X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলার মাটিতে দুষ্কৃতকারীদের স্থান নেই: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৮:০০আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:১৪

বাংলার মাটিতে দুষ্কৃতকারীদের স্থান নেই: বঙ্গবন্ধু (বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ৬ ডিসেম্বরের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতকারীদের প্রতি কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, বাংলার মাটিতে তাদের কোনও স্থান হবে না। শহর, গ্রাম, গঞ্জে যারা এখনও ডাকাতি-রাহাজানি করে বেড়াচ্ছে তাদের নির্মূল করা হবে। ১৯৭২ সালের ৬ ডিসেম্বর সাভারে রক্ষীবাহিনীর শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ ব্যাপারে বাহিনীর প্রতি দ্রুততম সময়ে নির্দেশ পাঠাবেন বলেও জানান তিনি। এই শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, বিদেশি কূটনীতিবিদ, তিন বাহিনীর প্রধান, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিনে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এন এম নুরুজ্জামান রক্ষীবাহিনীর গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল বাংলায় কমান্ড। প্রধান নির্বাহী সদস্য যখন মঞ্চের সামনে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন যাচ্ছিলেন তখন উপস্থিত দর্শক করতালিতে তাদের অভিনন্দন জানায়।

বাংলার মাটিতে দুষ্কৃতকারীদের স্থান নেই: বঙ্গবন্ধু

রক্ষীবাহিনীকে জনসাধারণের হৃদয় জয় করার উপদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান রক্ষীবাহিনীর উদ্দেশে বলেন, শুধুমাত্র পুলিশ, রক্ষীবাহিনী, বিডিআর, সেনাবাহিনী দিয়ে দেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা যায় না। এজন্য দরকার জনসাধারণের সহযোগিতা ও সমর্থন। রক্ষীবাহিনীকে জনসাধারণের হৃদয় জয় করার উপদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, আপনারা যখন কাজে যাবেন তখন মনে রাখবেন এদেরই টাকায় আপনাদের খরচ চালানো হয়। জনগণ আপনারই মা-বাপ, ভাই-বোন। রক্ষীবাহিনীকে চার মূলনীতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করা হবে। এদেশের শোষক ও শোষিত শ্রেণি থাকবে না। বাংলার মাটি থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা হবে। রক্ষীবাহিনীর প্রতি মোবারকবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, আপনাদের উপযুক্ত রসদ সরবরাহ না করতে পারা স্বত্বেও যেভাবে নিজেদের গড়ে তুলেছেন সেজন্য দেশবাসী ও আমার পক্ষ থেকে আপনাদের মোবারকবাদ।

বাংলার মাটিতে দুষ্কৃতকারীদের স্থান নেই: বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের অধিকাংশ সদস্যই পাকিস্তানি শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী, সেনাবাহিনী, বিডিআর, ছাত্রনেতা, কৃষক-শ্রমিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল তার তুলনা নেই। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ছিল তার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ৩০ লক্ষ লোককে হত্যা করেছে তারা। লাঞ্ছিত করেছে আর এক কোটি লোককে। সেদিন আপনাদের কাছে কিছুই ছিল না তবু আপনারা আমার নির্দেশে স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন, দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। পাকিস্তান ভেবেছিল অস্ত্র ও গুলি দিয়ে বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখবে। তারা ভেবেছিল বাঙালিরা কাপুরুষ। কিন্তু স্বাধীনতাকামী জনগণকে দাবিয়ে রাখা যায় না। আজ বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের পতাকা বিভিন্ন দেশে উড়ছে।

বাংলার মাটিতে দুষ্কৃতকারীদের স্থান নেই: বঙ্গবন্ধু

চোরাকারবার বন্ধ করায় অভিনন্দন

বঙ্গবন্ধু বলেন, গত ২৫ বছরে চোরাকারবার বন্ধ করা যায়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অতি অল্প দিনে তা করতে পেরেছে। অল্পদিনের মধ্যে তাদের সাফল্যকে অতুলনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী রক্ষীবাহিনীর প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, শৃঙ্খলা ছাড়া কোনও জাতি বড় হতে পারে না। তিনি বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রত্যেকে নিজ ধর্ম পালনের সুযোগ থাকবে।

এর আগে ঢাকা থেকে সাভার যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানাবার জন্য সুরঞ্জিত তোরণ তৈরি করা হয়। মিরপুর আমিনবাজার ও সাভারে বিরাট জনতার অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি থামাতে হয়। সেখানে জনসাধারণ তাকে মাল্যভূষিত করে এবং ‘জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানায়।

বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব সাহায্য করবে ভারত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বলেন, ভারত বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সকল প্রকার সাহায্য করে প্রস্তুত রয়েছে। শান্তিনিকেতনে উত্তরায়ন ভবনে বিপিআই এর সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাতে ইন্দিরা গান্ধী একথা বলেন। ১৯৭৩ সালের জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শুরু করার সংবাদে তিনি খুশি হয়েছেন। তিনি জানান, ভারত সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায়। ভারত তার নিজস্ব সম্পদ দিয়ে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন কর্মসূচির সাফল্য সম্পর্কেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ সম্মান সূচক ডিগ্রি প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত সমাবর্তন উৎসবে যোগদান করতে সেখানে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।

/এমআর/এমএমজে/
সম্পর্কিত
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
রাহমানের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’, ভিডিও করলেন মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
গাজার গণকবরের ৮৫ শতাংশ মরদেহই অজ্ঞাত
গাজার গণকবরের ৮৫ শতাংশ মরদেহই অজ্ঞাত
‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ এক সদস্য গ্রেফতার
‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ এক সদস্য গ্রেফতার
বিশ্বসাহিত্যের খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের