X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

পি কে হালদারের ৬২ সহযোগীর হাজার কোটি টাকা জব্দ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০২:২৭আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০২:৩২

কানাডায় পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের ৬২ জন সহযোগীকে শনাক্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। যারা পি কে হালদারকে অর্থআত্মসাৎ ও পাচারের সহযোগিতা করেছিল। এর মধ্যে দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) পি কে হালদারের সহযোগী অবিন্তকা বড়ালকে গ্রেফতারের পর তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালাদার ও তার সহযোগীদের মোট এক হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব ড. মু. আনোয়ারুল হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘পি কে হালদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন ৬২ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

দুদক সূত্র জানায়, গত ৪ জানুয়ারি শঙ্খ ব্যপারী নামে পি কে হালদারের এক সহযোগীকে গ্রেফতার করে দুদক। তার নামে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্যাট রয়েছে। পি কে হালদারের টাকায় সেই ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত বছরের জানুয়ারিতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করে দুদক। সেই মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের তথ্য পেয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা। তবে মামলা দায়েরের আগেই পি কে হালদার পালিয়ে কানাডা চলে যান। পাচারের টাকায় কানাডায় তিনি ব্যবসা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন পি কে হালদার। একই সময়ে তিনি চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) নিজের নিয়ন্ত্রণে ধরে রাখেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলে তা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেন। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও পরে মামলা দায়ের করেন।

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে সর্বশেষ যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই অবন্তিকা বড়ালের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। এছাড়া বাসুদেব ব্যানার্জী নামে এক ব্যক্তি এমএসটি মেরিন, দিয়া ওয়েল লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পি কে হালদারের ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্স থেকে ঋণ দেখিয়ে চার বছরে (২০১৫-২০১৯) ৭৬৪ কোটি টাকা জমা এবং ৪৫৩ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এছাড়া পাপিয়া ব্যানার্জী নামে পি কে হালদারের আরেক সহযোগী ব্যাংক এশিয়া ও প্রাইম ব্যাংকে নিজ নামে পাঁচ কোটি ৩৫ লাখ টাকা জমা ও চার কোটি ২৭ লাখ টাকা উত্তোলন করে। এছাড়া পাপিয়া মাইডাস ফাইন্যান্স ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স থেকে নিজের নামীয় এডভান্স শিপিং লিমিটেডের নামে ৩০ কোটি টাকা জমার পর উত্তোলন করে।

দুদক সূত্র জানায়, পি কে হালদারের সহযোগী এই দুই ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা জব্দ করেছে।

সূত্র জানায়, পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নওশেরুল ইসলাম তার নামীয় কোম্পানি নেচার এন্টারপ্রাইজ ও এমএসটি মেরিনের নামে ঋণ দেখিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও পিপলস লিজিং থেকে কয়েকটি ব্যাংকের ৭৫টি হিসাবের মাধ্যমে ৩৫২ কোটি টাকা জমা করেন। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চার বছরে এসব হিসাব থেকে আবার ২৪৩ কোটি টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয়। দুদক তার হিসাবের ৯৫ কোটি টাকা জব্দ করেছে। এছাড়া পি কে হালদারের আরেক সহযোগী মমতাজ বেগম তার নামীয় কোম্পানি টিকমার্ক শিপিং কোম্পানি কয়েক বছরে ৪ কোটি টাকা জমা ও আড়াই কোটি টাকা উত্তোলন করে। দুদক মমতাজ বেগমের ব্যাংক হিসাবের দুই কোটি ৬৯ লাখ টাকা জব্দ করেছে।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, তারা একে একে পি কে হালদারের শনাক্ত হওয়া ৬২ সদস্যের সবার ব্যাংক হিসাব, আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও পি কে হালদারের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারের চার সহযোগীকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা হলো- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি সামী হুদা, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী আহমেদ জামাল, সিএফও মানিক লাল সমাদ্দার ও হেড অব ক্রেডিট মো. মাহমুদ কায়সার। দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

/এনএল/এনএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’