X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশে বিষ ক্ষয়ে আসুক সম্ভাবনার একুশ

প্রভাষ আমিন
২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:২৪আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৫৯



প্রভাষ আমিন এবারের বছরটি অন্তত সংখ্যায় ছিল অন্যরকম। ২০২০, টি-২০। হওয়ার কথা টি-২০ ক্রিকেটের মতো দ্রুতলয়ের। কিন্তু এমন মন্থর, এমন অশুভ বছর, এমন অকল্যাণের কাল আর কখনও বিশ্বে আসেনি, মনে হয় আসবেও না। যদিও ২০২০ শুরু হয়েছিল প্রবল আশাবাদ নিয়ে। কিন্তু বিধিবাম। তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। ২০২০ সাল আসার ঠিক আগের দিন চীনের উহানে ধরা পড়ে করোনা বিষ। এই বিষ নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ সাল। উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া বিষে নীল হয়ে যায় গোটা বিশ্ব, পুরো ২০ বিষ সাল।


করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি এই প্রথম নয়। তবে বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের সময়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের কাছে মানবজাতির অসহায়ত্ব বড় বিস্ময়ের। বছরজুড়েই লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন আর সামাজিক দূরত্বে স্থবির হয়ে আছে পুরো বিশ্ব। অ্যাকচুয়াল পৃথিবী বন্দি ভার্চুয়াল বাস্তবতায়। এখন পর্যন্ত ১৭ লাখ মানুষের প্রাণ নিয়েছে করোনা। তাতেও তার ক্ষুধা মেটেনি। এখন বরং ধরন বদলে নতুনরূপে আক্রোশ শানাচ্ছে করোনা। ছোট্ট এই ভাইরাস বদলে দিয়েছে গোটা বিশ্বকেই। পৃথিবী কখনোই আর আগের রূপে ফিরে যাওয়া যাবে না। এতদিন মানুষ প্রকৃতির ওপর নানা অবিচার করেছে। আর করোনা এসে মানুষকে অবরুদ্ধ করে প্রকৃতিকে উন্মুক্ত করে দেয়। এ যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ। করোনা প্রায় ১৭ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে, আর অনেকের জীবন থেকে আস্ত একটি বছর কেড়ে নিয়েছে। বছরের বড় একটা সময় প্রায় সব অর্থনৈতিক তৎপরতা বন্ধ ছিল, বন্ধ ছিল আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। পর্যটন, বিনোদন, খেলার স্থবিরতা কাটেনি এখনও। এই এক বছরের ধাক্কা কাটাতে কত বছর লাগবে কেউ জানে না। গোটা বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ প্রায়। অনলাইন ক্লাসেই চলছে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। বাংলাদেশে ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কবে খুলবে কেউ জানে না। এরই মধ্যে পিইসি, জেএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। সবাই অটো প্রমোশন পেয়ে যাবে। কিন্তু ক্লাসরুমে পড়াশোনা ছাড়া এই অটো প্রমোশন ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নিশ্চয়ই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

শুধু অর্থনীতি, শিক্ষা বা রাজনীতি নয়; করোনা প্রভাব ফেলেছে আমাদের ব্যক্তিজীবনেও, ওলটপালট করে দিয়েছে আমাদের মনোজগত। দীর্ঘ লকডাউনে পারিবারিক সম্প্রীতি যেমন বেড়েছে, আবার কোথাও ঝগড়াও বেড়েছে। সংসার ভাঙার জারও বেড়েছে। মৃত্যুভয় অনেক অবিশ্বাসীকে বিশ্বাসী বানিয়েছে, ধর্মে-কর্মে মন দিয়েছেন অনেকে। আবার প্রবল শোকে বিশ্বাসী কারও কারও বিশ্বাস হারানোর ঘটনাও ঘটেছে। করোনা বিশ্বে বৈষম্য আরও বাড়িয়েছে। মানুষ আরও গরিব হয়েছে। প্রান্তের মানুষ প্রায় ছিটকে পড়ার দশা। আবার এরই মধ্যে অল্প কিছু মানুষের আয় বেড়েছে। দুর্নীতি করে অনেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। অনেকে চাকরি-ব্যবসা হারিয়ে পথে বসেছেন। করোনা আমাদের অনেককে মিতব্যয়ী বানিয়েছে। আবার অনেকে পয়সা খরচ করার রাস্তা পাননি। করোনা বৈশ্বিক মহামারি আমাদের অনেক মানবিক করেছে। একজনের বিপদে আরেকজন পাশে দাঁড়িয়েছে। আবার করোনা সন্দেহে মাকে জঙ্গলে ফেলে রাখার মতো অবিশ্বাস্য অমানবিকতাও দেখেছে বিশ্ব। করোনা সত্যিকার অর্থেই আনপ্রেডিক্টেবল। কারও জন্য করোনা সামান্য সর্দি কাশি, কেউবা দুদিনের মধ্যেই আইসিইউ, লাইফ সাপোর্টে চলে গেছেন।

চীন, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে যখন মৃত্যুর মিছিল, বাংলাদেশ তখন আতঙ্কে হিম। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার দেশেই যখন এই অবস্থা, তখন আমাদের কী হবে? অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে লাশ পড়ে থাকবে। শুরুতে চিকিৎসা নিয়ে হচপচও হয়েছে। টেস্ট আর মাস্ক নিয়ে অনেক কেলেঙ্কারিও হয়েছে। প্রতিটি মৃত্যুই বেদনাদায়ক। তবু মোটামুটি সাড়ে ৭ হাজার মৃত্যু আশঙ্কার চেয়ে কমই বলা যায়। কোনও ব্যাখ্যা নেই। বাংলাদেশকে সৃষ্টিকর্তাই রক্ষা করেছেন। শুধু যে মৃত্যু বা আক্রান্তের হারে কম ছিল তা-ই নয়, অর্থনীতিতে করোনার ধাক্কাও বাংলাদেশ সামাল দিয়েছে বেশ ভালোভাবে। বড় বড় অর্থনীতি যখন করোনার চাপে মাইনাসে, বাংলাদেশ তখন প্রবৃদ্ধির চাকা গতিশীল রাখতে পেরেছে। মাথাপিছু গড় আয়ে ছাড়িয়ে যাচ্ছে ভারতকেও। এই করোনার মধ্যেও থেমে থাকেনি উন্নয়নের চাকা। নিজেদের অর্থে প্রমত্তা পদ্মার দুই পাড়ে সেতুবন্ধন গড়ে প্রমাণ রেখেছে নিজেদের সক্ষমতার। বছরের শেষদিকে এসেছে আরও দুটি সুখবর। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ২০২০ সালের দ্য হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট প্রতিবেদনের মানব উন্নয়ন সূচকে গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। আর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ-সিইবিআরের নতুন প্রতিবেদন বলছে, সব ঠিকঠাক থাকলে আর ১৪ বছরের মধ্যে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। 

করোনার এই মহামন্দার কালে এসব অর্জন আমাদের আশাবাদী করে। এরই মধ্যে করোনার টিকা আবিষ্কার হয়েছে। আশা করা যায় জানুয়ারির শেষ দিকেই টিকা পেয়ে যাবে বাংলাদেশও। আশা করা যায় টিকা দিয়েই করোনাকে মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ এবং বিশ্ব। বিশ সালের বিষ ক্ষয় হয়ে আসুক সম্ভাবনার একুশ। আর বাংলাদেশে তো একুশ মানেই মাথা নত না করা। নিশ্চয়ই ধরিত্রী আবার ঘুরে দাঁড়াবে। শেষ পর্যন্ত জয় হবে মানুষেরই। ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে; তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…।’

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ