সকাল সকাল রমনা বটমূলে গিয়ে পান্তা-ইলিশ খাওয়া হচ্ছে না আর এইবার। অংশ নেওয়া হচ্ছে না মঙ্গল শোভাযাত্রায়। লাল শাড়ি পরে সেজেগুজে শহর ঘোরাও বন্ধ। তবে নিজ বাসায় পরিবারের সবার সঙ্গে সুস্থ অবস্থায় যদি কাটাতে পারেন দিনটি, এই আনন্দই বা কম কী? বৈশ্বিক মহামারীর এই সময়ে কেবল নিজের জন্যেই নয়, পরিবার তথা পুরো দেশের সুরক্ষার ভার কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের হাতেই ন্যস্ত। তাই এবার বৈশাখের প্রথম দিনটিতে আনন্দ খুঁজে নিন একটু অন্যভাবেই, একদম নিজের মতো করে।
করোনাভাইরাসের আতঙ্ক, দিনের পর দিন গৃহবন্দি থাকার অবসাদ, ভবিষ্যতের চিন্তা- সবকিছুকে সঙ্গে নিয়েই আজকাল কাটছে আমাদের দিন। এরপরেও নিজেকে ভালো রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা কিন্তু চালিয়ে যেতেই হবে। কারণ শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটাও ভীষণ জরুরি এখন। নববর্ষ উপলক্ষে টুকটাক আয়োজন করে ফেলুন ঘরেই। দেখবেন বেশ ফুরফুরে লাগবে।
এদিনের জন্য একটি প্লে লিস্ট রেডি করে রাখতে পারেন। এসো হে বৈশাখ গানের পাশাপাশি রবীন্দ্রসংগীত অথবা উৎসবের গানগুলো থাকলো এই লিস্টে। দিনভর চলুক এসব গান। ঘরের সাজে বৈশাখের আবহ আনতে একটি বড় মাটির পাত্রে পানি নিয়ে বারান্দা থেকে ফুল এনে পাপড়ি ছিটিয়ে দিন। তুলে রাখা মোমবাতি ভাসিয়ে দিতে পারেন এই পানিতে।
সকালের নাস্তায় আয়োজন রাখতে পারেন পান্তা ভাতের। আলাদা রান্না করতে না চাইলে পেঁয়াজ/মরিচ কিংবা আগের দিনের তরকারিই সই! যদি মনে করেন আরেকটু বেশি কিছু রাখবেন তবে ঝটপট বানানো যায় এমন কিছু ভর্তা করে ফেলুন। আলু, ডিম, বেগুন, টমেটো অথবা শুঁটকি ভর্তা থাকতে পারে মেন্যুতে। ফ্রিজে ইলিশ মাছ থাকলে দুপুরের খাবারের আয়োজনে রাখতে পারেন ইলিশ মাছের দুই এক পদ। খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা সঙ্গে মচমচে বেগুন ভাজা, বেশ জমবে কিন্তু! ঘরে পর্যাপ্ত যোগান থাকলে ইলিশ পোলাও রান্না করে ফেলা যেতে পারে। অথবা গরম গরম ভাতের সঙ্গে সর্ষে ইলিশ! আর হ্যাঁ, ঘরে মাটির তৈজস থাকলে এদিনের খাবার পরিবেশনে রাখুন সেগুলো। পুরোপুরি বৈশাখী আমেজ চলে আসবে খাবার টেবিলে।
এখন যেহেতু অফুরন্ত অবসর, ঘরেই বানিয়ে ফেলতে পারেন বাতাসা, খুরমা কিংবা নাড়ু। বাঁশের ঝুরিতে মুড়ির উপরে এগুলো সাজিয়ে নিন। পরিবেশন করুন ঘরের সদস্যদের সামনে। সঙ্গে থাকতে পারে গরম গরম চা। বৈকালিক আড্ডাটা বেশ জমে যাবে। চাইলে নববর্ষ উপলক্ষে মিষ্টি বানিয়ে ফেলতে পারেন ঘরে। বছরের প্রথম দিন একটু মিষ্টিমুখ হলে তো ক্ষতি নেই!
বিকেলের দিকে পছন্দের কোনও লাল শাড়ি আর ছোট্ট একটি টিপ পরে গুন গুন করে গেয়ে উঠতেই পারেন এসো হে বৈশাখ.. চলে যেতে পারেন ছাদে অথবা বারান্দায় বসে পড়তে পারেন প্রিয় কোনও বই। ঘরে শিশু থাকলে তাকেও পরিয়ে দিন লাল শাড়ি। পুরুষ সদস্যরা পরলো পাঞ্জাবি। এদিনের সান্ধ্য আড্ডাটা না হয় লাল-সাদা পোশাকেই হোক! বন্ধু বা প্রিয়জন যাদের সঙ্গে নিয়ে বৈশাখের ঘোরাঘুরি হয় প্রতি বছর, ভিডিও কলে তাদের সাথে আড্ডা দিন।
এরপরের বর্ষবরণে হয়তো থাকবে না কোনও বাধ্যবাধকতা। আবার আগের মতো প্রাণের উৎসবে মেতে উঠবে সবাই। আবারও রাজপথে রঙের ছটা নিয়ে এগিয়ে চলবে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সুরের মূর্ছনায় ভেসে যাবে রমনা বটমূল। আবারও চুলের খোঁপায় বেলিফুল গুঁজে প্রিয়জনের হাত ধরে ঘোরা হবে শহর। এবারের এই অন্য রকম বৈশাখেই নাহয় চেষ্টা থাকুক একটু স্বস্তি খুঁজে নেওয়ার।
মডেল: স্বাগতা ছবি: সাজ্জাদ হোসেন