X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

থিংস ফল এ্যাপার্ট : একটি ইকোক্রিটিকাল পাঠ

ফকরুল আলম, অনুবাদ : মুহম্মদ মুহসিন
১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৩১আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৪৭

থিংস ফল এ্যাপার্ট : একটি ইকোক্রিটিকাল পাঠ 'থিংস ফল এ্যাপার্ট' লেখার ক্ষেত্রে চিনুয়া আচেবের অন্যতম লক্ষ্য ছিল পশ্চিমা লেখায় ও আলোচনায় আচেবের দেশ ও জনগণকে যেভাবে ভুলরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে তা সংশোধন করা। The Biafran Cause আচেবে ড. ইমানুয়েল ওবিয়েচিনাকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন- ‘খোলাখুলি হোক কিংবা একটু আড়ালে রেখেই হোক’ এখানকার লেখকদের ‘একটি লক্ষ্য’ হচ্ছে পশ্চিম কর্তৃক উপস্থাপিত ‘আফ্রিকান সংস্কৃতির বিকৃতিগুলো সংশোধন করে উপস্থাপন করা’ এবং ‘অতীতকে পুনর্নির্মাণ করা যাতে আফ্রিকান পাঠক তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়’(Achebe, Morning, 117)। Publishing in Africa প্রবন্ধে আচেবে গুরুত্বের সাথে বলেছেন- একজন আফ্রিকান লেখককে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে ‘সেই আধ্যাত্মিক বন্ধনকে যা একজন সত্যিকার শিল্পী এবং তার সম্প্রদায়ের মাঝে আবশ্যিকভাবে বিদ্যমান’ (Achebe, Morning, 101)। The Novelist as Teacher প্রবন্ধে আচেবে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন- ‘লেখক হিসেবে এটি তাঁর কর্তব্য’ যে তার দেশকে ঔপনিবেশিক শক্তি কর্তৃক বিকৃতভাবে উপস্থাপনার কারণে হীনমন্যতায় ভোগা একজন আফ্রিকান কিশোরকে তিনি বিশ্বাস করতে শেখাবেন ‘যে, আফ্রিকার জলবায়ুতে ক্লেদের কিছু নেই, (এবং) আফ্রিকার পামগাছগুলোও স্বাভাবিক গাছের মতোই কাব্যবস্তু হয়ে ওঠার যোগ্য’ (Achebe, Morning, 58)।


আচেবের এই অবস্থানের ভিত্তিতেই বলা যায়, আচেবে যে-সকল উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে থিংস ফল এ্যাপার্ট লিখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- তিনি আফ্রিকা মহাদেশের সেই রূপটি উপস্থাপন করতে চেয়েছেন যেখানে ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের পূর্বে সেখানকার মানুষেরা তাদের পরিবেশের সাথে বহুমুখী বিন্যাসে বৈচিত্র্যময় এক সম্পর্ক নিয়ে বসবাস করতো। উপন্যাসটিতে আফ্রিকানদের সাথে তাদের মাটির যে সম্পর্ক চিত্রিত হয়েছে তা থেকে একজন আফ্রিকান পাঠক উপলব্ধি করতে পারে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সংহত ও সহমর্মী সম্পর্ক নিয়ে বাস করা বলতে কী বোঝায়। এ উপলব্ধি থেকেই জেগে ওঠে সেই বোধ যাকে আমরা এখন ‘পারিবেশিক বা পরিবেশতাত্ত্বিক সচেতনতা’ বা ‘ইকোলজিকাল কনশাসনেস’ নামে জানি। এ উপলব্ধি থেকে জেগে ওঠে সেই সংবেদনশীলতা যা দ্বারা অনুভব করা যায় মাটির সাথে মানুষের অন্তরঙ্গ সম্পর্কটি বাঁচিয়ে রাখার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। লেখক উপন্যাসটিতে আরো দেখাতে চেয়েছেন কলোনিয়াল শাসন কীভাবে প্রকৃতির সাথে আফ্রিকানদের সম্পর্কে এক টানাপোড়েন ঘটিয়েছিল। ‘সবকিছু ভেঙে পড়ার’ এই উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছেন আফ্রিকান মাটিতে ইউরোপিয় সাম্রাজ্যবাদীদের আবির্ভাবের পরে যত সবকিছু ভেঙেচুরে পড়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো আফ্রিকার প্রকৃতি ও সংস্কৃতির অখণ্ডতা।
আফ্রিকার প্রকৃতি ও সংস্কৃতির অভিন্ন সত্তা এভাবে বিখণ্ডিত হওয়ার প্রেক্ষিতে, এ প্রবন্ধে আমি থিংস ফল এ্যাপার্ট-কে দেখতে চাই ইকোক্রিটিসিজমের তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং সেই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে আমি দেখাতে চাই আচেবের এই উপন্যাসটি লেখার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকান পাঠকদেরকে এ মর্মে একটি ধারণা দেয়া যে, তাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে কতটা সন্নিবদ্ধ ছিল। আমি আরো দেখাতে চাই ঔপনিবেশিক শক্তি কর্তৃক আফ্রিকার জনগণ ও আফ্রিকার প্রকৃতির মধ্যকার বন্ধন ধ্বংসের ঘটনাটি আচেবে কতটা গুরুত্বের সাথে এ উপন্যাসে চিত্রিত করেছেন। সবশেষে আমি দেখাতে চাই আচেবে কতটা গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন যে, জীবনের সামগ্রিকতা ফিরে পেতে চাইলে আফ্রিকানদেরকে প্রকৃতির সাথে তাদের হারানো সম্পর্ককে পুনর্জাগ্রত করতে হবে।

২.
ইকোক্রিটিসিজম বলতে বোঝায় ‘সাহিত্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের পারস্পরিক সম্পর্কের এক পাঠ বা বিশ্লেষণ’। অতি সম্প্রতি সাহিত্য বিশ্লেষণে একটি তত্ত্বীয় ধারা হিসেবে এর প্রবেশ ঘটেছে। সাহিত্যকর্ম বিশ্লেষণে এটি ‘মৃত্তিকা কেন্দ্রিক (earth-centered) একটি এ্যাপ্রোচ’ (Garrard, 1)। এ তত্ত্বের মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে যা একে pastoral কিংবা wilderness studies এর কাছাকাছি নিয়ে যেতে চায়। এ কারণেই বলে নেয়া ভালো যে, আমি এখানে ইকোক্রিটিসিজমকে মোটামুটিভাবে বসতিব্যবস্থার (dwelling) এক আলঙ্কারিক অভিব্যক্তির সাথে সম্পর্কিতরূপে দেখতে চাই; গ্রেগ গ্যারার্ড এই আলঙ্কারিক অভিব্যক্তি দ্বারা বুঝিয়েছেন ‘পুরুষপরম্পরায় বেঁচে থাকা মৃত্তিকায় মানুষের জীবনের, মরণের, আচারব্যবস্থার, ক্রিয়াকর্মের দীর্ঘমেয়াদি এক সন্নিবদ্ধ বিন্যাস’ (১০১)। ইকোক্রিটিসিজমের উপশিরোনামরূপ এই বসতিব্যবস্থা (dwelling) বলতে গ্যারার্ড বুঝিয়েছেন একটি মানব সম্প্রদায় ও তাদের আচারব্যবস্থার মধ্যকার সম্পর্ককে, মনুষ্য ও অমনুষ্যকুলের মধ্যকার সম্পর্ককে, এবং প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মধ্যকার সম্পর্ককে। এমন একটি বসতিব্যবস্থা (dwelling) গড়ে তুলতে এই মৃত্তিকার ভৌত ব্যবস্থায় প্রথমে শিকড় গাড়তে হয় এবং ডালপালা ছড়াতে হয়; মৃত্তিকার এই ভৌত ব্যবস্থাটিই অতপর হয়ে ওঠে অতীত-স্মৃতি ও ভবিষ্যৎ-আকাঙ্ক্ষার এক আধার; এরপর ধীরে ধীরে এই আধার ধারণ করতে শুরু করে ‘আভিধানিক’ ও ‘আলঙ্কারিক’ অনেক অর্থ (১১৫)। সেই সকল অর্থই ইকোক্রিটিসিজমের অন্বেষার বিষয়। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা দরকার, আদিম অধিবাসীরা প্রায় সবাই প্রকৃতির সাথে এই সম্পর্ক ও অর্থ নিয়ে জীবন রচনা করেছে। তারা তাদের ‘সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে শেখা জ্ঞান ও কৌশল’ নিয়ে জমির সাথে জড়িয়ে থেকেছে যতক্ষণে না ভিন মহাদেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদী এক জনগোষ্ঠি এসে জমি ও প্রকৃতির সাথে তাদের এ সম্পর্ককে ছিন্ন করেছে (১৩৫)।
এখানে উল্লেখ্য, সম্প্রতি কিছু আফ্রিকান সমালোচক ইকোক্রিটিসিজম বিষয়ে একটু সাবধানী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও অনেকেই ইকোক্রিটিসিজমের আলোকে আফ্রিকায় সাম্রাজ্যবাদীদের উপস্থিতিকে কঠিন সমালোচনা করেছেন। Ecoing the Other(s): the Call of Global Green and Black African Responses প্রবন্ধে ÜWilliam Slaymaker আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন নাইজেরিয় কবি Niyi Osundare-কে এবং নাইজেরিয় লেখক Ken Saro-Wiwa-কে; এবং দেখিয়েছেন তাঁরা কীভাবে ইকোক্রিটিসিজমের বক্তব্যে সচেতন হয়ে পরিবেশের পক্ষে কথা বলেছেন। Slaymaker উল্লেখ করেছেন যে, নাইজেরিয় লেখক Wole Soyinka কবি Osundare বা Saro-Wiwa এর মতো ecoactivism চর্চা করেননি অর্থাৎ সাহিত্যকর্মে পরিবেশের পক্ষে বক্তব্য দাঁড় করাননি, তবে তাঁর সাহিত্যকর্মগুলোও ‘স্থানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্ববাহী প্রাকৃতিক ক্ষেত্রসমূহের প্রতি তাঁর সম্মানবোধ’ তুলে ধরে (৬৮৭)। Slaymaker বিশ্বাস করেন যে, কেনিয়ান লেখক Ngugi তাঁর লেখায় ‘জন্মভূমির প্রতি Agikuyuদের আত্মিক সম্পর্ককে’ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন (৬৮৮)।
Byron Caminero-SantangeGi“Different Shades of Green: Ecocriticism and African Literature আরেকটি সাম্প্রতিক প্রবন্ধ যেখানে দেখানো হয়েছে আফ্রিকান লেখকদের কৃতিত্ব বিশ্লেষণে ইকোক্রিটিসিজম কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাঁর বিশ্লেষণে Ngugi’র গ্রন্থ A Grain of Wheat ‘আগেকার জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাহিত্য ধারার অন্তর্গত’ এবং ইহা ‘অবক্ষয়মুখী ও যান্ত্রিক ইউরোপিয় আধুনিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির প্রতি এমন এক একাত্মতা প্রকাশ করে যা সাম্রাজ্যপূর্ব আদর্শিক গ্রামজীবনেই শুধু বিরাজমান ছিল’ (৭০৩)। বলা যায় Ngugi’র লেখায় ‘সাম্রাজ্যপূর্ব-সমাজ প্রকৃতির সাথে একসুরে রোমান্টিক হয়ে ওঠে’ (৭০৩)।
উল্লেখ্য যে, ইকোক্রিটিসিজম ও আফ্রিকার পোস্টকলোনিয়াল সাহিত্যের সম্পর্ক বিশ্লেষণকালে Slaymaker কিংবা Caminero-Santangeকেউই আচেবের নাম কোথাও উচ্চারণ করেননি। কিন্তু আমি দেখাতে চাই যে, আচেবেও আফ্রিকার সেই পুরোধা ব্যক্তিদের একজন যাঁরা আফ্রিকার সাম্রাজ্যপূর্ব ভূখণ্ডটি ও সে-ভূখণ্ডের মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক সম্পর্কের বিন্যাসটি সাহিত্যে রূপ দিয়েছেন এবং দেখিয়েছেন সাম্রাজ্য কীভাবে এই সম্পর্কটি তছনছ করে দিয়েছে। থিংস ফল এ্যাপার্ট-এ আচেবে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন প্রকৃতির সাথে পশ্চিম আফ্রিকানদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ককে যা সাম্রাজ্যবাদ আসার পরে ‘ভেঙে খান খান হয়ে যেতে’ শুরু করেছে। থিংস ফল এ্যাপার্ট- এর বিশেষত্ব হলো এর স্বতন্ত্র ধারা যে ধারায় এখানে ইগবো সম্প্রদায়ের সাথে তাদের ভৌত পরিবেশটির গভীর সম্পর্ককে চিত্রিত করা হয়েছে। আচেবের এ চিত্রায়ন থেকে পাঠকের মনে পড়ে যায় The Wretched of the Earth (1961) গ্রন্থে উল্লিখিত Frantz Fanon’র মন্তব্য যেখানে তিনি অনেক আবেগের সাথে সাম্রাজ্যপীড়িত জাতির লেখকদেরকে ‘সাম্রাজ্যপূর্ব জাতীয় সংস্কৃতি’ সন্ধান করতে উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়াস পেয়েছিলেন (Fanon 371) । Frantz Fanon’র মতে একজন ‘স্বদেশী বুদ্ধিজীবীকে’ তিন পর্বের বিবর্তন পাড়ি দিতে হয়। প্রথম পর্বে তিনি ‘সাম্রাজ্যবাদীদের সংস্কৃতি আত্মস্থ করেন’; দ্বিতীয় পর্বে তিনি ‘তাঁর স্মৃতির গভীর থেকে’ অতীতকে তুলে এনে স্মরণ করতে শুরু করেন ‘তিনি কে’; তৃতীয় তথা ‘লড়াইর পর্বে’ তিনি উপলব্ধি করতে শুরু করেন যে ‘তার জনতার মর্মজগতকে খুলে দেয়’ এমন লেখা লিখে তাঁর জনতাকে জাগাতে হবে (Fanon 377)। সোয়েংকা ও নগুগি’র সাথে আচেবেও নিশ্চিতভাবেই সেই লেখকদের একজন যিনি এই দ্বিতীয় পর্ব থেকে তৃতীয় পর্বের দিকে অগ্রসরমান। Fire and Transition in Things Fall Apart প্রবন্ধে সমালোচক Bu-Buakei Jabbi লিখেছেন ‘একজন অগ্রণী ঔপন্যাসিক হিসেবে’ আচেবের ‘মৌলিক বিষয়বস্তু হলো আফ্রিকার অতীতের সাথে আফ্রিকানদের মর্যাদাকে সহগামী ভাবার নয়া-নেগ্রিট্যুড উচ্চারণ’ (২০১)। আচেবে মনে করতেন আফ্রিকানরা যদি সত্যিই একটি সামগ্রিক সত্তায় আবার ফিরে আসতে চায় তাহলে তাদের লেখকদেরকে অবশ্যই রাজনৈতিক হতে হবে, তাদেরকে গল্প বলতে হবে তাদের সনাতন ধারায় এবং সে গল্প হবে তাদের শেকড়ের গল্প, তাদের ভূমিতে তাদের নিবাসের গল্প, এই শিকড় ও ভূমি থেকে তাদের বিচ্যুতির গল্প এবং সেই বিচ্যুতির ক্ষতিকে কাটিয়ে ওঠার গল্প (Searle, 61, 65)।


'থিংস ফল এ্যাপার্ট' খালি একজন মাথামোটা দাম্ভিক ওকোনকুয়োর গল্প নয় যে সাদাদের হাতে অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করে। বরং একই সাথে এটি উমুয়োফিয়া-নিবাসী আফ্রিকান এক জনগোষ্ঠির উপন্যাস আচেবে নিজে যে জনগোষ্ঠির মানুষ। উপন্যাসটি ইউরোপিয়দের আগমনে এই জনগোষ্ঠিটির পাল্টে যাওয়ার গল্প। উপন্যাসের দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পাঠক শুধু লক্ষ্য করে ওকোনকুয়োর গল্পটি কী গাঢ় বন্ধনে তার সম্প্রদায়ের জীবনে ও জমিনে রোপিত। Neil ten Kortennar তাঁর The Centre is Made to Hold in Things Fall Apart প্রবন্ধে যেমনটা বলেছেন সাম্রাজ্যশক্তির আগমনের পূর্ব পর্যন্ত আচেবে উমুয়োফিয়া ও উমুয়োফিয়ার বিতর্কিত সন্তান ওকোনকুয়োর গল্পটি বয়ান করেছেন সময়ের পরিবর্তনদ্যোতক নড়াচড়ার বাইরে রেখে (synchronically)। সাম্রাজ্যশক্তির আগমনের পর থেকে সে কাহিনি পরিবর্তনমুখিতায় নড়ে উঠতে শুরু করে অর্থাৎ diachronic হয়ে ওঠে। গল্পের এই কথনকৌশল ইঙ্গিত দেয় যে, উমুয়োফিয়ার সম্প্রদায়টিকে আমাদের দেখা উচিত ‘একটি ইতিহাস-নিরপেক্ষ অখ- জৈবসত্তা’ হিসেবে ‘ইউরোপিয় আগমন যে-সত্তাকে ভেঙেচুরে ইতিহাসের পরিবর্তনশীলতার পথে তুলে দিয়েছে’ (১৩৯)।

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ওকোনকুয়োর পিতা ইউনোকার জীবনটি তার জনতা ও জমিনের সাথে একসুরে বাঁধা ছিল। কিন্তু ওকোনকুয়োর সাথে এই সম্পর্কটি বেসুরো হয়ে ওঠে। ওকোনকুয়ো তার পিতাকে এক ব্যর্থ ব্যক্তিত্ব ও কাপুরুষ বলে মনে করে। কিন্তু আমরা ইউনোকার প্রতি মায়া অনুভব করি। কারণ ইউনোকা ‘ভালোবাসতো বছরের সেই ঋতুকে যখন বৃষ্টি থেমে যেত এবং সূর্য উঠতো অনিন্দ্য সৌন্দর্য নিয়ে’ (Achebe, Things, 4)। ইউনোকা এবং তার গ্রামের সবাইই প্রকৃতির অন্ধকার বিষয়গুলো নিয়ে অবশ্যই সচেতন ছিল, কিন্তু তারপরও তারা কৃষ্ণপক্ষের রাত কাটিয়ে শুক্লপক্ষের রাতটিকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করতে জানতো। তারা জানতো কোনটি এড়াতে হবে আর কোনটি থেকে আনন্দ শুষে নিতে হবে। তাদের জীবন-পথের অন্যতম মুলসূত্র ছিল এই উপলব্ধি যে, ‘প্রকৃতির কর্মকাণ্ডে নাক গলানো যাবে না’ (৩১)। ইউনোকার মৃত্যুর ঘটনা সেই নাক-না-গলানো ভারসাম্যের উদাহরণ তথা নিজ মাটি ও প্রকৃতির গভীরে শেকড় গাড়তে পারার মাধ্যমে অর্জিত সদ-সম্পর্কের উদাহরণ। ইউনোকার শরীর যখন বিভিন্ন স্থানে ফুলে উঠতে শুরু করে তখন গ্রামের লোকেরা তাকে ইভিল ফরেস্টে ফেলে আসে কারণ জনতা জানতো যে এমন সংক্রামক রোগীকে মানব বসতি থেকে দূরে ফেলে আসাই শ্রেয়।
মোটের ওপরে সাম্রাজ্যপূর্ব উমুয়োফিয়া কিছু সুখী নারীপুরুষেরই বাসস্থান। মঝেমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল খারাপ হলেও সাধারণভাবে উমুয়োফিয়া তার জনগণের ভরণপোষণ জোগাতো যে জনতা তার মাটিকে সম্মান করতো এবং তার চাওয়াগুলো পূরণ করতে। এই বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি শুনতে পাই ধরিত্রী দেবীর পুরোহিত অনি’র (Ani) মুখে। বদমেজাজী ওকোনকুয়ো স্ত্রী ইজিয়ানিকে (Ezeani) প্রহার করলে অনি তাকে তিরস্কার করে বলেন- ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন ফসল বোনার এক সপ্তাহ আগে থেকে আমরা যেন কোনো প্রতিবেশীর সাথেও কোনো কটু কথা না বলি। প্রতিবেশীর সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে চলা মানে আমাদের ধরিত্রী দেবীকে সন্তুষ্ট রাখা। আর তার আশীর্বাদ ছাড়া তো আমাদের ফসলই জন্মাবে না’ (২৮)। ওকোনকুয়ো নিজেও জানতো ধরিত্রী দেবীকে শান্ত করতে হবে কারণ তিনিই তো ‘সকল উর্বরতার উৎস’ (৩৩)। এই জ্ঞানই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাকে সফলতা এনে দেয় এবং সে তার সমাজের অন্যতম ধনী ও ক্ষমতাবান মানুষ হয়ে ওঠে, যদিও গোড়ায় সে ছিল একজন বর্গাচাষী মাত্র। কিন্তু যখন সে মানুষ হিসেবে তার বেঁধে দেয়া মাত্রা অতিক্রম করে ফেলে, তার জিম্মায় রাখা পুত্রবৎ ছেলে ইকেমেফুনাকে নিজহাতে হত্যা করে ফেলে, তখনই সমাজ তাকে সমালোচনা করতে শুরু করে, কারণ সে যা করেছে তা স্বাভাবিক নয় এবং প্রকৃতির চাওয়া নয়।
'থিংস ফল এ্যাপার্ট'- এর দ্বিতীয় পর্বে ওকোনকুয়োকে উমুয়োফিয়া থেকে বের করে দেয়া হয় কারণ সে দুর্ঘটনাবশত উমুয়োফিয়াবাসী একজনকে মেরে ফেলে। অবশ্য ঘটনাটি তার নিজের দোষে সংঘটিত নয়, বরং একেবারেই দুর্ভাগ্যপ্রসুত অথবা তার গার্ডিয়ান দেবতার কর্ম। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- স্বেচ্ছায় হোক কিংবা ভুলক্রমে হোক- ভ্রাতৃহত্যাকে এখানে দেখা হচ্ছে ‘দেবতার প্রতি সংঘটিত অপরাধ’ হিসেবে (১১৩)। এ অপরাধে ওকোনকুয়োকে তার মায়ের গোত্রের সাথে ম্বান্তায় কাটতে হয় সাত বছর। এখানেও তার কঠোর পরিশ্রমের দিকে তাকিয়ে ধরিত্রী দেবী তাকে পুরস্কৃত করে এবং নতুন সম্প্রদায়ের মাঝে সে তার জীবনকে আবার গড়ে তোলে।
মবান্তায় নির্বাসনকালেই ওকোনকুয়ো প্রথম জানতে পারে যে ‘লোহার ঘোড়ায়’ (১২৫) চড়ে সাদা রঙের মানুষ এসেছে তাদের মাটিতে। গ্রামবাসীদের কাছে সে সাদা মানুষ পঙ্গপালের চেয়েও অমঙ্গলকর। শিঘ্রই সে সাদারা তাদের ধর্মকে নিয়ে আসে এবং ওকোনকুয়োর ছেলে নোয়ি’র মতো সমাজচ্যুতদেরকে সে ধর্মের দিকে ভিড়িয়ে ফেলে। ইকেমেফুনাকে হত্যার পর থেকেই নোয়ি তার বাবার থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল। এ ঘটনাও বেশ তাৎপর্যময় হয়ে দেখা দেয় যে, এই সমাজচ্যুতদের একজন ‘মবান্তায় এবং পাশাপাশি সকল গোত্রের কাছে পবিত্রতম হিসেবে বিবেচিত পশুটি’ (১৪৫) অর্থাৎ পবিত্র অজগর সাপটি হত্যা করে ফেলে এবং এই ঘটনা দ্বারা ইগবো জনতাকে আর তাদের অন্যতম নেতা ওকোনকুয়োকে ক্ষেপিয়ে তোলে। সাত বছরের নির্বাসন শেষ হওয়ার পূর্বেই তথা উমুয়োফিয়ায় ফিরে যাওয়ার পূর্বেই ওকোনকুয়ো দেখে যে সাদা মানুষদের ধর্ম ও তাদের সরকার তাদের সারা ভূমিতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং নোয়ির মতো অনেক দুঃখী ইগবোকে খৃস্টান বানিয়ে ফেলেছে।
লোহার ঘোড়ায় চড়ে সাদাদের আগমন এবং পবিত্র সর্প হত্যা এভাবে জানান দিচ্ছিল যে, নবাগত বিদেশী মানুষগুলোর মাধ্যমে আরো অনেক সমস্যার জন্ম হবে। প্রথম মিশনারি ব্যক্তিত্ব মি. ব্রাউন যদিও অনেকটা মিশুক ধরণের ছিল এবং যদিও সে খৃস্টিয় ধর্মভাবনার সেই বিষয়গুলো প্রচার করছিল যা নোয়ির মতো নরম হৃদয়ের মানুষদেরকে আকর্ষণ করে, তারপরও বলা যায় এই মিশনারিদের জন্যই ইগবো সমাজে প্রথম বিভক্তিটি সাধিত হয় এবং এই বিভক্তির ফলস্বরূপই তাদের ওপর আক্রমণ সহজ হয়ে ওঠে। উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্বের শেষভাগে আমরা দেখি ইগবোদের প্রবীণতম মানুষটি এই ‘ঘৃণ্য ধর্মটি’ সম্পর্কে বলছেন যে ধর্মটি তাদেরকে দুইভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে (১৫২)। এই ধর্মের কারণেই কিছু মানুষ তাদের সম্প্রদায়কে ত্যাগ করেছে। প্রবীণ লোকটি ওকোনকুয়োর পরিণতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন কারণ তিনি দেখতে পাচ্ছেন তাদের সম্প্রদায়ের জীবনধারাটি কিছুদিনেই শেষ হতে যাচ্ছে।
উপন্যাসের তৃতীয় পর্বে আমরা দেখি ওকোনকুয়ো উমুয়োফিয়ায় ফিরে এসেছে। তৃতীয় পর্বেই আমরা দেখি একটি কোর্ট ও জেলখানা জাতীয় বন্তু। যে-ই সাদাদের আইন-কানুনের বাইরে যাচ্ছে তাকেই সেখানে বন্দী করা হচ্ছে। ওকোনকুয়োর বন্ধু ওবিয়েরিকা বলছে সাদারা ‘ছুরি চালিয়ে কেটে দিচ্ছে সেই-সবকিছু যা এতদিন আমাদেরকে একত্রে বেঁধে রেখেছিল, ফলে আমরা খান খান হয়ে ছিটকে পড়েছি’ (১৬০)। পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে ওঠে যখন উদারপন্থী মি. ব্রাউনের জায়গায় এসে বসে আগ্রাসী রেভারেন্ড জেমস স্মিথ। স্মিথের প্ররোচনায়ই পবিত্র পাইথনের ঘাতক ধর্মত্যাগী ইনোখ পূর্বপুরুষের এক আত্মাকে হত্যা করে যার ফলশ্রুতিতে পুরো ‘উমুয়োফিয়া এক বিশৃঙ্খলার মধ্যে নিপতিত হয়’ এবং সারা ভূমি ‘এক ভয়ঙ্কর অপরিচিত আওয়াজে ছেয়ে যায়’ (১৬৮)। এ ভূখন্ডের মানুষ ও প্রকৃৃতির মধ্যকার সম্পর্কের রজ্জুটি প্রায় ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আলোড়িত ও আন্দোলনমুখী ‘অগণিত আত্মার ভয়ঙ্কর চিৎকার’ (১৬৯) স্মিথ সাহেবের চার্চের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং ইনোখকে বের করে দিয়ে চার্চটি পুড়িয়ে ফেলে। ক্ষুব্ধ উমুয়োফিয়াবাসীরা মনে করে এই চার্চ এবং এর মানুষ যেমন মি. স্মিথ এবং তাদের এ দেশীয় ধর্মান্তরিত চামচারা এ মাটিতে ‘প্রচুর ঘৃণার চাষ করেছে’ (১৭১)।
সাদা সাম্রাজ্যবাদীরা চার্চ পোড়ানোর এই ঘটনাকে তাদের আগুন জ্বালানোর মোক্ষম ছুতা হিসেবে গ্রহণ করলো। সাদা জেলা প্রশাসক ওকোনকুয়োসহ উমুয়োফিয়ার বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করলো এবং তাদেরকে ব্যাপক হেনস্থা করলো। জেলা প্রশাসকের কোর্ট-মেসেঞ্জার এরপর ঘোষণা করলো যে, জেলা প্রশাসক এদেরকে ছেড়ে দিবে তবে এর জন্য উমুয়োফিয়ান গোত্রকে বড় অঙ্কের জরিমানা বা মুক্তিপণ দিতে হবে। এমন অনেক নেতিবাচক নির্মিতির ভিতর দিয়ে আচেবে সেই ছায়াটিকে চিত্রিত করেছেন যা এই ভূমিকে এভাবে অন্ধকার করে দিয়েছে, মানুষগুলোকে টেনেছিঁড়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে।
সেদিন ছিল পূর্ণিমা তিথি। কিন্তু শিশুদের কলরোল কোথাও শোনা যাচ্ছিল না। এ তিথিতে তারা সবাই ইলো গ্রামে জমায়েত হতো জ্যোছনা উদযাপনে, কিন্তু আজ সেখানে কেউ নেই। ইগুয়েদোর নারীরা গোপন পর্দাঘেরা কোনো স্থানে জমায়েত হয়নি নতুন কোনো নাচ শিখতে যা তারা পরে গ্রামের প্রদর্শনীতে দেখাবে। তরুণরা যারা এমন রাতে কেউ ঘরে থাকতো না আজ তারা সবাই ঘরে। যারা গ্রামের পথ ধরে বন্ধু বা প্রেয়সীর কাছে যাচ্ছে তাদের কণ্ঠেও সেই পুরনো পুরুষালি স্বরটি আর নেই। উমুয়োফিয়া যেন আজ সেই বুনো জন্তুটি যে শুধু কান খাড়া করে রেখেছে, হাঁচি দেয়ার শব্দটিও করছে না, যার চতুর্দিকে শুধু ভয় এবং সে জানে না কোন্দিকে সে দৌড়টি দিবে। (১৭৬-১৭৭)
প্রকৃতির সাথে অবিচ্ছেদ্যতার ভাবনা, বসতিব্যবস্থার সামগ্রিকতার ভাবনা, পরিবেশের সাথে নিজস্বতার বোধ- সব হারিয়ে গেছে। পারস্পরিকতার যে সঙ্গতি ও ভারসাম্য পুরো সম্প্রদায়কে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছে তা-সব অদৃশ্য হয়ে গেছে। ট্রমাগ্রস্ত মানুষগুলোর স্থানসম্পর্কিত কোনো দিশাই যেন আর নেই, তাই বুঝতেছে না দৌড়টা কোনদিকে দিবে।
গ্রামবাসীরা বন্দীদেরকে ছাড়ানোর জন্য মুক্তিপণের প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করে এবং বন্দীরা মুক্ত হয়। পরের গ্রাম্যসভায় তারা আলোচনা করে এই বিদেশীদের থেকে কীভাবে তারা মুক্তি পেতে পারে। সে সভায় কোর্টমেসেঞ্জাররা উপস্থিত হয় এবং সভাটি ভেঙ্গে দেয়। এই কোর্টমেসেঞ্জারদের একজনকেই ওকোনকুয়ো রাগের মাথায় খুন করে। সে বুঝতে পারে এ অপরাধে তাকে জনসমক্ষে হত্যা করা হবে। এই বুঝতে পেরে সে নিজেকেও হত্যা করে। এভাবে তার হাতেই সংঘটিত হয় তাদের চেতনার জঘন্যতম কর্ম কারণ ইগবো ভাবনায় যে-ব্যক্তি আত্মহত্যা করে সে মূলত ‘ধরিত্রী দেবীর বিরুদ্ধে একটি অপরাধ’ করে (১৮৬) এবং সে ব্যক্তি স্বজনদের হাতে কবর পায় না, শুধু কুকুরের মতো মাটির তলে যাওয়া হয় তার পরিণতি।
'থিংস ফল এ্যাপার্ট' যখন শেষ হয় তখন এভাবেই উমুয়োফিয়াবাসীরা ট্রমাগ্রস্ত। তাদের ঝান্ডাবরদার নেতা একজন নিশ্চিহ্ন। তাদের ভূমি কলঙ্কিত। অথচ উপন্যাস যখন শুরু হয়েছিল তখন এই ধরিত্রী দেবীর পুরোহিত অনি তথা ধরিত্রী দেবী নিজে এই মানুষগুলোর প্রতি অত্যন্ত দরদী ছিল। পাহাড় ও গুহা দেবীর পুরোহিত আগবালার সাথে মিলে অনি এবং অন্যান্য যাজকরা এক সময় সারা ধরিত্রীর জনগোষ্ঠির জন্য নিশ্চিত করেছিল ‘একটি আধিদৈবিক ঐক্য ও শাশ্বত সংহতির এক ধারা’ (Wren, 131)। এ জনসমাজে টানাপোড়েন ছিল না তা নয়। তবে তার মাঝেও এক বহুমুখী সমন্বয়ে এই ঐক্য ও সংহতির ধারাটিও তাদের মাঝে ছিল। কিন্তু আচেবে যেখানে গল্পটি শেষ করেন সেখানে আমাদেরকে নিঃসন্দিগ্ধভাবে অনুভব করতে দেন যে, ওকোনকুয়ো যতই অহঙ্কারী আর বদরাগী হোক, কিংবা ইগবোদের সমাজটি যতই কঠিন ও নিষ্ঠুর হোক, এই সমাজের শক্ত গাথুনিটি এবং ভারসাম্যটি যে ধ্বংস করেছে সে ওকোনকুয়োও নয়, কিংবা তার সমাজের নিষ্ঠুরতাও নয়, বরং নিশ্চিতভাবে সে হলো সাদা মানুষগুলোর আগমন। আফ্রিকান সমালোচক Abiola Irele বলেছেন আচেবের উপন্যাসে দেখা যাবে ‘আফ্রিকান স্বনির্ভর ও পূর্ণাঙ্গ সমাজে সাদাদের সত্তা ও সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তথা উৎপাতের ফলে সৃষ্ট সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতসমূহ’ (৮০)। আচেবে নিজেও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন ইউরোপিয় আক্রমণের ফল হিসেবেই আফ্রিকানদের ‘হাত থেকে ইতিহাস ফস্কে গেছে’। একই কারণে ‘আফ্রিকানরা আফ্রিকার স্মৃতি’ হারিয়েছে। এটিই তাদের সবচেয়ে বড় হারানোর ঘটনা কারণ আচেবে মনে করেন ‘আমাদের অতীত ছাড়া আর কিছুই নেই’ (Searle, 61, 63)। এ কারণেই আচেবে ওকোনকুয়ো ও উমুয়োফিয়ার ধ্বংসের কাহিনিটি বলতে চেষ্টা করেছেন। তিনি মনে করছেন ওকোনকুয়ো ও উমুয়োফিয়ার সবলতা ও দুর্বলতাগুলো ঠিক ঠিক বয়ানে বলা দরকার যাতে নাইজেরিয়ার যে-মানুষগুলো আবার একটি ভারসাম্য রচনা করতে চায় তাদেরকে যেন এ গল্প সাহায্য করতে পারে।


উমুয়োফিয়ানদের খান খান হয়ে ভেঙে পড়ার গল্পটি বলতে আচেবে তাঁর জনগোষ্ঠির সনাতন গল্পরীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে Charles H. Rowell আচেবেকে জিগ্যেস করেন তিনি নিজেকে গল্পলেখক না বলে গল্পকথক বলে দাবি করার অর্থ কী। তিনি উত্তর দেন:
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের সকলেরই একটি গুরুভিত্তিক শিকড় আছে এবং সে শিকড়ের গোড়ায় রয়েছে আমাদের গ্রিয়োরা (griots), আমাদের গল্পকথকরা এবং আমাদের কবিরা। এই ভাবনা আমার জন্য কাজের। এর মাধ্যমে আমি একধরনের নোঙর পাই। আমি অনুভব করি আমি নদী, পাহাড় কিংবা আকাশের মতো শাশ্বত বস্তুসমূহের সাথে সংযুক্ত এবং তাদের অংশ- (Rowell, 269)।
এই নোঙর-ভাবনা এবং মুখে মুখে গল্পকথনধারা আচেবের গল্পে স্পষ্ট দেখা যায় তাঁর ইগবো প্রবাদ ব্যবহারের মধ্যে এবং তাঁর ব্যবহৃত সেই-সব উপমা-উৎপ্রেক্ষার মধ্যে যে-সব তিনি গ্রহণ করেছেন আফ্রিকান সনাতন গল্পকথকদের কাছ থেকে যারা নিজেদেরকে প্রকৃতির সাথে একাত্ম ভাবতেন।
'থিংস ফল এ্যাপার্ট'-এ কথক উপন্যাসের শুরুতেই জোরের সাথে দেখিয়েছেন যে, প্রবাদ এখানকার প্রকৃতির কেন্দ্রিক এক অংশ। কথক বলছেন- ‘ইগবোদের মাঝে কথা বলার শিল্পকে অনেক উচ্চে স্থান দেয়া হয়, আর প্রবাদ হলো এদের কথার সেই তালের রস যাতে মাখিয়ে এরা শব্দকে আস্বাদন করে’ (৬)। ওকোনকুয়োর উত্থান-পতন এবং তার সম্প্রদায়ের ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার গল্পটিতেও অনেক প্রবাদের বিন্যাস। ওকোনকুয়োর উত্থানের সূচনায় কথক তার ধুরন্ধর কাজগুলো সম্পর্কে প্রবাদের ভাষায় বলছেন- ‘সে এত পিচ্ছিল যেন পানির ভেতর মাছ’ (৩)। তার শারীরিক শক্তির খ্যাতি উমুয়োফিয়ার চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে প্রবাদের ভাষায় বলা হয় তার খ্যাতি ছড়াচ্ছে ‘যেমন পশ্চিম আফ্রিকার ‘হারমাতান’ নামক ঝোড়ো বাতাসে দাবানল ছড়ায়’ (৩)। গোষ্ঠির মুরুব্বিরা ওকোনকুয়োকে গ্রহণ করে এবং একজন মুরুব্বি তার আনা উপহার kola nut এবং alligator pepper গ্রহণ করেন। শেষোক্ত মুরুব্বি ওকোনকুয়োকে মর্যাদাবান হিসেবে সমীহ করেন এবং প্রবাদের ভাষায় বলেন- ‘ঈগলটিও এই মাথায় বসুক, সারসটিও এই মাথায় বসুক’ (১৭-১৮)। এই মুরুব্বি ওকোনকুয়োকে তার গোষ্ঠির মাঝে শক্তপোক্ত করে তুলতেও সাহায্য করেছে প্রবাদের ভাষায়- ‘তুমি চেহারা দেখেই বলতে পারো কোন ফসল পেকেছে’ (২০)।
এ গল্পের কথকের জন্য প্রকৃতি হচ্ছে প্রাণবন্ত সব উপমার এক তাজা উৎস। ওকোনকুয়োর ঘরে তার পালিতপুত্রের বেড়ে ওঠাকে উপমার বর্ণনায় বলা হচ্ছে- ইকেমেফুনা বেড়ে উঠছে ‘যেমন আলু লতার আকশিগুলো বেড়ে ওঠে বর্ষায়’ (৪৭)। ওকোনকুয়োর প্রিয় স্ত্রী একওয়েফি যখন ভয়ে জড়সড় হয়ে ওঠে তখন কথক আমাদেরকে তার বর্ণনায় শোনান সে যেন ‘সেই ভীতসন্ত্রস্ত মুরগিটি যার একমাত্র ছানাটিকে চিলে নিয়ে গেছে’ (৯৩)। যখন এই ভয় সারা গোষ্ঠির মাঝে ছেয়ে যায় তখন কথক লক্ষ্য করেন জোনাকিরা উড়ছে আর ‘তাদের সবুজ বিন্দুবৎ আলোতে অন্ধকারটি আরো গাঢ় হচ্ছে’ (৯৪)।
আচেবে সফলভাবে দেখান যে, যে-কথক প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা কোনো গেষ্ঠিকে গল্প শোনায় তার জন্য প্রকৃতিই হলো তার কথনভাষ্যের সকল প্রয়োজনীয় উপমার উৎস। উপন্যাসের ১১ নম্বর পরিচ্ছেদে একটি গল্প-বলার কাহিনি আছে। ওকোনকুয়োর দ্বিতীয় স্ত্রী একওয়েফি তার কন্যা এজিনমাকে একটি কচ্ছপ ও পাখির গল্প শোনায়। একওয়েফির গল্প শেষ হলে এজিনমা নিজে একটি গল্প শুরু করে। সে গল্পটির বিষয় একটি কচ্ছপ ও বিড়াল। লক্ষণীয় সবকিছুই এখানে শেষ হয় গল্পে। এই জনগোষ্ঠির গল্পে প্রকৃতি সবসময়ই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং প্রকৃতিই এদের গল্পের চরিত্র ও উপমা-উৎপ্রেক্ষার যোগান দেয়। এমনকি উপন্যাসের শেষে যখন অপমানিত ও নিগৃহীত মানুষগুলো সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে আবার উঠে দাঁড়াতে চায় তখন সে দাঁড়ানোর কৌশল হিসেবে যে উপমাটি দেয়া হয় তা-ও প্রকৃতি থেকে নেয়া। তারা বলে তারা এখন থেকে এনেকে পাখির মতো ‘শুধুই উড়বে কোথাও বসবে না’ (১৮৩)।
এটা গুরুত্বের সাথে লক্ষ্যণীয় যে, উমুয়োফিয়ায় যখন থেকে সাদাদের দাপুটে উপস্থিতি শুরু হয় তখন থেকে উপন্যাসের প্রথম পর্বে দৃষ্টিগোচর প্রবাদ-প্রবচন এবং উপমা-উৎপ্রেক্ষার এই ধরনটাও সরে ও পাল্টে যেতে শুরু করে। নতুন যে ধরনটা আসে তা প্রায়ই সাদাদের রীতি থেকে নেয়া। মি. স্মিথ এক ধর্মান্তরিত মহিলাকে শাস্তি দিয়েছিল। ইংরেজ প্রবাদ ব্যবহার করে ইঙ্গিতার্থে বলা হয়েছে- তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে ‘পুরনো বোতলে নতুন মদ ঢালার জন্য’ (১৬৬)। অপেক্ষাকৃত কদর্য অভিব্যক্তির মি. ব্রাউন বিষয়গুলোকে আরো সোজাসাপ্টা ও হোঁৎকা আকারে দেখতে চায় বিধায় পিউরিটান রূপকে সে বলে- ‘পৃথিবীটা একটা যুদ্ধক্ষেত্র যেখানে আলোর শিশুরা অন্ধকারের ছাওয়ালদের সাথে এক মরণসমরে সেঁধিয়ে গেছে’ (১৬৬)। জেলা প্রশাসক আরো অপমানকর ইঙ্গিতে জন্তুজগতের রূপকে উমুয়োফিয়ার গোত্রীয় লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে- তারা যদি ‘বানরসুলভ ছলাকলার কিছু করতে উদ্যত হয় তাহলে সোজা গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় করা হবে’ (১৮৬)। শেষ পরিচ্ছেদে এই জনগোষ্ঠিকে নিয়ে একটি চোখে পড়ার মতো উপমা রয়েছে। উপমাটি জন্তুজগত থেকে নেয়া এবং গ্রামীণ পর্যবেক্ষণের তীক্ষ্নতা থেকে আহরিত। একজন মুরুব্বি উমুয়োফিয়াবাসীদের সমস্যা ও করণীয়কে তুলনা করেছিলেন ‘সেই কুনোব্যাঙের সাথে যে দিনের আলোতে ঝাপ দেয়’ (১৮২), এমনই মরিয়া অবস্থা তাদের।
উমুয়োফিয়াবাসীরা প্রকৃতির আশীর্বাদে এভাবেই ঋদ্ধ। প্রকৃতি এমনসব চিত্রকল্প দিয়ে বুনে দিয়েছে তাদের উপমা, প্রবাদ ও গল্পের জগত। সাদাদের কাছে এই বাগরীতি শব্দের বাজে খরচের শামিল। ওকোনকুয়োকে অনুসন্ধানকালে বিরক্ত জেলা কমিশনার স্পষ্ট করেই বলেছে- ‘এই লোকগুলোর একটি ভয়াবহ বিরক্তিকর অভ্যাস হলো এদের কথায় থাকে খালি অহেতুক শব্দ’ (১৮৫)।
এ পর্যায়ে মনে হয় সমালোচক Ato Quayson ‘কলোনিয়াল নন্দনবোধ ও আদি সংস্কৃতিসঞ্জাত সহজাত নন্দনবোধের মধ্যে যে দ্বন্দ্বের’ কথা বলেছেন (৮৩৩) থিংস ফল এ্যাপার্ট যেন সেই দ্বন্দ্বের ঔপন্যাসিক উপস্থাপনা। সাদাদের আধিপত্যের অধীনে মানুষগুলোর মতো উমুয়োফিয়ার প্রবাদ ও উপমাগুলোও যেন নির্যাতনের শিকার। জেলা প্রশাসক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সে এই মানুষগুলোর ভাষা, বাগরীতি ও রাজনীতি সব সোজা করে ছাড়বে। সে ঠিক করেছে এখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে তার লেখা বইয়ের নাম দিবে “The Pacification of the Primitive Tribes of Lower Niger” [নাইজার নদীর নিম্নভাগের আদিবাসীদেরকে শান্তকরন] (Achebe, Things, 187)|। অথচ আচেবের পথটি উল্টো। তিনি তাঁর দেশের সবকিছু খান খান হয়ে যাওয়ার গল্প লিখেছেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল যাতে এই খান খান হয়ে যাওয়া টুকরোগুলো জোড়া লেগে আবার জেগে ওঠে। এ লক্ষ্যেই তিনি তাঁর আদি সনাতন রীতিতে এবং কারিগরিতে গল্পটি উপস্থাপনের প্রয়াস পেয়েছেন। ‘Colonialist Criticism’ প্রবন্ধে তিনি এই সুরেই বলেছেন- ‘প্রতিটি সাহিত্যেরই অন্বেষা হওয়া উচিত সেই সবকিছু যার সাথে জড়িয়ে আছে এ সাহিত্যের প্রশান্তি; এ সাহিত্য বলবে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের কথা; এবং এ সাহিত্য জন্ম নিবে সে-ভূখণ্ডের ইতিহাস, অতীত ও বর্তমান, এবং সে-ভূণ্ডের জনগোষ্ঠির ললাটলিখন ও লালিতস্বপ্নের প্রয়োজনীয়তা থেকে’ (Achebe, Hopes, 74)।

৫.
এতক্ষণের আলোচনা থেকে বলা যায়, চিনুয়া আচেবে তাঁর এ উপন্যাসে উপস্থাপন করেছেন পশ্চিম আফ্রিকার এমন এক জনগোষ্ঠি যারা নিজেদেরকে এক কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল তাদের পারিপার্শ্বিক ভৌতপরিবেশের সাথে। তারা শিখেছিল এই পরিবেশে বাস করতে, এই পরিবেশকে সম্মান করতে এবং এই পরিবেশ থেকে নিজের জীবনশক্তি গ্রহণ করতে। তাদের ভূখণ্ড তাদের হাতে তৈরি হয়েছিল এমন আদলে যে, সেখানে স্মৃতি, কৃতি এবং কৃষ্টির সকল কর্মকাণ্ড এক অস্তিত্বে লীন হয়ে ছিল। ফলত সেখানে তৈরি হয়েছিল এমন এক ভারসাম্য যা জীবনের জন্য অর্থময়। মানুষ সেখানে মৃত্তিকা ও সংস্কৃতির সাথে এক হয়েছিল। ইগবো সমাজেরই একজন এই আচেবে তাঁর এ গল্প রচনায় সেই সময় ও সমাজ থেকে প্রেরণা গ্রহণ করেছেন এবং তিনি অনুভব করেছেন সেই সমাজ ও সময় থেকে আজকের আফ্রিকাকেও শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বলা যায় উমুয়োফিয়া ও উমুয়োফিয়াবাসীদের এই গল্প লেখার সময়ে তিনি পরিবেশতাত্ত্বিকভাবে (ecologically) সচেতন ছিলেন। আমেরিকার একজন বিখ্যাত কবি এবং পরিবেশবাদী Wendell Berry বলেছেন- ‘একটি মানবগোষ্ঠিকে... অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে গাছের পাতা ও মুখের গল্প, এগুলোকে মানবগোষ্ঠির পক্ষে নিয়ে আসতে হবে। একটি মানবগোষ্ঠিকে তৈরি করে নিতে হবে তার মৃত্তিকা এবং সে মৃত্তিকার স্মৃতি’ (Garard, 115)। এই কাজগুলো আচেবের এ উপন্যাসে অর্জিত কৃতিত্বের অন্তর্গত।
আচেবের উপন্যাস 'থিংস ফল এ্যাপার্ট'-এর আরো সফলতা হলো এ উপন্যাসটি দেখিয়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের আগমন কী বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল সেই মানুষগুলোর জীবনে যাদের জীবনব্যবস্থা প্রকৃতির সাথে একসুরে বাঁধা হয়ে গিয়েছিল এবং দেখিয়েছে এই সাম্রাজ্যবাদী সাদাদের আগমন পশ্চিম আফ্রিকার মানুষদের সাথে প্রকৃতির প্রতিষ্ঠিত ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থাকে কীভাবে বিঘ্নিত করেছে। গল্পের কথনকৌশল, সময়ের ব্যবহার, ভাষার শক্তিমত্তা, উপমা ও প্রবাদের সফল ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে আচেবে সার্থকভাবে দেখিয়েছেন কীভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের দুষণে এই জনগোষ্ঠিটি বিপর্যস্ত হয়েছে। উপন্যাসের শেষ মুহূর্তে পৌঁছে আমরা দেখছি মি. ব্রাউন কিংবা জেলা প্রশাসকের মতো লোকদের কর্মকাণ্ডে পুরো ইগবো জগত ট্রমাগ্রস্ত এবং প্রকৃতির সাথে তাদের দীর্ঘদিনের একসুরো সম্পর্ক বিধ্বস্ত।
প্রবন্ধটিতে এতক্ষণ আমি দেখাতে চেষ্টা করেছি আচেবে থিংস ফল এ্যাপার্ট উপন্যাসটি এক পরিবেশতাত্ত্বিক সচেতনতা নিয়ে লিখেছেন। আচেবে চেয়েছিলেন তাঁর আফ্রিকাবাসীরা তাদের মৃত্তিকাকে আবার মূল্যায়ন করতে শিখুক এবং প্রকৃতিকে আবার শ্রদ্ধা করতে শিখুক। আচেবে যখন উপন্যাসটি লেখেন তখনো পরিবেশতাত্ত্বিক সমালোচনাতত্ত্ব জন্ম নেয়নি। কিন্তু আমি দেখছি এই সমালোচনাতত্ত্বের কেন্দ্রিক প্রতিপাদ্যসমূহ এই উপন্যাসের সারবস্তুর অনেক কিছুই প্রকাশ করতে সাহায্য করে।পরিবেশতাত্ত্বিক সমালোচনাতত্ত্বের (ecocriticism) একজন আমেরিকান পণ্ডিত Ursula K. Heise এই তত্ত্বের নির্ণায়কসমূহ সম্পর্কে বলেন- ‘সাহিত্য যে-ধারায় ও পদ্ধতিতে ইতিহাসের বিশেষ ক্ষণগুলোয় প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্কগুলোকে তুলে ধরে ইকোক্রিটিসিজম সেই ধারাকে বিশ্লেষণ করে, প্রকৃতির মূল্য ও মর্যাদা কারণসহ বিশ্লেষণ করে, এবং ইকোক্রিটিসিজম আরো বিশ্লেষণ করে দেখায় প্রকৃতির ও প্রকৃতিনির্ভর অনুভূতিসমূহ কীভাবে সাহিতের আলঙ্কারিক ভাষাকে ও প্রকরণকে রূপ দেয়’ (১০৯৭)। থিংস ফল এ্যাপার্ট-এর এই পাঠ শেষে আমার মনে হয় আমাদের এতদঞ্চলের সাহিত্যকর্মগুলোর বিশ্লেষেণেওএই তত্ত্বের অনেক কিছুই দেয়ার আছে। সময় এসেছে নতুন করে পড়ার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যক কিংবা হাসান আজিজুল হকের আগুনপাখি’র মতো সাহিত্যকর্ম যেগুলো, আমি বিশ্বাস করি, লিখিত হয়েছে একইরকম পরিবেশতাত্ত্বিক সচেতনতায় এবং যাদের প্রাসঙ্গিকতা এই সময়ে একইরকম অপরিমেয়। [পুনর্মুদ্রণ]

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া