মহান বিজয় দিবসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিকৃত জাতীয় পতাকার প্রদর্শনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (১৮ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক বাদী হয়ে নগরীর তাজহাট থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানীকে আহবায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার জিন্নাহ আল মামুন এবং মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে কমিটির অপর দুই সদস্য শুক্রবার বিকালে ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। তারা ঘটনাস্থল স্বাধীনতা স্মারক পরিদর্শন করেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আতিয়ার রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় কয়েকজন সহকারী প্রক্টর, তাজহাট থানার ওসি আখতারুজ্জামানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলেছি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কী কর্মসূচি ছিল, তার কপি সংগ্রহ করেছি। শনিবার অভিযোগকারীসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলবো এছাড়াও তদন্তের প্রয়োজনে আর যা যা করণীয় তা করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে জাতীয় পতাকা বিকৃত করে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহসহ ছয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় জাতীয় পতাকার বিকৃতি ও অবমাননার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান আরও একটি মামলা দায়ের করেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারকচত্ত্বরে জাতীয় পতাকার নকশা পরিবর্তন করে সবুজের ভেতর লাল বৃত্তের পরিবর্তে চারকোনা লাল আকৃতি করে পতাকা বানিয়ে প্রদর্শন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা। এই ছবি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পোস্ট করেন তারা। এতে সংবিধানের ৪(২) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় তারা স্বাধীনতা স্মারকচত্ত্বরে জাতীয় পতাকা মেঝেতে ও পায়ের নিচে স্পর্শ করে ছবি তুলে প্রকাশ করেছেন, যা সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রদোহী অপরাধ। এতে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের হুকুমের আসামি হিসেবে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহকে দায়ী করা হয়।
অপর আসামিরা হলেন শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধান, সিন্ডিকেট সদস্য ও গণিত বিভাগের প্রধান হাফিজুর রহমান সেলিম, বাংলা বিভাগের প্রধান পরিমল চন্দ্র বর্মণ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মাসুদুল হক, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সোহাগ আলী ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রহমতুল্লাহ।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেরোবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান আরিফ ৯ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে তাজহাট থানার ওসি আখতারুজ্জামান জানান দুটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। যেহেতু রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ, সে কারণে প্রয়োজনীয় অনুমতি গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানোর কাজ চলছে।