X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ময়মনসিংহ-ভোলা-নড়াইল মুক্ত দিবস

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১০ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:২৮আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:৫২

আজ ১০ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে ময়মনসিংহ, ভোলা, নড়াইল জেলা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়। অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল বিক্রমে লড়াই করে হানাদারদের আত্মসমর্পণ ও পালিয়ে যেতে বাধ্য করেন। মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলাগুলোয় বিভিন্ন আয়োজন করা হয়।

ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস আজ    

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিকামী বীর জনতা এই দিনে রাজাকার আলবদর ও তাদের দোসর পাকহানাদার বাহিনীকে হটিয়ে ময়মনসিংহকে মুক্ত করে। এই দিনের সকাল থেকেই ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে হালুয়াঘাট, ফুলপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জয় বাংলা, বাংলার জয় মুখরিত ধ্বনিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ মিছিল নিয়ে ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে অবস্থান নেয়। মুক্ত দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহের মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ভার্চুয়ালি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। ময়মনসিংহের ছোটবাজারের মুক্তমঞ্চে মুক্ত দিবসের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ সময় সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

মুক্তিযুদ্ধের গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল জানান, হালুয়ঘাট, ফুলপুর, তারাকান্দা, মুক্তাগাছা মুক্ত করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহ শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। পরে ১০ ডিসেম্বর সকাল থেকেই ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও বীরজনতা জয় বাংলার স্লোগান নিয়ে সার্কিট হাউজ মাঠে অবস্থান নেয়। মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা একে একে সার্কিট হাউজে আসেন। তিনি আরও জানান, আশপাশের মানুষ এই আনন্দঘন মুহূর্তে ছুটে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানান।

মুক্ত দিবসকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ মহানগরীর ছোটবাজারের মুক্তমঞ্চে সাত দিন ব্যাপী নানা আয়োজন করা হলেও এবার করোনার কারণে মঞ্চের আয়োজন রাখা হয়নি। তবে ভার্চুয়ালি আলোচনা সভার আয়োজন রাখা হয়েছে।  

ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের র‌্যালি।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, পাক হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সনের এই দিনে ভোলা থেকে কার্গো লঞ্চ যোগে পালিয়ে যায় আর ভোলা হয় হানাদারমুক্ত। এই দিনে ভোলার হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে আনন্দ উল্লাস করতে থাকেন।

সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সহকারী কমান্ডার (তথ্য ও প্রচার) মো. সাদেক জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ওয়াপদা ও ডাকবাংলোয় অবস্থান নিয়ে নৃশংস অত্যাচার চালায়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বোরহানউদ্দিনের দেউলা, বাংলাবাজার, শান্তিরহাট, ঘুইংগারহাট চরফ্যাশন ও লালমোহনে দেবীর চরসহ বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা ভোলার অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যখন শহর নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তুতি নেন, সেই সময় ১০ ডিসেম্বর ভোররাতে হানাদাররা চারদিকে গুলি ছুড়তে থাকে। তখন মুক্তিযোদ্ধা কাজী জয়নাল আহমেদ ও ফিরোজের নেতৃত্বে ১৩ জনের একটি বাহিনী তাদের পেছন থেকে ধাওয়া করেন। হানাদাররা ভোর ৫টায় ভোলার পুরান লাশ কাটা ঘরের পাশে রাখা মরহুম ইলিয়াস মাস্টারের লঞ্চে চড়ে ভোলা থেকে পালিয়ে যায়। ওই সময় তাদের গতিরোধ করার জন্য খালে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়েছিল মুক্তিকামী জনতা। পাক হানাদারদের বহনকারী কার্গো লঞ্চটি চাঁদপুরের মেঘনায় ডুবে হানাদার বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যের মৃত্যু ঘটে বলে জানা যায়। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। সেদিনের পাকিস্তানি সেনাদের পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ভোলা হানাদারমুক্ত হয়। ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টার পর ভোলার লড়াকু সন্তানরা এসডিও অফিসের (বর্তমান জেলা হিসাব রক্ষণ অফিস) ছাদে উঠে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে উড়িয়েছিল লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা।

নড়াইল বধ্যভূমি

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা রক্ত দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করে নড়াইলকে মুক্ত করে। নড়াইল মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা, মুক্তিযোদ্ধারা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মু্ক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, বধ্যভূমি ও গণকবরে পুষ্পস্তবক করেছেন।

জানা যায়, ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের দক্ষিণ দিক থেকে হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালানো হয়। ওই দিনই শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাংলোতে অবস্থানরত ৪০ জন পাক হানাদাররা আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলে তারা  অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা চতুর্দিক থেকে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ শুরু করলে পাক হানাদাররা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এখানে একজন পাক মিলিটারি নিহত এবং অন্যদের জেল হাজতে পাঠানো হয়। শীতের রাতে প্রবল শীতকে উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা সারারাত শহরে বিজয় উল্লাস করতে থাকেন এবং জয় বাংলা স্লোগানে শহর প্রকম্পিত করে তোলেন এবং ১০ ডিসেম্বর  দুপুর একটা ১৫ মিনিটে নড়াইলকে পাক হানাদারমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে নড়াইলে পাঁচ জন খেতাব পান। তারা হলেন–  বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ, বীর উত্তম মুজিবুর রহমান, বীর বিক্রম আফজাল হোসেন, বীর প্রতীক খোরশেদ আলম ও বীর প্রতীক মতিয়ার রহমান। পরে ১৪ ডিসেম্বর এ সেক্টরের মেজর মঞ্জুর নড়াইলে আসেন এবং মুক্তি পাগল হাজারো জনতার উপস্থিতিতে ডাকবাংলো প্রঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।  

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘হোম অব ক্রিকেটে’ বাংলাদেশের স্পিন কোচ মুশতাক
‘হোম অব ক্রিকেটে’ বাংলাদেশের স্পিন কোচ মুশতাক
গরমে রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
গরমে রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
মাটি কাটার সময় বেরিয়ে এলো রাইফেল, গ্রেনেড ও মর্টারশেল
মাটি কাটার সময় বেরিয়ে এলো রাইফেল, গ্রেনেড ও মর্টারশেল
২৩ মিনিটে জামালকে তিন গোল দিয়ে সেমিফাইনালে পুলিশ
২৩ মিনিটে জামালকে তিন গোল দিয়ে সেমিফাইনালে পুলিশ
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ