X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৯ ঘণ্টাই গ্যাস থাকে না!

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:১৩আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:২০

রাইজিং স্পিনিং মিল গ্যাসের অভাবে মানিকগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত সুপার সাইন কেবলস নামের কারখানায় উৎপাদনে মারাত্মক ধস নেমেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই শিল্প কারখানাটি গ্যাস পাচ্ছে মাত্র ৫ ঘণ্টা। বাকি ১৯ ঘণ্টা গ্যাসবিহীন। এই সামান্য গ্যাস দিয়ে কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শিল্প প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে টিকবে? এমন হতাশার কথা জানালেন কারখানাটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) উত্তম ভৌমিক। 

এদিকে জেলা বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা রবিউল আলম বলেন, মানিকগঞ্জ বিসিকে ১৫টি বিভিন্ন ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অধিকাংশ কারখানাই গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। অব্যাহত গ্যাস-সংকটে কারখানাগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এ সমস্যা সমাধান না হলে শিল্পে বিনিয়োগে আস্থা হারিয়ে ফেলবেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

বিসিকের মতো দশা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাটুরিয়ার নয়াডিঙ্গি এলাকার রাইজিং স্পিনিং মিল, সদর উপজেলার মুন্নু ফেব্রিকস লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের। গ্যাস সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন না থাকায়, চাহিদার তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ অর্ডারও সরবরাহ করতে পারছে না। এতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে শিল্প মালিকদের।

জেলার সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গী এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত রাইজিং স্পিনিং মিল। জেলার অন্যতম বৃহৎ এই কারখানায় সুতা ও কাপড় তৈরি করা হয়। সরেজমিন কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানাটিতে জেনারেটর চালাতে সঞ্চালন পাইপের মাধ্যমে তিতাস গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। গ্যাস-সংকটের কারণে সচল রাখতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। কারখানাটির উৎপাদন বিভাগের হিসাবমতে, গত মে মাসে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা গ্যাসের বিল পরিশোধের পরও বাড়তি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল গুনতে হয়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জুলাই মাসে ১ কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা গ্যাস বিল দেওয়ার পরও ৫৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। এতে কারখানার মালিকদের কাঁধে পড়েছে বাড়তি খরচের চাপ।

সুপার সাইন কেবলস
রাইজিং স্পিনিং মিলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মো. কলিম উদ্দিন বলেন, উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গ্যাসের চাপ পাঁচ পিএসআই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র এক পিএসআই। গ্যাসের এত কম চাপের কারণে জেনারেটর চালু রাখতে গিয়ে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে।

এতে কারখানার মালিকের প্রতি মাসে গড়ে ৫০ লাখ টাকার বেশি অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে। জেলার একাধিক শিল্পকারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানিকগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাসের সংকট। দুই মাস ধরে এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ একেবারেই থাকে না। রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত মাত্র ৫ ঘণ্টা গ্যাসের চাপ থাকে, তবে তা সীমিত। গ্যাসের এ সংকটে অনেক কারখানার উৎপাদন অর্ধেক কমে গেছে। এ সামান্য উৎপাদন দিয়ে শ্রমিকের মজুরিসহ ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে গ্যাসের সংকট চলতে থাকলে কারখানাগুলোর টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। কোনও কোনও কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। 

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মানিকগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার আশুলিয়া থেকে সঞ্চালন পাইপের মাধ্যমে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা পর্যন্ত তিতাস গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ঢাকার ধামরাই উপজেলার ইসলামপুর থেকে আরিচা পর্যন্ত মানিকগঞ্জের তিতাস গ্যাসের আওতাভুক্ত এলাকা। এ জেলায় আবাসিক গ্রাহক রয়েছে ১ হাজার ২৪২টি, বাণিজ্যিক ৩৩টি,  শিল্পকারখানা ৭১টি এবং ১৯টি সিএনজি স্টেশনে গ্যাস–সংযোগ রয়েছে।

বিসিক শিল্প সহায়তা কেন্দ্র, মানিকগঞ্জ

এদিকে জেলা সদরের গিলন্ড এলাকায় মুন্নু ফেব্রিকস লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) বাবুল হোসেন বলেন, গ্যাস-সংকটে কারখানাটির উৎপাদন নিম্নস্তরে নেমেছে। এ পরিস্থিতিতে কারখানার উৎপাদন চালু রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। লোকসানের মধ্যেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে। 
বিসিকে অবস্থিত সুপার সাইন কেবল কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) উত্তম ভৌমিক বলেন, প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ৫ ঘণ্টা গ্যাস মিলছে। বাকি ১৯ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ নেই। এই সামান্য গ্যাস দিয়ে কীভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকবে? কীভাবে কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে?

গ্যাস-সংকটের বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আতিকুল হক সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকার কারওয়ান বাজারে তিতাস গ্যাস কার্যালয়ের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক ফিরোজ কবিরের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

তিতাস গ্যাস কার্যালয়ের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক ফিরোজ কবির বলেন, সঞ্চালন পাইপের মাধ্যমে তিতাস গ্যাস সরবরাহ ও বিতরণ করা হয়ে থাকে। তবে ট্রান্সমিশন কোম্পানি প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় মানিকগঞ্জে গ্যাস-সংকট রয়েছে। বিষয়টি তিতাসের পেট্রোবাংলাকে জানানো হয়েছে। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে মানিকগঞ্জে বিকল্প একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে মানিকগঞ্জে গ্যাসের সংকট আর থাকবে না। 

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা