা কয় ডেমোক্রিটাস আজও!
এতো বড় দেহ, এতো এতো দেহ—
কী বিরাট! হা-বিরাট!
আমাদের মরণ হইবে—কে কহে বলো!
তাইতো আনন্দ রচিতে কহো-আনন্দ!
কী প্রকারে রচিব হে পিতামহ!
যখন প্রাচীন বাথান থিকা ছাড়া
তোমাদেরই পাগলা বয়ার-কালা মোষ
শিংয়ের শাসন নিয়া দুয়ারে খাড়া!