X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতু: উন্নয়নের বিপরীত পাঠ ও রাজনৈতিক উদারতা

আমীন আল রশীদ
১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:৪৯আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:০১

আমীন আল রশীদ পদ্মা সেতুই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র বৃহৎ স্থাপনা, যার কাজ শুরুর আগ থেকে সর্বশেষ স্প্যান বসানো পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তই সংবাদ হয়েছে। এর কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে। মূল কারণ এই সেতুর সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি যেমন জড়িত, তেমনই পুরো দেশের মানুষের আবেগ। তবে এরকম বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে নদী ও পরিবেশের ওপর প্রভাব কতটুকু ভাবনায় থাকে; এরকম বড় প্রকল্পের খরচ দফায় দফায় কেন বাড়ে; জনগণের করের পয়সা কিংবা বিদেশি সহায়তায় পরিচালিত বড় প্রকল্পগুলোয় আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কতটুক নিশ্চিত করা হয়— সেই আলোচনাও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সেতুর মতো বিরাট অবকাঠামো নির্মাণের ফলে দুই বা ততধিক জনপদের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর হলেও তার বিনিময়ে কী কী বিসর্জন দিতে হয়, তা নিয়েও অ্যাকাডেমিক আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।  
উন্নয়ন কী?
উন্নয়নের সর্বজনীন কোনও সংজ্ঞা নেই। দেশ, কাল ও অঞ্চলের ভিত্তিতে উন্নয়নের ধারণা নির্ধারিত বা নির্ণয় হয়। উন্নয়নের ধারণা অনেক সময় পরিবর্তিতও হয়। অর্থনীতিতে উন্নয়ন শব্দের ব্যাখ্যা একরকম, রাজনীতিতে আরেক রকম। আবার যখন উন্নয়নের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়, সেটির অর্থ হয় আরও ব্যাপক। তবে সাদামাটাভাবে উন্নয়ন বলতে বোঝায় গতকালের চেয়ে ভালো থাকা। যেমন কিছু দিন আগেও যেখানে বাঁশের সাঁকো ছিল, আজ সেখানে কংক্রিটের কালভার্ট হলে সেটি ওই জনপদের উন্নয়ন। ধরা যাক কোনও একটি পরিবার এক বছর আগেও তিন বেলা খাবার পেতো না। কিন্তু ওই পরিবারের এক বা একাধিক ব্যক্তি ব্যবসা বা চাকরিতে যোগদানের ফলে তারা এখন পেটপুরে খেতে পারেন। এটি ওই পরিবারের উন্নয়ন। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে তারা এখন ভালো আছেন। এই ভালো থাকা বা অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনই হচ্ছে উন্নয়ন।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এখন রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন মূলত নদীপথে। আকাশপথে কিছুটা। আর বাকিটা সড়কে। কিন্তু সেজন্য ফেরিঘাটে যথেষ্ট ‘হ্যাপা’ পোহাতে হয়। এই ‘হ্যাপা’ দূর করার জন্যই পদ্মা নদীর ওপরে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু। অর্থাৎ পদ্মা সেতু হবার পরে সড়কপথে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ যেহেতু সহজ হবে, যেহেতু জীবনের কিছু ‘হ্যাপা’ কমবে— অতএব অর্থনীতির ভাষায় এটিও উন্নয়ন। মানে জীবন থেকে ‘হ্যাপা’ কমানোও উন্নয়নের একটি অন্যতম প্রধান শর্ত। কিন্তু এই ‘হ্যাপা’ কমানোর বিনিময়ে কী কী বিসর্জন দিতে হলো বা হবে এবং তার অর্থনৈতিক মূল্য কত—সেটিও উন্নয়নের বিপরীত পাঠ।
একটি বড় বা উন্নত এলাকার সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ছোট বা পিছিয়ে পড়া এলাকার যোগাযোগ সহজ হলে সেই ছোট এলাকার উন্নয়ন অনেক সময় থমকে যায়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমার জন্মস্থান ঝালকাঠি এবং পাশের বরিশাল শহরের মধ্যে কালিজিরা নদীতে একসময় দড়িটানা ফেরি ছিল। এরশাদের আমলের একেবারে শেষদিকে এই নদীর ওপর একটি সেতু নির্মিত হয়। ফলে আগে যেখানে বাসে ঝালকাঠি-বরিশাল যাতায়াতে এই দড়িটানা ফেরির কারণে বেশ সময় লাগতো সেটা সেতু হওয়ার পরে তার অবসান ঘটে। কিন্তু তার ফলে বরিশাল শহরের ওপরে ঝালকাঠিবাসীর নির্ভরতা বেড়েছে। যেহেতু মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরত্বেই একটি বড় শহর এবং সেখানে ভালো স্কুল, হাসপাতাল, শপিং মল ইত্যাদি রয়েছে, তাই ঝালকাঠি শহরে এসব গড়ে ওঠেনি। ধারণা করা যায়, বরিশাল শহরের সঙ্গে ঝালকাঠির এ সহজ যোগাযোগ স্থাপিত না হলে ধানসিঁড়ি নদীর এই শহরে অনেক ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়ে উঠতো। তার মানে, উন্নত যোগাযোগের ফলে অনেক সময় কোনও কোনও এলাকার উন্নয়ন থমকেও যেতে পারে বা সেখানে স্থানীয়ভাবে কিছু উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকলে সেগুলো আর বিকশিত নাও হতে পারে।
উন্নয়নের বিনিময়:
পদ্মা নদীর ওপরে সেতু হওয়ায় রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ আরও নিবিড় ও সহজ হবে। এই উন্নয়ন প্রকল্পটিকে তখনই সফল বলা যাবে, যখন সত্যিই এই সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হওয়ার কারণে পদ্মার ওপারে প্রচুর শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। কিন্তু সেই উন্নয়নের বিনিময়ে কী পরিমাণ ফসলি জমি বেহাত হবে— সেটিই বড় চিন্তা। দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড যে কৃষি, তার টুঁটি চেপে ধরে নিশ্চয়ই আমরা শিল্প বিপ্লব চাই না। সুতরাং পদ্মা সেতুর সুবিধা কাজে লাগিয়ে কী ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হবে— সেটির দিকে নজর রাখতে হবে।
পদ্মা সেতু চালুর পরে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় মানুষের চাপ বাড়বে। অর্থাৎ সেখানে পর্যটন বিকশিত হবে। কারণ, রাজধানী থেকে কক্সবাজারের তুলনায় কুয়াকাটার দূরত্ব কম। যে কারণে অনেক বছর আগে থেকেই বরিশাল থেকে কুয়াকাটায় যাওয়ার পথে হাতের দুই পাশের ফসলের ক্ষেতে মাইলের পর মাইল এলাকায় চোখে পড়ে বিশাল বিশাল সাইনবোর্ড। অর্থাৎ জমি বিক্রি হয়ে গেছে। এসব জমিতে হোটেল হবে কিংবা কলকারখানা গড়ে উঠবে। প্রশ্ন হলো, এই বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ধ্বংস হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সেটি কী ধরনের হুমকি তৈরি করবে। বিশেষ করে আরও দশ বা বিশ বছর পরে যখন দেশের জনসংখ্যা আরও বাড়বে, ফসলের চাহিদা বাড়বে, তখনকার পরিস্থিতি মোকাবিলার চিন্তা আমরা এখনই করছি কিনা?
পদ্মা সেতুর একটি সফলতা আসবে যদি রাজধানীর ওপর মানুষের চাপ কমানো যায়। এই সেতুতে রেল সংযোগ চালু হলে এবং ঢাকায় প্রবেশের পরে যাতে ভয়াবহ জ্যামে বসে থাকতে না হয়, সেরকম ব্যবস্থা করা গেলে শরীয়তপুর-মাদারীপুরের মানুষেরা সকালে ঢাকায় এসে অফিস শেষ করে যদি সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারেন—সেটি একটি বিরাট অগ্রগতি হবে।
সেতু ও নদীর ভবিষ্যৎ:
পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, সারা দেশের স্থল যোগাযোগে একটি মাইলফলক এবং অর্থনীতিতে এই সেতু বিশাল অবদান রাখবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু এই সেতু নির্মাণের জন্য পদ্মার মতো একটি স্রোতস্বিনী এবং দেশের অন্যতম প্রধান লাইফ লাইনে ৪০টির বেশি পিলার দেওয়ার ফলে এর প্রবাহ যে বাধাগ্রস্ত হবে, দীর্ঘমেয়াদে তা এই নদীর গতিপথ বদলে দেবে কিনা বা এই নদীর অবস্থা উত্তরবঙ্গে যমুনার মতো হবে কিনা—সেটিও ভাবনার বিষয়। কিন্তু উন্নয়ন আলোচনায় আমরা অনেক সময় এসব আলোচনা সযত্নে এড়িয়ে যাই কিংবা রাজনৈতিক কারণে এসব নিয়ে আলোচনা বা তর্কে স্বস্তিবোধ করি না। আমরা শুধু বর্তমানে বাঁচতে চাই। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভাবনার জায়গাটি এখনও যথেষ্ট দুর্বল।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে সার্বক্ষণিক যানবাহন চলবে। ট্রেন চলবে। এর ফলে পিলারগুলোয় মৃদু কম্পন হবে; যা প্রবহমান নদীর স্রোতের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক শব্দতরঙ্গ ভেঙে দেবে। মনে রাখা দরকার, পদ্মা আর দশটি নদীর মতো নয়। এখানে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে আসে। সুতরাং নদীর তরঙ্গ ও পথচলা ব্যাহত হলে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হবে কিনা— সেটিও ভাবনায় রাখা দরকার।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে সারা দেশে যে লাখ লাখ কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে অনেক ছোট ছোট খালের মৃত্যু হয়েছে। কারণ খালের যে প্রস্থ ছিল, কালভার্ট নির্মাণের সময় দুই পাড়ে পিলার দিয়ে তা সংকুচিত করা হয়েছে। ফলে খালে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে স্থলপথে যোগাযোগ সহজ হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নৌপথ ও পরিবেশে।
উন্নয়নের খরচ ও ‘মাফিয়া চক্র’:
২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে। ২০১১ সালে এই ব্যয় বেড়ে হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি। ২০১৮ সালের জুনে ব্যয় আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বেড়েছে। মূল ডিপিপিতে ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় প্রাক্কলিত ছিল ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। কিন্তু পরে অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ বেড়ে যায়। মূল নকশায় প্রকল্প এলাকায় কিছু নিচু জমি চিহ্নিত করা হয়। তবে বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় নিচু জমিতে পলি জমে উঁচু জমিতে রূপ নেয়। এর পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এলাকায় জমির মূল্য ক্রমাগত বাড়তেও থাকে। খরচ বেড়ে যাওয়ার পেছনে এই কারণগুলো হয়তো অযৌক্তিক নয়। কিন্তু এটিও বাস্তবতা যে, বাংলাদেশে জনগণের অর্থায়নে সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অবকাঠামো নির্মাণের খরচ প্রতিবেশী ভারত তো বটেই, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে এখন পর্যন্ত দুর্নীতি বা অনিয়মের কোনও অভিযোগ ওঠেনি। কিন্তু বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত খরচ এখন একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে৷ প্রায় সব প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হয় না এবং প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়— যার বোঝা বইতে হয় দেশের মানুষকে। অভিযোগ আছে, প্রকল্পের ঠিকাদার এবং এর সঙ্গে জড়িত বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের একশ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশেই কাজগুলো বিলম্বিত করা হয়— যাতে খরচ বাড়িয়ে সেখান থেকে আরও বেশি ‘চুরি’ করা যায়। দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য অনেক সময় নকশায়ও পরিবর্তন আনা হয়। আবার বড় প্রকল্পকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ব্যয় কম দেখানো হয়। অর্থাৎ সরকারি প্রকল্পগুলো থেকে বিরাট অংকের টাকা চুরির জন্য একটি বিরাট গোষ্ঠী তৈরি হয়ে গেছে—যারা নিজেদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ। যিনি চুরি ধরবেন, তিনিও চুরির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সুতরাং, চোর কখনোই ধরা পড়ে না। বলা হয়, উন্নয়নের অন্যতম প্রধান বাধা ঠিকাদাররা। তারা কোয়ালিশন করে কাজের রেট বাড়িয়ে দেন। তখন সরকারেরও কিছু করার থাকে না। আবার কাজ ৩০-৪০ ভাগ সম্পন্ন হওয়ার পরে বন্ধ করে দেন। তখন খরচ বাড়ে। এভাবে দুর্নীতির একটি বিশাল চক্র যে গড়ে উঠেছে, তা বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞ তো বটেই, সরকারের মন্ত্রীদেরও কেউ কেউ এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যায়নি।
উন্নয়ন ও রাজনৈতিক উদারতা:
পদ্মা সেতুর সিংহভাগ টাকা দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের । কিন্তু ২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সরে গেলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অস্বীকার করার উপায় নেই, সিদ্ধান্তটি ছিল যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এরকম একটি বৃহৎ প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে শুরু করে শেষ করতে না পারলে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি রাজনৈতিক ব্যর্থতার দলিল হয়ে থাকতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটির নির্মাণকাজ চলছে এবং যানবাহন চলাচল শুরু হতে আরও বছর দেড়েক লাগলেও সেতুটি এখন দৃশ্যমান। অর্থাৎ জনগণের করের পয়সায় এরকম একটি বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক ভিশন বা দূরদর্শিতা ও সাহসের প্রয়োজন— সেটি শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ইনিয়ে-বিনিয়ে যা কিছুই বলুন না কেন, বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের গালে চড় দিয়ে নিজেদের পয়সায় যে এত বড় একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে এবং এরইমধ্যে এটি দৃশ্যমান হলো, সেজন্য বিএনপির উচিত আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ দেওয়া। এই ধন্যবাদ তাদের উদারতা ও মাহাত্ম্য ই প্রকাশ করবে। যদিও রাজনীতিতে এমন উদারতা ও মাহাত্ম্য প্রদর্শনে আমাদের দেশের কোনও দলই প্রস্তুত নয়।
এটি আমাদের দুর্ভাগ্য এবং একটি বাজে সংস্কৃতি যে, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের নীতিও বদলে যায়। আগের সরকারের চলমান অনেক প্রকল্পই মুখথুবড়ে পড়ে, এমনকি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ হলেও বিরোধী পক্ষ সেটির প্রশংসায় কার্পণ্য করে। অথচ ভোটের রাজনীতির কিছু বিষয় বাদে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকাই কাম্য।
পদ্মা সেতু কিংবা অন্য কোনও জাতীয় স্থাপনা তো দূরে থাক, আমাদের অস্তিত্বের স্মারক মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতার ইস্যুতেও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ নয়। বরং একটি দল জাতির পিতাকে তাদের নিজেদের সম্পদ মনে মনে করে। আবার অনেক দল জাতির পিতাকে স্বীকারই করে না। পৃথিবীর আর কোনও দেশের জাতির পিতা কিংবা স্বাধিকারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন অনৈক্য বা বিরোধ আছে কিনা সন্দেহ। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এই বিরোধ ও অনৈক্য কমিয়ে আনা এবং উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা গেলে, ২০৪১ সালের আগেই দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। আর এই অনৈক্য ও বিরোধ না কমলে এবং দুর্নীতির লাগাম টানতে না পারলে উন্নত ‍ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যও পিছিয়ে যাবে।
লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ