X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৌমিত্রের মৃত্যুতে যুগাবসান: ঠিক কোন যুগের অবসান?

গর্গ চট্টোপাধ্যায়
১৭ নভেম্বর ২০২০, ১৬:২১আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২০, ২০:৪৯

গর্গ চট্টোপাধ্যায় ‘যেখানে বাঙালি আছে, সেখানে তারা সারা জীবন ওনাকে মনে রাখবে’–শর্মিলা ঠাকুর
টিভিতে এখন কলকাতায় আদি গঙ্গার পাড়ে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে বাংলার সরকারের দেওয়া ‘গান স্যালুট’ লাইভ দেখাচ্ছে, সঙ্গে চ্যানেলে বাজছে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’। সেই জায়গার ঠিক উল্টো পাড়ে ক্রমশ বাঙালি বসতি কমতে থাকা চেতলা রোডে ‘দেওয়ালি’ উপলক্ষে বাজছে হিন্দি গান–‘গোয়া ওয়ালে বিচ মে’। পৃথিবীর নাট্যমঞ্চে পর্দা নামে না–তারকা পতনের মুহূর্তেও তারকার জন্ম হতে থাকে, হতেই থাকে। সৌমিত্রের চিতার আগুন কারও কাছে ঝড়ে দুয়ার ভাঙার মুহূর্ত, কারও কাছে বহ্ন্যুৎসব।  
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বারবার উঠে আসছে একটি কথা–যুগাবসান অর্থাৎ একটি যুগের শেষ হলো। জনপ্রিয় ও ব্যাপকভাবে প্রভাবশালী অনেক মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই যুগাবসান শব্দটি অহরহ ব্যবহার করা হয়, প্রায়শই এটা বলাই দস্তুর, কিন্তু কখনও কখনও শব্দ আসলেই তার অর্থকে বাস্তবে বহন করে। এক্ষেত্রে যুগাবসান শব্দটি যথার্থ। জীবনাবসান তখনই হয়ে ওঠে যুগাবসান, যখন ওইরকম জীবন, ওই প্রভাব, ওই ব‌্যাপ্তি তৈরির ক্ষমতা বর্তমান যুগের আর থাকে না। অর্থাৎ যুগাবসান শব্দে যেমন ধরা থাকে প্রয়াত মানুষের বৈশিষ্ট‌্য, তেমন ধরা থাকে বর্তমান যুগের চরিত্র। যুগাবসান তাই শুধু অতীত ও বর্তমানের মধ্যে কালের ব্যবধান দিয়ে ঠিক হয় না, অতীতের পতনের ফলে তৈরি শূন্যতাকে ভরাট করার ক্ষেত্রে বর্তমানের অক্ষমতাকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, কখনও কখনও খুব নগ্নভাবে। সৌমিত্রের মৃত্যু বিশেষ করে ভারতে বাঙালির জন্য এমন এক বাস্তব দর্শনের এবং সত্য উপলব্ধির মুহূর্ত। সৌমিত্রের চলে যাওয়ায় ঠিক কোন যুগ শেষ হলো?

আমাদের বাঙালিদের একটি সত্যের সম্মুখীন হতে হবে। কয়েক সপ্তাহ আগে একজন বিহারি মাদকসেবনকারী নেশাগ্রস্ত হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়াল অভিনেতার আত্মহত্যার ফলে পশ্চিম বাংলার কিশোর-যুবসমাজের একাংশে যে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল, তা থামছিলই না। কারণ বেনিয়া পুঁজি তার মালিকানার মাধ্যমে হিন্দি সবকিছুর গ্রাসে পেটে ঢুকিয়ে নিয়েছে বাংলার এই নবীন প্রজন্মকে, দখল নিয়েছে তার কান্নার, চেতনার, কল্পনার, রোমাঞ্চের, রোমান্সের। বেনিয়া পুঁজির বলে বলীয়ান মোবাইল থেকে টিভিতে যে হিন্দি কন্টেন্টের দুনিয়া–সেটাই নির্ধারণ করছে বাঙালি যুবসমাজ কখন কাঁদবে, কখন বেশি কাঁদবে, কখন কান্না ভুলবে। এই যুগটা শুরু হয়ে গেছে। সৌমিত্রের মৃত্যুতে যখন এই প্রজন্মের একাংশের শোক ছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের কেসের তুলনায় চাপা, তখন বুঝতে হবে যে ভারতে বাঙালির চেতনায় বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতির স্বাভাবিক আধিপত্যের যুগ শেষ হয়েছে, শুরু হয়েছে গুজরাটি মাড়োয়াড়ি বেনিয়া পুঁজির তেলে ভেজা হিন্দি মশাল দিয়ে ‘প্রাদেশিকতা’র অন্ধকার থেকে বাঙালিকে বাঁচানোর নাম বাঙালির ঘর জ্বালানোর প্রক্রিয়া। যাতে বাঙালি মানুষ উদ্বাস্তু হয় সর্বার্থে, যাতে উদ্বাস্তু হওয়ার পরে হিন্দির পদতলে পিষ্ট হয়ে তার গোড়ালি আঁকড়ে ধরাকেও মনে হয় আশ্রয়। আসলে যুগাবসান তো হয়ে গেছে সৌমিত্র জীবিত থাকতেই। সৌমিত্র একটু লড়াইটা দিতে পারতেন। দেননি। আমাদের আগের প্রজন্মের সকলেই পুঁজিবাজার চেতনাকে হিন্দির দখলদারি থেকে মুক্ত রাখার লড়াই দিতে পারতেন। দেননি। তাই তো নেশাগ্রস্ত বিহারি যুবককে নিয়ে পশ্চিম বাংলার বাংলা মিডিয়া দিনের পর দিন কত সময় ব্যয় করে কিন্তু সৌমিত্রের মৃত্যুর দিনেও দিল্লি-মুম্বাইয়ের ইংরেজি-হিন্দি মিডিয়া সময় ব্যয় করে না। সৌমিত্র এমন এক সময়ের ফসল যে সময়ে এই বাংলায় হিন্দি ফণা তুলবে, এটা ভাবাও যেতো না–বরং ‘আগে ভারতীয়, পরে বাঙালি’ মন্ত্রকে মুক্তির পথ মনে করে কত বাঙালি রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি, সবেতে হিন্দি এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে মাটি কেটেছে সারা জীবন। বাঙালি জাতির যেটুকু যা আছে, তাই দিয়ে তৈরি প্রত্যয়ী সময়ের সেই কোদাল চালনা যেন অসভ্যের ওপর সভ্যের দায়। আসলে আত্মঘৃণা-নিজেকে সম্পূর্ণ না মনে করা, স্বজাতির থেকেও বেশি দিল্লির কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং অবশ্যই ভারতকে নিজ শহীদদের রক্তে আদায় রাষ্ট্র না মনে করে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিপদের থেকে বাঁচার শেষ আশ্রয় মনে করে নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে গিয়ে নিজভূমে থেকেও উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া, পশ্চিম বাংলায় জন্মেও। এ এক জটিল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া যে একদিন বাঙালিকে এমন দীনহীন ও রিক্ত বানিয়ে দেবে যে রবীন্দ্রনাথ নিংড়েও নবজীবনের রক্তঘাম পাওয়া যাবে না, তা একরকম অকল্পনীয় ছিল। মনে হয়েছিল বাংলা আসলে মধুসূদনের দইয়ের ভাঁড়ের মতো, দই শেষ হয় না। কিন্তু আসলে তো হয়। আমরা তো অবতার না। তাই শিশির ভাদুড়ী থেকে সত্যজিৎ রায় থেকে ঋত্বিক ঘটক থেকে উত্তম কুমার থেকে সৌমিত্র থেকে স্বপন সাহা থেকে প্রসেনজিৎ থেকে দেব–কেউ বাংলার গ্রাম-জ্বালানো হিন্দি আগুন নেভাতে পারেননি।

একা একা শিল্পীরা পারবেনই বা কেন? আয়ুবশাহী বা জামাতশাহীতে নিশ্চয়ই সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালেদ ‘অপরাজেয় বাংলা’ গড়ে তুলতে পারতেন না। তাই সৌমিত্রের মৃত্যু দেখিয়ে দিলো মধুদার ভাঁড়ে আর দই নেই। কেউ দইয়ের আশায় বসেও নেই। দইয়ের স্বাদ যথেষ্ট কুল না। আইপিএল তারকা বিরাট কোহলি বা বলিউডের তারকারা দই খায় না। অন্য কিছু খায়। আর ডিজিটাল ভারতে গুজরাটি আম্বানির জিও ৪জি পথে চুঁইয়ে চুঁইয়ে সেই নতুন খাবার আসে আমাদের ঘরে, আমাদের উঠোনে, খাটে, মনে, লালসায়। অ্যাকোরিয়ামে খাবারের জায়গায় ভিড় করা বন্দি মাছের ছটফটানি দেখেছেন?  সেই অ্যাকোরিয়ামেই এতদিন এক মাছের খেলা অন্য মাছ দেখেছে। কাচ তো স্বচ্ছ তাই বারবার মনে হয়েছে, সব ঠিক আছে। কেউ কেউ বুঝতো, ইদানীং আরও বুঝছে এই কাচের ঘেরাটোপ আসলে বিশ্ব তথা বাস্তব থেকেই আমাদের আলাদা করে রেখেছে। কেউ কেউ বিড়লা-আম্বানির আলোর তলায় হওয়া একোরিয়ামের মাঝের রবীন্দ্র জয়ন্তীর উৎসবের দিন অন্য মুখে যাত্রা করেছে শেষ সীমানা অবধি। গিয়ে বুঝেছে এর বানোয়াট বাস্তবের শেষ আছে, যেটা পেরোতে গেলে আসে কঠিন ঠোক্কর। তারা কেউ কেউ বার্তা পাঠিয়েছিল মজলিসে যে নির্ভাবনায় ‘তাসের দেশ’ গড়ার সময় এটা না, যে রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাঁচাবেন না, আমাদের রবীন্দ্রনাথকে বাঁচাতে হবে। কাচের ঠোক্করের কথা পশ্চিম বাংলার আনাচে কানাচে ফের ছড়াচ্ছে চোরা গুজবের ধোঁয়ার মতো। কারুর ভীত প্রশ্ন, কাচ ভাঙলে তো যেটুকু জল আছে, তা বেরিয়ে যাবে, আমরা মরে যাবো। তবু তো সময়মতো কেঁচো আর রবীন্দ্র জয়ন্তীর জন্য আলো এখনও পাচ্ছি। সাম্রাজ্যবাদ যখন চেতনার দখল নেয়, তা কল্পনার ব‌্যাপ্তিকেও ছোট করে ধরে রাখে নিজের গণ্ডির মধ্যে–অ্যাকোরিয়ামে দয়ায় বাঁচা বা কাচ ভেঙে জল না পেয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর মধ্যে। বলে না, এই অ্যাকোরিয়ামকে বঙ্গোপসাগরের জলে ডুবিয়ে দিলে কাচের জায়গা হবে অতলে, মাছ হাসবে, খেলবে জলে। প্রতিটি মুহূর্ত হবে রবীন্দ্র জয়ন্তী। ‘টুকরো করে কাছি আমি ডুবতে রাজি আছি’। কিন্তু সে তো আত্মহত্যার ভড়ং। আসলে বাঁচার মতো বাঁচার অভিসন্ধি। রবীন্দ্রনাথ বাঁচবে। বাঙালি বাঁচবে। অপু বাঁচবে। ফেলুদা বাঁচবে। মগনলাল মেঘরাজেকে সমুদ্রতলে হাঙ্গর ছিঁড়ে খাবে। ইতিহাসের মারের খেসারত দেওয়ার জন্য সৌমিত্রকে হিন্দি চলচ্চিত্র করতে হবে না, করতে হবে না হিন্দুস্তানি মাদুলির বিজ্ঞাপন। সৌমিত্র সেই সমুদ্রে হয়তো অন্য রূপে অন্য কালে তামিল, কন্নড়, মারাঠি, মালওয়ালী, উড়িয়া, অসমীয়া সব সমুদ্রে পা রাখবেন, নিজের শর্তে, বাঙালির শর্তে, পশ্চিম বাংলার শর্তে।

পৃথিবীতে তৈলকূপগুলিতে তেল সীমিত এবং তা একদিন শেষ হবে। তৈলকূপ থেকে উত্তোলিত তেল আস্তে আস্তে বেড়েছে। পিক অয়েল হচ্ছে সেই সময় যে সময়ে তৈল উত্তোলন বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছবে কিন্তু তারপর আর সেটাকে ছাড়িয়ে যাবে না বরং চলবে তৈল উত্তোলনে টানা পতন। এই পিক অয়েল ঠিক কোন বছরে হতে চলেছে নাকি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। যখন টিভিতে দেখছিলাম সৌমিত্রর শেষ যাত্রা আর সঙ্গে সামাজিক মাধ্যম তথা বাংলা গণমাধ্যমে চলছিল স্মৃতি রোমন্থন, শোক ও বিদায়বার্তা, তখন আমার বারবার এই ‘পিক অয়েল’ ব্যাপারটার কথা মনে পড়ছিল। বাংলার পুঁজি ও ক্ষমতার চূড়া অবশ্যই প্রাক ইংরেজ সময়ে। পূর্ব বাংলা, যার বর্তমান রাষ্ট্রিক রূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, তার পিক যে এখনও আগামীতে, তা এই বছর মাথাপিছু গড় আয়তে ভারতকে ছাপিয়ে যাওয়ার মধ্যে স্পষ্ট। আর পশ্চিম বাংলার? যদি আমরা পুঁজির দখল, স্বকীয় রাজনৈতিক ক্ষমতা, এলাকা নিয়ন্ত্রণ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, বিশ্বমঞ্চে মর্যাদা ইত্যাদি সবকিছু বিচার করি, তাহলে পিক পশ্চিম বাংলা ১৫ আগস্ট ১৯৪৭-এই। তারপর থেকে ক্রমাগত পতন, কখনও ধীরগতিতে, কখনও দ্রুত কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন পতন। অনেক সময়ে মনে হয় ঘড়িতে ঘণ্টার কাঁটা ঘোরে না কিন্তু আসলে ঘোরে তো। বাংলার নবজাগরণের সময় থেকে ওই পতন-পূর্ব এক সময়ে ১৯৪৭-পূর্ববর্তী অখণ্ড বাংলা তথা ১৯৪৭ পরবর্তী পশ্চিম বাংলার যা কিছু সঞ্চিত, তার ফসল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং তার অগ্রজ অনেকে। সৌমিত্র আজকের তুলনায় ভরা সময়ে জন্মেছিলেন এবং সেদিনের তুলনায় মরা সময়ে পরলোকগমন করলেন। কিন্তু এই যে বাংলায় তারকা পতনের কষ্ট–তারকার ঔজ্জ্বল্য আর কষ্টের ব‌্যাপ্তি কমেই চলেছে। সৌমিত্র বাঙালির মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন যে সিনেমাগুলোর পরস্পরায়–অপুর সংসার, দেবী, ক্ষুধিত পাষাণ, ঝিন্দের বন্দি, অভিযান, সাত পাকে বাঁধা, চারুলতা, হঠাৎ দেখা, তিন ভুবনের পাড়ে, অরণ্যের দিনরাত্রি, বাক্সবদল, বসন্ত বিলাপ, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, কোনি–মোটামুটি এই সেই সময়–১৯৫৯ থেকে ১৯৮৬। ১৯৮৬ সালে সৌমিত্রর বয়স ছিল ৫১। আজ আমরা যারা ৩০-এর বেশি বয়সের, তাদের জন্য ফেলুদা সিরিজ তাদের সৌমিত্রকে চেনার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সোনার কেল্লার মুক্তির বছরে সৌমিত্রর বয়স ৩৯ এবং তার মূল কাজগুলো ইতিমধ্যে শেষ। আজ টলিউডের রঞ্জিত মল্লিকের ৭৬, প্রসেনজিতের ৫৮, চিরঞ্জিতের ৬৫, দেব অধিকারীর বয়স ৩৮। এদের শ্রেষ্ঠ কাজ এখনও বাকি আছে যার মাধ্যমে এতদিন ধরে তৈরি তাদের তারকা সত্তাকেও তারা ছাপিয়ে অন্যতর প্রবাদ হবেন, এটা কেউ মনে করে না। তাহলে আমরা আজ  সৌমিত্রর জন্য যেমন করে কাঁদলাম, আমরা আগামীতে কাদের জন্য তেমন করে কাঁদবো? বর্তমানের এই আইকনহীনতা বা বলা ভালো আইকনের ক্রমাগত বেঁটে হতে থাকা, এ তো আকস্মিক নয়। দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার মাড়োয়াড়ি প্রযোজক মোহতা বা বাংলা মানে স্রেফ বাঙালির বাজার বোঝা অবাঙালি প্রযোজক সুরিন্দর তো আমাদের আইকন তৈরি করার সুযোগ দেবে না। বাংলার যা কিছুর নিয়ন্ত্রণ মাড়োয়াড়ির হাতে, সেই সবকিছুতেই বাঙালি পিছু হটতে থেকেছে। তাই তো আমরা দেখেছি শেষ বয়সে সৌমিত্র বিজ্ঞাপনে বলছেন বাংলার গর্ব বিড়লা গোল্ড সিমেন্ট। হ্যাঁ, সেই বিড়লা। সেই ১৯৪৩। সেই মজুতদারি ও কালোবাজারি। সেই বাঙালি গণহত্যা। সেই ৬০ লক্ষ। ১৯৭১-এর ৩০ লক্ষ’র দ্বিগুণ। কলকাতায় ঘনশ্যামদাস বিড়লার নামে রাস্তা আছে কলকাতার আলিপুরে। সেখানে বাঙালি থাকে না বা আর্থিক কারণে থাকতে পারে না। পারে না বলেই বামপন্থী সৌমিত্র বিড়লাকে বাংলার গর্ব বলে বিজ্ঞাপন করেন, কারণ ১৯৪৭ থেকে আজ  অবধি পশ্চিম বাংলায় অনুসৃত কোনও পন্থা সৌমিত্রর বুকে সেই বল এনে দিতে পারেনি যাতে বিড়লার বিজ্ঞাপন করার বরাতে না বলা যায়। শত বছরের শত সংগ্রাম শেষ হয়নি পশ্চিম বাংলায়, বরং হারিয়ে গেছে অনেক সংগ্রামের অর্জন।

পশ্চিম বাংলার বাঙালির টিকে থাকার লড়াইটা দিনকে দিন কঠিন হচ্ছে। ফেলুদা মগজাস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করতেন সমাজবিরোধী মগনলালদের কিন্তু হিন্দি বেনিয়া পুঁজি ও তার অনুসারী বহিরাগত সর্বহারা লেঠেলরা করছে প্রমাণ যে মগজাস্ত্র মগনলালেরও আছে, সঙ্গে আছে বাহুবলাস্ত্র। ফেলুদা চলে গেলেন। মগনলালরা বাড়ছে। জটায়ুর ওপর ছুরি খেলার কসরতের বদলা চাই জটায়ুর বুক ভেদ করে ছুরি ঢুকে যাওয়ার আগে। ১৯৪৩ দেখিয়েছে ওরা সব পারে। বাঁচতে হলে পশ্চিম বাংলার বাঙালিকে সব পারতে হবে। চাই শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে মগনলালের দিকে রিভলভার তাক করে ফেলুদার, আমার, আপনার, বাঙালির বজ্রকণ্ঠ–‘শুধু ঘুঘুই দেখেছ মগনবাবু ফাঁদ তো দেখোনি’। ওই ক্লাইম্যাক্সেই সৌমিত্রর অমরত্ব। যতদিন বাঙালি বাঙালি থাকবে, যে অপু বাংলার, যে ফেলুদা বাঙালির, সেই উদয়ন পণ্ডিতের মরণ নাই। 

লেখক: স্থিত মস্তিষ্ক-বিজ্ঞানী



/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ