X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

অন্য সরকারগুলো সমুদ্রসীমা নিয়ে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:০৬আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:০৯

চট্টগ্রামে নেভাল একাডেমিতে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াচে গণভবন থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (ছবি: ফোকাস বাংলা)





‘৭৫’র ১৫ আগস্টের যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের কেউ সমুদ্রসীমা নিয়ে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেননি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দুঃখজনক বিষয় হলো ‘৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা কেউ আমাদের সমুদ্রসীমা, সমুদ্রে আমাদের যে অধিকার আছে এ বিষয়ে কখনও গুরুত্বও দেয়নি। কোনও উদ্যোগও গ্রহণ করেনি। ‘৯৬ সাল থেকে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আন-ক্লজে সই করি। এরপর দীর্ঘ সময় চলে যায়। ২০০৯ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি তখন আবার কাজ শুরু করি। একদিকে প্রতিরক্ষা নীতিমালা সময়োপযোগী করে আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করি। অন্যদিকে, সমুদ্রসীমায় আমাদের যেই অধিকার আছে, সেই বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করি। আমাদের দুটি প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং মিয়ানমার, যদিও তারা আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ, এরপরও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আমরা বিজয় অর্জন করি। আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হই।’
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে আয়োজিত নৌবাহিনীর শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। করোনা মহামারির কারণে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যখন সদ্য স্বাধীন হওয়া যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখনই তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী গড়ে তোলা শুরু করেন। আমাদের বন্ধু প্রতীম দেশ যুগোস্লাভিয়া, ভারতের কাছ থেকে ৫টি আধুনিক রণতরী সংগ্রহ করেন। সেই থেকেই নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু। এরপর আমরা ক্ষমতায় আসার পর আমাদের নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনীসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেই। আমাদের নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে ২৭টি যুদ্ধ জাহাজ সংযোজন করেছি। ২০১৭ সালে নৌবাহিনীর বহরে দুটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন সংযোজন করেছি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের নৌবাহিনীকে সম্পূর্ণ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভোমত্ব রক্ষায় আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর জন্য প্রতিরক্ষা বিষয়ে একটি প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেন। সেই প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে তিনি আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, মাত্র সাড়ে ৩ বছর তিনি হাতে সময় পেয়েছেন। ‘৭৫সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। শুধু রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়নি, সেই সাথে আমার মা, আমার তিন ছোট ভাই এবং আমার চাচাসহ পরিবারের ১৮জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেই চেতনা থেকে অনেক দূরে আমরা সরে যাই। যেই আদর্শ, যেই লক্ষ্য নিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ২১টি বছর এ দেশের মানুষ বঞ্চিত ছিল। সেই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠন করার পর থেকে আমরা উদ্যোগ নেই। কিভাবে আমাদের দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা যায়। পাশাপাশি আমাদের নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনীসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করবো। তখন অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। তারপরও আমরা নতুন আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় করি। সেই সময় প্রথম আমরা সর্বাধুনিক ব্রিগেড ক্রয় করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, আমাদের সমুদ্রসীমা, বিশাল সমুদ্র সীমা এটি রক্ষা করা এবং সমুদ্র সম্পদকে আমাদের কাজে লাগানো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন করে দিয়ে যান। মিয়ানমারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের একটি সমুদ্রসীমা নির্দিষ্ট করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর আমাদের খুলনা শিপইয়ার্ড আমাদের নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেই। আমাদের যেসব ডক ইয়ার্ড আছে, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে আমরা সেগুলোও নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেই। আমরা আমাদের নিজেদের শিপ ইয়ার্ডে নিজেদের যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করবো। সেই লক্ষ্যেই আমরা এগুলো নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। এছাড়া কক্সবাজারের পেকুয়াতে আমরা সাব মেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করেছি এবং রামনাবাদে নৌবাহিনীর আরও একটি ঘাঁটি সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। এভাবে আমাদের যে সমুদ্রসীমা আছে, তার সম্পদ যেন আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারি সেই লক্ষ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
কমিশনপ্রাপ্ত নতুন অফিসারদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ যে গড়ে তুলবো। নতুন অফিসার আজ যারা কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছেন ২০৪১ সালে আপনারা হয়তো আরও উন্নত হবেন। তখন আপনারাই হবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কাজেই এ দেশের ২০৪১ সালের লক্ষ্য অর্জনে আপনারা কাজ করে যাবেন সেটিই আমাদের লক্ষ্য। আমি আশা করি, জাতি বা ব্যক্তিগত জীবনে যেকোনও সংকট অতিক্রমে আমাদের এসব নতুন অফিসার সবাই সবচেয়ে বেশি দক্ষভাবে অতিক্রম করবে।
এর আগে সকাল ১০টায় নৌবাহিনী প্যারেড মাঠে উপস্থিত হন নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। এরপর সেখানে নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান ২০১৮/এ ও ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০১০/বি ব্যাচের নবীন কর্মকর্তাদের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার ৩১জন মিডশিপম্যান ও ৩২জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ মোট ৬৩ জন কমিশন লাভ করেন। এদের মধ্যে সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে সেরা চৌকস মিডশিপম্যান হিসেবে মিডশিপম্যান ২০১৮/এ ব্যাচের মেহরাব হোসেন অমি ‘সোর্ড অব অনার’ প্রাপ্ত হন। অন্যদিকে মিডশিপম্যান হামিদ হোসেন আদনান প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌ প্রধান স্বর্ণ পদক’ এবং শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২০/বি ব্যাচ থেকে অ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট মো. ফরিদুর রহমান খান ‘বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণ পদক’ লাভ করেন।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারসহ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া