X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সোনার বাংলা গড়তে চাই সোনার মানুষ

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৪৩আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৫১

হায়দার মোহাম্মদ জিতু সকল ইতিহাস অতীত হলেও সকল ‘অতীত’ ইতিহাস নয়। কারণ অতীত হলো যেকোনও ঘটনা বা মুহূর্তের ফলাফল, অন্যদিকে ইতিহাস হলো একটা বিশেষ ঐতিহাসিকতার ফলাফল। তবে সবচেয়ে তামাশার বিষয় হলো, মানুষ এই দুই বিষয়ের কোনোটিকেই মনে রাখতে চায় না বা রাখে না। ফলাফল মানসপটে নির্মিত হয় অকৃতজ্ঞতা এবং বিশেষ ঘটনাক্রমে কৃতঘ্নতাবোধ।
শৈশব-কৈশোরের ভুলে যাওয়া কিংবা ভুলতে বাধ্য হওয়া এমন একটি বিষয় হলো ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনা। বাংলা এবং ইংরেজি দুই মাধ্যমেই এই মুখস্থ অক্ষর-শব্দজটকে পড়ানো হয়। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো দেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিষয়ভিত্তিক ক্যারিয়ার অর্থাৎ জীবনের লক্ষ্য সম্পন্ন জীবন প্রবাহ করা ভীষণ মুশকিল। তাই শৈশব-কৈশোরের শেখানো, আরোপিত কিংবা মানসিক চাওয়া ‘জীবনের লক্ষ্য’খানা মনের মিছিলের পেছনেই রয়ে যায়। নির্মাণ হয় জীবন বাস্তবতায় নতুন মত-পথের। যেখানে মেনে নেওয়া এবং মানিয়ে নেওয়াই হয় টিকে থাকার সম্বল।

দৃশ্যমান সমাজ বাস্তবতায় খুব কম মানুষই আছেন যারা জীবনে যে যা হতে চেয়েছেন তা হতে পেরেছেন। যেমন ধরুন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ভর্তির কথা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই যে বিভাগে পড়তে চান সে বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান না বা হয়েও ওঠে না। এর পেছনে একটা বড় কারণ ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার নম্বর যুক্তকরণ। 

যেখানে দেশের সব স্কুল-কলেজে শিক্ষা ও পরীক্ষার মান সমান নয় অর্থাৎ একেক শিক্ষা বোর্ডে একেক মানের প্রশ্নে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল যোগ-আয়োজন কতটা যৌক্তিক, সেটা বিবেচনা জরুরি। তবে সেটাকেও যৌক্তিক করে তোলা যায় যদি গোটা দেশে একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়। তবে এক্ষেত্রে আগে প্রাথমিকভাবে দেশের সব স্থানে শিক্ষার মানও সমান করে তোলা আবশ্যক।

যদিও এক্ষেত্রে একটি বিশেষ প্রশ্নেরও উত্থান ঘটবে। আর তা হলো সামাজিক অনৈতিকতার বাজারে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মিছিল! সেক্ষেত্রে প্রায়োগিক হাতিয়ার নির্মম কঠোরতা এবং নৈতিক সাহস।

পৃথিবীর তাবৎ বিষয়বস্তু পুকুরে ঢিল ছুঁড়ে মারার মতো। এক প্রান্তের জলের লহরি শেষতক পর্যন্ত পৌঁছায়। যেমন, ভর্তি প্রক্রিয়ার এই এসএসসি এবং এইচএসসি জটিলতা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রেও গিয়ে পৌঁছায়। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা যেসব বিভাগে পড়তে চান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয়ে ওঠে না। তাই দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শুরুর দিকে একজন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত বিভাগে মনোযোগী না হলেও ধীরে ধীরে ভালো লাগা তৈরি হতে হতে তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং ভালো ফলাফলও করেন।

কিন্তু যেখানে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মানের কারণে ফলাফলের তারতম্য ঘটে এবং বিজ্ঞান-মানবিক-মাদ্রাসার ছাত্র সমগ্র বিষয়ভিত্তিক বিভাগগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে সেখানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এই দুই পরীক্ষার ফলাফল যুক্তকরণ কতটা যৌক্তিক?

তাছাড়া দিনশেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ হয়ে ওঠে না। কারণ গবেষণার ক্ষেত্রে নিম্নমুখী অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, উচ্চতর গবেষণার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকা কেন্দ্রিক বিশেষ অগ্রাধিকার দৃশ্যমানতা এবং সামাজিক মর্যাদাহীনতা। পাশাপাশি সাম্প্রতিক ভয়াবহতা ‘নেপোটিজম’ বা স্বজনপ্রীতি তো আছেই। অর্থাৎ, ফ্যামিলি প্যাকেজ। স্বামী শিক্ষক হলে স্ত্রী, আত্মীয় কিংবা তাদের ঘরানার অন্য কেউ। কাজেই পুরো বিষয়কে আরও স্পষ্ট করতে বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন।

আফ্রিকান এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ ফলকের বাণীর নির্যাস, কোনও দেশকে ধ্বংস করতে সেদেশে যুদ্ধ ব্যবস্থা প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু সেদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা। যেহেতু বাংলাদেশ বহু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একক নেতৃত্ব বলে স্বাধীন হয়েছে। তাই এদেশকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে বহুপক্ষীয় এবং বহুমার্জিত আদলের ফাঁদ পাতা রইবে-রয়েছে, সেটাই স্বাভাবিক বাস্তবতা। কাজেই এ বিষয়গুলোকে ময়নাতদন্তের আদলে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে এই বাংলার গণজোয়ার ছিল, সোনার বাংলা শ্মশান কেন? অর্থাৎ বৈষম্যকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে চাই সোনার মানুষ। আর এই সোনার মানুষ এদেশের শিক্ষার্থীরাই।

কাজেই এই শিক্ষার্থীদের মাঝে যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালন এবং বাস্তবায়নে শপথ সম্পন্ন তাদের যারা নানান অজুহাতে দাবায়া রাখতে চায়, যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে চায় না, সেইসব ছলচাতুরী সম্পন্ন মানুষ এবং প্রক্রিয়াগুলোর তথ্যের অনুসন্ধান জরুরি। কারণ এসব শিক্ষার্থী সকলকে এগিয়ে আনতে পারলেই বর্তমান বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সেই সোনার মানুষ সম্পন্ন সোনার বাংলা বাস্তবায়ন আরও ত্বরান্বিত হবে, বিনির্মিত হবে বিশ্বজয়ের বাংলাদেশ।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

[email protected]

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ