X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৩ বছর আগের একদিন

আমীন আল রশীদ
১৫ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৫২আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৫৫

আমীন আল রশীদ দুপুর থেকেই আবহাওয়া খারাপ। গুমোট। চিফ রিপোর্টারের নির্দেশ, ‘রেডি হন। বিকালেই রওনা দেন।’ কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছিলো কিছুই হবে না। ফলে তাকে বললাম, ‘ভাই উপকূলের মানুষ এরকম সিগন্যাল দেখে অভ্যস্ত।’
অফিস শেষ করে রাতে বাসায় রওনা হই। তেজগাঁওয়ের লাভ রোডে যায়যায়দিনের অফিস থেকে তখন আমার দিলু রোডের বাসা হাঁটাপথ। বাসায় ঢোকার পরে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। মনে হচ্ছিলো আশপাশে ব্যাপক ভাংচুর হচ্ছে। খানিক বাদে বৃষ্টি। চিফ রিপোর্টারের ফোন। বেশ ধমকের সুরেই বললেন, ‘আপনাকে বিকালেই রওনা হতে বলেছিলাম...’।
পরদিন যাত্রা শুরু। সঙ্গী আলোকচিত্রী আব্দুল জব্বার। আগের রাতের ব্যাপক তাণ্ডবে মহাসড়কের কী অবস্থা, রাস্তার ওপরে কী পরিমাণ গাছ ভেঙে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, সেটিই ছিল বড় দুশ্চিন্তা।
আরিচা ফেরি পার হয়ে বরিশাল শহর পর্যন্ত পৌঁছাতে বেশ বেগ পেতে হয়। বন্ধু জাহিদের বাসায় গোসল ও খাওয়া-দাওয়া শেষে রওনা হই পটুয়াখালীর দিকে। শোনা গেছে, সেখানের মির্জাপুর এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। তারপর সেই উপকূলযাত্রা চলে প্রায় তিন সপ্তাহ।
মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী সদর, কলাপাড়া, কুয়াকাটা, বরগুনা, আমতলী, পাথরঘাটা, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, বাগেরহাটের শরণখোলা, ঝালকাঠির প্রত্যন্ত এলাকা এবং সবশেষ আবার বরিশাল। সিডরের ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করা এবং প্রতিদিন সেই উপদ্রুত এলাকা থেকে সংবাদ ও বিশেষ রিপোর্ট পাঠানোর যে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা— ১৩ বছরেও যেন সেই সব স্মৃতি অমলিন। যেন চোখের সামনে ভাসছে সব। প্রশ্ন হলো, ১৩ বছরে কতটুকু বদলেছে উপকূলের চিত্র?
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপরে আঘাত হানে স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের হিসাবে, সিডরে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৩৬৩ জন মানুষ। যদিও রেড ক্রিসেন্ট ও বিভিন্ন বেসরকারি হিসাবে প্রায় ১০ হাজার। সিডরে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ৭ লাখ ৪২ হাজার ৮২৬ একর জমির ফসল। সর্বসাকুল্যে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে ওই সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
কেন এতটা বিধ্বংসী?
সিডর কেন এতটা বিধ্বংসী হলো, তা নিয়ে ওই সময়ে নানা বিশ্লেষণ হয়েছে। কয়েকটি কারণ এ রকম:
১. বরিশাল অঞ্চলে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে ‘তারিখ দিয়া মারামারি হয় না।’ সিডরের আগেও উপকূলের মানুষ এই কথাটিকেই ঘুরিয়ে বলেছেন, ‘তারিখের বইন্যা (বন্যা) হয় না’। যে কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও স্থানীয়রা এটিকে খুব একটা আমলে নেননি। তারা ভেবেছিলেন, শেষ পর্যন্ত কিছুই হবে না। এক্ষেত্রে সিডরের আগে সুনামি আতঙ্ক একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। তখন সুনামি আঘাত হানতে পারে বলে সরকারি পর্যায় থেকে ব্যাপক প্রচার চালানো হলেও শেষ পর্যন্ত সুনামি আঘাত হানেনি।
২. ঝড়ে ক্ষতি বাড়ার আরেকটি কারণ ছিল আশ্রয়কেন্দ্রের স্বল্পতা। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা যখন নিশ্চিত হলেন যে, সিডর আঘাত হানছে, তখন আর সময় ছিল না। কারণ, যাদের বাড়িঘর আশ্রয়কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি, তারাই কেবল সেখানে যেতে পেরেছেন। কিন্তু যাদের বাড়ি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে দূরে, তারা ঠাঁই নিয়েছেন বেড়ি বাঁধ বা উঁচু রাস্তায়। একই তথ্য পাওয়া গেছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় দুর্গত এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে।
৩. একটা অদ্ভুত তথ্য পাওয়া গেছে বরগুনার পাথরঘাটা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিষখালি নদী তীরের সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষের সঙ্গে কথা বলে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে পুরো আশ্রয়কেন্দ্র বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। চেহারা দেখে মনে হয় ওখানে বোমা ফেলা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষ জানান, সরকারিভাবে যখন ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত দেয়া হচ্ছিলো, তখন তারা ভেবেছিলেন তাদের এ স্থান থেকে উচ্ছেদ করে জায়গাটি দখল করা হবে। কেননা, এর আগেও তারা এ রকম কথা শুনেছেন। তাই নিজের বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হবার ভয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন।
৪. প্রয়োজনীয় স্থানে বেড়িবাঁধ না থাকাও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতি বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ। পাথরঘাটা উপজেলা শহর থেকে দক্ষিণে বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনা সংলগ্ন পদ্মা এলাকায় একটি বেড়ি বাঁধ রয়েছে। কিন্তু বাঁধের বাইরে থাকা ঘরগুলো সিডরের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলেও বাঁধের ভেতরের মানুষেরও শেষরক্ষা হয়নি। কারণ, বাঁধের একটা বড় অংশ ভেঙে গিয়েছিল সিডরেরও কয়েক বছর আগে। সেটি কার্যকরভাবে মেরামত করা হয়নি। কয়েকবার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ভাঙন এলাকার অদূরে বলেশ্বরের মাঝখানে জেগে উঠেছে বিশাল চর। সেখানে বাধা পেয়ে প্রমত্তা বলেশ্বর ভেঙে যাওয়া বাঁধের ওই অংশে এসে সজোরে আঘাত করে। ফলে যেনতেন রকমের বাঁধ রক্ষার চেষ্টায় আদতে কোনও ফল হয় না।
৫. সিডরে ক্ষতির বৃদ্ধির আরেকটি কারণ উপকূল উপযোগী গাছের স্বল্পতা। সরেজমিন দেখা গেছে, হাজার হাজার গাছ মৃত সৈনিকের মতো চারপাশে পড়ে আছে। এগুলোর বেশিরভাগই রেইনট্রি, চাম্বল, মেহগনি জাতীয়। অথচ উপকূলে থাকার কথা প্রচুর ম্যানগ্রোভ বন এবং শক্তিশালী শেকড়েরর গাছ যেমন তাল, নারকেল, সুপারি ইত্যাদি। বেসরকারি সংগঠন কোস্টের গবেষণা অনুযায়ী, গত অর্ধশতকে দেশের এক-তৃতীয়াংশ ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে চিংড়ি প্রকল্পের দাপটে প্রায় ২২ হাজার একর আয়তনের চকরিয়া সুন্দরবন সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলা হয়; যেটি ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন।
৬. যখন ‘সিডর’ আঘাত হানে, তখন পর্যন্ত অধিকাংশ জায়গায় দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় প্রশাসন শুধু মাইকিং করেই দায়িত্ব শেষ করে। অনেক স্থানে মাইকিংও হয়নি। ফলে স্থানীয় জনসাধারণ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগ পর্যন্ত এ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেননি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর দুর্যোগ বিষয়ক সরকারের স্ট্যান্ডিং অর্ডার বা স্থায়ী আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ জায়গায়ই এ আদেশগুলো সঠিকভাবে পালন করা হয়নি।

পরিস্থিতি কতটা বদলেছে?
ভূ-প্রাকৃতিক কারণে বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই যেহেতু ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তথা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ ও শক্তি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে, ফলে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা কতটা প্রস্তুত—এ প্রশ্ন প্রায়শই নানা ফোরামে উত্থাপিত হয়। তবে এ কথা অস্বীকার করা উপায় নেই, সিডরের পরে এই ইস্যুতে দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনা অনেক বেড়েছে। যে কারণে সিডরের দেড় বছরের মাথায় ২০০৯ সালের ২৫ মে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানলেও তাতে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল কম। মাত্র ১৯০ জন। যদিও বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। সেই ভুক্তভোগীদের অনেকে এখনও গৃহহীন।
সিডর ও আইলার পরে আরও বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে। ২০১৩ সালের ১৬ মে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন; ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’; ২০১৬ সালে ২১ মে ‘রোয়ানু’; ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। ২০১৯ সালের ৩ মে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’; একই বছরের ৯ নভেম্বর অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এবং সবশেষ গত ১৯ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’। তবে এসব ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি সিডর ও আইলার তুলনায় অনেক কম হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সিডর-পূর্ব এবং সিডর-পরবর্তী জনসচেতনতার তুলনা করলে পার্থক্যটা অনেক। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। কারণ, যখনই কোনও বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সাথে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো, বিশেষ করে সংবাদভিত্তিক চ্যানেলগুলো ঘটনাস্থল এবং রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অফিস থেকে সার্বক্ষণিক লাইভ বা সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে একদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সবশেষ অবস্থান ও শক্তি সম্পর্কে যেমন মানুষকে তথ্য দিয়েছে, সেই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রসহ নিরাপদ জায়গায় সরে যেতেও উদ্বুদ্ধ করেছে। স্ট্যান্ডিং অর্ডার অনুযায়ী সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সঠিকভাবে কাজ করছেন কিনা, তাদের প্রস্তুতি কেমন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবস্থাসহ সার্বিক বিষয়ে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সরকারকেও একটি চাপের মধ্যে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এতে করে পুরো ব্যবস্থাপনাটি এক ধরনের জবাবদিহির মধ্যে এসেছে— যা ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছে। এই ইস্যুতে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে দেশের নানা প্রান্তে বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত কমিউনিটি রেডিওগুলোর প্রতি। ‘কণ্ঠহীনের কণ্ঠস্বর’—এই স্লোগানে কমিউনিটি রেডিওগুলো যেহেতু স্থানীয় জনগোষ্ঠীর লোকেরাই পরিচালনা করেন, ফলে তারা নিজেদের কথাগুলো নিজেদের ভাষায় প্রচার করতে পারেন— যা মূলধারার গণমাধ্যমের চেয়ে অনেক বেশি যোগাযোগবান্ধব। উপকূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্ব, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী— এই তিন সময়েই কমিউনিটি রেডিওগুলো শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে, রাখছে।
দুর্নীতি ও টেকসই বাঁধ বিতর্ক
সিডর আঘাত হানার পরে এই প্রতিবেদকের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল: ‘ত্রাণ নয়, টেকসই বাঁধ চান উপকূলবাসী’। এই ঘটনার সাড়ে ১২ বছর পরে গত মে মাসে খুলনার কয়রা উপজেলার পানিবন্দি মানুষের বরাতে একাধিক গণমাধ্যমে ওই একই শিরোনাম হয়। সুতরাং এই একযুগে উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় কী কাজ হলো, কতটুকু হলো—সে প্রশ্ন তোলাই সঙ্গত।
বস্তুত ঘূর্ণিঝড়ে যতটা না ক্ষতি হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বাঁধ ভেঙে ফসলের জমি ও লোকালয়ে পানি ঢুকে। গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরা উপকূলের বুড়ি গোয়ালিনী, গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশাশুনির প্রতাপনগরের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ফলে তাদের দাবি টেকসই বাঁধ।
সিডরে পাথরঘাটার পদ্মা এলাকার যে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, সেটি বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হলেও এর প্রায় ৫০০ মিটার বেড়িবাঁধ এখনও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। পার্শ্ববর্তী আরও কয়েকটি এলাকার বেড়িবাঁধেরও একই অবস্থা। বর্ষা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলের নদ-নদীগুলো যখন উত্তাল থাকে, তখন স্বাভাবিক জোয়ারেও এসব বেড়িবাঁধ উপচে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। বাঁধগুলো টেকসই না হওয়ায় বারবার সংস্কার করেও সুফল মেলে না।
সরকার যে বদ্বীপ বা ডেলটা প্ল্যান ঘোষণা করেছে, সেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপকূলীয় এলাকার জন্য এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে টেকসই বাঁধও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ডেল্টা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, উপকূলীয় অঞ্চলের বিদ্যমান পোল্ডারের কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঝড়বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ মোকাবিলা করা হবে; পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বন্যার ঝুঁকি হ্রাস করা হবে ইত্যাদি।
প্রশ্ন হলো, বরাদ্দ থাকলেই কি তার সঠিক ব্যবহার হয়? বেড়িবাঁধসহ এরকম অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দের কত শতাংশ খরচ হয় তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন আছে, তেমনি সেই খরচে যে কাজ হয়, তার মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর কার্যকর হয় প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তি। এর ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ৫ নভেম্বর দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন টিআইবি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি কমেনি। বরং দুর্নীতির উদ্দেশ্যে অর্থায়ন, প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রবণতা চলমান। প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতি লঙ্ঘন করলেও অভিযুক্ত সংস্থাকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি।
এই দুর্নীতি ও অনিয়ম শুধু বাঁধ নির্মাণেই নয়, বরং জলবায়ু অর্থায়নে গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। সুতরাং সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি না কমলে টেকসই বাঁধের দাবিতে ১৩ বছর আগের যে সংবাদ শিরোনাম ২০২০ সালে এসেও দেশের মানুষকে দেখতে হয়েছে, এই একই শিরোনাম হয়তো ১০ বছর পরেও দেখতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
অতিরিক্ত মদপানে লেগুনাচালকের মৃত্যু
অতিরিক্ত মদপানে লেগুনাচালকের মৃত্যু
পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বাবা-ছেলে নিহত
পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বাবা-ছেলে নিহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ