X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বেরোবিতে জাতীয় পতাকার অবমাননায় যেসব শিক্ষক অভিযুক্ত

রংপুর প্রতিনিধি
৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ০৩:৩৪আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ০৩:৪১

বেরোবিতে বিজয় দিবসে বিকৃত পতাকা নিয়ে দাঁড়ানো শিক্ষকরা।

মহান বিজয় দিবসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা বিকৃত করে অবমাননার ঘটনায় ১৬ জন শিক্ষক ও এক জন কর্মকর্তাসহ ১৭জনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ বাদী হয়ে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জাতীয় পতাকা অবমাননা আইনে মামলা দায়ের করেছে। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে।

বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুমন জানান, মামলায় ১২ জন শিক্ষককে আসামি করা হয়েছে। 

এদিকে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন বুধবার সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানী, কমিটির সদস্য রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার শেখ মো. জিয়াহ আল মামুন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে  ‘১৬ ডিসেম্বর ২০২০ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) এর ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত স্বাধীনতা চত্বরে জাতীয় পতাকার নকশা পরিবর্তন করে সবুজের ভিতর লাল বৃত্তের পরিবর্তে চার কোনা আকৃতির বিকৃত পতাকা দিয়ে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্তৃক ছবি তোলার সত্যতা পাওয়া গেছে, যা জাতীয় পতাকা অবমাননার শামিল এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২ এর বিধি ৩ এর পরিপন্থী।’

তদন্ত প্রতিবেদনে জাতীয় পতাকা অবমাননার জন্য ১৯ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আর এম হাফিজুর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র বর্মণ, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ উল হাসান, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাম প্রসাদ বর্মণ, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রশিদুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক রহমতউল্লাহ, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোস্তফা কাইয়ুম শারাফাত, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবু সায়েদ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুজ্জামান, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সদরুল ইসলাম সরকার, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সরকার, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহ জামান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদ হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চার্লস ডারউইন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুর আলম সিদ্দিক এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) শুভঙ্কর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আতিয়ার রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া জাতীয় পতাকার বিকৃত করে ছবি তুলে পোস্ট দেওয়া ছবি দেখে অবমাননাকারীদের নাম তদন্ত কমিটির কাছে প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। প্রক্টর লিখিত ভাবে তদন্ত কমিটির কাছে বলেছেন, সেদিনের ঘটনার ৪টি ছবি সংগ্রহ করে সেই সব ছবি দেখে ১৯ জনের নামের তালিকা করা হয়েছে।

এদিকে জাতীয় পতাকার অবমাননাকারীরা এখনও বুক ফুলিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং কেউ তাদের কিছুই করতে পারবে না বলে আস্ফালন করছে বলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন।

এ ঘটনার পর উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ ক্যাম্পাসে আসেননি।

বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান অভিযোগ করেছেন, উপাচার্য তার সাড়ে তিন বছরের কর্মকালে হাতে গোনা কিছুদিন ক্যাম্পাসে এসেছেন, বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত ছিলেন এখনও অনুপস্থিত থাকছেন। অথচ মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেওয়ার সময় ৪টি শর্তের প্রধান শর্ত ছিল উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থান করতে হবে। কিন্তু উপাচার্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশ অমান্য করে চলেছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

এর আগে জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষকসহ উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক ও একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাজহাট থানায় দুটি এজাহার দায়ের করেন। মামলার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহিতার হওয়ায় আদালত তাজহাট থানার ওসিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দিয়েছেন। রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শওকত আলী এ আদেশ প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, মহান বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকার নকশার বিকৃতি করে নিজেদের মতো করে তৈরি করা জাতীয় পতাকা নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থিত স্বাধীনতা স্মারকে ছবি তোলেন বর্তমান প্রশাসনের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। এছাড়া জাতীয় পতাকা পায়ের নিচে লাগিয়ে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। অল্প সময়ে ছবিগুলো ভাইরাল হয়ে যায়। শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ক্যাম্পাসসহ পুরো দেশ। দোষীদের শাস্তির দাবিতে ঘটনার পর থেকেই মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আট বছর পর জাবিতে ডিন নির্বাচন
আট বছর পর জাবিতে ডিন নির্বাচন
তামাকে বিষ, তবুও ঝুঁকছেন কৃষক 
তামাকে বিষ, তবুও ঝুঁকছেন কৃষক 
এফএ কাপে হাল্যান্ডকে নিয়ে সংশয়ে সিটি
এফএ কাপে হাল্যান্ডকে নিয়ে সংশয়ে সিটি
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা বিলে ভোট আজ
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা বিলে ভোট আজ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা