X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

৯ মাসেও পরানো গেলো না মাস্ক!

জাকিয়া আহমেদ ও সাদ্দিফ অভি
০৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:১০আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২০, ০৮:৩১

মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর একে এক পেরিয়ে গেলো ৯টি মাস। গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হয় বাংলাদেশে। শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধি পালনের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে কয়েক দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ৯ মাস পার হলেও মানুষ মাস্ক পরতে আগ্রহী না। তাই মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে কঠোর হয় সরকার।


মানুষের মুখে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে গত আগস্ট মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতেও শতভাগ মানুষ মাস্ক পরছে না। তাই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রচার কার্যক্রমের নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এমন পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে মুখে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে মসজিদের মাইকে প্রচার, জুমার বয়ানে সচেতনতার পরেও কাজ হয়নি। শতভাগ মানুষ মুখে মাস্ক ব্যবহার করছে না। পরবর্তীতে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রকার উদ্যোগ, প্রচারণা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, জেল জরিমানাও করা হচ্ছে। এতেও কাজ হচ্ছে না। মানুষকে মাস্ক পরানো যাচ্ছে না। নানা অজুহাতে শহরে ও শহরের বাইরের মানুষ মাস্ক নিয়ে খামখেয়ালি করেই যাচ্ছে।’

গত ৯ মাসের মহামারির চিত্র
গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে চার লাখ ৭৯ হাজার ৭৪৩ জন। এছাড়া এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ছয় হাজার ৮৭৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাসভিত্তিক তথ্য থেকে জানা যায়, গত মার্চ মাসে মোট আক্রান্ত ছিল ৫১ জন, এপ্রিলে সাত হাজার ৬১৬ জন। এরপর মে মাসে পাঁচগুণ বেড়ে যায় শনাক্তের সংখ্যা, এই মাসে করোনা শনাক্ত হন ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন। পরের মাসে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে জুনে করোনা শনাক্ত হয় ৯৮ হাজার ৩৩০ জন, জুলাইতে কিছুটা কমে হয় ৯১ হাজার ৯১৮ জন। এরপর কমতে থাকে শনাক্ত। আগস্টে শনাক্ত হয় ৭৫ হাজার ৩৩৫ জন, সেপ্টেম্বরে ৫০ হাজার ৪৮৩ জন। সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরে করোনার আগ্রাসন নিম্নমুখী হলেও অক্টোবর মাসে মোট শনাক্ত ছিল ৪২ হাজার ৮৬৯ এবং নভেম্বর মাসে ৫৬ হাজার ২৩৭ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে ১৩ হাজার ৩৬৮ জন। আর ডিসেম্বরে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৮১১ জন।

অন্যদিকে গত ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যু হয়। ওই মাসে মৃত্যু সংখ্যা ছিল ৫১, এপ্রিলে ১৬৩, মে ৪৮২, জুনে এক হাজার ১৯৭, জুলাইতে এক হাজার ২৬৪ জন, আগস্টে এক হাজার ১৯৮, সেপ্টেম্বরে ৯৩৫, অক্টোবরে ৬৩৬ এবং নভেম্বরে ৭০৯। আর ডিসেম্বরে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৩০ জন।

আবারও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী
দেশে করোনা সংক্রমণের হার আগস্টের পর থেকে স্থিতিশীল হলেও সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বরে তা ওঠানামার মধ্যেই আছে। এর আগে মে মাসের পর করোনার সংক্রমণের হার অধিক মাত্রায় বাড়তে থাকে। একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের হার ৩১ শতাংশ দাঁড়ায়। এরপর ১৫ থেকে ২৫ শতাংশের মধ্যে থাকলেও তা কমে ১০ শতাংশের কাছাকাছি আসে। কিন্তু বর্তমানে তা আবারও ১৬ শতাংশের কাছাকাছি। অক্টোবরের প্রথমে সংক্রমণের হার অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত ছিল ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এরপর অক্টোবরের শেষে তা দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫০-তে। নভেম্বরের শুরুতে হার ছিল ১৩ দশমিক ৪৭ এবং শেষে হার ১৪ দশমিক ৭৯।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে বাঙালি ৯ মাসে দেশ স্বাধীন করেছে তারা ৯ মাসে মাস্ক পরার অভ্যাস করতে পারলো না। কেন পারলো না এটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তারা কথা শোনে না। ম্যাজিস্ট্রেট জেল জরিমানা যে করছে এটাই আসলে তাদের জন্য প্রয়োজন।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক এবং ইউনিসেফের সাবেক সিনিয়র ন্যাশনাল কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অন্য ধরনের কৌশল দরকার ছিল। সংগঠিত প্রচার প্রচারণা দরকার ছিল। সেটা করতে পারিনি। আমরা সময়ে সময়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের এই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে পারিনি। সব মিলিয়ে যেটা হচ্ছে তা হলো, আমাদের দেশের মানুষ মাস্ক পরছেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ যদি মাস্ক পরাতে চায় আর কেউ যদি না পরে তার মানে হলো তারা সফল হয়নি এতে। কবে ভ্যাক্সিন পাবো অথবা এই সমস্যা কবে সমাধান হবে আমরা জানি না। যেহেতু জানি না তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে দুই ভাগে। একটি স্বাস্থ্য বিভাগ করবে, আরেকটি জনগণ। স্বাস্থ্য বিভাগকে শনাক্তের কাজটি ভালোভাবে করতে হবে। টেস্ট করতে হবে যথেষ্ট। জনগণের করণীয় হলো- প্রয়োজন না হলে বাইরে না যাওয়া, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া। এই দুইয়ের সমন্বয় করতে পারলে কিন্তু সমাধান হয়ে যায়।’

/এনএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জেনোসাইড কর্নার’ বন্ধ থাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসন্তোষ
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জেনোসাইড কর্নার’ বন্ধ থাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসন্তোষ
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইতিহাস বিকৃত করে বিএনপি সফল হয়নি, এখন আবোল-তাবোল বলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়