X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি টাকা নয়-ছয়ে ওস্তাদ পিআইও কাউছার!

বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ
০৭ নভেম্বর ২০২০, ২১:৩৪আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২০, ২১:৪৮

 

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ।



কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাউছার আহমেদের বিরুদ্ধে সেতু-কালভার্ট প্রকল্পের সিডিউল বিক্রির ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা সরকারি তহবিলে জমা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে না করিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছেন এবং নিজেও অবৈধভাবে লাভবান হয়েছেন এমন অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এসব কারণে জেলা প্রশাসক তাকে বদলিসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে সুপারিশ করে গত ৫ অক্টোবর একটি চিঠি দিয়েছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ২২টি সেতু/কালভার্ট নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এগুলো কম-বেশি ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ছিল। ২০১৯ সালের ২৩ জুন ছিল এসব কাজের শিডিউল জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। ২২টি সেতু কালভার্টের জন্য শিডিউল জমা পড়ে ৯৫৯টি। এই শিডিউল বিক্রি থেকে আয় হয় ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু, এ টাকা আজ পর্যন্ত পিআইও কাউছার আহমেদ সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোকাররম হোসেন জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী শিডিউল বিক্রির টাকা সাত কর্মদিবসের মধ্যে সরকারি তহবিলে জমা দিতে হয়।

অভিযোগ রয়েছে, সদর উপজেলার পিআইও দেড় বছরেও শিডিউল বিক্রির প্রায় ১৯ লাখ টাকা তিনি জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এ অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়।

বিষয়টি প্রথমে স্বীকার করতে না চাইলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরা হলে পিআইও কাউছার আহমেদ তার অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘নানা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আমি সিডিউল বিক্রির টাকাগুলো জমা দিতে পারিনি। খুব দ্রুত এগুলো জমা দিয়ে দেবো।’ এ ব্যাপারে তাকে যে অধিদফতর থেকে সম্প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে তা-ও স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নোটিশের জবাব দেবেন তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, শিডিউলের টাকা জমা না দেওয়াতে পিআইওকে কারণ দর্শানোর যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা তিনি জানতেন না। অবগত হওয়ার পর জিজ্ঞেস করা হলে পিআইও তার কাছেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সদর উপজেলায় মারিয়া ইউনিয়নের খিলপাড়া হানিফের বাড়ি থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত মাটি ভরাটের জন্য ১০ মেট্রিক টন ও বিন্নাটি ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া নতুন ঈদগাহ মাঠে মাটি ভরাটের জন্য আট মেট্রিক গম/চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু, কাজ না করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা পিআইও’র যোগসাজসে ওই খাদ্যশস্য আত্মসাত করেন। এ দুই প্রকল্প নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে জেলা প্রশাসক অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নেন।

দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তখনকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বর্তমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। এই কমিটি সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পান। পরে এই কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন দেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় কোনও ছাড় না দিয়ে শক্তভাবে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদন পেয়ে জেলা প্রশাসক অভিযুক্ত পিআইও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, প্রকল্প কাজ সময়মতো সঠিকভাবে হয়নি। পিআইও প্রকল্প কাজ পরিদর্শন না করে খাদ্যশস্য ছাড়পত্র প্রদান করেছেন এবং প্রকল্প সভাপতি তা উঠিয়ে নিয়েছেন। এতে দুপক্ষের যোগসাজস ছিল। চিঠিতে বলা হয়, ‘এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরও অনেক প্রকল্পে অভিযোগ রয়েছে মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে।’

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর সঙ্গে আজ শনিবার বিকেলে কথা হলে তিনি বলেন, শিডিউল বিক্রির টাকা জমা না দেওয়ার অভিযোগটি আমি এখনও পাইনি। অভিযোগটি এলে তা নিয়েও তদন্ত হবে। তবে তিনি বলেন, কিছু প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে একটি তদন্ত হয়েছে। সেখানে পিআইও’র অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এই দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে পিআইও কাউছার আহমেদকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রথমে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি গত সপ্তাহে তিন ভাগে টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে দিয়েছি।’ পরে কোন তারিখে কত টাকা জমা দিয়েছেন জানতে চাইলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বলেন, ‘ভাই সত্যি কথা বলতে কী আমি টাকাটা জমা দিতে পারিনি। ‘প্লিজ এ বিষয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আমি পরিস্থিতির শিকার।’

কেমন পরিস্থিতির শিকার জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাননি।  

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা