X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধুর জন্য এখনও রোজা রাখেন মান্নান মিয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
২৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:০৮আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:৫৯

আব্দুল মান্নান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসে এখনও তার জন্য রোজা রাখেন। আয়োজন করেন দোয়া মাহফিলের। জাতীয় শোক দিবসে দেন কোরবানি। আপ্যায়ন করেন দলীয় নেতাকর্মীদের। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের আব্দুল মান্নান মিয়া।  জাতির পিতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজ বাড়ির একাংশে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার। আর স্মৃতি জাদুঘরটি সরকারের কাছে হস্তান্তর করা।

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই আব্দুল মান্নানের বাড়ি। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি টিনশেডের ঝরাজীর্ণ ঘর। প্রতিটি ঘরের কাঁচা ভিটি। বাড়ির একাংশে একটি ছোটঘর। ঘরের সামনে লেখা বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। সেখানে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি। বিভিন্ন ঘটনায় আহত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছবি। আছে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজ নামচাসহ বিভিন্ন বই। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন প্রায়ই তার জাদুঘরটি দেখতে আসেন। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর, ১৫ আগস্ট, ২৬ মার্চ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন বঙ্গবন্ধুপ্রেমী আব্দুল মান্নান। 
তিনি জানান, ১৯৫২ সালে সদর উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে তার জন্ম। সেখান থেকে চলে যান নানা বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার অষ্টগ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মান্নান ছিলেন যুবক। জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন মুক্তিযোদ্ধার সহযোগী হিসেবে। তবে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট বা এর গুরুত্ব আছে কিনা–তা নিয়ে কখনও ভাবেননি তিনি।

মান্নান জানান, পৈতৃকভাবে অনেকটা  সম্পদশালী ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুর নামে রোজা রাখতেন, কোরবানি দিতেন। বঙ্গবন্ধুর জন্যই তার দল আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন। ১৯৬৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী হিসেবে দলের জন্য কাজ করছেন। দলের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে অনেকে তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করতেন। ২০০০ সালে তার বসতঘরটি দুবৃর্ত্তরা পুড়িয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ করায় দুর্বৃত্তরা তার ঘরে আগুন দেয়। ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালে প্রায়ই নির্যাতনের শিকার হতেন।

মান্নান মিয়ার বাড়িতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার অষ্টগ্রামে তার জমিজমা বাড়ি ছিল। ওই সময়ে এলাকার প্রভাবশালী এবং তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের অনুসারী আশরাফ আলী ভেন্ডারী নামে এক ব্যক্তি তাকে নিঃস্ব করেছেন। তার সরলতাকে কাজে লাগিয়ে ওই ব্যক্তি নানাভাবে চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ১২০ শতাংশ জায়গা এবং স্থানীয় মার্কেটের ১৮টি দোকান ঘর ওই ব্যক্তির নিজ নামে লিখে নেন। শুধু তাই নয়, ১৪ লাখ টাকা তার কাছে পাওয়ার কথা বলে মিথ্যা মামলায় ৮ মাস জেল খাটান।

মান্নান জানান, তার দুঃসময়ে ওই এলাকার  বঙ্গবন্ধুপ্রেমী কেউ তার সহায়তায় এগিয়ে আসেননি বা আসার সাহসও পাননি। মনের দুঃখ নিয়ে অষ্টগ্রাম এলাকা ত্যাগ করে আবারও বুধল ইউনিয়নের উত্তর নন্দনপুরে এসে মহাসড়কের এক পাশে একটি বাড়িতে  আশ্রয় নেন। বর্তমানে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে অবস্থান করছেন বঙ্গবন্ধুপ্রেমী এই আব্দুল মান্নান। মোট ৭ শতাংশের বাড়িটিতে জরাজীর্ণ দুটি টিনশেডের ঘর আছে। বছর তিনেক আগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে প্রশাসনের সহায়তায় একটি ঘর পেয়েছেন আব্দুল মান্নান। সেই ঘরটিতে নিজে বা পরিবারকে নিয়ে না থেকে তিনি সেটিকে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর বানিয়েছেন।
আব্দুল মান্নানের ছেলে মোসলেম মিয়া বলেন, ‘ছোট থেকে আব্বাকে দেখেছি আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর জন্য নিবেদিতপ্রাণ। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে ভালোবাসার কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে আমার পরিবার। মায়ের কাছে শুনেছি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাদের বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকে মান্নান ভাইকে আমি চিনি। তিনি দলের জন্য অনেক কাজ করেছেন। তখন তিনি এলাকায় বসবাস করতেন না। তবে তিনি আওয়ামী লীগের সব মিটিংয়ে থাকতেন। একবার আমরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী সীমা আপার পক্ষে কাজ করতে নন্দনপুর থেকে কুমিল্লা যাবো। মান্নান ভাই জানতে পেরে জোর করে গাড়িতে উঠে বসেন। আমাদের বলেন তিনিও যাবেন। আমরা বললাম আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে যেতে হলো। তার জীবনের শেষ ইচ্ছা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার। আমরা চাই তার ইচ্ছা পূরণ করা হোক।’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ধন মিয়া বলেন, ‘মান্নান মিয়া এই ইউনিয়নের জন্য অনেক কিছু করেছেন। এখানে একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এটা নির্মাণে মান্নান মিয়ার অবদান সবচেয়ে বেশি। এখন তার ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার। তিনি বঙ্গবন্ধুর নামে নামাজ রোজা করেন। যখন তার সময় ভালো ছিল বঙ্গবন্ধুর নামে কোরবানি করেছেন। তাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি জানাবো যেন তার ইচ্ছাটি যেন পূরণ করা হয়।’

মান্নান মিয়ার বাড়ি
বুধল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক জানান, মান্নান ১৯৭০ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। প্রায়ই তিনি ৮/১০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিলে অংশ নেন।  সদর আসনের সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তাকে সভা সমাবেশে আসতে নিষেধ করেন। তবু তিনি আসেন।

সদর উপজেলা দলীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ভূইয়া জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করে আসছেন মান্নান। দলের জন্য প্রাণ বাজি রাখতেও দ্বিধা করবেন না তিনি। আমাদের এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছেন।

একসময়কার মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানের স্ত্রী রওশনারা বেগম, ৩ ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। তার ৩ ছেলে এলাকায় ছোটখাটো কাজ করে জীবনযাপন করছেন।

/এসটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়