X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দুঃখ প্রকাশ

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
১৫ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৫৭আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ২২:৫৭

হায়দার মোহাম্মদ জিতু ভারতীয় ক্রিকেটে পূর্বাপরই ব্যাটসম্যানরা বিশ্বমানের হয়ে থাকে। অন্যদিকে তাঁর চির বৈরী প্রতিবেশী পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বোলাররা বিশ্বমানের হয়। এর কারণ অবশ্যই পরিশ্রম, সাধনা এবং অনুশীলন। কিন্তু এর বাইরেও একটা বিষয় আছে। আর তা হলো দুই দেশের সামনে থাকা ক্রিকেট আইডলবৃন্দ। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের উদাহরণ টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি এবং পাকিস্তানের ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম প্রমুখ। অর্থাৎ ভারতের আইডল দাঁড়ায় ব্যাটসম্যান আর পাকিস্তানের বোলার। বিষয়টিকে গ্রামীণ প্রবাদ সমেতও বোঝা যায়। অর্থাৎ আগের হাল যেদিকে যায় পেছনের হালও সেদিকে যায়। তাই দুই দেশের এক দেশ ব্যাটিংয়ে এবং এক দেশ বোলিংয়ে শক্তিশালী।

বাংলাদেশের রাজনীতিও এমনটা সুশৃঙ্খল এবং নান্দনিক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং রাজনীতিতে ক্ষমতার দুর্বৃত্তায়ন প্রতিষ্ঠার মোহে যে দুর্নীতির সংস্কৃতির চালু হয় তার ফলে বাঙালির সুখপাখি প্রায় নিরুদ্দেশই বনে গিয়েছিল। তবে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে আবারও বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

কিন্তু ৭৫ থেকে ৯৬, এই দীর্ঘ সময়ের অগণতান্ত্রিক জঞ্জাল ও অপসংস্কৃতির বেড়াজালে বহু ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। তবে আশার কথা হলো সময়ের বাহনে আজ প্রায় সবই তার নিজস্ব সততা ও গতি ফিরে এসেছে। সেই সাহসকে সামনে রেখেই বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে আরও অর্থবহ করার সুযোগ আছে। যেমন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকারীদের যে দেশগুলো রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে আশ্রয় দিয়েছিল, তাদের দুঃখ প্রকাশের মধ্য দিয়ে।

আর এক্ষেত্রে দরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সেই দেশগুলোর তালিকা এবং তৎকালীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিবৃত্তান্ত বের করে আনা। পাশাপাশি তখন কারা সেই আত্মস্বীকৃত খুনিদের দূতাবাসগুলোতে বা সীমানা পেরোনোয় সহযোগিতা করেছিলেন তাদের তালিকাও তৈরি জরুরি। তাছাড়া ১৯৮০ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মাঝে যারা বিদেশের দূতাবাসগুলোতে ফরেন ক্যাডার সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন সেই সিস্টেমের আওতায় সুবিধাভোগী এবং প্রদানকারীদের তালিকা করেও বিচার নিশ্চিত জরুরি।

কারণ, এরাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃত্বের আইডল হিসেব খুনি-দুর্নীতিবাজ এবং দুর্বৃত্তদের প্রতিষ্ঠায় একক ভূমিকা রেখেছেন। অথচ ক্রিকেটের মতোই বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশের জেনারেশনের মাঝে জনগণের জন্যে জনগণের হয়ে রাজনীতি করার কথা ছিল।

বাংলার জনগণের জন্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন-যৌবন কেটেছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। অথচ সেই ত্যাগ এবং ভালোবাসার রাজনীতি হটিয়ে জঙ্গি এবং যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক জিয়া পরিবার রাজনীতিকে নিয়ে গেছেন দুর্নীতি এবং ভোগের কেন্দ্রবিন্দুতে।

সম্ভাবনাময় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন বিস্ময়কর রাষ্ট্রের নাম। আর এর কারিগর বাঙালির শান্ত সাহস একক শেখ হাসিনা। কাজেই তাঁর নেতৃত্বেই দেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়দাতা দেশগুলোর মাঝে অপরাধবোধের জাগরণ সম্ভব। পাশাপাশি এখন তো বটেই পূর্বেও যারা ভোগ-বিলাসের রাজনীতি করেছেন তাদের অনৈতিক পন্থাগুলোকেও প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুর স্বীয়ভাস্করময় জীবন-দর্শনকে আরও তুলে ধরবার সুযোগ আছে। আর তাতেই বর্তমানরা তাদের সঠিক রাজনীতির আইডল খুঁজে পাবেন।

বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম করেছেন দেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির। কিন্তু তিনি শুধু রাজনৈতিক মুক্তি পর্যন্ত লড়াইয়ের সময় পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামে বাংলাদেশ আজ তার অর্থনৈতিক মুক্তি হাসিল করে চলেছে। যার উদাহরণ সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের গবেষণা মতে, ২০৩২ সালে ১৯৩টি দেশের ভেতর ২৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ হতে চলেছে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার একক নেতৃত্ব সাহসে বহু সাফল্য এবং সম্ভাবনার কথামালা আছে। কিন্তু এতসব অর্জনের নেপথ্যে সাংস্কৃতিক উত্তাপ ভীষণভাবে জরুরি। কারণ সাংস্কৃতিক মুক্তি ব্যতীত যেকোনও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অর্জন অনর্থক। অতীতে এমন নজির আছে যারা অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক মুক্তির বিকাশকে প্রাধান্য না দেওয়ায় সাম্প্রদায়িক উগ্রতা, উসকানি এবং দ্বন্দ্বে দিনশেষে ভিক্ষাবৃত্তি বা তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে।

তবে এসবও মোকাবিলা করা সম্ভব বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে। আর সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে শুধু স্লোগান এবং বক্তৃতার চল থেকে বের করে তা যে জনগণের ভাত-ভোটের অধিকার, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার, সেটাকে স্পষ্ট করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলার রসবোধ এবং শেকড় বাউল গান, পালা, যাত্রাপালা, পথ নাটক, এসবকে মাধ্যমকে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব নির্ভর যে লড়াই তাতে অংশগ্রহণকারী বা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকও নয়। কাজেই এক মাধ্যমে লড়াই আর আরেক মাধ্যম শূন্য, এমন রইলে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রগুলো তা দখল করার চেষ্টা করবেই। যা বর্তমান গ্রামীণ ব্যবস্থায় বেশ লক্ষণীয়।

শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ নিতে জানেন। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তাঁর কাছে জনগণের প্রত্যাশাও বেশি। ক্ষুধা-দারিদ্র্য জয় করা জনগণ তাই এবারে প্রত্যাশা করে জাতির পিতার খুনিদের আশ্রয়দাতা দেশগুলোর দুঃখ প্রকাশ অর্জন। যা হবে ইতিহাসের অনুপ্রাণনে বর্তমানের দায়মুক্তি এবং ভবিষ্যতের রাজনীতিতে সততার আইডল।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
রেসিপি: মসুরের ডাল দিয়ে হাতে মাখা পুঁই শাক
রেসিপি: মসুরের ডাল দিয়ে হাতে মাখা পুঁই শাক
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান পাকিস্তান ও ইরানের
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান পাকিস্তান ও ইরানের
মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে হত্যা, ভাতিজার যাবজ্জীবন
মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে হত্যা, ভাতিজার যাবজ্জীবন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ