তিন কোটি টাকারও বেশি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং মানি লন্ডারিং এর অভিযোগে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ মণ্ডল ও তার স্ত্রী লাইলী বেগমের নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (৯ ডিসেম্বর) দুদক রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর আলম বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর আলম।
দুইবার এমপি এবং দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে থাকার সুবাদে নুর মোহাম্মদ মন্ডল ও তার স্ত্রী লাইলী বেগম ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্জন করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
দুদকের দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর-৬ আসনের সাবেক জাপা সাংসদ পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী নেতা বর্তমানে পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মণ্ডলের কাছে সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। এ চিঠির জবাবে তিনি তার সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৫ কোটি ২২ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৮ টাকা। কিন্তু, তার সম্পদ বিবরণী যাচাই করে দেখা গেছে তার প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ ৮ কোটি ৯৮ লাখ ৮৮ হাজার ৮০২ টাকা। ফলে তিনি ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬৩৪ টাকার তথ্য গোপন করেছেন বলে দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে নুর মোহাম্মদ মন্ডল তার জ্ঞাতসারে আয়ের উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে রূপান্তর এবং ওই জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দুদক আইনের ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
একইভাবে নূর মোহাম্মদ মণ্ডল তার স্ত্রী লাইলী বেগমের নামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ এবং অর্থ রেখেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। এসব জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের কোনও প্রকৃত উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। সে কারণে তার স্ত্রী লাইলী বেগমসহ তার নামে দুদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামলা নম্বর ২৬ ও ২৭, তারিখ ৯.১২.২০ইং।
এ ব্যাপারে রংপুর দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য নুর মোহাম্মদ মণ্ডল অতীতে বিএনপির রাজনীতি করতেন। পরবর্তীকালে তিনি এরশাদের হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি রংপুর-৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে দুইবার এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে জাতীয় পার্টি ত্যাগ করে আবারও বিএনপিতে ফিরে আসেন। এরপর তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কয়েক বছর আগে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য।