X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

হজযাত্রীদের উদ্বেগ কি কাটবে?

মোস্তফা হোসেইন
১৯ জুন ২০২০, ১৩:০৪আপডেট : ১৯ জুন ২০২০, ১৩:০৯

মোস্তফা হোসেইন করোনার কারণে এ বছরের হজ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সৌদি আরবের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে অনিশ্চয়তায় রয়েছে বাংলাদেশের অর্ধলক্ষাধিক নিবন্ধিত হজযাত্রী। ৩০ জুলাই সম্ভাব্য হজের তারিখ হলেও আজ পর্যন্ত বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি বাংলাদেশের কাছে। ইতোমধ্যে সর্বাধিক মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাইসহ কয়েকটি দেশ হজ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এমন কথা বললেও আসলে দ্বিধাহীন নয়। বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ হজ বাতিলের ঘোষণা দিতে পারছে না। তারা সৌদি আরবের দিকে চেয়ে আছে, তাদের বক্তব্য কী আসে সেই অপেক্ষায়।
এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষের হজে যাওয়ার সুযোগ ছিল। প্রস্তুতি পর্বে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হলেও হজে যেতে ইচ্ছুকদের মধ্যেও দ্বিধা কাজ করতে শুরু করে। যে কারণে মাত্র ৫৫ হাজার মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে একাধিকবার সময় বাড়ানোর পরও। সংখ্যার দিক থেকে এটাও কম নয়। এই বিশাল সংখ্যক হজযাত্রী এখনও অন্ধকারে রয়েছে পুরোপুরি। তাদের বড় একটি অংশ যে পরিস্থিতির কারণে ইচ্ছা থেকে দূরে সরে এসেছে সেটাও নিশ্চিত।

হজ বাতিল হওয়ার আশঙ্কাটা প্রবল হয়ে উঠছে সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। এই পরিস্থিতির কথা আঁচ করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, হজ বাতিল হলে নিবন্ধিত হজ গমনেচ্ছুদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে হজ নীতিমালার বিষয়টি চলে আসে। করোনার মতো মহামারির কারণে কিংবা সৌদি আরব হজ বাতিল করলে টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি হজ নীতিমালায় স্পষ্ট নয়। হজ নীতিমালার ২১-১ ধারায় বলা হয়েছে, মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতা/দুর্ঘটনাজনিত কারণে সৌদি আরবে প্রদেয় বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও পরিবহন ফি জমাদানকারী হজযাত্রী পবিত্র হজব্রত পালনের লক্ষ্যে সৌদি আরব গমনে ব্যর্থ হলে কেবল অব্যয়িত অর্থ (বিমান ভাড়া  খাওয়া খরচ) ফেরত পাবেন।

২১-৩ ধারায় বলা হয়েছে বিমান ভাড়া ফেরত প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের বিধি বিধান প্রযোজ্য হবে।

এদিকে সৌদি আরব সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, করোনা বিস্তার রোধে তাদের প্রচেষ্টা বিঘ্নিত হতে পারে সেই শঙ্কায়। ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী কারফিউ জারি করে তারা নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছে। সেই জায়গায় যদি করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে লাখ লাখ মানুষ সৌদি আরবে উপস্থিত হয় তাহলে তাদের করোনা লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ হজ বাতিলের পক্ষে। এটা অনুমাননির্ভর হলেও বাস্তবতা এমনটাই। কারণ তারা করোনা প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে শুরু থেকেই।

আবার দেশটির অর্থনৈতিক দিক চিন্তা করলে সীমিত সংখ্যার যে আওয়াজ উঠেছিল তাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রাকৃতিক সম্পদ তেল থেকে দেশটি কোটি কোটি ডলার আয় করে। কিন্তু হজ মাধ্যমে তাদের আয়ও চমকে দেওয়ার মতোই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর ৮৫ লাখের বেশি মানুষ সৌদি আরব যায় হজ ও ওমরাহ পালন করার জন্য। আর এ থেকে তাদের বার্ষিক আয় হয় ১২ বিলিয়ন ডলার। করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের তেল থেকে আয় কমে গেছে অনেক। দ্বিতীয় আয়ের পথ হজও যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে বিপাকে পড়বে তা নিশ্চিত। সুতরাং যারা অর্থনৈতিক বিষয়ে চিন্তা করেন তারা এখনও বলছেন, ভাবতে হবে আরও। তবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে সেই দেশের সরকার যেভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তাতে মনে হয়, হজ সম্ভবত বাতিলও হয়ে যেতে পারে। আর এমন হলে ২২২ বছর পর প্রথম এবারই হজ বাতিল হবে।

তথ্য আছে ৬২৯ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত ৪০ বার হজ বাতিল হয়েছে। কখনও রাজনৈতিক কারণে, কখনও মহামারির কারণে। সুতরাং এবারও যদি হজ বাতিল হয়, তাহলে এটা নজিরবিহীন হবে না। এমনকি হজরত মোহাম্মদ  (স.) হুদায়বিয়ায় থেকে ওমরাহ হজ করা থেকে বিরত থাকেন কাবা শরিফ শত্রু পরিবেষ্টিত থাকার কারণে। রাসুল (স.)-এর এই উদাহরণটিও ইঙ্গিতবহ।

মহামারির কারণে হজ বাতিল করার ইতিহাস নতুন নয়। ১৮৩৭ সালে মক্কা নগরীতে প্লেগ আঘাত হানার কারণে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত হজ স্থগিত ছিল। তার কয়েক বছর পর  ১৮৪৬ সালে মক্কায় কলেরার আঘাতে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, তার সূত্র ধরে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত হজ হয়নি। একইভাবে ১৮৬৫ ও ১৮৮৩ সালেও কলেরার কারণে হজ হয়নি। (ইকনা, এপ্রিল ২০২০) সুতরাং এ বছর হজ বাতিল হলে সেটা নজিরবিহীন হবে না।

আর যদি সৌদি আরব সীমিতভাবে হজ পালনের সুযোগ দিতে চায়ও তারপরও বাংলাদেশ নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যৌক্তিক দিক থেকে বিবেচনা করলে সেটাও অবৈধ হবে বলে মনে করি না। সেক্ষেত্রে মানুষের ধর্মীয় আবেগের প্রশ্ন আসতে পারে। আমাদের দেশের মানুষ খুবই আবেগপ্রবণ। করোনা আক্রমণের শুরুর দিকে মসজিদে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিতর্ক হলে সরকার নামাজির সংখ্যা নির্ধারণ করে দিয়ে মানুষের আবেগের বিরুদ্ধে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। যদিও সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই কম জায়গায়। শুধু তাই নয়, এক শ্রেণির মাওলানা ইউটিউবে নেতিবাচক ওয়াজ মাধ্যমে মানুষকে উত্তেজিত করেছেন। সেই অবস্থায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাইয়ের মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিনা তা সন্দেহাতীত নয়।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের  সাবেক প্রতিমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সব মতের ইসলামী চিন্তাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি তাদের ওপর নির্ভর করতেন। তারপরও কিছু সিদ্ধান্তের বেলায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমালোচনাও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বিষয়টি কীভাবে স্থির হবে তাও দেখার বিষয়।

সৌদি আরব হজ বাতিল করবে এমন ভাবনাকে প্রাধান্য না দিয়ে, সীমিত সংখ্যায় অনুমতি দেবে এমনটাও ভাবার দরকার আছে। যদি তারা সীমিত সংখ্যার অনুমতি দেয় তাহলে দেখার অপেক্ষা, বাংলাদেশ কোন পথ অবলম্বন করবে?

লেখক: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক।

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরতে পারে বৃষ্টি, বাড়বে গরম
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরতে পারে বৃষ্টি, বাড়বে গরম
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ