X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে: তোফায়েল

ভোলা প্রতিনিধি
১০ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৪১আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২১, ২০:২৩

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ১০ জানুয়ারি চির স্মরণীয় ও অনন্য ঐতিহাসিক একটি দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ের পরিপূর্ণতা অর্জন করে। ১৬ ডিসেম্বর আমরা হানাদারমুক্ত হই। কিন্তু, আমরা স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারি নাই। যেদিন বঙ্গবন্ধুর ফিরে এলেন সেদিনই অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করেছিল। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার জন্ম না হলে আমরা আজও পাকিস্তানের দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ থাকতাম।

তোফায়েল আহমেদ (ফাইল ছবি)
রবিবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন, পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয় নাই। একদিন বাংলার ভাগ্য নিয়ন্ত্রক বাঙালিদেরই হতে হবে। সে লক্ষ সামনে নিয়ে জাতির পিতা প্রথমে ছাত্রলীগ, এরপর আওয়ামী লীগ, তারপর মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার বীজ রোপণ করে ধীরে ধীরে ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯ ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থান, ৭০’র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পুরো বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি প্রথমে নিজেকে তারপর তার দল আওয়ামী লীগকে তারপর বাংলার মানুষকে এক কাতারে এনে তাদেরকে তৈরি করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে একটি মামলা দিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এক পাশে ফাঁসির মঞ্চ, আরেক পাশে ছিল প্রধানমন্ত্রীর গদি। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর গদি ত্যাগ করে ফাঁসির মঞ্চ বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু, আমরা ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে ১১ দফা কর্মসূচি রচনা করে ১৭ জানুয়ারি যে আন্দোলন সূচনা করেছিলাম তাতে ২০ জানুয়ারি আসাদ শহীদ হলো। ২৪ জানুয়ারি মতিউর, মকবুল, রুস্তম ও আলমগীরের রক্তের মধ্য দিয়ে ৬৯-এ গণঅভ্যূত্থান হলো। সেই গণঅভ্যূত্থানে আইয়ুব খানের পতন হলো। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী কারফিউ জারি করে আমাদের এ আন্দোলনকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, আমরা কারফিউ ভঙ্গ করে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর বাধ্য হয়ে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার আগে ৯ ফেব্রুয়ারি আমার জীবনের প্রথম জনসভায় আমি স্লোগান তুলেছিলাম, ‘শপথ নিলাম, শপথ নিলাম মাগো তোমায় মুক্ত করবো, শপথ নিলাম, শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করবো।’ ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পর ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের আগে আমি আমার বক্তব্যে বলেছিলাম ‘প্রিয় নেতা কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসে তুমি বাংলার মানুষের ছবি হৃদয় দিয়ে অঙ্কন করেছো। প্রিয় নেতা, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে তুমি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছো। তোমার কাছে বাঙালি জাতি ঋণী। এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না।’

ভোলায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিশাল আলোচনা সভা
বঙ্গবন্ধুর এই রাজনৈতিক সচিব বলেন, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল এক অবিস্মরণীয় ক্ষণ, অভূতপূর্ব মুহূর্ত। মুক্ত দেশের উচ্ছ্বাসভরা নাগরিকদের দেখে সেদিন বঙ্গবন্ধুর চোখে বিজয়ী বীরের পরিতৃপ্তির হাসি ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ২৮ দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভোরে লন্ডনে পৌঁছান। পরে ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি রাজকীয় বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দিল্লিতে সামান্য যাত্রা বিরতি করে ১০ জানুয়ারি দুপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু। যাত্রা বিরতিকালে দিল্লিতে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবকে। ওই সময় বঙ্গবন্ধু ভারতের সরকার ও জনগণের কাছে তাদের অকৃত্রিম সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু ঢাকায় এসে পৌঁছেন ১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনা বর্ণনা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, কেমন আছেন আমরা জানতাম না। ৮ জানুয়ারি আমরা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির খবর পাই।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ আবেগআপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে আমৃত্যু ভোলার মানুষের পাশে থাকবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে ভোলার সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোলার উন্নয়নে কাজ করার আহ্বানও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দোস্ত মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হামিদুল হক বাহালুল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মমিন টুলু, যুগ্ম সম্পাদক জহুরুল ইসলাম নকিব, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম গোলদার, পৌর মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত আলোচনা সভায় সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত হতে থাকেন। মুহূর্তের মধ্যে সরকারি স্কুলের বিশাল মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পরে আলোচনা সভা শেষে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত প্রায় অর্ধলক্ষ লোকের অংশগ্রহণে বিশাল আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একইস্থানে ফিরে এসে শেষ হয়।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ