X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভুতুড়ে বিল নিয়ে পাল্টা কাঠগড়ায় ডিপিডিসি!

সঞ্চিতা সীতু
২৬ জুলাই ২০২০, ২৩:৩৫আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২০, ১৫:৩৬

বিদ্যুৎ বিল ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের দায় চাপাতে গিয়ে উল্টো অভিযোগের কাঠগড়ায় এখন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। অতিরিক্ত বিল আদায় করায় ডিপিডিসি একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। একই সঙ্গে ৩৬ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে শোকজ করেছিল। শোকজের জবাব দিতে গিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের আদেশেই অতিরিক্ত বিল করেছিলেন তারা।

ডিপিডিসি সূত্র বলছে, সরকারের নির্দেশে অতিরিক্ত বিলের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি করেছিল ডিপিডিসি। ওই তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (আইসিটি) এম এম শহিদুল ইসলাম। ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীরা শোকজের যে জবাব দিয়েছিলেন তাতে বলা হয়েছে, এই শহিদুল ইসলামই তাদের মেইল করে অতিরিক্ত বিল আদায় করার নির্দেশ দিয়েছিল। ডিপিডিসির এই নির্বাহী পরিচালক ঢাকার কোন এলাকায় কতভাগ বাড়তি বিল করতে হবে তারও একটি তালিকা তাদের দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ীই বিল করেছেন তারা। আর এককভাবে একজন নির্বাহী পরিচালক এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সায় থাকারও অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযুক্তকে দিয়েই তদন্ত কমিটি করার বিষয়ে আগে থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল। তবে এখন নির্বাহী প্রকৌশলীদের জবাবে তা আরও স্পষ্ট হলো।

জবাবে মার্চ মাসের বিল ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল কতভাগ বেশি করতে হবে তার একটি তালিকা প্রত্যেক নেটওয়ার্ক অপারেশন অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস (এনওসি)-কে পাঠানো হয়েছিল, সেটিও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, মিটার না দেখে বিল করাতে যারা বাসাবাড়িতে ছিল না তাদের কাছেও অতিরিক্ত এই বিল চলে যায়। দোকানপাট এবং অফিস আদালত বন্ধ থাকলেও তারা নিয়মিত ব্যবহারের অতিরিক্ত বিল পান। তবে মে মাস থেকে আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং নিয়ে বিল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত বিলও সমন্বয় করার কথা জবাবে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলীরা।

ডিপিডিসির যে নির্বাহী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল তার চিঠিতে অতিরিক্ত বিল করার পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে বিনা অনুমতিতে কথা বলার জন্যও অভিযোগ করা হয়।

অতিরিক্ত বিলের অভিযোগে একজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ চার জনকে সাময়িক বরখাস্ত, ৩৬টি এনওসির নির্বাহী প্রকৌশলীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ১৩ জন মিটার রিডার এবং ডাটা অ্যান্ট্রি অপারেটরসহ মোট ১৪ জনকে চুক্তিভিত্তিক কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ডিপিডিসি। তবে এজন্য যারা অতিরিক্ত বিলের আদেশ জারি করেছিল তাদের কাউকে কিছু বলা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি প্রতিষ্ঠানের পর পর তিন মাস অতিরিক্ত বিল করা হলো, বিষয়টি শীর্ষ পর্যায়ের কেউ দেখলোই না, বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিষ্ঠানটির একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে পাঁচ জন নির্বাহী পরিচালক রয়েছেন। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। মাসের পর মাস গ্রাহক হয়রানিমূলক এসব অতিরিক্ত বিলের বিষয়ে কেন পরিচালনা পর্ষদ আগেভাগে কোনও ব্যবস্থা নিলো না, সেটিকেও বড় করে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (আইসিটি) এম এম শহিদুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানের কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন, যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো যাচাই বাছাই করতে কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মো. গোলাম মোস্তফাকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনে অভিযুক্তদের ডাকবেন, কথা বলবেন, এরপর প্রতিবেদন দেবেন। এরপর আমরা দেখবো কি করা যায়। এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সারা দেশের গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগ একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছিল। এখনও ভুতুড়ে বিলের অভিযোগে দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কর্মকর্তাদের শোকজের পর তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ওপরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ ছাড়া মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কিছুই করা সম্ভব নয়। আগেই যদি ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।

তিনি আরও বলেন, প্রথম থেকেই মাঠের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শোকজ করা হলো আর দায়ীদের আড়ালে রেখে দেওয়া হয়েছিল। এখনও সময় আছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

/এফএএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি