X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কমুক্ত আ.লীগ কতটা সম্ভব?

মাহবুব হাসান
২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০০আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:৫১

আওয়ামী লীগ

দলকে বিতর্কমুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সতর্ক পদক্ষেপ নিয়ে এগোচ্ছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিতর্কিত এবং দুর্নীতিবাজদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশ বন্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে বাছাই কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও সমালোচকরা, এমনকি আওয়ামী লীগ নেতারাও বলছেন, খুব সহজে দলকে বিতর্কমুক্ত করা সম্ভব হবে না। এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া। লম্বা সময় ধরে সঠিক প্রক্রিয়া মেনে এগিয়ে গেলে বিতর্ক দূর করা সম্ভব।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের সভাপতির নির্দেশক্রমে দলকে বিতর্কমুক্ত রাখতে আমরা কাজ শুরু করেছি। বিতর্কিত, সমালোচিত, দুর্নীতিবাজ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সুবিধাবাদী ও অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ ঠেকাতে বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির কারণে খুব বেশি সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো যাচ্ছে না। যে কারণে এ কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

তার মতে, সারাদেশেই এমন কিছু রাজনীতিবিদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন যারা অন্য দল করলেও প্রগতিশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন। এরা ভুল বুঝতে পেরে এখন আওয়ামী লীগে আসতে চান। স্থানীয় রাজনীতির বাস্তবতায় তাদের গুরুত্বও দিতে হয়। 

প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানোর পাশাপাশি বিতর্কমুক্ত রাখার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, অভ্যন্তরীণ বিরোধ, অনুপ্রবেশ, স্থানীয় বাস্তবতা, নেতাদের ব্যক্তিগত পছন্দ, পারিবারিক এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে আওয়ামী লীগকে সহজে বিতর্কমুক্ত করা সম্ভব হবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে দলে অনুপ্রবেশ হয়েছে। যেমন স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দল থেকে এসে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে ভিড়েছেন। সেই প্রার্থী জিতুক বা হারুক প্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগে ভিড়ে গেছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় বাস্তবতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ চট্টগ্রামের এক সংসদ সদস্য। তার অতীতে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা থাকলেও ২০১৪-১৫ সালে ওই এলাকায় সহিংসতা, অরাজকতা-অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার স্ত্রী মহিলা লীগে পদ পান।

এভাবে স্থানীয় বাস্তবতা এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফাঁকে বিভিন্ন সময় অনেকেই আওয়ামী লীগের পতাকাতলে এসেছেন। আওয়ামী লীগ সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্ট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আগে বিএনপি করতেন। তারও আগে তিনি পৌর জামায়াতের আমির ছিলেন। রাজশাহীর পুঁটিয়া উপজেলা জামায়াতের সদস্য এখন উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা শিবিরের সভাপতি এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক। শেরপুর শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন। এ তালিকা অনেক লম্বা। এদের প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের হাত ধরেই দলে যোগ দিয়েছেন।

এছাড়া কখনও আত্মীয়তা বা কারও ব্যক্তি পছন্দের মাশুলও আওয়ামী লীগকেই গুনতে হয়। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠনে এমন দুই জন ব্যক্তি পদ পেয়েছেন যারা বিতর্কিত। একজন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন এবং নিকট অতীতে সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আরেকজন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অন্য দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগে মামলা আছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা অবশ্য এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলছেন। তাদের দাবি, দলকে বিতর্কমুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পর ইতোমধ্যে সারাদেশে তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে যে কোথায় কে কোন দল থেকে যোগদান করলো। সেটাকে যাচাই বাছাই করার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করছে।

অনুপ্রবেশ বা বিতর্কিতরা দলে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দলকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে কাজ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর। তিনি অভিযোগ ওঠা মাত্রই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তার কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বন্দি হয়ে অনেকেই বিচারাধীন আছেন। তিনি ছাড়া দলে কেউই অপরিহার্য নন, সেটা শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন। তারপরও দুই-একটা অনুপ্রবেশের ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটছে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের অনেকেই ত্যাগী কর্মীদের চেয়ে হাইব্রিডদের প্রতি মনোযোগী বেশি। আবার অনেক জায়গায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। তবে এসব সমস্যা নিরসনে চেষ্টা করা হচ্ছে।’

/এফএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন