X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯

এই স্বীকৃতি ২৩ বছর পরিশ্রমের পারিশ্রমিক: তানভীর তারেক

সুধাময় সরকার
০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:৫৮আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৩৩

তানভীর তারেকের ক্যারিয়ার অনেকটা চলন্ত রেলগাড়ির মতো। আঁকাবাঁকা পথ ধরে সমান্তরাল দুটো লাইনে চেপে গন্তব্যে এগিয়ে যাওয়া। সংগীত ও সাংবাদিকতা- দুটোকেই যিনি পরম মমতায় পাশাপাশি নিয়ে চলছেন, টানা ২৩ বছর ধরে। গতিময় এই দ্বৈত ক্যারিয়ারের দুই যুগপূর্তির আগেই তিনি পেলেন শ্রেষ্ঠ সুরকারের জাতীয় স্বীকৃতি।

এই প্রাপ্তি এবং প্রায় দুই যুগের জার্নি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন-এর মুখোমুখি হলেন তানভীর তারেক-

এই স্বীকৃতি ২৩ বছর পরিশ্রমের পারিশ্রমিক: তানভীর তারেক বাংলা ট্রিবিউন: তাৎক্ষণিক অনুভূতির কথা অনেক হলো সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই পর্যায়ে এটুকু জানতে চাওয়া, একেবারে প্রথম যখন খবরটি শুনলেন এবং নিশ্চিত হলেন- তখন কী মনে হলো? আপনার বয়ানে ঠিক ঐ মুহূর্তটাতে ধরতে চাই-

তানভীর তারেক: ধন্যবাদ। প্রথমে খবরটি পাই প্রিয় সংবাদ-ব্যক্তিত্ব জ.ই.মামুন ভাইয়ের কাছ থেকে। তিনিই জানান। শুভেচ্ছা জানালেন। কিছুক্ষণ চুপ হয়ে ছিলাম। সেই শুভেচ্ছা ফোনটি রেখেই মনে হলো বাবাকে যদি একটা ফোন করতে পারতাম। জানাতে পারতাম। যদি সে সুযোগ থাকতো! তার ছেলের সাফল্যের খবরে তার অনুভবটা যদি দেখতে পারতাম। মানে খবরটি পাওয়ার পর বাবার বাইরে আমার আর বিশেষ কিছু মনে হয়নি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার এই ২৩ বছরের মিউজিক জার্নিতে কার কার অবদানের কথা আলাদা করে বলতে চান-
তানভীর তারেক: আলাদা করে বলা মুশকিল। কাকে রেখে কাকে বাদ দেব। তবে একটা বিষয় খুব করে বলতে চাই, আমি এই শহরে মফস্বল থেকে যখন আসি, সেদিন থেকেই প্ল্যান ছিল মিউজিক করবো। লেখালেখি আর সুর করে প্রতিষ্ঠিত হবো। কিন্তু বাবার কাছে ভান করতাম পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হবো! ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিলাম।
আমার বাবা বিশ্বাস করলেন। ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্নের পথে এগিয়ে দিতে ঢাকায় নিয়ে এলেন। প্রথমে এসে তার এক ভাইয়ের বাসায় ছেলেকে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। সেই কাজিনরা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। আমাকে রাখতে পারবে না বলে। বাবা আরও দুই আত্মীয়ের বাসায় ট্রাই করলেন। তারাও রাজি হলেন না।
তখন জীবনে প্রথম বুঝলাম। বড় শহরের মানুষরা কাউকে সহজে আশ্রয় দেয়না। কারণ আমি মফস্বলে বেড়ে ওঠা মানুষ। এসব দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত ছিলাম। জীবনে নতুন এক নাগরিক অবজ্ঞা দেখতে পেলাম।
বাংলা ট্রিবিউন: এরপর কিভাবে থিতু হলেন ঢাকায়?
তানভীর তারেক: বাবা আমাকে আবারও আমার গ্রামের বাড়ি ভান্ডারিয়ায় ফেরত নিয়ে যেতে চাইলেন। বললেন, ‘কলেজে ডিগ্রি পাশ করে এলাকায় কিছু একটা করবে চলো। এই শহর আমার সামর্থ্যের বাইরে।’ আমি বাবাকে বললাম, ‘তুমি আমাকে ৬টা মাস সময় দাও। আমি এক বন্ধুর বাসার ঠিকানা জানি। ওরা কটা দিন থাকতে দেবে আমাকে, আমার বিশ্বাস।’ বাবা খুব মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। আমি বনশ্রী রামপুরায় আমার বন্ধু রাসেল আজাদ বিদ্যুতের বাসায় আশ্রয় পেলাম। সেই বাড়িতেও বন্ধুর বড়ভাই রাজি ছিল না। বললো ১ মাস সে আমাকে অবজার্ভ করবে। যদি তাদের আমাকে ভালো লাগে তাহলে শর্তসাপেক্ষে থাকতে দেবে। সুতরাং আমি ১ মাসের একটা আশ্রয় পেলাম ঢাকা শহরে!
এই স্বীকৃতি ২৩ বছর পরিশ্রমের পারিশ্রমিক: তানভীর তারেক বাংলা ট্রিবিউন: আপনার শুরু তো সাংবাদিকতা দিয়ে। সেই গল্পটা শুনতে চাই।
তানভীর তারেক: সে গল্পটাই বলছি। আমি চলে গেলাম ভোরের কাগজ অফিসে। কারণ আমি মফস্বলে থাকতে ভোরের কাগজ পাঠক ফোরাম করতাম। সেরা সংগঠক হিসেবে মফস্বলে বসেই পুরস্কারও পেয়েছিলাম। তখন ফোনে কথা বলেছিলাম সঞ্জীব দার (সঞ্জীব চৌধুরী) সাথে। বলেছিলাম, ‘আমি গান লিখি, সুর করতে চাই আপনার মতো।’ তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘লিখতে থাক।’
আমি তাই ঢাকায় এসে সোজা চলে যাই ভোরের কাগজ অফিসে। সাংবাদিকতা করার উদ্দেশ্যে না কিন্তু, আমি গিয়েছিলাম কিভাবে গান লেখা যায়, প্রকাশ করা যায়- সেটা জানতে। দাদা সব শুনলেন। আমি সঞ্জীব দাকে বললাম, ‘আমার ঢাকায় ১ মাসের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এর ভেতরে কাজ-টাজ জুটলে থাকতে পারবো। নয়তো গ্রামে ফিরে যেতে হবে। আমি এ শহর ছেড়ে যেতে চাই না।’ দাদা আমাকে বললেন, ‘এখনই তোর গান কেউ নিবে না। আর গান লিখে পয়সাও পাবি না। তুই মেলায় লেখালেখি শুরু কর। এখান থেকে কিছু বিল পাবার ব্যবস্থা করছি।’
বাংলা ট্রিবিউন: এভাবেই তাহলে সাংবাদিকতার শুরু। এরপর গানে কিভাবে নিয়মিত হলেন-
তানভীর তারেক: মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে জীবনের তাগিদে গান-পাগল এক তরুণ তখন বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে কনভার্ট হয়ে গেল! কিন্তু মনে মনে খুঁজতে লাগলাম গানের পথ। আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের কাছে চলে গেলাম এক দুপুরে। গিয়ে মিথ্যা বললাম, যে সঞ্জীব দা আমাকে পাঠিয়েছে! এই বলে কথায় কথায় কাগজে প্রিন্ট করা ১০/১২টি গান তার হাতে দিলাম। বাচ্চু ভাই আমার মিথ্যাটা ধরে ফেললেন। এক বিকেল বসিয়ে আমার গল্প শুনলেন। হয়তো মানুষটার আমার প্রতি মায়া হলো। আমি অবাক হলাম। তিনি পরের সপ্তাহে যেতে বললেন। আমি ভাবলাম আমার কাজ বোধহয় হয়ে গেল। পরের সপ্তাহে আমি গেলাম আবার এবি কিচেনে। আমাকে বললো, ‘তুই এইভাবে গান দিয়ে টিকে থাকতে পারবি না। তোকে তো নিজে আগে টিকে থাকতে হবে। তুই এক কাজ কর। আমি চিঠি লিখে দিচ্ছি সোজা সাউন্ডটেকে চলে যাবি। ওখানে কাজ পাবি।’
বাংলা ট্রিবিউন: কাজ পেয়েছিলেন সেই চিঠিতে! কি কাজ দিয়ে শুরু হলো?
তানভীর তারেক: আমি নিজেও জানি না। সেখানে কী কাজ করতে হবে। গান লেখা সুর করা ছাড়া তো কিছু জানি না। সাউন্ডটেকের কর্ণধার সুলতান মাহমুদ বাবুল ভাই বাচ্চু ভাইয়ের চিরকুট পড়ে আমার জীবন বৃত্তান্ত শুনতে লাগলেন। আমি আবারও আমার ঢাকা শহরের আশ্রয় সংকট নিয়ে বিস্তারিত বললাম। উনিও পরের সপ্তাহে আসতে বললেন। এদিকে আমার সময় শেষ। আমার আশ্রয়দাতা বন্ধুর বাবা ছিলেন কাস্টম অফিসার। ঢাকা শহরে তিনিও নিজের জীবন শুরু করেছিলেন লজিং থাকার মধ্য দিয়ে। আমার ব্যবহার দেখে হয়তো তার নিজের শৈশবের কথা মনে হলো। মায়া হলো তার। আমাকে ডেকে নিয়ে একরাতে বললেন, ‘শোনো তুমি আজ থেকে আমার আরেকটা ছেলে। আমি নিজেও তোমার মতো করেই জীবন শুরু করেছি। তুমি যেদিন বাইরে নিজের ঘর ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য হবে, সেদিন যাবে। তার আগে তুমি যতদিন খুশি থাকো। এ নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা করবা না।

তবে বন্ধুর বড় ভাই রাজি ছিল না। খাবার টেবিলে খুব কথা শোনাত। কিন্তু পরিবারের বাকিরা আমাকে খুব আপন করে নিলো। আমি আমার বাবাকে খবরটা দিয়ে নিশ্চিন্ত করলাম। জীবনের আরেকটা বৈচিত্র্য বুঝলাম। আমার কাছে অদ্ভুত লাগলো ঢাকা শহরটিকে তখন। কারণ ঢাকা শহরে তখনও আমার আত্মীয় স্বজন অনেকেই থাকেন। অথচ কারও বাড়িতেই আশ্রয় পেলাম না। বুঝলাম জীবনে এমন এমন কিছু নিকটাত্মীয় জন্মে যায়, তারাই বাকি জীবনের কাছের মানুষ হয়ে থাকে। সেই বন্ধুর মাকে আমি আমার আপন খালাই মনে করি।
এই স্বীকৃতি ২৩ বছর পরিশ্রমের পারিশ্রমিক: তানভীর তারেক বাংলা ট্রিবিউন: গানের গল্পে ফেরা যাক। আপনার প্রথম গান প্রকাশ হলো কিভাবে–
তানভীর তারেক: প্রথম গান প্রকাশ হয় আমি ভোরের কাগজে থাকাকালীন। সিফাত নামে একজন নবাগত গায়ক আমার গান করে। এরপর বিচ্ছিন্ন ভাবে দু তিনটে গান প্রকাশ পায়। কিন্তু আমি দেখলাম, সেই গান নিয়ে তারা কেউ আমাকে সম্মানী দেয় না! আমার গানটা যে তারা নিচ্ছে এতেই আমাকে ধন্য করে দিচ্ছে। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, এভাবে কাউকে গান দিবো না। এরপর আমি আইয়ুব বাচ্চুকে পেলাম। আমার গানের ক্যারিয়ারে আইয়ুব বাচ্চু ও সুলতান মাহমুদ বাবুল- এই দুজনের কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ।
বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু শুরুর দিকে টানা কয়েকবছর এসআই টুটুল আর আপনি জুটি বেঁধে কাজ করেন। এলআরবি থেকে টুটুলের বেরিয়ে আসার পেছনেও নাকি আপনার হাত ছিলো! এই গল্পটা শুনতে চাই-
তানভীর তারেক: হা হা। এ গল্পটাও বিচিত্র। আগেও বলেছি, আমি মূলত এ শহরে গান লিখতে, গাইতে আর সুর করতে এসেছিলাম। আমি যেদিন বাবার সাথে ঢাকায় আসি, তার আগেই কিন্তু শাফিন আহমেদ, মাকসুদ, বাচ্চু ভাইয়ের ঠিকানায় আমার লেখা ১৫-২০টা করে গান ডাকযোগে পাঠানো হয়ে আছে! পরে জেনেছি ওগুলোর কিছুই তারা পাননি! কারণ আমি ক্যাসেটের পেছনে যে লেবেল কোম্পানির অফিসের ঠিকানা থাকতো ঐ ঠিকানায় শিল্পীর নামে লিরিক পাঠাতাম। সরল বিশ্বাস ছিল, কোনও একদিন এভাবে পাঠাতে পাঠাতে ক্যাসেটে নিজের নামটা দেখব! কিন্তু বিষয়গুলো যে এত সহজ না, তা পরে জেনেছি। সংক্ষেপে বলি, বাচ্চু ভাই অর্থাৎ আইয়ুব বাচ্চু আমাকে একটা চিরকুট লিখে সাউন্ডটেকে পাঠান। তখন আমি মেসে থাকি। জীবনে একসাথে ২০ হাজার টাকা দেখিনি। সাউন্ডটেকের সুলতান মাহমুদ বাবুল ভাই আমাকে এক সপ্তাহ পর যেতে বলে একটা খামে করে ২ লাখ টাকা দিয়ে বলেন, ‘এই নেন। নিজের যা সুর-কথা আছে তা দিয়া ১২টা গান বানাইয়া লইয়া আসেন।’ সেই থেকে আমার গীতিকার, সুরকার বা অ্যালবাম অ্যারেঞ্জার হিসেবে যাত্রা শুরু। এরপর আমি এসআই টুটুলকে একক সুরকার হিসেবে সুযোগ দিই। হ্যাঁ আমি নিজেই বলছি। কারণ টুটুল এটা কখনও বলেনি কোথাও। যা প্রমাণিত সত্য। আমার মাধ্যমেই প্রথম একক সুরকার হিসেবে গোটা অ্যালবামে কাজ করার সুযোগ আসে টুটুলের। এরপর আমি আর টুটুল মিলে জুটি বাঁধি। টুটুলকে নিয়ে যুগান্তর স্বজন সমাবেশের হয়ে জেলায় জেলায় শো করি। তখনও এলআরবি ছেড়ে দেবার সাহস করেনি টুটুল। পরে সেই সাহসটাও এলো। যে সাহসের বুনিয়াদ আমি তৈরি করেছিলাম।
এরপর আমি কৃতজ্ঞ টিংকু আজিজুর রহমানের কাছে। কারণ ওর স্টুডিওতে আমি সহকারী হিসেবে কাজ করি টানা ৪ বছর। স্টুডিও কম্পোজিশন শিখি ওর কাছ থেকে। সেই থেকে নিজের সুর নিজে বাঁধি। কৃতজ্ঞ আমি লাকী আখন্দ স্যারের কাছে। আমার তখন বাসা ভাড়া দেবার পয়সা ছিলনা। তিনি আমাকে একটা পুরনো গিটার উপহার দিয়েছিলেন। ফ্রি গিটার শেখান দুইমাস। এই ঢাকা শহরকে অনেকে নিষ্ঠুর পাষাণ বলে। আমার কাছে এই শহরের মতো মায়াময় কোনও শহর লাগে না। আমি বিশ্বের অনেক দেশ দেখেছি, ঘুরেছি। তবু বারবার এ শহরে ফিরতে মন চায়। কারণ এই শহরটাই আমাকে আদর-শাসন করে আজকের আমাকে তৈরি করেছে। এ শহরের প্রতি আমার আজন্ম ঋণ।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তো ক্যারিয়ারের বেশিরভাগই দিয়েছেন অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে। চলচ্চিত্রে কাজ শুরু কিভাবে হলো।
তানভীর তারেক: দেখুন গত প্রায় ২৩ বছর ধরে সংগীতের নানা শাখা উপশাখার শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। এর ভেতরে গত ৭ বছর ধরে সিনেমায় মিউজিক করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমার সিঁড়ি বাওয়া জীবন। অর্থাৎ হঠাৎ করে- আঁতকা স্বপ্নের মতো করে জীবনে আমার কোনও প্রাপ্তি ঘটেনি! এই ৭ বছরে চলচ্চিত্রের জন্য গুনে গুনে ১৭টি গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছি। কয়েকজন গুণী নির্মাতা আমাকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু সিনেমায় প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ংকর! প্রথম কাজ আমার আইটেম সং! পরিচালকের নাম না বলি। তবে সুপারহিট অনেকগুলো ছবি তার বাজারে। তাই প্রথম কাজ যেহেতু পেলাম, গানটি জান-প্রাণ দিয়ে মিউজিক করলাম। কলকাতা থেকে গৌতম দাকে দিয়ে মাস্টার করালাম! প্রডিউসার আমাকে সবমিলিয়ে পেমেন্ট যা দিলো, তার দ্বিগুণ খরচ হয়ে গেল! যাই হোক, কাজটা পরিচালকের হাতে জমা দিলাম। গান শুনে বেজায় খুশি। খুশি হয়ে আমাকে একটা টি শার্ট গিফট করেছিলেন তিনি। সেই টি-শার্ট গায়ে ছোট হলো বলে পরতে পারিনি!! ছবি রিলিজ হলো। আমার ভেতরে সেকি আনন্দ। ছবি দেখতে অর্থাৎ নিজের গানটা দেখতে ফার্মগেটের সিনেমা হলে ঢুকলাম দুপুরে। একা। হলে লোকজন খুবই কম। কিন্তু একী...!! আমার আইটেম সং শুরু হবার আগেই হুড়মুড়িয়ে কোত্থেকে মানুষ ঢুকে নিচতলা হাউজফুল হয়ে গেল! এ এক বিরল দৃশ্য। নিজের গানের এত দর্শক!! তবু খুশি হতে পারছি না!
এই স্বীকৃতি ২৩ বছর পরিশ্রমের পারিশ্রমিক: তানভীর তারেক বাংলা ট্রিবিউন: গানটি নেই? নাকি কাটপিস।
তানভীর তারেক: গান বাজছে আমারটাই কিন্তু আমি পর্দায় তাকাতে পারছি না! কাটপিস নয়, আসলই। তবে গানের চিত্রায়ন আর ক্যামেরা অপারেশন দেখে নিজেই লজ্জায় পড়ে গেলাম! গানের সাথে চলছে আস-পাশের দর্শকদের খিস্তি খেউর! পুরো হলে সবাই পুরুষ। সবার কী এক ভয়ংকর লোলুপ চোখ।
গান শেষে পর্দায় শুরু হলো ওভারএক্টিং এর প্রতিযোগিতা। হল আবারও ফাঁকা আগের মতো। আমি বাইরে বের হলাম প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম- এ গানের কথা আমি আমার মাকে কিভাবে বলবো? বোনকে কিভাবে বলবো? ফেসবুকে কী করে শেয়ার দিবো? গানের কথা কিন্তু অশ্লীল ছিল না। কিন্তু চিত্রায়ন ছিল ভয়াবহ রকমের অশ্লীল। ফার্মগেট হলের নীচে পেটিসের দোকানের একটা পেটিস আর সেভেনআপ খেতে খেতে প্রতিজ্ঞা করলাম, জীবনে আর কেউ আমাকে পিস্তল ঠেকালেও আইটেম গান করবো না! সিনেমায় এভাবেই আমার যাত্রা। এরপর সেই পরিচালক তার পরবর্তী ছবির জন্যও আইটেম গানে আমাকে কম্পোজার হিসেবে বরাদ্দ করতে চাইলেন। অ্যাডভান্স দিতে চাইলেন। তার ক’জন বন্ধু পরিচালককেও রেফার করলেন। তাদেরও বায়না, আইটেম গান। আমি বিনয়ের সাথে না করলাম সবাইকে। তিনি অবাক হলেন! বোঝালেন- তার কাজ ফিরি দিয়ে কারা কারা কি কি হইতে পারেনি। আমিও বললাম, ‘ভাই, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে কিছুই হতে আসিনি। মনের আনন্দে নিজের খেয়াল-খুশি মতো কাজ করতে আসছি ভাই।’
পরে সালাম দিয়ে বিদায় নিলাম তার কাছ থেকে।
বাংলা ট্রিবিউন: এরপরের গল্পটা জানতে চাই। ‘মায়া: দ্য লস্ট মাদার’ পর্যন্ত।
তানভীর তারেক: সিনেমায় এরপর মিষ্টি রোমান্টিক অথবা স্যাড রোমান্টিক গান করেছি বেশ কিছু। কিন্তু চলচ্চিত্রে দেশের গান করার সুযোগ পাওয়াটা বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ ৯০ ভাগ ছবিতে কোনও দেশের গান থাকে না। দুটো রোমান্টিক, একটা আইটেম, একটা স্যাড- হয়ে গেল ছবি।
তো সিনেমায় দেশের গান করার মতো বিরল সুযোগটি করে দিলেন মাসুদ পথিক। তার ‘মায়া: দ্যা লস্ট মাদার’ ছবিটির ‘জন্মভূমি’ গানটি করলাম তৃপ্তি নিয়ে। পথিক একদিন বললেন, ‘তানভীর ভাই আপনি একটা রোমান্টিক গান করবেন। আমি বললাম, আপনার ছবি তো মুক্তিযুদ্ধের প্লট। আমাকে একটা দেশের গান দেন না প্লিজ।’
তিনি ১ সপ্তাহ সময় নিলেন। বিরক্তি নিয়ে বললেন, ‘দেখি!’
আমি ভয় পেয়ে গেলাম এই ভেবে যে, নিজের পছন্দমতো গান চাইতে গিয়ে কি কাজটাও হারালাম! মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল মাসুদ পথিকের ‘দেখি’ শব্দটা শুনে। মাসুদ পথিক ঠিক ৮ দিনের মাথায় আবার ফোন করলেন। বললেন, ‘লিরিক পাঠাচ্ছি, দেশের গান। ভীষণ মায়া দিয়ে সুর করবেন। শিল্পী আপনি নির্বাচন করেন। দুটি ভার্সন দেবেন আমাকে। একটা ফিমেল, একটা মেল। মেলটা আপনি গান। আর মিউজিক ছাড়া শুধু গানটা আমাকে দেবেন আরেক ফাইলে।’
আমি কোনালকে ফোন দিলাম। প্লে-ব্যাকের ব্যস্ত শিল্পী। বললাম, ‘একটা দেশের গান করেছি। ফিল্মের জন্য। তোর গাইতে হবে।’ কোনাল রাজি হলো। অফিস শেষে রাতে ভয়েস নিলাম। গান শেষে আমরা মাঝরাতঅব্দি আড্ডা দিলাম বাসায়। অসাধারণ গাইলো কোনাল।
গানটা সত্যিকার অর্থেই ভীষণ প্রিয় একটা কাজ আমার।
বাংলা ট্রিবিউন: তার মানে সিনেমায় প্রথম কাজটির অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ংকর। আর এই কাজটি মুগ্ধতার! পেলেন সেরা স্বীকৃতিও।
তানভীর তারেক: তাতো বটেই। জীবনের সবচেয়ে আরাধ্য পুরস্কারটি পেলাম এই গানটির মাধ্যমে। সত্যিই আমি অভিভূত। জুরি বোর্ডের সম্মানিত সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
একজন শিল্পীর জীবন পূর্ণ করে একটি জাতীয় পুরস্কার। আমি সৌভাগ্যবান যে, দেশের গানে সুর করবার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম। সবার কাছে প্রার্থনায় থাকতে চাই। ভালবাসায় থাকতে চাই। যেন এই সম্মান দেশের জন্য এই প্রিয় শহরের জন্য শুভকাজে বাকি জীবনটা খরচ করতে পারি।
বাংলা ট্রিবিউন: একজন সংগীতকর্মী হিসেবে ২৩ বছরের জার্নি শেষে এই অর্জনের মূল্যায়ন আপনার কাছে কী রকম?
তানভীর তারেক: এতদিন সবাই বলতো আর ছাপাতাম, ‘এটা ভাষায় প্রকাশযোগ্য না।’ তখন ভাবতাম, এসব বলার জন্যই বোধহয় বলে। কিন্তু আসলেই এ পুরস্কারের আনন্দ প্রকাশের বাইরে। অনেককিছু মনে পড়ে যায়। একবার আমাদেরই এক বিনোদন সংগঠন থেকে আমাকে সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার দেবে বলে টানা ২ সপ্তাহ খাটিয়ে ঐ অ্যাওয়ার্ড শো’র টাইটেল সং, টিজার মিউজিক, ফিলার মিউজিক করিয়ে নিলো! আমিও কী এক মোহে, কী এক লোভে পড়ে করে দিলাম। পুরস্কারের লোভ আমার আছে, কারণ আমি পরিশ্রমী তাই স্বীকৃতি চাই। নিজের অন্যান্য কাজ ফেলে রেখে ওদের কাজ করে দিলাম। তো পুরস্কার নেবার জন্য আমার পরিবারকে নিয়ে বসে আছি অনুষ্ঠানে। আয়োজক সহকর্মীরা বলছে, এই আরেকটু পর। আরেকটু পর। এক পর্যায়ে শেষ হয়ে যাবে এমন সময় তাদেরকে ফোন দিলাম দর্শকসারি থেকে। দেখি ফোন রিসিভ করে না। কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে গেছি। লজ্জায়, অপমানে। এসব অপমান আমার খুব কাছের মানুষেরা করেছে। কিন্তু আমি যেটা করেছি তা হলো, কখনও হাল ছাড়িনি। কাজ করে গেছি।
তাই জীবনের সেরা প্রাপ্তির এই পুরস্কার তালিকায় প্রাপক হিসেবে নিজের নাম দেখে কী এক আনন্দঅশ্রু এসেছে, বলে বোঝাতে পারবো না। সেইসব কষ্ট, বঞ্চনার কথা মনে করে ভালো লেগেছে। আর মিস করেছি আমার বাবাকে। প্রথম যখন খবরটা পেলাম। হাতে মোবাইল নিয়ে বাবার নাম্বারে ডায়াল করে ফেলেছি। যেই বাবাকে হারিয়েছি ১৩ বছর আগে। আজ তিনি আমার এই অর্জনের কথা শুনলে কতই না খুশি হতেন!
আসলে এত বড় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলে বিগত স্ট্র্যাগলের গল্প শোনার মানুষ তৈরি হয়। এটা বিশাল প্রাপ্তি। আমার বিগত জীবনের কষ্ট বঞ্চনা কিন্তু বদলায়নি। কিন্তু এই স্বীকৃতি এই প্রাপ্তির পর আমার কষ্ট একজন তরুণের কাছে অনুপ্রেরণা হতে পারে। স্বীকৃতিটা এজন্য ভীষণ জরুরি। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা ট্রিবিউন: এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে বলি। এই যে সাংবাদিকতার পাশাপাশি অন্য সৃজনশীল কাজে মনোযোগ দেওয়া। সেখানে কি সাংবাদিক পরিচয়টি আপনি ব্যবহার করেননি? বা এসব ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে কি ধন্ধ তৈরি করে না!
তানভীর তারেক: দারুণ একটি প্রশ্ন করেছেন। না; মোটেই দ্বন্দ্ব তৈরি করেনি। বরং একটা গর্বের জায়গা তৈরি করতে পেরেছি আমি, আমাদের কমিউনিটির ভেতরে। দেখুন একজন কূটনৈতিক রিপোর্টার যখন তার পেশার বাইরে কোনও প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদারির কাজ করে। তখন তাকে আমরা বলি, কি বড় মাপের মানুষ। আমি খুব ইতিবাচক অর্থেই কথাটা বলছি। কিন্তু আমাদের বিনোদন সাংবাদিকতায় দেখবেন, কেউ যদি নিজের মেধা চর্চায় একটা উপন্যাস লিখে, কিংবা নাটক বা গান করে। পাশ থেকে অনেকেই বলবে, এই যে সাংবাদিকতা বেচে ধান্দা শুরু করেছে! একটা মেধার চর্চা আপনি সাথে সাথে হত্যা করতে চাইবেন। কারণ কাজটা আপনি পারেন না বলে বা ঈর্ষান্বিত বলে। অথচ উল্টো অনুপ্রেরণা পাবার কথা ছিল। দুঃখের সাথে বলতে চাই, আমি আমার ২৩ বছরের গানের ক্যারিয়ারে কোনও বড় মিডিয়া হাউজের সাপোর্ট পাইনি। আমি হয়ত বড় বাজেটের অ্যালবাম করেছি। কিন্তু ট্রিটমেন্ট হয়েছে সিঙ্গেল কলাম, সাংবাদিক বলেই এটা হয়েছে। কিংবা ধরুণ একই সময়ে আমি সুবীর নন্দীর গোটা অ্যালবাম সুর করেছি, আরেকজন করেছে নবীন কারও গান। নবীনের নিউজটি লিড হয়েছে। আমারটা ছাপতে গড়িমসি করেছে!
এটাকে একধরণের ঈর্ষার পাশাপাশি বলবো অবজ্ঞা করা। অর্থাৎ আপনি আমাকে প্রতিদিন দেখছেন বলে আমার ভিন্ন খাতের মেধার মূল্যায়ন আমলে নিচ্ছেন না। এই ধরনের অবজ্ঞা-অপমানের ভেতর দিয়ে আমাকে বিগত প্রায় দুই যুগ নানান কিছু দেখতে হয়েছে।
তাই আমি মনে করি ধন্ধ নয় বরং আমার এই জাতীয় অর্জন দীর্ঘদিনের সয়ে যাওয়া শ্রমের অনুরণন মাত্র।
এই স্বীকৃতি ২৩ বছর পরিশ্রমের পারিশ্রমিক: তানভীর তারেক বাংলা ট্রিবিউন: আপনার সুরের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টিকে প্রাধান্য দেন?
তানভীর তারেক: আমি সুরের ক্ষেত্রে সুরের সহজ চলনকে প্রাধান্য দিই। লিরিকের ওপরে মনের আর্তি বা আনন্দটা বসানোর চেষ্টা করি। তবে সুর তৈরির ক্ষেত্রে আমার একটা অবজারভেশন আছে। ইদানীং কোনও কোনও মেধাবী কম্পোজারের মুখে গান নিয়ে আলোচনায় শোনা যায়, আমি অমুক ভার্সনের সিন্থ ইউজ করলাম, ড্রামসের কিকটা কিন্তু আমারটাই বেস্ট, আমি লেটেস্ট সফটওয়ারটা ইউজ করি প্রভৃতি। বেশিরভাগেরই মুখে কথার গভীরতা কী, সুরের মায়া কতটুকু তার আলোচনা কম থাকে। তার আগে বলে রাখি, আপনি জনপ্রিয় গান আর মানসম্পন্ন গানকে এক করে ফেলবেন না প্লিজ। এক করে ফেললে আমার কথা ভালো লাগবে না। অর্থাৎ আমরা খুব গেজেট নির্ভর সুরকার কম্পোজার হবার চেষ্টা করছি। আমি এর বাইরে থেকে কাজ করতে চাই। আমি কথা আর সুরের প্রাধান্য নিয়ে চলনসই মিউজিকটা করতে চাই। আমি রাতের গান নামে ৫০টি গানের একটি প্রজেক্ট করছি। যেখানে শুধু পিয়ানো আর নায়লন স্ট্রিং-এর কম্পোজিশন থাকবে। আমরা কিন্তু একতারার দেশের সুরকার। শুধু একতারা আর কথা-সুরের চলন দিয়ে সারা বিশ্ব কাঁপায় বাউলেরা। সেখানে আমরা ফেক এক আন্তর্জাতিক হবার জন্য ক্র্যাকভার্সনের সফটওয়ার কিনে খুব বাহাদুরি করছি।
আমরা ইদানীং নিজের পোশাক ছেড়ে পাশ্চাত্য সাজে খুব আন্তর্জাতিক হবার চেষ্টা করছি। যা ৬০/৭০ দশকে ছিল না। আমরা এখন একটা অস্থির সময় পার করছি। কারণ আমার আপনার হাতে ফেসবুকের মহান শেয়ার বাটনটা আছে। কাকে কখন বুঝে না বুঝে শেয়ার করে দিচ্ছি, হিসাব করছি না।
বাংলা ট্রিবিউন: তার মানে কি সামনে আপনি অন্ধকারই দেখছেন!
তানভীর তারেক: না, তা না। আমাদের দেশে ভীষণ ভীষণ মেধাবী সুরকার কম্পোজার আছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমাদের চলচ্চিত্রটা নেই। ৭০/৮০ দশকে যে পরিমাণ ভালো মানের চলচ্চিত্র রিলিজ হতো, এখন তার সিকিভাগও হয় না। ভালো মন্দ তো পরের হিসেব।
বাংলা ট্রিবিউন: শেষ প্রশ্নে জানতে চাই সুরকার হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেলেন। এরপর কী চাই-
তানভীর তারেক: এরপরই তো শুরু। দায়বোধ বলতে একটা শব্দ আছে। দেশের প্রতি সে দায় মেটানো। এ রাষ্ট্র এ শহরের প্রতি আমি ভালবাসায় নত, কৃতজ্ঞ। এখন ভালো কিছু কাজ করতে হবে। নতুনদের নিয়ে প্রচুর কাজ করবো। যারা বরেণ্য শিল্পী অনেকদিন গান রিলিজ নেই, তাদেরকে নিয়ে আগ্রহভরে গান করবো। অনেক কিছু করার বাকি। জীবনে একটি সূত্রেই আমি সাফল্য পেয়েছি। সেই সূত্রের নাম, ‘নেভার গিভ আপ’। হাল ছাড়িনি। ছাড়বো না। অনেকেই দেখি গান থেকে অভিনয় থেকে অবসর নেয়। এসব ভণ্ডামি। শিল্পের কাছে ঋণী থেকে মরে যেতে হয়। সৃজনশীল চর্চার কোনও অবসর নেই।
বাংলা ট্রিবিউন: ধন্যবাদ আপনাকে। আবারও অভিনন্দন। সুরকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- দেশের প্রথম কোনও সাংবাদিক, যিনি এমন অর্জন দেখালো!
তানভীর তারেক: ধন্যবাদ বাংলা ট্রিবিউন পরিবারকে। সাংবাদিকদের মধ্যে গীতিকবি হিসেবে আমার অনেক প্রিয় মানুষ-অগ্রজরা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তবে সুরকার হিসেবে সম্ভবত এমন অর্জন প্রথম! আমি ঠিক এই বিষয়টি খুঁজিনি।

/এমএম/এমএমজে/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’