X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি হারুন হাওয়া দিলেন ‘আই হেট পলিটিক্স’-এর পালে

ডা. জাহেদ উর রহমান
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:২৬আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:০৬

ডা. জাহেদ উর রহমান এই দেশে ‘রাজনীতিবিদ’ শব্দটি বেশ কিছু দিন আগেই একটা গালিতে পরিণত হয়েছে। নিজে একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হয়েও এর দায় জনগণের ওপর চাপাই না আমি, বিশ্বাস করি এই দায় রাজনীতিবিদদের। নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম আছে কিন্তু এই দেশের বহু রাজনীতিবিদ এমন সব আচরণ এবং কর্মকাণ্ড করেছেন যেগুলো রাজনীতির প্রতি মানুষের তীব্র ঘৃণা এবং বিদ্বেষ তৈরি করেছে।
আজকের প্রজন্ম যেমন স্লোগানের মতো করে ‘আই হেট পলিটিক্স’ বলে, ঠিক সেভাবে না হলেও আমাদের শৈশব-কৈশোরেও আমরা রাজনীতির বিরুদ্ধে নানারকম নেগেটিভ কথা শুনেই বড় হয়েছি। আমাদেরও পরিবার থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কোনোভাবেই রাজনীতির আশপাশে যাওয়া যাবে না।
রাজনীতির প্রতি এই ঘৃণার কারণে রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকা এই দেশের শিক্ষিত ‘নীতিবান’ মধ্যবিত্তের এক ঐতিহাসিক ভুল (কিংবা অপরাধ), যা এই দেশকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এটা ভিন্ন আলোচনা, করা যাবে আরেক দিন। 

রাজনীতিবিদদের শ্রেণিকরণে এখন জনতুষ্টিবাদী বা পপুলিস্ট কথাটি খুব আলোচিত হয়। বর্তমান পৃথিবীতে এমন রাজনীতিবিদের সংখ্যা বাড়ছে। সত্যি বলতে সত্যিকার গণতন্ত্রে যেহেতু একজন রাজনৈতিক নেতাকে নির্বাচন করে তাতে জিতে ক্ষমতায় যেতে হয়, তাই প্রতিটি রাজনীতিবিদকেই কমবেশি পপুলিস্ট হতে হয়। অনেক বেশি পপুলিস্ট হয়ে যাওয়া হয়তো সমস্যা তৈরি করে। কিন্তু এই বিশ্বে রাজনীতির এবং সেই সূত্রে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে ডেমাগগরা। ‘ডেমাগগ’ শব্দটি হয়তো খুব বেশি পরিচিত না এখন‌ও। তাই এই শব্দে ফিরে আসছি বাংলাদেশের একজন প্রকৃত ডেমাগগকে চিনে নিয়ে তার কর্মকাণ্ড একটু দেখে আসার পর। ইনি হলেন বিএনপির এমপি মো. হারুনুর রশীদ।

এই দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে দেড় দশকের বেশি হয়ে গেছে। অনানুষ্ঠানিক আলাপে কিছু মানুষ এটাকেই সব সমস্যা সমাধানের নিদান মনে করে বলেন অমুককে, তমুককে ক্রসফায়ারে দিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু প্রকাশ্যে এক ধরনের ভণিতা ছিল সব সময়। অত্যন্ত ‘তৃতীয় শ্রেণি’র একটি গল্প কিন্তু তৈরি করা হয়েছিল এটা প্রমাণ করার জন্য যে কাউকে ঠান্ডামাথায় খুন করা হচ্ছে না, বরং আত্মরক্ষার্থে...। 

আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে ভীষণ অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটলো গত বছর আর এই বছরের জানুয়ারিতে। সংসদে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু এবং কাজী ফিরোজ রশীদ, তরিকত পার্টির নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং আওয়ামী লীগের ‌সাংসদ জনাব তোফায়েল আহমেদ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য সংসদে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে ক্রসফায়ার করে সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে পেঁয়াজের দাম কমানো থেকে থেকে শুরু করে ধর্ষণ পর্যন্ত সবকিছুর সমাধান তাদের কাছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। 

এই দেশে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, যাবতীয় অসাংবিধানিক এবং বেআইনি ক্ষমতার চর্চা তারা করতে চাইবে এটুকু বোঝা গেলো। জাতীয় পার্টি নামের যে দলটি তথাকথিত বিরোধী দল হিসেবে কাজ করছে তাদের আচরণ সরকারি দলের চাইতে আলাদা করে কোনোভাবেই বোঝা যায় না। তাই তারাও সেটা চাইলো, বুঝলাম সেটাও। কিন্তু বিএনপি’র কোনও সংসদ সদস্য এটা করতে পারে সেটা কারও কাছে খুব অবিশ্বাস্য মনে হতেই পারে, যখন বিএনপি’র বহু নেতাকর্মী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে গত ১০ বছরে, এমন অভিযোগ করছে খোদ বিএনপি’র সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।  

সংসদে এই মুহূর্তে যে অধিবেশনটি চলছে ঠিক তার আগের অধিবেশনটিতে (৮ জুলাই, ২০২০) জনাব হারুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি এরকম— 

‘আপনি মাদকাসক্ত-মলম পার্টির লোকদের ধরে ক্রসফায়ার দিচ্ছেন। অথচ এত বড় অপকর্ম করলো, এখন পর্যন্ত সে গ্রেফতার হয়নি। সে কোথায় আছে? এই হাসপাতালের পরিচালনা বোর্ড, কর্তৃপক্ষ তাদের অগোচরেই কি এসব অপকর্ম হয়েছে। মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলে তাদের বাঁচিয়ে রাখা উচিত নয়, তাদের ক্রসফায়ারে দেওয়া উচিত।’  

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার তৈরির জন্য যে কমিটি গঠন করা হয় তার একজন সদস্য ছিলাম আমি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে জানি ইশতেহারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এসবের বিরুদ্ধে ভীষণ শক্ত অবস্থান আমার দল থেকে নিতে যাওয়ার পর সেই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আপত্তি বিএনপি করেনি। বরং বিএনপিকে দেখেছি তারাও অন্তত সেই সময় অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে, সিরিয়াসলি চেয়েছে এই বর্বরতার অবসান হোক। ‌কিন্তু আমি দেখে ভীষণ অবাক হলাম জনাব হারুনের এই বক্তব্যের পর বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা হয়নি। ‌এতে এই প্রশ্ন মানুষের মধ্যে আসতেই পারে বিএনপি কি তাহলে এখন অন্তত কিছু ক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করছে? এই বিভ্রান্তির দায় অবশ্যই বিএনপি’র। 

ঠিক দু’মাস পর আরেকটি সংসদ অধিবেশন বসলো এবং এই অধিবেশনে জনাব হারুনের বক্তব্য একটু দেখে নেওয়া যাক।  

‘আজ  বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিষয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে গত ১০/১২ বছরে তিন হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ  যারা স্বজনকে হারিয়েছে, গুম হয়েছে বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তারা কি আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার পাবে না? সংবিধানের এই বিধানগুলো কি আমরা স্থগিত করে দিয়েছি?’

নিজের নির্বাচনি এলাকা তিনটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ দিয়ে বিএনপির এই সাংসদ বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর বলা হয় পুলিশের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ। এটা কি সম্ভব? এসব ঘটনায় যে উদ্ধার দেখানো হয়, তা হাতে তৈরি বাটাল, পিস্তল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উঠিয়ে নিয়ে উপর্যুপরি হত্যা করছে। আর নাটক বানাচ্ছে। সরকার সেগুলোর সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।’ 

পুলিশের গুলিতে কক্সবাজারের টেকনাফে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে হারুন বলেন, ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। আদালতে বিচার হচ্ছে। কিন্তু তিন হাজারের বেশি হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার কি আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ পাবে না? তাদের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াবে না? এ বিষয়ে সংবিধানের ২৮ ও ৩২ অনুচ্ছেদে সব নাগরিকের সমান অধিকার ও আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

জনাব হারুন সংবিধানের ধারা তুলে ধরে মানুষের সমানাধিকার এবং আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগের কথা বলছেন। অথচ স্রেফ দুই মাস আগেই একটা রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে ফেলার মতো বর্বরতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি প্ররোচনা দিয়েছেন সরকারকে। মেলানো যায় দুটো ঘটনাকে?

দু’মাস আগে যখন তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্ররোচনা দিচ্ছেন সংসদে তখন সামাজিক মাধ্যমে এর প্রতিক্রিয়া দেখে আমি অবাক হইনি। বহু মানুষ তার এই বক্তব্য শেয়ার করেছে এবং বাহবা দিয়েছে। ওই সময়ে রিজেন্ট, জেকেজির বীভৎস জালিয়াতি নিয়ে মানুষ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিল, তাই সে সময় তাদেরকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা বাহবা পাওয়ারই কথা। সত্যি বলতে বিশেষ করে অপরাধীদের ক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে এই রাষ্ট্রের অসংখ্য নাগরিক দাঁড়ায় বলেই রাষ্ট্রের পক্ষে এই কাজটা আজও এভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।

এরপর সাম্প্রতিক সিনহা রাশেদ হত্যাকাণ্ডের পর জনমত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে গেলো এই মুহূর্তে, কারণ এটা স্পষ্ট সিনহা রাশেদ কোনও অপরাধী ছিলেন না এবং তাকে স্রেফ ঠান্ডামাথায় খুন করা হয়েছে। ফলে এখন জনাব হারুন মানুষের এই পারসেপশন অনুধাবন করে মহান উদার গণতন্ত্রী সেজে গেলেন, এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেন। 

এবারকার সংসদ অধিবেশনে বিএনপি’র আরেক এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাও তার স্বভাবজাত যুক্তি-তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে দিয়ে তীব্র বিরোধিতা করেছেন, যেমনটি করেছিলেন গত জানুয়ারি মাসেও। এই দুই এমপির বক্তব্যকে একত্র করে যখন বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ এলো, তখন একটা বিষয় আমাকে খুব অবাক করেছে। একটিমাত্র পত্রিকায় আমি খেয়াল করেছি যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনাব হারুনের দু’মাস আগের বক্তব্যের কথা বলা হয়েছে। এটা খোঁজার জন্যই মূল ধারার প্রায় সব মিডিয়া আমি ঘেঁটে দেখলাম আর কেউ এটা উল্লেখ করেনি। অথচ এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার ছিল বলে আমি বিশ্বাস করি।

‘ডেমাগগ’ শব্দটির আদি মানে ছিল জননেতা। এটা এখন একটা ডেরোগেটরি শব্দ, অর্থাৎ এই শব্দটি এখন নেগেটিভ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটা বলতে এখন এমন সব রাজনীতিবিদকে বোঝানো হয়, যারা নীতি এবং যুক্তিকে বাদ দিয়ে মানুষের মধ্যকার ভীতি, হিংসা, কুসংস্কারকে নানাভাবে উসকে দিয়ে তাদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন। এসব করেই তারা অনুসারী তৈরি করেন।

বহু রাজনীতিবিদ ক্ষমতায় গিয়ে যে বীভৎস আর্থিক এবং অন্যান্য দুর্নীতি করেন সেগুলো প্রতিনিয়ত তরুণ প্রজন্মের সামনে আসছে। সামনে আসছে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড– নিজ দলের বা বিরোধী দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে বর্বর আচরণ। সামনে আসছে তাদের সীমাহীন মূর্খতা। কিছু ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ থাকলেও সার্বিক রাজনীতির এই চিত্র এভাবেই রাজনীতির প্রতি নতুন প্রজন্মের চরম বীতশ্রদ্ধা, ঘৃণা তৈরি করে। সে ঘৃণা আরও শক্ত হয় যখন দেখা যায় বিরোধী দলে থাকা একজন এমপিও এমন চরম দ্বিচারিতা দেখান অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নীতির ক্ষেত্রে। 

ডেমাগগ হতে হলে ভণ্ড হতেই হয়। তবু ডেমাগগ সৃষ্টি হয় রাজনীতির মধ্যে। এটা স্বল্পমেয়াদে সেই ব্যক্তিকে কিছু লাভ দেয়, সে কারণেই এই প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বলা বাহুল্য, দীর্ঘমেয়াদে এটা রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। রাজনীতিতে ডেমগগদের উত্থানের প্রভাব নিয়ে একটা বিস্তারিত কলাম লিখবো আশা করি। তবে আজ জেনে রাখি এর একটা কুপ্রভাব– ডেমাগগদের ভণ্ডামি সমাজের সৎ, নীতিবান মানুষদের রাজনীতিতে আসতে প্রচণ্ডভাবে বাধা দেয়, তাই তারা ক্রমাগত হাওয়া দিতে থাকেন ‘আই হেট পলিটিক্স’-এর পালে।

লেখক: শিক্ষক ও অ্যাকটিভিস্ট

/এসএএস/এমএমজে/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
আর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
চ্যাম্পিয়নস লিগআর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
টাইব্রেকারে ম্যানসিটির শিরোপা স্বপ্ন ভাঙলো রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগটাইব্রেকারে ম্যানসিটির শিরোপা স্বপ্ন ভাঙলো রিয়াল
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ