X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হুমায়ূন আহমেদকে আইডেন্টিফাই করা কঠিন | মাসউদ আহমাদ

শ্রুতিলিখন : মুশফিকুর রহমান
১৩ নভেম্বর ২০২০, ১৬:২৩আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২০, ১৬:২৫

মাসউদ আহমাদ কথাসাহিত্যিক, জন্ম ১৯৮০ সালের ৩ অক্টোবর রাজশাহীতে। প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস, ‘নিজের সঙ্গে একা’ এবং ‘রূপচানের আশ্চর্য কান্না’। তিনি গল্পবিষয়ক ছোটকাগজ ‘গল্পপত্র’ সম্পাদনা করেন। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি বাংলা ট্রিবিউনের প্রশ্নের জবাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। হুমায়ূন আহমেদকে আইডেন্টিফাই করা কঠিন | মাসউদ আহমাদ প্রশ্ন : প্রথমেই আমি জানতে চাইবো, আপনি হুমায়ূন আহমেদ কখন পড়তে শুরু করেন?

উত্তর : হুমায়ূন আহমেদকে আমি প্রথম পড়তে শুরু করি বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হওয়ার আগেই।

 

প্রশ্ন : মানে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা পাশ করার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগের সময়টা, তাইতো?

উত্তর : হ্যাঁ, হ্যাঁ।

 

প্রশ্ন : তখন আর কী কী পড়ছিলেন? হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া অন্য কারো বই-পুস্তক?

উত্তর : তখন রাজশাহীতে মেসে থাকতাম, আমার এক বন্ধু ছিল খুবই হুমায়ূন-ভক্ত এবং হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই এলেই সে খুব আগ্রহ-সহকারে পড়ে ফেলতো। সাথে সাথে গল্পও বলতো। বই পড়ে কেমন লাগলো, কী কাহিনি ছিল, বর্ণনাভঙ্গী-কৌশল ইত্যাদি ইত্যাদি। তখনই বলা যায় হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে আমি সচেতনভাবে আগ্রহবোধ করি এবং তাকে কিছু কিছু পড়তে শুরু করি। তখন আমি খুব যে সচেতনভাবে বই পড়তে শুরু করেছি এমন না, তবে বিভিন্ন লেখকের বই পড়তাম।

 

প্রশ্ন : হুমায়ূন আহমেদ পড়ার আগে কী কী বই পড়তেন?

উত্তর : ফিরোজ আশরাফের বই বেশি পড়া হয়েছে।

 

প্রশ্ন : ‘বেদনায় নীল আকাশ’ তার বিখ্যাত বই।

উত্তর : তখন ফিরোজ আশরাফের ‘বেদনায় নীল আকাশ’ বইটির রেফারেন্স পাই এবং বইটা খুঁজে বের করি এবং বইটি পড়ে বেশ ভালো লাগে। এরপর তার অন্যান্য বই সংগ্রহ করি এবং পড়তে শুরু করি। অন্যদিকে হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই না কিনে, রাজশাহীতে সোনামুখীর মোড় বলে একটা জায়গা আছে, ওইখানে মসজিদের দেয়াল ঘেঁষে একটা জায়গায় পুরনো বই বিক্রি হতো। সেখান থেকে হুমায়ূন আহমেদের কিছু কিছু বই কিনে পড়তে শুরু করি। সেখানে অল্প দামে বই পাওয়া যেতো।

 

প্রশ্ন : তাহলে আপনি হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ লেখা এভাবেই পড়েছেন?

উত্তর : না, মানে তা অনেক লেখা পড়িনি।

 

প্রশ্ন : এমনিতে আপনার, একজন লেখক হিসেবে এবং পাঠক হিসেবে আপনার কী মনে হয় হুমায়ূন আহমেদের লেখকসত্তা সম্পর্কে? তার লেখা সম্পর্কে? উনি কি ওভাররেটেড মানে অতিমূল্যায়িত?

উত্তর : যখন পড়েছিলাম পাঠক হিসেবে একটা স্তর ছিলো, পাঠকের স্তর। এখন যেহেতু নিজে একটু লেখালেখির চেষ্টা করি এবং কোনো একটা লেখা যখন পড়ি সেই পড়ার পেছনে আমার একটা উদ্দেশ্য থাকে—যে, এই লেখাটা কেন পড়ছি, লেখকের স্টাইল, জীবন অভিজ্ঞতা, রচনাকৌশল এবং সাহিত্যমূল্য কতটুকু আছে এই জিনিসগুলো একই সাথে এখন মাথায় কাজ করে। মনে মনে পরিকল্পনা থাকে যে, যদি ওরকম সাহিত্যগুণ না থাকে, রচনাশৈলী আমাকে মুগ্ধ না করে, ভাষাটা সুন্দর না হয় তাহলে আমি যেকোনো লেখকেরই একটা-দু'টো বই পড়ে আর বই পড়বো না।

 

প্রশ্ন : হুমায়ূন আহমেদের লেখা—এই বিচারবুদ্ধি তথা রুচিবোধের জায়গায় এসে আপনার কী মনে হয়?

উত্তর : হুমায়ূন আহমেদ অত্যান্ত শক্তিমান কথাশিল্পী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে হুমায়ূন আহমেদ প্রথম যেভাবে লেখা শুরু করেছিলেন—যেকোনো লেখকই হয়তো সেভাবেই শুরু করেন, মানে তার অভিজ্ঞতা, তার ভাষার দখল, গল্প বলার ভঙ্গী এবং তার নিজস্বতা নিয়েই শুরু করেছিলেন। তখন থেকেই তিনি আস্তে আস্তে পাঠক ধরতে শুরু করেন। পাঠক তার লেখা পছন্দ করতে শুরু করে। হুমায়ূন আহমেদের নির্মম সমালোচকও তার প্রথম দিককার গল্প-উপন্যাসে ভালো বলবে। কিন্তু যখন তার প্রসার ঘটতে শুরু করলো, তিনি নাটক তৈরি করতে শুরু করলেন এবং তার বইয়ের বিপুল পাঠকপ্রিয়তা তৈরি হলো—আমার মনে হয় তিনি সচেতনভাবেই নিজের জায়গা থেকে অনেকটা সরে এসেছেন। পাঠক কোন ধরনের লেখা বেশি পছন্দ করবে সচেতনভাবে তার চর্চা করেছেন। তার মানে এই নয় যে, শেষের দিকে তিনি ভালো লেখেননি, তিনি প্রত্যেক বছরই একটা বিশেষ বই লেখার চেষ্টা করেছেন, যেটাতে তার শক্তিমত্তার পরিচয় থাকে। শেষের দিকে তিনি 'দেয়াল' লিখেছেন, 'বাদশা নামদার' কিংবা 'মধ্যাহ্ন' ইত্যাদি।

 

প্রশ্ন : যেমন ধরুন মানিক-তারাশঙ্কর- বিভূতিভূষণ পরবর্তী জেনারেশন বা হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস—এদের সাহিত্যমূল্য যেভাবে বিচার করা হয়, সেভাবে হুমায়ূন আহমেদকে কি বিচার করা যেতে পারে?

উত্তর : হুমায়ূন আহমেদ সবসময়ই বলেছেন যে, তিনি চিন্তা-ভাবনা করে কিছু লেখেন না এবং অনেক গবেষণা করে প্রস্তুতি নিয়ে লেখেন না। তার মনে যখন যা থাকে তাই লেখেন এবং আনন্দের জন্য লেখেন, সেটাই সব সময় বলে এসেছেন। কিন্তু তার যে নিজস্বতা ছিলো, ভঙ্গি ছিলো তা দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করেছেন।

 

প্রশ্ন : তিনি একাডেমিকভাবে কীভাবে পঠিত হবেন বলে আপনার মনে হয়?

উত্তর : সেটা অন্য ব্যাপার। আমি যেটা বলছিলাম, হুমায়ূন আহমেদ যেভাবে শুরু করেছিলেন সেখান থেকে সরে এসেছেন কিংবা সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তারা লেখাপত্র যখন প্রচুর চলতে শুরু করেছে, পাঠক নিতে শুরু করেছে—এত প্রকাশক তাকে ঘিরে ধরেছেন, পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন তাদের মধ্যে—তিনি তার মতো করে লিখে যেতে পারেননি। তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ, জ্বরে বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না কিন্তু ঈদসংখ্যায় তার উপন্যাস বের হবে পৃষ্ঠা ফাঁকা রেখে মেকআপ হয়ে গেছে। তিনি লিখছেন আর তা চলে যাচ্ছে কম্পোজে।

তার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় উপন্যাসের যে সিরিজ 'হিমু', আরেকটা ছিল 'মিসির আলি'। 'হিমু' এত বেশি বিক্রি হতো যে, হিমুকে দিয়ে যদি হুমায়ূন আহমেদকে ধরতে চাই—তাহলে তাকে চেনা যাবে না। কিন্তু তিনি এগুলো যেহেতু প্রকাশ করেছেন এবং তারই লেখা, ফলে হুমায়ূন আহমেদকে আইডেন্টিফাই করা এক ধরনের কঠিন কাজ। তার রচনার সংখ্যা বিপুল এবং এই বিপুল রচনার মধ্যে কিছু কিছু রচনা এত জনপ্রিয় যে, ওই রচনাগুলো সাহিত্য মানের দিক থেকে বিশেষ করে সিরিয়াস পাঠক-সমালোচক এবং বোদ্ধামহলে কিছুটা পিছিয়ে থাকবে।

 

প্রশ্ন : তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনগুলো? কী কী দিয়ে তাকে সঠিকভাবে বিচার করা যাবে?

উত্তর : হুমায়ূন আহমেদের তিনশো বই। এরমধ্য থেকে বিশটি বইয়ের নাম আসবে। এখানে মুশকিল হচ্ছে যে, হুমায়ূন আহমেদ নিজেই নিজের ক্ষতি করে গেছেন। এত এত হালকা লেখা আছে যে, সে সবই সবসময় সামনে থেকেছে এবং তিনি বেশি সমালোচিত হয়েছেন। তার গল্পগুলোকে অসামান্য বলা হয় এবং প্রথম দিককার বেশ কিছু উপন্যাস।

 

প্রশ্ন : একাডেমিতে হুমায়ূন আহমেদ কি পাঠ্য হয়ে উঠেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে?

উত্তর : সেটা আমি সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে তাকে নিয়ে একাডেমিকভাবে গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে। সাহিত্যের বিচারে কোন লেখা টিকবে তা সঙ্গে সঙ্গে বলা কঠিন। লেখকের মৃত্যুর পর তার সমস্ত কিছু আলগা হয়ে যায়, তখন আসল জিনিসটিই আস্তে আস্তে তৈরি হয়। সে যাই হোক, একটা ব্যাপার আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তিনি সাধারণ পাঠককে আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। যা বাংলাদেশের সমস্ত লেখক মিলেও হয়তো করতে পারেননি।

 

ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেবার জন্য।

আপনাকেও ধন্যবাদ।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা