X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

এদের অনেকেই গণবিচ্ছিন্ন ও কাপুরুষ

ড. সেলিম মাহমুদ
২১ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৫৪আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০৬

ড. সেলিম মাহমুদ এক-এগারোর কিছু সুবিধাভোগী ও কুশীলব অতি সম্প্রতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছেন। এই চিঠিটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবী গত নয় মাস ধরে ভয়াবহ করোনা মহামারিতে আক্রান্ত। জাতির তথা বিশ্ববাসীর এই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের এই তথাকথিত সুশীলদের কোনও ভূমিকা আমরা দেখলাম না। লকডাউনের সময় কিংবা পরবর্তী সময়ে তারা মানুষের পাশে একবারের জন্যও দাঁড়ায়নি। এই লোকগুলো এতদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গিয়েছিলো। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব, দক্ষতা, সাহস, কঠিন মনোবল আর দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি যখন অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসলো, ঠিক তখনই ওই সকল ব্যক্তি আবার পুরনো অবয়বে ফিরে আসলো। দেশের মানুষের সার্বিক অবস্থা কী, করোনা মহামারির পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে–  এই সকল জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠলো।

দুই চারজন ব্যক্তি বাদে এদের সবাই জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত। তাদের অধিকাংশই কখনই মানবতার পাশে দাঁড়ায়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতা কর্মী মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও হচ্ছেন। এই জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা তখন নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন।

এই তথাকথিত সুশীলগণ দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার লক্ষ্যেই এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এরা মুখে গণতন্ত্র আর আইনের শাসনের কথা বললেও আসলে এদেশে একটি অসাংবিধানিক ব্যবস্থা দেখতে চায়। এদের অনেকেই এক এগারোর সমর্থক হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত। তারাই অসাংবিধানিক সরকার এক এগারোকে দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিলো। এরা বরাবরই ব্যক্তি স্বার্থ কেন্দ্রিক ও কাপুরুষ। এদেশের সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তারা বিদেশিদের স্বার্থেই, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের স্বঘোষিত ‘এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করছেন। মূলত এরা উচ্ছিষ্টভোগী।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছিল। এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সারা বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হয়েছেন।  আর্থ সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই সরকার বিশ্বের সকল প্রভাবশালী রাষ্ট্রসহ সকলের প্রশংসা পেয়েছে। নির্বাচনের দুই বছর পর আবার তারা এই নির্বাচন নিয়ে নানা ‘আজগুবি’ কথা বলছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অব্যবহিত পর নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে তারা কিছু উদ্ভট কথা বলেছিলেন। তারাই বলেছিলেন, নির্বাচনের পর এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে তারা পঞ্চাশটি আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেছিলেন। মাত্র সাত দিনে এই ধরনের গবেষণা অসম্ভব ও অবাস্তব। তাদের এই মিথ্যাচার দেশে বিদেশে কেউই গ্রহণ করেনি।

আমাদের কাছে মনে হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যে সকল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে,এটি তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। তাদের এই কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তাদের পছন্দ হচ্ছে না। বাংলাদেশের অগ্রগতিতে তারা নিজেদেরকে সংক্ষুব্ধ মনে করছে। তাদের আচরণে এটি মনে হচ্ছে, তারা ঢিল ছুড়ে মেরে রাষ্ট্রের পথ চলাকে ব্যাহত করতে চায়। তারা হয়তো জানে না, ঢিল ছুড়ে রাষ্ট্রকে বাধাগ্রস্ত করা যায় না। এটি সম্ভব নয়।

তারা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার কথা বলছেন। তাদের জানা উচিত, সংবিধানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান বাতিল সংক্রান্ত বিষয়টি এখন সাব জুডিস বিষয়। কারণ এ বিষয়টি বর্তমানে আপিল বিভাগে রিভিউ পর্যায়ে বিচারাধীন। তাই এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান কার্যকর করার আইনগত কোনও সুযোগ নেই।

যারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতিকে এই চিঠি দিয়েছেন, তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধ সহ নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তাদের একজন বেআইনি কর্মকাণ্ডের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। একই ব্যক্তি পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চাকরিচ্যুতির বিষয়টি গোপন রেখে ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আবেদন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধের কারণে সিলেকশন কমিটি কর্তৃক তার নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করেছিল।
ওই একই ব্যক্তি বিলিয়ায় (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ) পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক দুর্নীতি আর অনিয়মের সাথে যুক্ত ছিল। সেখানে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে লন্ডন থেকে পাঠানো যুদ্ধাপরাধীদের টাকায় বিলিয়া থেকে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছিল যার শিরোনাম The Death Penalty Regime in Bangladesh - Exploring Perspectives of Former Judges।
মূলত যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই যুদ্ধাপরাধীদের টাকায় তথাকথিত এই গবেষণামূলক বই বিলিয়া থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল। সেটি বিলিয়ার পরিচালনা পর্ষদ পরবর্তীতে বাজেয়াপ্ত করেছিল। এই গণবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিবর্গের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে আইন বিজ্ঞানের একটি বিখ্যাত নীতির কথা মনে পড়ছে যেটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ‘He who comes to equity, must come with clean hands.’

লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ 

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ