X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

কেন ‘রসগোল্লার সঙ্গে ট্যাবলেট’ খাওয়াতে পারছে না সরকার

এস এম আববাস
১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৪৩আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:৪৫

এস এম আববাস টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে (এসডিজি) পৌঁছাতে চায় সরকার। আর সে কারণে শিক্ষার মান উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তার জন্য যা যা করা দরকার সে চেষ্টাও চলছে। তবে চেষ্টা কতটা সফল হচ্ছে তা নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় রয়েছে বলে মনে হয়। বিশেষ করে শিক্ষার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের চেষ্টা এবং দায়িত্বশীলদের ভূমিকা নিয়ে একটি গল্পের কথা মনে পড়ছে। বেশিরভাগ মানুষের পরিচিত সেই গল্পটা দিয়ে শুরু করতে চাই উদ্যোগ বাস্তবায়নের সফলতা বিফলতা নিয়ে।

শুরুতেই পাঠকের জন্য গল্পটা তুলে ধরছি।

এক দম্পতি তার এক সন্তানকে একটি ব্যামো সারাতে ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হন। কোনোভাবেই ছেলে ওষুধ খেতে রাজি হয় না। চিকিৎসকের পরামর্শ— রোগ ভালো করতে হলে ওষুধ তাকে খাওয়াতেই হবে। তাই ওষুধ খাওয়ানোর নতুন একটি পদ্ধতি খুঁজে বের করলেন বাবা-মা। ছেলের রসগোল্লা ভীষণ প্রিয়। তাই রসগোল্লার মধ্যে ট্যাবলেট ঢুকিয়ে তা খাইয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপও নিলেন। রসগোল্লার মধ্যেই ট্যাবলেট ঢুকিয়ে খেতে দিলেন ছেলেকে। ছেলের রসগোল্লা খাওয়া শেষ হলে বাবা জিজ্ঞাসা করলেন— রসগোল্লা ঠিকমতো খেয়েছো? ছেলে বললো— ‘ঠিকমতোই খেয়েছি কিন্তু রসগোল্লার বিচিটা ফেলে দিয়েছি।’

এই গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম এ জন্যই যে, সরকারের চেষ্টা রয়েছে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে পৌঁছানোর। সেই অনুযায়ী শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ নামের ‘ট্যাবলেট’ খাওয়ানোর প্রচেষ্টা চালছে। কিন্তু যাদের ‘ট্যাবলেট’ খাইয়ে ‘সতেজ’ করতে চাওয়া হচ্ছে তারা কি খাচ্ছেন? সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কি ‘খাওয়াতে’ পারছেন? নাকি সেখানেও ঘাটতি রয়েছে? আমরা এখন দেখবো ‘ট্যাবলেট’ খাওয়ানো যাচ্ছে কিনা?

শিক্ষকতা পেশায় মৌলিক প্রশিক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (সিইনএ)-এর পরিবর্তিত কোর্স হচ্ছে— ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড), ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড), মাস্টার অব এডুকেশন (এমএড)। এসব সার্টিফিকেট কোর্স ছাড়াও বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্স রয়েছে।  

বারবার অভিযোগ উঠেছে, এসব শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে কোনও প্রভাব ফেলছে না। তাহলে কি প্রশিক্ষণ নামের ‘ট্যাবলেট’টি শিক্ষকরা গ্রহণ করছেন না? আর যদি শিক্ষকরা গ্রহণ করে থাকেন তাহলে কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা প্রভাব ফেলছে না? প্রশিক্ষণ বাস্তবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং হচ্ছে?

রসগোল্লার মধ্যে ট্যাবলেট ঢুকিয়ে সন্তানকে খাওয়ানোর চেষ্টা সফল হয়েছে কিনা বাবা-মা তা জানার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মৌলিক প্রশিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ে কোনও ব্যবস্থা নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

গত কয়েক বছরে শিক্ষার মান উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর। একইসঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায়। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পদক্ষেপও আমরা দেখেছি।

গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করার জন্য আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প শুরু করে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় তিন বছরে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৪০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদে তিন বছরে অগ্রগতি মাত্র ৮ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও একটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করা সম্ভব হয়নি।

এই প্রকল্পের আওতায় শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে ব্যয় করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এই প্রকল্প যদি সাফল্য পেতো তাহলে করোনার এই সময়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম আরও এগিয়ে নেওয়া সহজ হতো। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি দুর্নীতির কারণে। প্রকল্পের প্রায় প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত। শুধু তা-ই নয়, প্রকল্প পরিচালক সরেজমিন পরিদর্শনে শিক্ষক প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেননি একদিনও।

প্রশিক্ষণ ঠিকমতো না করেই শিক্ষকরা সম্মানীর টাকা পকেটে নিয়ে বিদায় হয়েছেন। যদিও এর দায় শুধু শিক্ষকদের নয়, কর্তাদেরও। আর সম্মানীর অর্থ শুধু শিক্ষকরা নিয়েছেন ব্যাপারটি তা নয়, বরং প্রশিক্ষণ না করিয়ে খাম নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন প্রশিক্ষকরা। প্রকল্পের দুর্নীতির চিত্রে এসব উঠে এসেছে।

দুর্নীতির প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, প্রশিক্ষণের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, চিফ কো-অর্ডিনেটর, কো-অর্ডিনেটর এবং মাস্টার ট্রেইনারের সম্মানীর টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম। বিশেষ অতিথি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকা এবং তার নামে বিলের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।  প্রশিক্ষণ শেষ করার কিছু দিন পর প্রশিক্ষণ সামগ্রী পৌঁছেছে ভেন্যুতে। যদিও প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরাও এর প্রতিবাদ করেছেন। প্রশিক্ষণ না নিতে পেরে গণমাধ্যমে গোপনে তথ্য সরবরাহ করেছেন। উপকরণ ছাড়া প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষকের মানোন্নয়ন সম্ভব হয় না। এই ক্ষেত্রে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ নামক রসগোল্লার ‘বিচি খাওয়ানো’র মধ্যেই ছিল ঘটতি।

এবার শিক্ষকদের মৌলিক প্রশিক্ষণের চিত্র দেখা যেতে পারে। কারণ, মৌলিক প্রশিক্ষণ ঠিকঠাক না থাকলে সনদসর্বস্ব প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে না। সেখানে ‘ট্যাবলেট’ খাওয়া যাচ্ছে কিনা তা তুলে ধরছি পাঠকদের জন্য।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা বেশিরভাগই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। বর্তমানে স্কুল কলেজের দুই লাখের বেশি শিক্ষক এখনও প্রশিক্ষণবিহীন। গণমাধ্যমে এ খবরটি যখন সামনে আসে, তখন সংশয় সৃষ্টি হয় কবে প্রশিক্ষণ হবে আর কবে শিক্ষার গুণগত মানের পরিবর্তন ঘটবে।

সরকারি ও বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে (মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট একটি ছাড়া) মাত্র ১৪টি। এসব ইনস্টিটিউটে আসন সংখ্যা ৮০০। তাহলে আগামী ১০ বছরে মাত্র ৮ হাজার শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। আগামী ৩০ বছরে শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে মাত্র ২৪ হাজার। তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা দুঃস্বপ্নই নয় কী? হয়তো অনেকে মনে করতে পারেন বেসরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট তো রয়েছে। তাই সেই চিত্রটিও উপস্থাপন করছি।

দেশের ৩৪টি বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণকে সনদ নির্ভরতার কারণে লাল তালিকাভুক্ত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। লাল তালিকাভুক্ত করার পর বিষয়টি আদালতে গড়ায়। আর আদালতে মামলা থাকায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হয়। এ পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক করে। তাহলে যা দাঁড়াচ্ছে তা হলো— বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষক ইনস্টিটিউট রয়েছে, সেখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা হলো।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ৭১টি বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বিএড ও এমএড প্রশিক্ষণ দেয়। এসব প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মধ্যে লাল তালিকাভুক্ত ৩৪টিসহ অর্ধেক প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রশিক্ষক নেই। প্র্যাকটিস টিচিং না করিয়েই স্বল্প নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে সনদ দেওয়া হয়। আর সে কারণেই সরকারি ইনস্টিটিউটগুলোয় প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। আর সে কারণে সরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রশিক্ষণার্থী না পেলেও বেসরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছেন। তার মানে প্রশিক্ষণ নামের ‘ট্যাবলেট’টি শিক্ষকরা গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। যারা ভালোভাবে প্রশিক্ষণ না করে সনদ নিয়ে স্কেল পেতে চান তাদের সরকারি ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ দিলেই ভালোভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন তার নিশ্চয়তা কোথায়? তার মানে দাঁড়াচ্ছে রসগোল্লার ‘বিচি’ ফেলে দিয়ে ‘রসগোল্লা’ খাচ্ছেন শিক্ষকরা।  

এবার প্রশিক্ষণ নামের ‘ট্যাবলেট’ খাওয়াতে কর্তৃপক্ষ কতটা উদ্যোগী তা দেখে নেওয়া প্রয়োজন।

১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নিয়ে আহসান উল্লাহ টিচার ট্রেনিং কলেজ শুরু হয়। এরপর ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নিয়ে পথচলা শুরু হয় অনেক প্রতিষ্ঠানের। বর্তমানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে ৭১টি প্রতিষ্ঠানের। অধিভুক্তির শর্তে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান চালুর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজস্ব জমিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকতে হবে।

বিগত ২৫ বছর ধরে চলা এসব প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা মনিটরিং নেই। যারা শর্ত পালন না করে সনদসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি যথাযথ কর্তৃপক্ষ।  আর যেসব প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন তাদের কোনও সহায়তা করা সম্ভব হয়নি। উপরন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি নবায়নের জন্য প্রতি বছর ২০ হাজার করে টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে। পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই, দেশের বেশিরভাগ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ বেসরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে।

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা তুলে ধরার দরকার রয়েছে। একটি উদাহরণ দিতে বাধ্য হচ্ছি। কিশোরগঞ্জ টিচার ট্রেনিং কলেজটিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও শর্তানুযায়ী অবকাঠামোসহ সবকিছুই রয়েছে।  ইনস্টিটিউটের একটি প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ও রয়েছে। শুধু এই প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটই নয়, বিগত ২৬ বছর ধরে চলছে অনেক ভালো প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান লাখ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যারা এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সনদ নিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।  কিন্তু ২৬ বছরে কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়নি ইনস্টিটিউটগুলোকে। মডিউল ছাড়া প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নে উপকরণও দেওয়া হয়নি সরকারিভাবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা হলেও ডিজিটালি শিক্ষকদের উপযুক্ত করার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বেসরকারি শিক্ষক-প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে সরকারের কোনও অর্থ খরচ না করে মৌলিক প্রশিক্ষণ দুর্বল করা হচ্ছে। তবে মৌলিক প্রশিক্ষণ দুর্বল থাকার সুবাদে প্রকল্প তৈরি করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে অনেকের লাভ হচ্ছে। অযথা ব্যয় হচ্ছে সরকারি অর্থ। এসব প্রশিক্ষণে ভালো কিছু অবশ্যই আশা করা যায়। কিন্তু প্রকল্পে লুটপাটের কারণে তা ভেস্তে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষকদের রসগোল্লার ‘বিচি’ খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না। যদিও রসগোল্লার ‘বিচি’ খাওয়ার চেষ্টার মধ্যেই রয়েছে ঘাপলা।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার আগে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ছিল উল্লেখযোগ্য। স্কুল প্রতিষ্ঠা করে বেকারত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করার প্রক্রিয়া চলেছে দীর্ঘদিন। ফলে মেধাবী সনদধারীর সংখ্যা সেখানে নগণ্য। বেশিরভাগ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যোগ্যতার বাছবিচার না করেই। এসব শিক্ষককে রসগোল্লার সঙ্গে ‘বিচি’ না খাওয়াতে পারলে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের কথা মুখে বলা গেলেও বস্তুত কাজে আসবে না।

খুব অবাক করার বিষয়, শিক্ষকরা বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সনদ নিয়ে শিক্ষকতা করছেন গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে। পাচ্ছেন সরকারি সুযোগ সুবিধাও। পক্ষান্তরে বেসরকারি মানসম্মত শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট কোনও সহায়তা পাচ্ছে না। ২০২০ সাল থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলো। কোনও পরিকল্পনা আর হিসাব-নিকাশ ছাড়াই সময়ে সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। অধিভুক্তি দিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট তৈরির পর নির্দেশনা দিয়ে কেন বন্ধ করা হবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ?

বর্তমানে মানসম্পন্ন বেসরকারি ইনস্টিটিউটগুলো তাদের প্রশিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণে সরকারের সহায়তা চাচ্ছেন, কিন্তু পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন না কোনও উপকরণও। তাই কোনও রকমে আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যে চালিয়ে নেওয়া মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি তুলেছেন। হয়তো এ দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষ একদিন মেনে নেবে, কিন্তু ততদিনে এসডিজি অর্জনের সময় কমে আসবে। আর যদি মেনে না নেওয়া হয় আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এখানে ভর্তি বন্ধ রাখা হয়, তাহলে ৩০ বছরেও প্রশিক্ষণ শেষ হবে না।

সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব নেই তা ২৬ বছরে প্রমাণিত হয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়তো বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণের নামে প্রকল্প তৈরি করবে। আইসিটি প্রকল্পের মতো দুর্নীতিতে আটকেও যাবে। সরকারের অর্থ ব্যয় করে রসগোল্লার মধ্যে ‘ট্যাবলেট’ খাওয়ানোর চেষ্টা চলতেই থাকবে।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলা ট্রিবিউন।

kingshuk95@gmail/com

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ