X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যান্টিজেন টেস্টে সুফল মিলবে?

জাকিয়া আহমেদ
২৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০০আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০০

মুন্সীগঞ্জ জেলায় শুরু হয়েছে অ্যান্টিজেন টেস্ট গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ জেলায় করোনা শনাক্তে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের নমুনা সংগ্রহীত হয়েছে মাত্র ১০৭টি। র‌্যাপিড টেস্ট শুরুর পর এখন পর্যন্ত  ২০ দিনে টেস্ট হয়েছে মাত্র এক হাজার ৩২টি।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করা দরকার ছিল তখন সেটা করা হয়নি বা করতে পারেনি সরকার। আর এখন আরটি-পিসিআরের প্রতিই মানুষ আগ্রহ হারিয়েছে, টেস্ট করতে আসছে না। সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্ট নিয়ে কোনও প্রচারণাই চালানো হয়নি। আর এখন এই সময়ে এসে অ্যান্টিজেন টেস্টের সুফল আশা করা বোকামি।
গত ৫ ডিসেম্বর দেশের ১০ জেলায় সরকার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করে, গত ১৭ ডিসেম্বর শুরু হয় আরও ১৯ জেলায়। বর্তমানে মোট ২৯ জেলায় ৩০টি পরীক্ষাগারে করোনা শনাক্তে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ২৩৪ জন আর সরকারি হিসেবে দেশে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ছয় হাজার ১০২ জন।

দেশে গত ৮ মার্চ করোনাতে আক্রান্ত হওয়া তিনজন রোগীর কথা জানায় সরকার, এর ১০দিন পর করোনাতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথা জানায়। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে আক্রান্ত হয়ে ২৫ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এখন পর্যন্ত করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেলেন সাত হাজার ২৪২ জন।

মার্চে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর শনাক্তের একমাত্র উপায় ছিল আরটি-পিসিআর (রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমারেজ রিঅ্যাকশন) টেস্ট। অথচ পরীক্ষা বাড়ানো, দ্রুত শনাক্তসহ, আরটিপিসিআর টেস্ট ও আলাদা ল্যাবরেটরির সীমাবদ্ধতার কারণে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট-এর প্রয়োজনীয়তার কথা শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলে এসেছিলেন। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটিও তাদের সভায় পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দেয়।

শরীয়তপুর জেলাতে নেই আরটি-পিসিআর সুবিধা। সেখানে এতদিন করোনা সন্দেহের রোগীর নমুনা পরীক্ষা দিলে সে নমুনা আসতো ঢাকায় এবং ঢাকা থেকে পরীক্ষা হয়ে ফলাফল যেত সেখানে। কিন্তু তাতে সময় লেগে যেত সপ্তাহ খানেক, এমনকি ১০ থেকে ১২দিনও। আর তাতে করে সন্দেহজনক রোগীরা আইসোলেশনে যেতেন না, থাকতেন সবার সঙ্গে মিলেমিশেই।

‘নমুনা দেবার পর আইসোলেশন কোয়ারেন্টিনে থাকার মতো কোনও সুযোগ ছিল না’ জানিয়ে চাকরিজীবী রানী আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নমুনা দিয়ে আইসোলেশনে যাইনি। রিপোর্ট আসার পর শনাক্ত হলে গিয়েছি। কতদিন পর রিপোর্ট পেয়েছিলেন জানতে চাইলে রানী আক্তার বলেন আমি ছয়দিন পর রিপোর্ট পেয়েছিলাম হাতে।

আরটি-পিসিআর টেস্টের সুবিধা নেই যশোরেও। এই জেলার সদর হাসপাতালেই প্রথম অ্যান্টিজেন টেস্ট করার মাধ্যমে দেশে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়। এর আগে তাহলে রোগীদের কোথায় পরীক্ষা হতো জানতে চাইলে যশোর জেলার সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রোগীদের পরীক্ষা হতো যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তবে এতে করে রোগীদের ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি মানা হতো কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিপোর্ট পাবার আগে রোগীদের আইসোলেশনে যাবার জন্য পরামর্শ দিতাম, কিন্তু সেটা শতভাগ সম্ভব হতো না, সবাই যেতো না।

পটুয়াখালী জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার করোনার নমুনা যেতো বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। যখন নমুনার সংখ্যা বেশি হতো তখন সেটা ঢাকায় যেতো। তবে এতে অনেক সময় লেগে যেত-প্রচণ্ড চাপে থাকতাম তখন।

বরিশালের সক্ষমতা ছিল ১২০টি নমুনা পরীক্ষা করার, কিন্তু ছয় জেলাতে তখন নমুনা হতো এক হাজারের বেশি। আর এখন আরটি-পিসিআরে যেখানে ২০ মিনিটে টেস্ট করা যাচ্ছে এখন নমুনা পরীক্ষার মানুষ নেই, মানুষ আর টেস্ট করতে আগ্রহী নয়। মানুষের পারসেপশন বদলে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলার সিভিল সার্জন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যখন অ্যান্টিজেন টেস্ট দরকার ছিল, তখন সেটা হয়নি। এখন আর আসলে কোনও সুফল আসবে বলে মনে হচ্ছে না-কারণ মানুষ আগ্রহ হারিয়েছে।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অ্যান্টিজেন টেস্টে যদি সেভাবে রোগী শনাক্ত না করতে পারি, মানুষ যদি আগ্রহ হারায় তাহলে আমরা সুফল কিভাবে পাবো? আমরা মানুষকে ফ্যাটিগ ( ক্লান্ত) করে ফেলেছি। মানুষ এখন আর করোনা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। আর এখন তো জীবনযাত্রা সব স্বাভাবিক। যদি একটা প্যানিক তৈরি করা যেতো তাহলে কিন্তু মানুষ এত স্বাভাবিক হতো না, কিন্তু প্রথম থেকেই আমরা প্যানিক তৈরির বিপক্ষে ছিলাম। সেটা ভালো ছিল কিন্তু এখন যে একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছে না কেউ-এটা ভয়ংকর বিষয়। এখন সব আগ্রহ চলে গিয়েছে ভ্যাকসিনের দিকে। ভ্যাকসিন যে চাইলেই সবাই পাবে না-এটাও কেউ বুঝতে পারছে না। আমরা অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করতে দেরি করেছি, ‍সুফল নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তাই।

অ্যান্টিজেন টেস্টে রেসপন্স খুবই কম এবং এটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের। তিনি বলেন, যখন মানুষ লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে, ভোগান্তি হচ্ছিলো, চাইলেও পরীক্ষা করাতে পারেনি, রিপোর্ট এসেছে সাত থেকে ১০ দিন পর তখন আমরা অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করার কথা বলেছিলাম, কিন্তু সেটা হয়নি। তখন টেস্টের চেয়ে রোগীর চাপ বেশি ছিল, কিন্তু এখন তো পিসিআরেই পরীক্ষা করার যে সক্ষমতা রয়েছে, সেটাও হচ্ছে না। আর অ্যান্টিজেন টেস্ট করার কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণও নির্ধারণ করা রয়েছে, এতে করেও অ্যান্টিজেন টেস্ট হচ্ছে না।

ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এটা নিয়ে প্রচার প্রচারণাও নেই, তাহলে মানুষ বুঝবে কীভাবে। কারা অ্যান্টিজেন টেস্ট করবেন-সেটা মানুষকে বলতে হবে, নয়তো সাধারণ মানুষ সচেতন হবে না।

তবে অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারা বলে ফেলেছিল (অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হবে) কিট নিয়ে এসেছে, কিন্তু বাস্তবে এর কোনও ইম্প্লিকেশন নাই, তাই রেসপন্স এমনই হবে, এর চেয়ে বেশি হবে না।

 

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা