X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

এই শীতে খোকন মিয়ার কপালে কম্বল জুটবে?

শাহরিয়ার হাসান
২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:০৫

খোকন মিয়া রাজধানী। রাত ১১টা। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরবঙ্গের অন্য যে কোনও জেলাশহরের তুলনায় কম। তবে এই তাপমাত্রাতেও ছাড় দিচ্ছে না শীত। ১০টার পর থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করে ঢাকার রাস্তা। রাত এগারোটায় মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা। তবে রাস্তার পাশের মানুষগুলো তখনও ঘুমায়নি। পাতলা শার্টের ওপর পুরনো ছেড়াফাটা ন্যাকড়া জড়িয়ে বসে আছে ঝিম মেরে। এবার করোনার ভয়ে কেউ শীতের কাপড় নিয়ে আসছে না!

রমনা পার্কের উল্টোপাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক নম্বর গেট। পাশের ফুটপাতে বসে আছেন বৃদ্ধ খোকন মিয়া। বয়স সত্তরের কাছে। পরনে মলিন চাদর। চোখে পানি। গায়ে জ্বর। শীতে কাঁপছিলেন। কুমিল্লা থেকে আসা খোকন মিয়া শীত এলেই শ্বাসকষ্টে ভোগেন। গত চারদিন ধরে আবার শুরু হয়েছে মরণ যন্ত্রণা। একটু গরম পোশাক পেলে সুস্থবোধ করেন। এবার ভাগ্যে জোটেনি সেটা।

পাঁচ বছর হলো ঢাকায় এসেছেন। তখনও স্ত্রী বেঁচে ছিল। দুই মাস অন্তর অন্তর একদিনের জন্য বাড়ি যেতেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বাড়িতে আর মন টানে না তার। অসুস্থ বোধ করায় সারাদিন এক জায়গায় বসেই ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। সেদিন পেয়েছেন ১০০ টাকা। তারপরও কিছু কিনে খাননি। জ্বরের চোটে উঠে কোথাও যাওয়ারও শক্তি নেই।

রাজধানীর ফুটপাতে ছিন্নমূল মানুষ প্রতিবছর সারাদেশে যখন শীত জেঁকে বসে, তখন অনেক সংগঠনের কর্মীরা ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষদের কম্বলসহ শীতবস্ত্র বিতরণ করে। এবার করোনার কারণে কেউ আসেনি বলে জানালেন খোকন। খোকন নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন এই বলে যে, মানুষের কাছেও তো টাকা নাই।

খোকন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শরীরটা খুব খারাপ। আবার শীত। শ্বাসকষ্টে আর ঠাণ্ডায় শুতে পারি না। সারারাত বসে থাকি। সকালে সূর্য উঠলে তখন একটু ঘুমাতে পারি।’
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনের সঙ্গে ফুটপাতে আরেকজনকে পাওয়া গেল। নাম জাফর। তারও বয়স ৭০-এর কাছাকাছি। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে এসেছেন। ঢাকার ফুটপাতে ঘুমান গত ১০ বছর ধরে। দিনে রাস্তায ঝাড়ু দেন। একে-ওকে সাহায্য করেন। রাতে নিজেই রান্না করে খান।

রাজধানীর ফুটপাতে ছিন্নমূল মানুষ জাফর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পৃথিবীতে আমার কেউ নাই। বউ মারা গেছে ১০ বছর হল। দুই সন্তান কখনও আমাকে দেখত না। পরে ঢাকায় এসেছি। একাই ভালো আছি। তবে শীতে গরম কাপড়ের অভাবে রাতে খুব কষ্ট হয়। প্রতিদিন ভাবি কেউ না কেউ এসে একটা কিছু দিয়ে যাবে। কিন্তু কেউ আসে না।’

জাফর আরও বললেন, ‘আমার পাশে যে ঘুমাচ্ছে। ওর নাম তফির। গরম কাপড়ের অভাবে মশারি জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। আজ দুজন মিলে কম্বল কিনতে গিয়েছিলাম। যে দাম! কিনতে পারিনি।’

২০০৮ সাল থেকে পথবাসী মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা সাজেদা ফাউন্ডেশন বলছে, শুধু ঢাকাতেই ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ঘরহীন মানুষ বাস করে। যাদের বয়স ৫ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। শীত-বৃষ্টি, জন্ম-মৃত্যু সব ফুটপাতেই। কারও স্থায়ী নিবাস নেই। আজ এখানে তো কাল ওখানে।

রাজধানীর ফুটপাতে ছিন্নমূল মানুষ এদিকে কলাবাগান ফুটওভার ব্রিজের গোড়ায় বিছানা পেতে বসে আছেন বিক্রমপুর থেকে আসা শরীফ। পরনে হালকা জামা। শীতে কাঁপছেন। তিন বছর ধরে ঢাকার ফুটপাতে থাকেন। স্ত্রী নেই। তবে দুই মেয়ে আছে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আরেক মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। শরীফের চোখে অসুখ। অন্ধকারে প্রায় কিছুই দেখতে পায় না। ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলে দিন। ২৭ তারিখ গ্রামের বাড়ি যাবেন শরীফ। কিছু টাকা জমিয়েছেন, মেয়ের জন্য কম্বল কিনবেন বলে। অথচ নিজের জন্য একটা সোয়েটারও নেই।

কোনও সাহায্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে শরীফ জানান, ‘প্রত্যেক শীতে কমবেশি সাহায্য আসতো। এবার পাইনি। খুব কষ্ট করে আছি। মাঝরাতে ঠকঠক করে কাঁপি।’
শুধু এসব এলাকাই নয়, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ডসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোলা আকাশের নিচে এসব ঘরহীন মানুষগুলোর শীতে দারুণ অসহায় রাত কাটছে। গাড়ির হর্ন, মানুষের শব্দে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না। শুধু শীতে চাই এক টুকরো গরম কাপড়।

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না