X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় স্বদেশের বীজ

তুষার আবদুল্লাহ
০৩ অক্টোবর ২০২০, ১৮:১০আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২০, ১৮:১২

তুষার আবদুল্লাহ শিশু-কিশোর-তরুণ দেখলেই আমার বাচালতা বাড়ে। ইচ্ছে করে ধরে বেঁধে জাপ্টে ওদের সঙ্গে কথা বলি। কথার সমুদ্রে ডুবে যাই। পারিবারিক, সামাজিক সমাবেশে ওদের দিকে নজর থাকে। কোনও কোনও শিশু-কিশোর-তরুণ আছে, শুরুতে আড়ষ্ট থাকে। ধীরে ধীরে প্রকাশিত করতে থাকে নিজেকে। কেউ কেউ পুরো সময়টা নিজেকে গুটিয়ে রাখে। আনমনা দেখা যায় কাউকে কাউকে। পরিবেশটি তাদের পছন্দ হচ্ছে না, অস্বস্তির প্রকাশও ঘটে চোখে মুখে। আজকাল অবশ্য তারা পরিবেশের খুব একটা ধার ধারে না। নিজেদের মতো করে মুঠোফোন, ট্যাব কিংবা এমন কোনও ডিভাইসে বুঁদ হয়ে থাকে। কোথায় বেড়াতে বা নিমন্ত্রণে এলো কিংবা বাড়িতে কে এলেন, সেদিকে ওদের নজর নেই। বাড়ি থেকে বের হয়ে গন্তব্যে পৌঁছা পর্যন্ত পথটুকুও ওদের জানা নেই। শিশুরাই শুধু নয়, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারাও কোন পথ পেরিয়ে যাচ্ছে, তা বলতে পারবে না। পারেও না, পরখ করে দেখেছি। এদের প্রকৃতি সহিষ্ণুতাও উদ্বেগজনক। প্রকৃতির উষ্ণতা, রোদের প্রখরতা এরা সইতে পারে না। বর্ষার জলধারাতেও এরা অভ্যস্ত নয়। ওদের শরীর সইতে পারে না ফসলের মাঠের বিশুদ্ধ ধুলোও। যাদের কথা বলছি, ওরা আমারই সন্তান। জন্মদাতা, দাত্রী যে হন না কেন, গায়ে না মানলেও আমি তাদের অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়ে নেই। ওরা যখন কোনও অপ্রিয় বিষয় বা কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যায়, তখন সেই দায় আমারও। এই বিশ্বাস মেনে চলি। ওদের কোনও পরাজয় থেকে নিজেও শেখার চেষ্টা করি। কী ভুল ছিল ওদের, কী ভুল ছিল আমার।

ভুলতো বিস্তর করে ফেলেছি। নিজে যেমন শিক্ষা ব্যবস্থা, পাঠ্যক্রমের মধ্য দিয়ে এসেছি। সন্তানকে সেদিকে যেতে দেইনি। প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাংলা মাধ্যমের হাইস্কুলের চৌহুদ্দির মধ্যে যেতে দেইনি ওদের। বরং ওই পাঠ্যক্রম বা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি একধরনের  নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে দিয়েছি। শুধু ওই শিক্ষা ব্যবস্থা নয়,  ওখানকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিও সন্তানের মধ্যে একধরনের বিরূপ প্রভাব তৈরির উপকরণই শুধু জোগান দিয়ে গেছি। ওরা শীতাতপ শ্রেণিকক্ষে বসে, শীতের দেশের পাঠ নিচ্ছে। প্রস্তুতি শুরু করেছে শীতের দেশের যাওয়ার। সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বাবা মায়েরা তাদের ঘুম পাড়ানি গল্পে ওই শীতের দেশের  কাহিনিই শোনায়। সেখানে কেমন খাবার খাবে, প্রতিবেশীরা, সহপাঠীরা কেমন হবে, কেমন পোশাক পরতে পারবে এবং অনেক বড় চাকরির স্বপ্ন। দেশে যতোটুকু সময় আছে, সেই সময়টুকু বেশি ঘেমে যাওয়া চলবে না। শরীর খারাপ করতে পারে। তাই বাড়িতে, স্কুলে, গাড়িতে শীতাতপে থাকতে হচ্ছে। বৈশাখের ঝড়, বর্ষার বৃষ্টি আশ্বিনের রোদ ওদের নিজের আবহাওয়া মনে হয় না। ওতো নিজের শরীর মন নাতিশীতোষ্ণ কিংবা শীতল কোনও দেশের জন্য তৈরি করে নিচ্ছে। খাবারের অভ্যাসেও তাই। মিছে কেন কয়দিনের জন্যে কাঁটা বেছে খাওয়া।

বিশ্বায়ন, সচ্ছলতার ছুঁতোয় দেশের ভেতরেই পরদেশ, ভিনদেশ বা দ্বিতীয় স্বদেশের অনুশীলন কেন্দ্র গড়ে তুলেছি। আমাদের যাপিত জীবনের অভ্যাস বদলে যাওয়ায় বৈশ্বিক জলছাপ। গর্বে বুক প্রসারিত হয়। কখনও সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া, আবার কখনও কানাডা, অস্ট্রেলিয়া কিংবা আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশকে মিলিয়ে নিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। কারণ তাহলে মহল্লা বদলের মতো বাড়ি বদলে ফেলা যায়। আমাদের সন্তানরা বাংলা বলা ভুলে যাচ্ছে। একথাটি বহুবার বলেছি, লিখেছি বাচালের মতো। বাংলা পড়ছে কম, শুনছে  কম , দেখছেও কম। আমরা তাদের গর্বিত অভিভাবক। কারণ-সন্তানরা ইংরেজি বলছে, পড়ছে, লিখছে, শুনছে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি না, যা শুনছে, দেখছে, পড়ছে সেগুলো কী? মান যাচাই নিয়ে আমাদের তাগিদ নেই। ইংরেজি ভুল বা শুদ্ধ যাই বলুক দ্বিতীয় স্বদেশের টিকিট পাওয়া সহজ হবে বলে নিশ্চিন্তে বসে আছি। না হলে সহজভাবে তারা দ্বিতীয় স্বদেশের পা রাখলো, সেখানে তারা কোন স্তরের নাগরিক হচ্ছে সেটাও আমাদের ভাবায় না। আমরা শুধু ওদের পাচার করে দিচ্ছি।

স্বদেশ প্রেম, প্রকৃতির সন্তান হওয়া, প্রকৃতিকে ভালোবাসা, এগুলো থেকে বাইরে নিয়ে গিয়ে আমরা ভোগের জ্বলন্ত কড়াইতে ছুড়ে দিচ্ছি শুধু। আমরা ভুলে বসে আছি, দ্বিতীয় স্বদেশ বা ভিনদেশে যারা স্বনামে পরচিত বা বিখ্যাত হয়েছেন তাদের কেউই বৃত্তচ্যুত ছিলেন না। তাদের করোটিতে ছিল বাংলাদেশের বিশুদ্ধ ধুলো, ভাদ্রের খরতাপ। আমরা এখন যে পদ্ধতিতে সন্তানদের মননে দ্বিতীয় স্বদেশের আবাদ করছি, তা ভালো ফলন যে আনবে না। এ বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়ারও মনে হয় প্রয়োজন নেই। আলামত পাওয়া শুরু করেছি বেশ আগে থেকেই।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ