X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

একসঙ্গে তিনটি ধর্ষণ মামলার রায়ে তিনজনের যাবজ্জীবন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
০৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:০০আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:২৮

সুনামগঞ্জে তিনটি পৃথক ধর্ষণ মামলায় ৩ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। এসময় তাদের আর্থিক জরিমানাও করা হয়। এছাড়াও একটি অপহরণ মামলার চারজন আসামিকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সোমবার (৪ জানুয়ারি) এসব রায় ঘোষণা করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। আজ বেলা সাড়ে তিন টায় আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে তিনি এ রায় ঘোষণা করেন।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামের আব্দুল খালিকের পুত্র আব্দুল বাতির (বাতেন) (২৮), ছাতক উপজেলার গনক্ষাই  গ্রামের মৃত কানু বিশ্বাসের পুত্র কাঞ্চন বিশ্বাস (৩৫), জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীধরপাশা গ্রামের মৃত মোক্তার আলীর পুত্র সুমন মিয়া (২২)। দণ্ডপ্রাপ্তদের এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডও দেন আদালত।

এছাড়া অপহরণ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ছাতক উপজেলার আন্দাইরগাঁও গ্রামের  মৃত সুন্দন আলীর পুত্র জালাল উদ্দিন (২২) ও হেলাল মিয়া এবং আবু রায়হানের পুত্র সাজল মিয়া (২৪) ও সাইফুর রহমানের পুত্র অজুদ মিয়া (২৩)। তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও প্রদান করেন বিচারক।

ধর্ষণের তিন মামলা:

মামলার আইনজীবী ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের প্রথম মামলাটি ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ জগদল গ্রামের। সেখানে রাতের বেলা ভিকটিমকে ঘরের দরজা ভেঙে ধর্ষণ করে আব্দুল বাতির ওরফে বাতেন। পরে ভিকটিম গর্ভধারণ করেন। গ্রামের সামাজিক সালিশে বিয়ের করার অঙ্গীকার করে ধর্ষক। সামাজিক চাপে বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন ভিকটিম কিন্তু, ধর্ষক পরে বিয়ে করতেও অস্বীকার করে। এ ঘটনায় পরে ভিকটিম থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল আব্দুল বাতিরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট ছাতক উপজেলার গনক্ষাই গ্রামের। এখানে ৭ বৎসরের একটি শিশুকে পেয়ারা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করে আসামি কাঞ্চন বিশ্বাস। এ ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল কাঞ্চন বিশ্বাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।

ধর্ষণের তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানার খাজাখালু গ্রামে। এখানে ১৪ বছরের এক কিশোরী দোকানে সদাই আনতে গেলে সুমন মিয়া নামে এক যুবক তাকে জোর করে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সানলাইট  আবাসিক হোটেলে এনে আটকে রাখে। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় কিশোরীর পিতা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

অপহরণের মামলা:

অন্যদিকে ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল ছাতক উপজেলার বড়বিহাই গ্রামের এক তরুণী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার সময় জাউয়াবাজার ইউনিয়নের কড়িরখাল এলাকায় তাকে অপহরণ করে টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয় ৪ জন আসামি  জালাল, হেলাল, সাজল ও অজুদ। এ ঘটনায় ওই চার আসামিকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন আদালত। চারটি মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে দুইজন আসামি পলাতক রয়েছেন।

 বাদীপক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি নান্টু রায় বলেন, বাদীপক্ষ আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। নারী  ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক এক সঙ্গে চারটি মামলার রায় ঘোষণা করে বিচারপ্রার্থী সমাজে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। এর আগেও তিনি একসঙ্গে অনেক মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। এটি দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী রুবেল আহমদ বলেন, আদালতের রায়ে বিবাদী পক্ষ খুশি নন। তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করবেন। 

দুই রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত জানান, ধর্ষণ একটি বর্বরোচিত অপরাধ। সাম্প্রতিক কালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব এবং সামাজিক যোগাযোগের কল্যাণে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগে এই অপরাধ জ্যামিতিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।  কিন্তু, যথাসময়ে আইন আদালতের আশ্রয়  না নেওয়ার কারণে ধর্ষণের আলামত, সাক্ষ্য প্রমাণাদি সংরক্ষণ না করায়, ধর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে না আসায়, ধর্ষণের সপক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন না করায়, এছাড়াও আর্থিক সুবিধা ও  স্থানীয়ভাবে অবৈধ আপস মীমাংসার কারণে অনেক ধর্ষণ মামলায় শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। তবে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণাদি উপস্থাপন করা সম্ভব হলে ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তিনটি ধর্ষণ ও একটি অপহরণ মামলায় আসামিদের ভিন্ন ভিন্ন দণ্ড প্রদান করা হয়েছে। অর্থদণ্ডের টাকা ভিকটিমরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাবেন। ২০২১ সালের শুরুর দিকে ধর্ষক ও অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে এরূপ দৃষ্টান্তমূলক রায় অপরাধীদের কঠিন বার্তা প্রদান করবে। ফলে একটি নারীবান্ধব ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ সহজ হবে।

 

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!