X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বিশ্বাস’ তোমাকে বড্ড দরকার

তুষার আবদুল্লাহ
২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:৪২আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:৪৪

 

তুষার আবদুল্লাহ বন্ধু সহকর্মীদের অনেকেই জানতে চান মুঠোফোনের আমার ব্যক্তিগত নম্বর। তাদের যখন জানাই ব্যক্তিগত নম্বর বলে কিছু নেই আমার। প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ দেওয়া অর্থাৎ করপোরেট নম্বরের বাইরে আর কোনও নম্বর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। কিন্তু বেশ কিছুকাল ধরেই দেখছি সহকর্মীরা বিরক্ত, অন্য প্রতিষ্ঠানের শুভার্থীরা বিরক্ত। তারা আমার সঙ্গে মুঠোফোনে প্রাণ খুলে কথা বলেন না। অন্তর্জালের নানা অ্যাপসের মাধ্যমে কথা বলেন। বিষয়টি এমন নয় যে, রাষ্ট্র আমার মতো নগণ‌্য মানুষের ফোনে আড়ি পেতে আছে। আসলে সহকর্মী, বন্ধুদের ভয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই তাদের কর্মীদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। সদা ভয়ে ত্রস্ত। চোর ডাকাত খুনি চেনার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা এখন অফিসের অন্দর মহলে তো বটেই, বাড়ির অন্দরেও চলে এসেছে। কারণ আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। সারাক্ষণ বিচলিত আমরা। চোখ আসমানে নেই, শঙ্খচিলে নেই, ফুলে নেই, চোখ কান পেতে রাখি সারাক্ষণ পর্দায়। কে কখন আমার, আমাদের সর্বনাশ করে ফেলে। আসলে সর্বনাশের বীজ তো আমরা নিজেরাই বুনেছি।

শুধু কি সহকর্মী বন্ধু? সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে কতজন ফোন দেয়। দীর্ঘদিনের চেনা। নতুন পরিচয়। হয়তো ব্যক্তিগত কথাই হচ্ছে। হঠাৎ বলে উঠেন–হায় হায় আমরা তো হোয়াটসঅ‌্যাপে কথা বলছি না। হোয়াটসঅ‌্যাপ বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে আসেন ভাই। টেলিগ্রামও জনপ্রিয় হচ্ছে। ওই মাধ্যমেও কথা হয়। শুধু যে গোপন কথাটির জন্যই গোপনীয়তা তা নয়। সাধারণ কথা বলতেও বুক কাঁপে। অফিসের বস, পরিবারের কেউ বা বন্ধুদের কারও কাছে যদি এমন কথোপকথন ফাঁস বা প্রকাশ হয়ে যায়!

‘দেয়ালের কান আছে’, ‘চিল নিয়েছে কান’–এই প্রবাদ বাক্যগুলো এখন শাসন করছে আমাদের। ফিসফিস করে কথা বলা, স্ত্রী বা স্বামীকেও সন্দেহের চোখে দেখা, এগুলো ছিল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বিশেষ কিছু চাকরিজীবীর জন্য প্রযোজ্য। এখন দেখি ছেলেমেয়েরাও তাদের আড্ডায় হঠাৎ বলে ওঠে। এই কারও মোবাইলের রেকর্ডার অন নাইতো? কিংবা চারপাশে তাকিয়ে বলে–কোথাও কোনও সিসিটিভি হাঁ হয়ে কি দেখছে আমাদের?

নিজেরাই নিজেদের জন্য অবিশ্বাসের অ্যাপস তৈরি করেছি। পরিবার থেকে রাষ্ট্র, আবার রাষ্ট্র থেকে পরিবারও বলতে পারি। নিজের প্রতি নিজে যদি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি, তাহলে জোটবদ্ধ হবো কীভাবে? একাত্তরে বাঁধা জোটে পঁচাত্তরে যে অবিশ্বাস চলে এলো, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সেই বিশ্বাসের বন্ধন মজবুত করতে পারেনি। রাজনৈতিক অবিশ্বাস নেমে এলো ব্যক্তিতে।

এই অবিশ্বাসের অ্যাপসের গ্রাহক শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো ভূগোল। দেশে দেশে কাটতি বাড়ছে এই অ্যাপসের। প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য রাজনীতি বলি আর সমাজ, পরিবার, যাই বলি না কেন অবিশ্বাসের অ্যাপস নিয়ে মত্ত হয়ে আছি সবাই। করোনাকালেও দেখছি। করোনাকে নিয়েও দেখছি আমরা কতটা অবিশ্বাসী হয়ে আছি। করোনা ল্যাবে তৈরি নাকি প্রাকৃতিক, তাও এখন পর্যন্ত বিশ্বাস অবিশ্বাসের জেলায় দুলছে। সমাধানে পৌঁছাতে পারবো কিনা জানি না। ধর্মের বিশ্বাস নিয়ে যত কঠোর অবস্থানেই থাকি না কেন, ব্যক্তিতে এসে আর বিশ্বাসের খেই খুঁজে পাই না। নিজেকেই বড্ড অচেনা মনে হয়। কিন্তু আজ পৃথিবী যে সংকটে, রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার যে অসহিষ্ণুতার আবর্তে, সেখানে বিশ্বাসকে আমাদের বড্ড দরকার। আমরা ব্যক্তিগত অবিশ্বাসী মন নিয়ে সবাইকেই অবিশ্বাস করে যাচ্ছি। একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যের শেল নিক্ষেপ করে যাচ্ছি নিরন্তর। এমন মন যুদ্ধে সত্যি ‘বিশ্বাস’ তোমাকে বড্ড দরকার।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ