X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
মুখোমুখি সৈয়দ আহমেদ শাওকী

ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’: বিহাইন্ড দ্য সিন

মীর রাকিব হাসান
৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:০৪আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:৫৩

দেশে তৈরি বছরের সবচেয়ে সফল কাজ একটিই, ‘তাকদীর’। এবং সেটি এসেছে বিনোদন দুনিয়ার নতুন মাধ্যম ওটিটি প্ল্যাটফর্মের হাত ধরে। তরুণ নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী কাজটি সাধ্য করেছেন। দর্শক থেকে সমালোচক, ভারত থেকে বাংলাদেশ—মুগ্ধতায় ভাসাচ্ছেন, জাগিয়েছেন বিস্ময়। কেমন করে এসব সম্ভব হলো, বাংলা ট্রিবিউন-এর মুখোমুখি বসে ‘তাকদীর’-এর ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’ তুলে ধরলেন এর স্রষ্টা শাওকী− ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’: বিহাইন্ড দ্য সিন

বাংলা ট্রিবিউন: করতালি তো থামছেই না। কেমন প্রতিক্রিয়া কাজ করছে ভেতরে ভেতরে...

সৈয়দ আহমেদ শাওকী: এতোটা প্রত্যাশা করিনি। এটুকু ভেবেছি, কাজ তো খুব বেশি খারাপ করিনি। ফলে নতুন ছেলে বা ইয়াং নির্মাতা হিসেবে সিনিয়র-সমমনা কলিগরা (নির্মাতা-শিল্পী) হয়তো ফেসবুকে ভালো কথা বলে একটু পোস্ট দেবেন। সেটা নেহাত উৎসাহের জন্যই। বিশ্বাস করুন, আমি ওটুকুই প্রত্যাশা করেছিলাম। বেশি কিছু না।
বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু বাস্তবতা তো বিপরীত! কাজটি অ্যাপে মুক্তি পাওয়ার পরেও সেটি ফুঁড়ে বেরুলো প্রায় সর্বত্র।
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: সেটাই হলো। আমি তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ততোটা জনপ্রিয় নই। মানে ইউজ-টু না ওখানে। তারপরও প্রচুর অচেনা মানুষের মেসেজ পাচ্ছি। আমাকে চেনে না, এই কাজের মাধ্যমেই চিনেছে এমন অনেক অনেক দর্শক প্রশংসা করে নানা কথা বলছেন। এই অচেনা-অজানা মানুষগুলোর কমেন্ট পড়তে আরও বেশি ভালো লাগছে।
বাংলা ট্রিবিউন: প্রশংসার ফলাফল সাধারণত দুটো। একটি ভেসে যাওয়া, আরেকটি নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করা।
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: সেটাই বলতে চাইছিলাম। প্রতিটি মানুষের শুভেচ্ছা বার্তা আমি সিরিয়াসলি অনুভব করার চেষ্টা করছি। যেটা আগে আমি করতাম না। তারা যেভাবে প্রশংসা করছে তাতে কোনও না কোনও বিষয় চলে আসছে। সেগুলো নোট রাখছি। মানুষের ভালো লাগবে সেই প্রত্যাশাটা ছিল। কিন্তু এতোটা সফলতা আসবে সেটা ভাবিনি। আমার কাজ হইচই ট্রেন্ডিংয়ে থাকবে, সেটা আরও কল্পনা করেনি। ফলে, এই যে ভাবনার বাইরের বিষয়ে একটা ঘটনা ঘটে গেল, সেটাকে তো আমায় ধারণ করতে হবে। বুঝতে হবে, আমি কী এমন করেছি, যার জন্য এতো তালি পাচ্ছি।
সৈয়দ আহমেদ শাওকী ও চঞ্চল চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউন: আসলেই কী করেছেন! খুঁজে পেয়েছেন?
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: খুঁজছি, এখনও। তবে আগাম তো এটুকু বলতেই পারি, একটা টিম ওয়ার্ক ছিল আমাদের। যেখানে প্রতিটি মানুষ ইনভল্ব ছিলাম সর্বোচ্চ সততা নিয়ে।
বাংলা ট্রিবিউন: সিরিজটি ভাইরাল করার জন্য হইচই নিশ্চয়ই কিছু মার্কেটিং প্ল্যান অ্যাপ্লাই করেছে। কারণ, এই বাজারটা তাদের জন্য সবচেয়ে দরকারি।
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: হইচইয়ের পোস্ট রিলিজ একটা মার্কেটিং প্ল্যান ছিল। এটা থাকবেই। প্রতিটি সিরিজের জন্যই থাকে। তবে আমাদের কাজটি রিলিজের পর অর্গানিকভাবে যেভাবে স্প্রেড হতে শুরু করলো, তারা তো বসে বসে মজা দেখছে আর পপকর্ন খাচ্ছে! তাছাড়া ছোটবেলা থেকে আইএমডিবি দেখে বড় হয়েছি। সেখানে ৯ এর বেশি রেটিং পেলাম! মানে সবকিছুই আমার কাছে অন্যরকম একটা ব্যাপার হয়ে উঠলো। হিন্দিতেও ডাব করা হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন: ওয়েব মানেই একটা বিষয় প্রায় স্ট্যাবলিশড হয়েছে এখানে- অশ্লীলতা। ‘তকদীর’ তার পুরো বিপরীত। অথচ সফলতার প্রথম বিস্ময়! গল্পটাই এর মূল শক্তি কি?
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: সেটা বরাবরই। দিন শেষে আসলে গল্পটাই আসল। আমাদের এই গল্পটায় মাল্টিপল লেয়ার আছে। এটা শুধু একটা টেনশন থ্রিলারের গল্প না। এখানে শুধু দৌড়াদৌড়ি-মারামারির বিষয় না। এখানে কনটেমপারারি একটা ইস্যু ডিল করা হয়েছে। তাকদীরে যে জার্নি, সেটা শুধু একটা ক্যারেক্টার নয়। তার পেছনে ছুটছে ফ্রেন্ডশিপ, তার সমস্যা, যে লাশটা চলে আসে তার ব্যাকস্টোরি, লাশটার উদ্দেশ্য, সেই উদ্দেশ্যের সঙ্গে কে কিভাবে জড়িয়ে এসব। যেটা অডিয়েন্সকে একটা রিয়েল এক্সপেরিয়েন্স দিচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। যেটাকে শুধু একটা থ্রিলার বা ক্রাইম ড্রামায় বেঁধে রাখা যাচ্ছে না, এটি যে কোনোভাবেই হয়ে উঠছে অন্য কিছু। যার নাম আমার জানা নেই।
ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’: বিহাইন্ড দ্য সিন বাংলা ট্রিবিউন: ওটিটি বা অ্যাপ, এখানে ঢুকতে টাকা লাগে। রয়েছে জটিলতাও। বিপরীতে দুই বাংলার কোটি কোটি দর্শক শেষ ৫ বছর বেঁচে আছে মূলত ফ্রি ইউটিউবের দরবারে মাথা ঠুকে! এতসব বলার কারণ, ‘তাকদীর’ যদি টিভি চ্যানেল হয়ে ইউটিউবে প্রকাশ হতো- আরও ব্লাস্ট হতো না?
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: এখন বাসায় বসে হলিউড, বলিউড, ইউরোপিয়ান- সব সিনেমা বা কনটেন্টই দেখতে পারছেন। আপনার আক্ষেপ, আপনার দেশের কনটেন্ট কেন ওদের মতো হয় না! তো মানের বিচার করলে তো আমাদের আপডেট হতে হবে। ইউটিউব আর নেটফ্লিক্স-এর মধ্যে পার্থক্য তো থাকবেই। আমরা আশাকরি আমাদের কাজ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে হবে, তখন দেখতে হবে ওরাও ওদের দেশের কাজটা কিভাবে ডিস্ট্রিবিউট করছে। আমি কি একটা ‘গেম অব থ্রোনস’ ইউটিউবে দেখতে পারি? আমেরিকান কোনও টিভি শো ইউটিউবে দেখতে পারবেন না।

ইউটিউবের জন্য যদি কনটেন্ট বানাতাম সেটা এত বড় ক্যামেরায় শুটও করতাম না। আমরা ইউটিউব থেকে কেন যেন অনেক বেশি আশা করছি। কিন্তু আমার মনে হয় না, এটা ভবিষ্যতে খুব বেশি দাঁড়াবে বা ওটিটির সঙ্গে টেকনিক্যালি পারবে। কারণ ফ্রি দেখানোর প্রসেসটাই আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে।
ফলে ‘তাকদীর’ ইউটিউবে এলে টিভিতে চালালে অনেক সুপার হিট হতো- এই বিষয়টি আমার মাথায় একবারও আসেনি।
ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’: বিহাইন্ড দ্য সিন বাংলা ট্রিবিউন: তবুও দেখার জন্য ফ্রি ‘লিংক’ নিশ্চয়ই প্রতিনিয়তই চাইছেন অগুনতি স্বজন, ভক্ত ও দর্শক!
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: (অট্টহাসি) একদম। যারা ইউটিউব লিংক চাচ্ছে বা ডাউনলোড লিংক চাচ্ছে, মানে তারা কাজটাকে পিছিয়ে দিচ্ছে। আমার মতে, এই মানুষগুলোকে ফ্রি দেখিয়ে কাজটিকে আরও হিট করার চেয়ে ভাবা জরুরি, আমরা কোন পথে হাঁটছি এবং তার ভবিষ্যৎ কী! মানে ওটিটি নিয়ে আমাদের সিরিয়াসলি ভাববার সময় এসেছে।
বাংলা ট্রিবিউন: হইচই-এর সঙ্গে কাজের প্রক্রিয়াটা শুরু হলো কীভাবে? যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয়।
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: তাদের সঙ্গে কথা শুরু হয় গত বছর এই সময়ে (ডিসেম্বর)। প্রথমে এক লাইনের একটা গল্প শোনাই তাদের। পছন্দও করে। কিন্তু তারা ইমিডিয়েটলি ‘গো অ্যাহেড’ বলেনি আমায়। এরপর তারা বাংলাদেশে এসেছিল আরও অনেক নির্মাতার সঙ্গে কথা বলতে। ওই প্রজেক্টগুলো হচ্ছেও। তো মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হলে তাদের সঙ্গে আমি একটা জুম মিটিং করি। তারা বলে আমরা যে গল্পটা শুনেছিলাম, সেটা নিয়ে কাজ করতে পারি কিনা। পুরো প্রক্রিয়ারই একটা ধারাবাহিকতা ছিলো।

গল্প, স্টোরি টেলিং, অভিনয়শিল্পীরা কারা হবে, শুটিং কোথায় হতে পারে- এগুলো পার্ট বাই পার্ট আলাপ হয়েছে। আজ বসলাম আর সবকিছু ফিক্সড হয়ে গেল, এমন কিছু হয়নি। ওদের সঙ্গে পুরো ডকুমেন্টসহ কথা বলতে হয়। গল্পটা আমি কিভাবে দেখছি, আমার রেফারেন্স পয়েন্টগুলো কী, এসব অনেককিছু বিবেচনার পরে তারা গ্রিন সিগন্যাল দেয়। এটাই ওদের কাজের সিস্টেম। এবং এটাই আসলে হওয়া দরকার, যেটা আমরা সচরাচর করি না বা করতে পারি না।
ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’: বিহাইন্ড দ্য সিন বাংলা ট্রিবিউন: চরিত্র বাছাইয়ের স্বাধীনতা কেমন ছিল? লগ্নি করলে তো একটু এদিক সেদিক হয়ই! যদিও কলকাতা কোনও চেনামুখ মেলেনি ‘তাকদীর’-এ।
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: একচুলও এদিক সেদিক হয়নি। এটাই হলো প্রফেশনাল হাউজ বা টিমের সঙ্গে কাজ করার অ্যাডভানটেজ। আমি শতভাগ স্বাধীনতা পেয়েছি কাস্টিংয়ে। এখানে স্টার নিতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতাও তারা দেয়নি আমায়। স্ক্রিনপ্লেটা দেখার পর তারা যদি খুশি হয়, তখন মেকারকে বিশ্বাস করে। প্রথমত তাদের বিশ্বাসটা অর্জন করতে হয়। আমি সম্ভবত সেটা পেরেছি।
বাংলা ট্রিবিউন: গল্প ভাবনা নিয়ে কিছু বলুন...
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: গল্পটা মাথায় বুনেছি অনেক পরে। তাকদীর ক্যারেক্টারটা আগে মাথায় এসেছে। মানে একজন সহজ-সরল মানুষ হঠাৎ একদিন একটা লাশ পায়। এটুকুই। এরপর আমাকে বলা হয়েছিল একটা থ্রিলার বানানোর জন্য। ওই গল্পটা আমি বিভিন্নভাবে এক্সপ্লোর করতে পারতাম। এটা থেকে একটা লাভস্টোরিও করতে পারতাম, সোশ্যাল ড্রামাও করতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু আমাকে থ্রিলার বানানোর কথা বলা হয়, তাই এই গল্পটা তৈরি করি। মাথায় ভর করে ফ্রিজার ভ্যানের ড্রাইভার এবং তার ভ্যানে অজানা একটা লাশের গল্প।
চেয়েছিলাম আমি যে গল্পটা বলি, সেখানে কিছুটা হলেও যেন আমার সমাজটাকে প্রতিফলিত করা যায়। ডার্ক ড্রামাটাকে এক্সপ্লোর করার জন্য অনেক বিষয় চলে আসে। নিখোঁজ সাংবাদিক, সে কি ইনভেস্টিগেট করছিল, স্থানীয় প্রতিবেদক, ধর্ষণ, ভিলেজ পলিটিক্স, ভূমি দখল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম- এগুলো একটার পর একটা ইস্যু নিয়েই তো আমাদের জীবন। আমাদের বাস্তবটাকেই ফিকশনাইজ করে আমার মতো বলেছি। দুইটা প্যারালাল স্টোরি, একটা তাকদীরের জার্নি, আরেকটি কীভাবে লাশটা আসলো তার ফ্ল্যাশব্যাক। একটা জায়গায় গিয়ে দুটো জার্নি শেষ হয়।
বাংলা ট্রিবিউন: কাস্টিং করার গল্পটা জানতে চাই। কারণ, পাশাপাশি অনেকগুলো দরকারি চরিত্র হেঁটেছে এই সিরিজে। সবাই আবার তারকাও।
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: গল্পটা লিখতে লিখতে মনে হয়েছে তাকদীর চরিত্রটি চঞ্চল চৌধুরী করতে পারেন। এমন না যে তার কথা চিন্তা করেই লেখা হয়েছে। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তার চেনা-জানা ছিল না। লিখতে লিখতে যখন ক্যারেক্টারটায় একটু গভীরতা পেলাম, তখন আবারও ভাবলাম কে যায় এমন চরিত্রে। সেখানে অবশ্যই প্যাশনেট কোনও অভিনয়শিল্পী দরকার। আমার যে প্রডিউসার তানিম নূর ভাই তাকে একদম সংক্ষিপ্তভাবে ক্যারেক্টারটা লিখে পাঠালাম। তানিম ভাই চঞ্চল ভাইকে পাঠান। ওই অল্পতেই হুক হয়ে যায়। তিনি একবারেই বলে দেন, কাজটা করতে চান।
ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’: বিহাইন্ড দ্য সিন মনোজ কুমার প্রামাণিক আগেও আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। গল্প লেখার সময় তার জন্য একটা ভালো ক্যারেক্টার রাখবো সেটা মাথায় ছিল। তবে সবার আগে একটা ক্যারেক্টার সবসময় মাথায় ছিল এবং তাকে চিন্তা করেই লেখা- সেটা হলো পার্থ বড়ুয়ার হিটম্যান ক্যারেক্টার। পার্থ দা’র সঙ্গে অনেকদিন আগে একটা কাজ করেছি। তার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে, একটা চার্ম আছে। সেই চার্মটা এতো অ্যাপেলিং...। তার ক্যারেক্টারটা বলা যায় অনেকটা অতিথি চরিত্রের মতো। অথচ তিনি এসে গল্পের পুরো মোড় ঘুরিয়ে দেন। তিনি তো অ্যাকটিংয়ে রেগুলার না। তাকে বেশ রিকোয়েস্ট করে কাজটা করাতে হয়েছে। আর তিনিও জানেন যে আমি তার ফ্যান! এইসব মিলিয়ে অনেকদিন পর অভিনয়ে দাতাকে পেলাম।
বাংলা ট্রিবিউন: তাকদীরের আশেপাশে আরও ক’টি দরকারি চরিত্র রয়েছে...। সাংবাদিক, মন্টু...
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: সানজিদা প্রীতির চরিত্রের নাম আফসানা আনজুম। একজন আদর্শবাদী সাংবাদিক। ভয় বলতে আফসানার কিছু নেই বললেই চলে। তাকদীরের গল্প চলতে থাকে আফসানাকে কেন্দ্র করেই। আফসানার লাশ মেলে চঞ্চলের ভ্যানে। লাশের সঙ্গে তাকদীরের যেমন সম্পর্ক তেমনি সবচেয়ে কাছের মানুষ মন্টু। বন্ধু, আত্মার ভাই এই মন্টু। তাকদীরকে কখনো না বলতে পারে না এই মন্টু। সোহেল মণ্ডল করেছেন এই চরিত্রটি। মন্টুর ক্যারেক্টারটা করে সোহেল আলাদা প্রশংসা পাচ্ছেন।
বাংলা ট্রিবিউন: বাজেট স্বাধীনতা কেমন ছিল? নির্মাতাদের মূল ক্রাইসিস নাকি এখানেই!
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: হইচই সাধারণত যে বাজেটে কাজ করে সেভাবেই পেয়েছি। আমার গল্পের জন্য আলাদা কোনও বাজেট তৈরি হয়নি। ওরা একটা স্ট্যান্ডার্ড বাজেটে ওয়েব সিরিজ তৈরি করে। বড় স্কেলের হলে ১০০ টাকা, ছোট হলে ৫০ টাকা- এমনটা করে না তারা। ওরা ওয়েব সিরিজের জন্য যে বাজেটে কাজ করে, সেটা শুধু বাংলাদেশ নয় ভারতের ক্ষেত্রেও একই সিস্টেম। ওদের একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করা আছে।
হইচই যদি আমাকে ৫ টাকা দেয় সেই টাকা তারা পর্দায় দেখতে চায়। সিম্পল। সেক্ষেত্রে তারা যে বাজেটটা দিয়েছে, তারা মনে করেছে এই গল্পটা ডিমান্ড করে বিগ স্কেল। সে হিসেবে বাজেট আমি পেয়েছি কাজটা প্রপারলি করার। ৬টা জেলার ৩৯টা লোকেশনে শতাধিক শিল্পী নিয়ে এই প্রডাকশন করতে হয়েছে। আমরা বেশিরভাগই লাইভ লোকেশনে শুট করেছি। সেখানে বড়জোর দুই বা তিনটার বেশি টেক নিতে পারিনি। সেক্ষেত্রে অভিনয়শিল্পীদের ওই প্রস্তুতি ছিলো যে, একেবারেই কাজটা করতে হবে আমাদের।
বাংলা ট্রিবিউন: আশাতীত সফলতার পরেও যদি ডিরেক্টরস কাট অপশন দেওয়া হয়- তো ‘তাকদীর’-এ কী কী পরিবর্তন আনবেন?
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: যদি অপশন দেওয়া হয় তাহলে রিশুট করবো। কারণ অনেক জায়গায় মনে হলো ক্যামেরা নিয়ে আরেকটু খেলতে পারতাম। তাছাড়া পুরো কনটেন্ট আরেকটু টাইট বা ছোট করলে হয়তো আরও ভালো হতো। কিছু কিছু জায়গায় আরেকটু ছোট করা যেত, যাতে গল্পের কোনও হেরফের হতো না। মূলত, এই প্রবলেমটা আমি সল্ভ করতাম- যদি সুযোগ পেতাম।
ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’: বিহাইন্ড দ্য সিন বাংলা ট্রিবিউন: প্রশংসায় ভেসে গেলে তো চলবে না! নেক্সট প্রজেক্ট কী?
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে কথা চলছে। এখন আমি লেখালেখির মধ্যে আছি। কয়েকটা গল্প মাঝামাঝি অবস্থায় আছে। কিছু গল্প রেডি করে বসবো ক্লায়েন্টের সঙ্গে। ‘তাকদীর’টা আজকে সফল হওয়ার কারণ কিন্তু অনেকটা সময় পেয়েছি এই গল্প ডেভেলপ করার জন্য। এখন আর সেই সময়টা পাবো না। কারণ, সবাই দ্রুত চাইছেন সব কিছু। আমিও করতে চাই তারাও করতে চায়- এমন অনেকের সঙ্গেই কথা হয়ে আছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব গল্পগুলো প্রপারলি প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। মোটেই ভেসে যাচ্ছি না! কারণ, আমাকে থিতু হতেই হবে।
বাংলা ট্রিবিউন: সিনেমা...
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: নির্মাণ করা উচিত। এমন কথা বলছেন প্রচুর দর্শক-বন্ধু। আমাকে কেউ টাকা দিলে কালকেই সিনেমার প্রস্তুতি শুরু করবো। নিজের পকেট থেকে সিনেমা বানাবো না। আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকার না। আমি আজ পর্যন্ত যত ফিকশন বানিয়েছি অবশ্যই তার পেছনে কমার্শিয়াল চিন্তা ছিলো। বিজ্ঞাপন নির্মাণের কথা তো বাদই দিলাম।
বাংলা ট্রিবিউন: একটু ফ্ল্যাশব্যাক। পরিচালক হিসাবে ‘তাকদীর’-এর আগের গল্পটা জানতে চাই।
সৈয়দ আহমেদ শাওকী: তানিম নূরের পরিচালনায় ‘ফিরে এসো বেহুলা’ সিনেমার সহকারী হিসাবে ২০০৯ সালে মিডিয়ায় পথচলা শুরু। এই কাজের মাধ্যমেই জীবনে প্রথম শুটিং সেটে যাই। তখন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশুনা করছি। পড়াশুনা শেষে কী করবো ভাবতে ভাবতে নিজেরা কিছু শর্টফিল্ম বানালাম। ২০১৩ থেকে বিজ্ঞাপন নির্মাণ শুরু করি। ২০১৭ সালে প্রজন্ম টকিজ নামে একটা প্রডাকশন করি। সেখানে ১০টা শর্টফিল্ম নির্মাণ করি আমরা। ওটা ভালোই প্রশংসা পায়। ফিকশনের পরিচিতিটা ওখানেই ছড়ায়। সেখান থেকে অমিতাভ রেজা ও মেজবাউর রহমান সুমনের তত্ত্বাবধানে অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্পের প্রজেক্টে ‘কথা হবে তো’ নামে ফিকশন বানাই। মনোজ ও নাবিলাকে নিয়ে তৈরি এই কাজটারও প্রশংসা পাই। ফিকশনের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনও নির্মাণ করছিলাম।

মজার ব্যাপার হলো, প্রজন্ম টকিজে যারা কাজ করেছি সেই মানুষগুলো মিলেই ‘তাকদীর’ নির্মাণ করেছি! গর্বিত যে, ওই একই প্যাশন নিয়ে একই মানুষদের সঙ্গে এই কাজটা করা। যেটিকে সবাই সফল বলে ডাকছেন! তাকদীর: বিহাইন্ড দ্য সিন

/এমএম/এমএমজে/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী