X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

কর্মক্ষেত্র পুনরায় সচল করার পূর্বে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হোন

কাজী জাহিন হাসান
২৮ এপ্রিল ২০২০, ১২:৫১আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২০, ১৯:১৭

কাজী জাহিন হাসান সঠিক পদক্ষেপের অভাবে আমাদের সংক্রমণের বিস্ফোরণ এবং পুনরায় লকডাউনের সম্মুখীন হতে হবে।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯-এ প্রায় ২.৬ মিলিয়নেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে; তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কেবল ৪ হাজার ১৬৬ জন নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত এবং ১২৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে (২৩ এপ্রিল পর্যন্ত)।
এখন অবধি আমরা নিজেদের বেশ ভাগ্যবান মনে করতে পারি; আমাদের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ, তবে বিশ্বের কোভিড-১৯ মৃত্যুর মাত্র ০.০৭ শতাংশ এ দেশের। আমরা কেন এত ভাগ্যবান, তা বোঝার চেষ্টা করি আসুন।
২৫ মার্চ, ভাইরাসটির বিস্তার কমাতে সরকার সব কর্মস্থল বন্ধ করে দেয়। ফলে ঢাকার বেশিরভাগ শ্রমিক এবং কর্মচারী তাদের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান; ঢাকার বস্তি, যা সাধারণত যেকোনও মহামারির জন্য একটি নিখুঁত প্রজনন ক্ষেত্র হতে পারতো, সেখানকার ঘনবসতি বেশ কমে যায়। 

সম্ভবত এটিই ঢাকায় আক্রান্ত রোগী সংখ্যার বিস্ফোরণ রোধ করেছে। জনাকীর্ণ ঢাকার বস্তিতে ‘সামাজিক দূরত্ব’ সম্ভব নয়; বস্তিবাসীরা যদি ঢাকায় থাকতো, তবে আমরা এতক্ষণে সম্ভবত এর চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগী দেখতে পেতাম।

কর্মক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংক্রমণ রোধ হয়েছে, সেই সঙ্গে এটি অবর্ণনীয় দুর্গতিও দিয়ে গিয়েছে। কর্মজীবী নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর কোনও সঞ্চয় নেই, নেই কোনও আয়, তাই তারা খাদ্য কিনতে পারেন না; ফলে খাদ্যের চাহিদাও হ্রাস পেয়েছে।

কৃষকরা পচনশীল পণ্য বিক্রি করতে অক্ষম হচ্ছে, যা প্রচুর পরিমাণে নষ্ট হচ্ছে; কৃষিতে, এক নিমেষেই উৎপাদন বন্ধ করা যায় না। স্পষ্টতই, কর্মস্থল অবশ্যই পুনরায় খুলতে হবে; সমৃদ্ধ দেশগুলোতে, লোকেরা কর্মস্থল বন্ধ থাকাকালীন কয়েক মাস ধরে সঞ্চয় বা সরকারি সুবিধা নিয়ে চলতে পারে; বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।

কর্মস্থল পুনরায় খোলা হলে শ্রমিকরা ঢাকার বস্তিতে ফিরে আসবে, যা আবার উপচেপড়া ভিড়ের কারণ হবে; এরপরে আমরা সম্ভবত কোভিড-১৯ কেসের বিস্ফোরণ দেখতে পাবো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে যে একটি লকডাউন শিথিলকরণ করোনাভাইরাস সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় তরঙ্গ’কে ট্রিগার করতে পারে এবং সরকারকে লকডাউন শিথিল করার আগে কিছু শর্ত পূরণ করার (দরকারি ব্যবস্থাগুলো গ্রহণপূর্বক) এবং তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। আমাদের এই সুপারিশ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত।

(ক) রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে; প্রতিদিন কেবল কয়েকটি নতুন কেস হওয়া উচিত, এগুলোর সবই পূর্ববর্তী কেসের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়া উচিত। ২৩ এপ্রিল, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশে ৪১৪টি নতুন কেসের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানা যায়; অতএব, এটি বলা যায় না যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

কর্মক্ষেত্র পুনরায় খোলা এবং ঢাকার বস্তিগুলোতে আবার মানুষের উপচেপড়া ভিড় পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। প্রতিদিন শত শত কেস শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে পৃথক রাখতে কোয়ারেন্টিন সুবিধা রাখতে হবে; তাদের বেশিরভাগ কেস হবে মৃদু, যার জন্য হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হবে না।

(খ) স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিটি কেস শনাক্ত করতে, পরীক্ষা করতে এবং পৃথক করতে ও প্রতিটি পরিচিতির সন্ধান করতে সক্ষম হতে হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে পরীক্ষা খুব স্বল্পসংখ্যক হয়েছে; প্রাথমিকভাবে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে যদি তারা বা তাদের পরিবারের কেউ বিদেশ থেকে ফিরে না আসেন, তবে পরীক্ষা করা হয়নি। 

২০২০ সালের মার্চ মাসে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ‘তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা’র ১১ হাজার ৯৩০টি ঘটনা ঘটে; এসব রোগীর করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা উচিত ছিল, তবে সম্ভবত তা করা হয়নি।

এছাড়া জ্বর, শুকনো কাশি এবং অবসাদে আক্রান্ত প্রতিটি একক রোগীর (সবচেয়ে সাধারণ কোভিড-১৯ উপসর্গ) পরীক্ষা করা উচিত; যদি ফলাফলে করোনা পজিটিভ আসে, তবে পরিবারের যেসব সদস্য তাদের সঙ্গে থাকেন, তাদেরও পরীক্ষা করা উচিত।

ঢাকার জনাকীর্ণ বস্তিতে, লক্ষণসমেত আক্রান্ত প্রতিটি বাসিন্দাকে পরীক্ষা করতে হবে এবং সব পজিটিভ কেস পৃথকীকরণ করতে হবে; জনাকীর্ণ বস্তিতে কোয়ারেন্টিন অসম্ভব। সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ সরকারের আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ শনাক্তে প্রয়োজনীয় জনবল রয়েছে।

(গ) ‘হটস্পট’ হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করা উচিত এবং কার্যকর সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত (যেমন: উপযুক্ত পিপিই ব্যবহার)।

দুর্ভাগ্যক্রমে, পুরো বস্তি হটস্পটে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; লক্ষণ উপস্থিত এমন সবার পরীক্ষা করার জন্য, এবং যারা করোনা পজিটিভ এমন সবাইকে কোয়ারেন্টিনে পৃথকীকরণের জন্য ঢাকা বস্তিতে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশদের একটি দল থাকা দরকার।

সব বস্তিবাসীকে এটি ব্যাখ্যা করতে হবে যে, বস্তিবাসী  বাকিদের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। অন্যান্য দেশে লোকেরা কর্মস্থল এবং বিদ্যালয়ের মতো জনাকীর্ণ স্থানে সংক্রমিত হচ্ছে; তবে ঢাকার সব বস্তিবাসী কার্যত জনাকীর্ণ স্থানে বাস করেন এবং তারা যেখানে থাকেন সেখান থেকেই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। 

(ঘ) স্কুল এবং কর্মক্ষেত্রে যথাযথ সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যেমন- মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া এবং তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ। লক্ষণযুক্ত যেকোনও ব্যক্তিকে এই জায়গায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।

ঢাকার বস্তিতে ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার চেয়ে এটি বেশ সহজসাধ্য। এমন একটি কর্মক্ষেত্র যেখানে অনেক লোক সংক্রমিত হতে পারে, তা বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে; বস্তি বন্ধের কথা ভাবা কি বাস্তবসম্মত? বাসিন্দারা কোথায় যাবে?

(ঙ) বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য নতুন কেস যাতে তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর কোয়ারেন্টিন সুবিধা স্থাপন করতে হবে; বাংলাদেশে ‘বাড়িতে কোয়ারেন্টিন’ অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে ইতোমধ্যে।
(চ) জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার বস্তিতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বাস করেন তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা, আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ অনুসন্ধান এবং পৃথকীকরণের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে; তাদের বুঝতে এবং মেনে নিতে হবে যে এই পদক্ষেপগুলো তাদের কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয়। 

যদি এই ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কর্মক্ষেত্রগুলো পুনরায় খোলা হয়, তবে খুব সম্ভবত আমরা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার একটি বিস্ফোরণ দেখতে চলেছি (বিপুল সংখ্যক মৃত্যুর সঙ্গে), যার ফলস্বরূপ দ্বিতীয় লকডাউন অবশ্যম্ভাবী। 

লেখক: চেয়ারম্যান, টু-এ মিডিয়া লিমিটেড

/এসএএস/এমএমজে/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ