X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
২০২০ সালে আওয়ামী লীগ

মাঝপথে স্থবির, তবে শুরু-শেষ ভালো

মাহবুব হাসান
৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:৪৪আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:৪৭

আওয়ামী লীগ বছরের শুরুতে সাড়ম্বরে কাজ শুরু করলেও মধ্য মার্চের পর থেকে করোনার কারণে স্থবির হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি। তবে লকডাউনের প্রথম দিকের স্থবিরতা কাটিয়ে অনলাইনে কর্মসূচি শুরু করে দলটি। যার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল বছরের শেষ পর্যন্ত। ডিজিটাল মাধ্যমেই সাংগঠনিক, রাষ্ট্রীয়, জনসেবা এবং মুজিববর্ষের কর্মসূচি পুরোদমে চালিয়ে যায় দলটি।

সেপ্টেম্বর থেকে আগের গতি ফিরে পায় দলটি। বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা কমিটি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশব্যাপী নানা জায়গায় সম্মেলনও করে আওয়ামী লীগ।

দলের পাশপাশি সরকারেও সাড়া জাগানো সাফল্য দেখায় আওয়ামী লীগ। করোনায় অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়লেও প্রবৃদ্ধি অটুট থাকে। বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলোও স্বাভাবিক গতিতে ফেরে। দুর্নীতি, প্রতরণা, মাস্ক কেলেঙ্কারি ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বেশকিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশংসিত হয় সরকার। জনসমাগম এড়িয়ে মুজিববর্ষের কর্মসূচি পালন করা হয় ডিজিটাল মাধ্যমে।

করোনাভাইরাসের কারণে বছরজুড়ে মানবিক বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েও ব্যস্ত ছিল সংগঠনটি। সঙ্গে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের নানা কর্মসূচি নিয়েও মানুষের পাশে ছিল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মহামারির এ বছরে কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতা, মন্ত্রিপরিষদ ও দলীয় সংসদ সদস্যসহ সারা দেশের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী হারিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এ ছাড়া এই বছরে বেশ কয়েকটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনেও জয় লাভ করেছে আওয়ামী লীগ।

বছরের শেষ দিকে ব্যস্ততা বেড়েছে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে। চলছে ওয়ার্ড ইউনিয়ন থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা সম্মেলনের কাজ। কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার কাজও চলমান।

অন্যদিকে রাজপথে বিরোধীদলকে খুব একটা মোকাবিলা করতে হয়নি আওয়ামী লীগকে। বছরজুড়ে অনলাইনে দিবসভিত্তিক কর্মসূচিগুলো পালন করেছে দলটি। বছরের শেষ সময়ে এসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে মাঠের কর্মসূচিতেও সক্রিয় হতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকে।

করোনা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফলভাবেই নেতৃত্ব দিয়েছেন সরকারের। দেশের মানুষের পাশাপাশি প্রশংসা কুড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও।

লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো যেন খাবার সঙ্কটে না পড়ে সে জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের কর্মসূচির পাশাপাশি দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন একাধিকবার। দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা করোনাপ্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। অসহায় ও কর্মহীন মানুষদের মাঝে খাদ্যও বিতরণ করেছে দলটি। চালিয়েছে সচেনতামূলক কর্মসূচি। বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা কৃষকের ধান কেটেও প্রসংশা কুড়িয়েছে।

করোনা সঙ্কটেই আঘাত হানে অতিবন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এই সময়েও সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

এ বছর করোনায় অনেক নেতাকেও হারিয়েছে আওয়ামী লীগে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আওয়ামী লীগের ৫২২ নেতার মৃত্যু হয়েছে (১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)। এর মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির চারজন সদস্যও রয়েছেন। আছেন মন্ত্রিপরিষদ এবং দলীয় সংসদ সদস্যও। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ হাজি মকবুল হোসেন, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনের এমপি ইসরাফিল আলমকে করোনায় হারিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লাসহ আরও বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যও মারা গেছেন এই বছরেই।

রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদকাণ্ডে আওয়ামী লীগে হাইব্রিড-অনুপ্রবেশের বিতর্কও তুঙ্গে ওঠে এ বছর। করোনা কেলেঙ্কারির অন্যতম নায়ক রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। সাহেদকে নিয়ে চাপের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। তবে সাহেদসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

২০২০ সালে দলে শৃঙ্খলা ফেরানোর অংশ হিসেবে গত ১৯ নভেম্বর নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়াকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই কারণে ২২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাস এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাতকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সাংগঠনিক শৃঙ্খলার পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অতীতে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তাদের আর কখনও নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এর আলোকে চলমান পৌর নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা সদর, নেত্রকোনার মদন ও কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভায় আগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়ার পরও তাদের কাছ থেকে প্রার্থিতা কেড়ে নেওয়া হয়।

দলের নিয়মিত কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বছরের শেষ দিকে ৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন দুজন সদস্য নির্বাচিত করা হয়। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে দলের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ২৫ নভেম্বর সিরাজুল মোস্তফাকে ধর্ম সম্পাদক করা হয়।

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া