কয়েক মাস আগে বায়োএনটেকের নাম জার্মানির অনেকেই শোনেনি। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কার করায় এখন সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে তাদের সুনাম। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও এখন বায়োএনটেক-কে নিয়ে গর্বিত।
গত নভেম্বরে করোনা রোধে ৯৫ ভাগ সাফল্যের দাবি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে বায়োএনটেক-ফাইজার ভ্যাকসিন। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় জার্মানির মাইনৎস শহরকেন্দ্রিক এ প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা উগুর শাহিন ও ও্যসলেম ট্যুরেচিও তখনই চলে আসেন প্রচারের আলোয়। বৃহস্পতিবার শাহিন এবং ট্যুরেচির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় বায়োএনটেকের তুমুল প্রশংসা করেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। বায়োএনটেকের গবেষকদের প্রশংসায় তিনি বলেন, আমাদের দেশে এমন সব গবেষক আছে বলে আমরা ভীষণ গর্বিত।
২০০৮ সালে মাইনৎস শহরে বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ উগুর শাহিন এবং তার স্ত্রী ইমিউনোলজিস্ট উজলেম ট্যুরেচি। তারপর থেকে তিল তিল করে এগিয়ে নিয়েছেন স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠানকে। ফাইজারের সঙ্গে যৌথভাবে আবিস্কার করা ভ্যাকসিন বিশ্বের অনেক দেশের মানুষকেই করোনা থেকে বাঁচতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ফাইজার-বায়োএনটেক-এর ভ্যাকসিন দিতে শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও খুব শিগগিরই এই ভ্যাকসিনের প্রতি আস্থা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনেক বাধা-বিপত্তি পার করে বায়োএনটেকের এই পর্যায়ে আসার প্রশংসা করে জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘‘আপনারা হাল ছেড়ে দেননি। আপনারা আপনাদের গবেষণার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। এখন সারা বিশ্বে যতজন মানুষ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা যাচ্ছে তা দেখেই বোঝা যায় এই টিকা কতজন মানুষকে বাঁচাতে পারবে। আপনারা আসলে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।’’
বায়োএনটেকের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ট্যুরেচি অবশ্য এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছেন বায়োএনটেক এবং ফাইজারের গবেষকদের। তার ভাষায় ‘‘আমাদের লক্ষ্য ছিল যা অসম্ভব মনে হচ্ছে সেটাকে সম্ভব করা। আমরা সফল হয়েছি। কারণ, আমাদের টিমটা চমৎকার। এটা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের দল, যেখানে ৬০টি দেশের কর্মী অনেক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।’’
চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সঙ্গে কথা বলার সময় সার্বিক সহায়তার জন্য জার্মান সরকারকে ধন্যবাদ জানান শাহিন এবং ট্যুরেচি। এ সময় ট্যুরেচি বলেন, করোনার বিরুদ্ধে ম্যারাধন দৌড় এখনও শেষ হয়ে যায়নি।
বায়োএনটেক-এর দুই প্রতিষ্ঠাতা তুর্কি বংশোদ্ভূত হলেও বর্তমানে তারা জার্মান নাগরিক। এই দম্পতির প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দেড় হাজারের মতো কর্মী।
৫৫ বছর বয়সি জাহিন জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। অন্যদিকে ৫৩ বছরের ট্যুরেচি হামবুর্গে পড়ালেখা করে সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ইমিউনোলজিস্ট ট্যুরেচি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন। সূত্র: ডিডব্লিউ।