X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাদুর্গত ভারতীয় অর্থনীতিতে আশার আলো

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:০২আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:০৩

ভারতের করোনাদুর্গত অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত অবশেষে দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষীত ঘুরে দাঁড়ানো ঘটছে শেষ পর্যন্ত। যদিও সম্পূর্ণ ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পথ হবে দীর্ঘ এবং কঠোর। যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিয়ে দীর্ঘ সময় লাগবে। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে দীর্ঘ লকডাউনের পরও বিশ্বের শীর্ষ দশটির অর্থনীতির দেশের তালিকায় নিজেদের পঞ্চম স্থান পুনরায় দখল করেছে যুক্তরাজ্য। এর ফলে ভারত চলে গেছে ষষ্ঠ স্থানে।

করোনাদুর্গত ভারতীয় অর্থনীতিতে আশার আলো

সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ধারণাতেও মনে করা হচ্ছে শীর্ষ অর্থনীতির পঞ্চম স্থান ভারতের দখল করতে অন্তত পাঁচ বছর লাগবে। কী দুর্ভাগ্য! যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও বাণিজ্য হতো তাহলে ভারত ২০২৮ সালে জার্মানি ও জাপানকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পেছনে থেকে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ অর্থনীতি হতে পারত।

২০২০ সালের প্রথমার্ধে ভারত বিশ্বের শিরোনাম হয়েছিল ২৫ শতাংশ জিডিপি হ্রাস পাওয়া নিয়ে। যা ছিল সবচেয়ে বেশি হ্রাস। ফলে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধীরা যে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে করোনা মহামারি মোকাবিলা  ও অথর্নীতির ধস ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য তুলোধূনো করেছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। হুট করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারমনের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকারি ঘোষণাও কোনও কাজ হচ্ছিল না। ভারত সরকার ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২০ লাখ কোটি রুপির জরুরি প্যাকেজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।

বিজেপি ও ভারতের জন্য সৌভাগ্য বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনীতি কিছুটা ভালোর দিকে এগুতে থাকে। এই সময়ে জিডিপি হ্রাস পায় মাত্র ৭.৮ শতাংশ। যে কোনও পরিস্থিতিতেই এটি স্পষ্ট অগ্রগতি। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে তৃতীয়ার্ধে এই প্রবৃদ্ধি এই অগ্রগতি আরও গতি পাবে। ব্যাপকভাবে আশা করা হচ্ছে, জিডিপি হয়ত মার্চ মাসের পর প্রথমবারের মতো ইতিবাচক অবস্থায় ফিরবে।

অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘ নীরব উৎসব মৌসুমে জনগণের মনোভাব ছিল নিরানন্দ। অটোমোবাইল এবং আবাসন খাতে বিক্রি বাড়ে। উৎসবের মৌসুমে ভোগ্যপণ্যের বিক্রিও বেড়েছে। যেখানে সম্ভব অফিস, কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। কাজ হারানো শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে নিজ রাজ্যে। একই সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের চাহিদা বেড়েছে রফতানিমুখী খাতে। দোকান ও বাজারে আবারও নগদ অর্থ আসা শুরু হয়।

শিল্প-কারখানায় পণ্য উৎপাদনেও উন্নতি ছিল। করোনার প্রকোপে এই খাত ভয়াবহ বিপর্যস্ত হয়েছিল। ফলে অর্থবছরের চতুর্থার্ধের অগ্রগতি উজ্জ্বল মনে হচ্ছে।

রাজনৈতিক পর্যায়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির জন্য স্বস্তিও এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হওয়ার পরও মহামারি পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো জিডিপিতে বাংলাদেশের পেছনে পড়ে যায় ভারত। পিপিপি হিসাবে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল ১৮৮৮ ডলার এবং ভারতের ১৮৭৭ ডলার। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এটিকে ‘অর্জন’ আখ্যায়িত করে বিজেপিকে ‘অভিনন্দন’ জানিয়েছেন।

সাধারণভাবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা ছিল। বিশেষ করে অভিনন্দনমূলক। এক বিশ্লেষক তুলে ধরেছেন, এক্ষেত্রে ভারতের বিকল্প কিছু ছিল না। অর্থনীতির নির্দিষ্ট সূচকের সব পূর্বাভাসে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, অন্তত ২০২৫ সাল পর্যন্ত ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। এসব পূর্বাভাস ভারতীয় অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত স্পষ্ট আগে করা হয়েছিল।

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি’র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মহামারিতেও প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী থাকবে।

মহামারিতে ভারতের অর্থনীতির ব্যর্থতা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ গবেষণা করেন। বাংলাদেশের মতো মহামারির শুরু থেকে ভারতের অর্থনীতি ধুঁকছিল না। এমন পরিস্থিতি মহামারির শুরুর আগেই ছিল। ২০১৬ সাল থেকে নোট বাতিল ও সাধারণ মন্থর গতির ফলে যে অবস্থা ছিল মহামারিতে তা আরও বেড়েছে।

মার্চে নরেন্দ্র মোদি ঘোষিত লকডাউন আরও পরিকল্পিত হতে পারত। হোক তা বিশাল জনসংখ্যার জন্য স্বাস্থ্যখাতে জরুরি ওষুধ নিশ্চিত করা দুঃস্বপ্নে পতিত হওয়া কিবাং প্রশাসনের অন্যান্য খাতে সরকারি ব্যর্থতা ছিল সুস্পষ্ট। মহামারির শুরুতে কেউ ভাবতে পারেনি অর্থ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাবে থাকা মানুষদের প্রায় ৮৫ শতাংশের জন্য ন্যূনতম মজুরি ও খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর বেসামরিক জীবনে সবচেয়ে বড় দুর্ভোগে শতকোটির বেশি জনগনের ৯০ শতাংশ দুর্ভোগে পড়েছেন।

বিরোধীরা এমন পরিস্থিতির সুযোগ হাতছাড়া করেনি। দিল্লিভিত্তিক নীতিনির্ধারকরা সরকারি পুনর্বাসন ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রকল্প গ্রহণ করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকতার দিতে ধাবিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে মহামারি পরিস্থিতিতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। গ্রামীণ এলাকায় এখনও তার রেশ রয়েছে। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

সাধারণভাবে মনে করা হয়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও ভারত পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। লকডাউনের আগে থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতির সবলতা ছিল বড় ধরনের সুবিধা। বিশ্লেষকদের যা অবাক করছে তা হলো খুব অল্প সময়ের জন্য বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স কমলেও রফতানিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা। এছাড়া ঘণবসতিপূর্ণ দেশে তুলনামূলক কম মৃত্যু আরেকটি বড় সাফল্য।

অবশ্য, ভারতের জন্য কয়েকটি ভালো খবর রয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের গ্রুপ সেন্টার ফর ইকোনমি অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) ধারণা করছে, আইএমএফ’র মতো সংস্থার ছড়িয়ে দেওয়া ধুয়াশার মধ্যে শেষ পর্যন্ত কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। করোনা মহামারির মতো বা একই ধরনের দুর্যোগ দেখা না দিলে ২০৩০ সালে ভারত শীর্ষ অর্থনীতির তৃতীয় স্থানে পৌঁছে যেতে পারে। আগামী দুই বছর ২০২১ ও ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধি হতে পারে যথাক্রমে ৯ ও শতাংশ।

ফলে এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই যে, ভারতীয় নীতিনির্ধারক ও নর্থব্লকের কর্মকর্তারা যে কিছুটা স্বস্তিতে আছেন।

/এএ/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
সর্বশেষ খবর
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট