X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

নামেই রাজাবাজ, বাস হতদরিদ্রের

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:০৮আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:৩৩

রাজাবাজ গ্রাম


সুনামগঞ্জ শহর থেকে জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ও ফেঁনারবাঁক ইউনিয়নের একটি গ্রাম রাজাবাজ। গ্রামটির একটি অংশ ভীমখালি ইউনিয়নে ও অপর অংশটি ফেঁনারবাঁক ইউনিয়নে পড়েছে। গ্রামের নাম রাজাবাজ হলেও এটি উন্নয়ন বঞ্চিত। হয়তো কোনো এককালে রাজা মহারাজদের বাস ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো এ গ্রামে এখন হতদরিদ্র মানুষের বাস।

রাজাবাজ পূর্বপাড়ায় মুসলমানদের বসতি আর পশ্চিম পাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাস। গ্রামের  পূর্বদিকে মরা নদী ও পশ্চিমে রয়েছে পাগনার হাওর। জেলা শহর থেকে বাইকে ভীমখালি বাজারে যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগলেও ভীমখালি বাজার থেকে রাজাবাজ গ্রামে যেতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় লাগে। মূল সড়ক থেকে নেমে হাওরের জমির আইল, হাওরের কাদা-পানি পার হয়ে ঘুরে ঘুরে পৌঁছাতে হয় রাজাবাজ গ্রামে। শত বছর পেরিয়ে গেলেও গ্রামবাসীর চলাচলের জন্য কোনও সড়ক নেই। শুষ্ক মৌসুমে হাওরের বুক চিরে তৈরি হওয়া দু’পায়ের মেঠো পথ মারিয়ে তারা উপজেলা শহর জামালগঞ্জ  ও জেলা শহর সুনামগঞ্জে যাতায়াত করেন।

রাজাবাজ গ্রাম

দুইভাগে বিভক্ত গ্রামের একটি অংশে ছোট পাকা সড়ক নির্মাণ করা হলেও পশ্চিম রাজাবাজ গ্রামে এ ধরনের কোনও রাস্তা নেই। বাড়ি থেকে নামলেই হাওর ডোবা পাড়ি দিয়ে শহরে আসতে হয়। বিদ্যুৎ থেকেও না থাকার মতো।

গ্রামবাসী জানায়, গ্রামের বেশিরভাগ যুবক বেকার, কর্মসংস্থানের কোনও সুযোগ সুবিধা নেই। হাওরের ফসলের জমি গুলো ১২ মাস পানির নিচে থাকে। হাওরের পানি সরে গেলেই তারা জমিতে ধান লাগানোর সুযোগ পান। নয়তো স্যালো মেশিন দিয়ে হাওরের পানি নিষ্কাশন করে জমি শুকিয়ে ধান লাগান। এই অবস্থা আশপাশের ১০/১২ টি গ্রামের। রান্নার করার জ্বালানী সংকট ও গো খাদ্যের সংকট। বিশাল হাওরের কোথাও সবুজ ঘাসের চিহ্ন নেই আছে শুধু পানি আর পানি। গো খাদ্যের অভাবে গ্রামের গবাদি পশুগুলো ভুগছে অপুষ্টিতে। প্রতিটি গরুর হাড্ডি, মাংস, চামড়া এক হয়ে গেছে। সারা দিন মাঠে গরু চরানোর পরও গরু গুলো অভুক্ত অবস্থার বিকালে বাড়ি ফিরে আসে। প্রথমে পূর্বপাড়া ও পশ্চিমপাড়া একীভূত অবস্থায় থাকলে হাওরের  উত্তাল ঢেউ গ্রামের দু’টি পাড়াকে আলাদা করে দিয়েছে। এই আলাদা অংশে এখন দাঁড়িয়ে আছে শেকর সর্বস্ব দুটি গাছ। পূর্বপাড়া থেকে পশ্চিম পাড়ার দূরত্ব খুব বেশি হলে ২০ গজ হবে। গ্রামের ভেতরে চলাচলের কোনও রাস্তা না থাকায় মানুষের বসত ঘরের সামনে দিয়ে চলাচল করেন গ্রামবাসী।

রাজাবাজ গ্রামে যাওয়ার রাস্তা

গ্রামবাসীরা জানান, পূর্ব পাড়ায় কোনও শ্মশানঘাট, মন্দির, গ্রামীণ সড়ক কোনও কিছু নেই। গ্রামটিতে ৮০০ ভোটার রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০০ হিন্দু ও ৫০০ মুসলিম ভোট। দুই শতাধিক শিশু দুর্গম পথ পারি দিয়ে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। বর্ষাকালে হাওরের উত্তাল ঢেউ অতিক্রম করে দুই কিলোমিটার দূরে খুজারগাঁও নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে যায়। অথচ স্বল্প ব্যয়ে দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করলে গ্রামের শিশুরা নির্বিঘ্নে স্কুলে পড়া লেখা করতে পারে। ভরা বর্ষায় উত্তাল ঢেউয়ে বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় পূর্বপাড়ার যোগেন্দ্র তালুকদারের ছেলে দিনমজুর বিজন তালুকদার একছেলে ও তিন মেয়েসহ পরিবারের ৭ সদস্য নিয়ে হাওরের কান্দায় ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন।

দিনমজুর গোকুল তালুকদার বলেন, ‘যে গ্রামে চলাচলের সড়ক নেই, কৃষিজমি পানিতে ডুবে আছে, এই  গ্রাম শহর হবে কেমনে। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সবসময় আমাদের সীমাহীন দুর্ভোগের স্বীকার হয়ে চলাচল করতে হয়। বৃষ্টি হলে বাড়ি থেকে তো কোথাও বের হওয়া যায় না।’

রাজাবাজ গ্রাম

পপি রানী তালুকদার বলেন, ‘বাড়িতে কারেন্টের বাতি আছে, কিন্তু কোনও কাজকর্ম নেই। মানুষের আয়-রোজগার নেই। আমরা অনেক কষ্ট করে বেঁচে আছি। শিশুদের শীতের কাপড় কিনে দেওয়ার সামর্থ নেই। আমরা গ্রাম হবে  শহর এই  স্বপ্ন দেখি না।’

পিন্টু তালুকদার বলেন, ‘কত সরকার এলো গেলো কতজন কত প্রতিশ্রুতি দিল। কিন্তু সড়ক নির্মাণের কোনও খবর নেই। ইলেকশন আসলে একটা নয় দুইটা সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন জনপ্রতিনিধিরা তারপর  আর কোনও খবর থাকে না।’

রাজাবাজ গ্রাম

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিলিপ প্রজেক্টর জেলা প্রকল্প সমন্বয়ক মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘রাজাবাজ গ্রামে রিলিপের কোনও প্রকল্প নেই। প্রকল্প গ্রহণ ও তালিকা প্রেরণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন কোনও কাজ করার সুযোগ নেই।’ 

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক