লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনের বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। শনিবার (১৪ নভেম্বর) রাতে উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনও’র বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে ইউএনও’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন। এর পাল্টা হিসেবে আজ রবিবার (১৫ নভেম্বর) উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আদিতমারী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ইউএনও মনসুর উদ্দিন। একইদিনে এই বিরোধে আরও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে উপজেলা পরিষদের সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে চেয়ার্যানের বিরুদ্ধে আরও একটি সাধারণ ডায়েরি করায়। ১৯টি চেকের পাতা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ এনে এই জিডি করেছেন হাবিবুর।
রবিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উভয়ের করা সাধারণ ডায়েরি দুটি পরপর আদিতমারী থানায় নথিভুক্ত করা হয়।
জিডির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, 'উপজেলা প্রশাসনের সিসি ক্যামেরার বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে ফেলা এবং তাতে বাধা দেওয়ায় আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যার হুমকি দেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তৎক্ষণাৎ অবহিত করি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকার কারণে সাধারণ ডায়েরি করতে বিলম্ব হয়েছে।’
অপর জিডির বাদী উপজেলা পরিষদের সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান বলেন, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর আদিতমারী শাখায় পরিচালিত ৩৩০০৪৯৬৪ নম্বর হিসাবের সিডি/১০০ এর ২৮৫৭৭৩১ নম্বর হতে ২৮৫৭৭৫৫ পর্যন্ত ১৯টি পাতা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস এবং ১০০ পাতার চেক বইটি আমার কাছে ফেরত দেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদের সাধারণ সভার নথি, উপস্থিতি হাজিরা, কর্মচারীদের হাজিরা খাতা এবং আরও বেশ কিছু সরকারি নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি ইউএনও স্যারকে লিখিতভাবে অবগত করলে তিনি আমার আবেদনটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য আদিতমারী থানার ওসিকে অনুরোধ করেন। ইউএনও স্যার বরাবর করা আমার আবেদনপত্রটিই সাধারণ ডায়েরি হিসেবে থানায় গ্রহণ করা হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে জিডি হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু তদন্ত করা হবে। তবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা চারদিকে নজর রাখছি।’
আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আমাকে স্রেফ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে হয়রানি এবং ফাঁসাতে সকল ধরনের কৌশল নেওয়া হচ্ছে। কোথাও থেকে এসব করা হচ্ছে। আমার নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আল্লাহর নিকট আমি বিচার প্রার্থী। এ ছাড়া আমার আর কোনও বাঁচার পথ নেই।’
তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি ইউএনওকে হত্যার হুমকি দেইনি। এছাড়া চেক ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাও সাজানো। আমার বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, কয়েকদিন ধরে চলে আসা বিরোধের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার বিকালে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য ও গালমন্দ করার অভিযোগ আনেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের আদিতমারী উত্তরপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির উঠানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পাশাপাশি ইউএনও’র বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে ৫১ পৃষ্ঠার তথ্য প্রমাণ সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: